somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অরণ্যে পাখির চোখে-৮: স্বাপ্নিকের সাাৎ ও অপরাধীর অহমিকা

১৩ ই মে, ২০১১ রাত ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পরদিন সকালে জুবেরীর সঙ্গে ছুটলাম পাহাড়ের গোপন জায়গায়। তার পূর্ব পরিচিত পাহাড়ী ছাত্রপরিষদের সাবেক সভাপতি রিকো চাকমার সঙ্গে কথা বলে রেখেছিল। আমরা রিক্সা নিয়ে পানখাইয়া পাড়ার দিকে গেলাম। সেখানে একটি চায়ের দোকানে বসে ছিল রিকো চাকমা। পুলিশের ভয়ে শহরের কোলাহলের মধ্যে সে আসতে পারছে না। দুই জায়গা ঘুরে আমরা তার সঙ্গে দেখা করলাম। চা খেয়েই একটি ইলেকট্রনিক ইঞ্জিন চালিত ট্যাক্সিতে করে সাতভাইয়া পাড়ার দিকে ছুটলাম। কারও মুখে কোন কথা নেই। গাড়িতে আমার জায়গা হল একটি পাহাড়ী টিএজ মেয়ের পেছনে। আমরা দুইজন পরস্পরের দিকে পিছন ফিরে বসেছি। রিকো ভেতরে একটু আড়ালে আর জুবেরি চালকের পাশে। সত্যি কথা বলতে দ্বিধা নেই গাড়ির ঝাকুনিতে পাহাড়ী মেয়েটির পিঠ আর পাছার সঙ্গে আমার পিঠ ও পাছার ঘষাঘষি অনিবার্য হয়ে ওঠল। আমি কিছুটা পুলকিত আর কিছুটা শংকিত অবস্থায় বসে রইলাম। মনে হচ্ছিল, এ পথ যদি শেষ না হয় তবে কেমন হতো- গানটির কথা। কিছুদুর গিয়েই একটি পাড়ার মাঝপথে নেমে ঘুরতি পথে পাড়ার বিভিন্ন বাড়ির উঠান আর পিছন দিয়ে আমরা সাতভাইয়া পাড়ার কাছাকাছি একটি রাস্তায় গিয়ে ওঠলাম। তখনও আমি জানি না আসলে আমরা কার সঙ্গে সাাত করতে যাচ্ছি। সাতভাইয়া পাড়া পৌছেই একটি গ্রামের কাবঘরে মিঠুন চাকমার হদিস করলেন রিকো। কয়েকটি বাড়ি পর একটি বাড়ির উঠোনে বসেছিলেন আমার চেয়ে বছর কয়েকের বড় মিঠুন চাকমা। ইউপিডিএফ এর অঙ্গ সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি। একদা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। জুবেরীর কাছে শুনলাম নানা ঘটনায় মিঠুন চাকমার পরিবারের সবাই মৃত্যুবরণ করেছে। সেখানে বসে মিঠুন চাকমার সঙ্গে অনেক বিষয়ে আলাপ হল। তাকে রীতিমত জেরায় জেরায় অতিষ্ঠ করে তুললাম। তার অব্যাহত হাসিমাখা মুখ দেখে আমার মনে হলে আসলে আমিই অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছি আমার কৌতুহলে। অবাক হলাম এত দু॥খের মধ্যেও কিভাবে তিনি চেহেরায় অকৃত্রিম হাসি ধরে রাখতে পেরেছেন তা ভেবে। আমি অবশ্যই খুবই অসহিঞ্চু প্রকৃতির মানুষ। মিঠুন চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক সহিংসতার পেছনের অনেক গল্প বললেন। তার প্রতিটি কথাই অসম্ভব ধারালো যুক্তিময়। তিনি পুরো ঘটনার একটি ধারাবাহিক বর্ণনা দিলেন। দায়-দায়িত্ব নিয়ে তার বক্তব্যে একতরফা ও চাপিয়ে দেয়া কোন তথ্য দিলেন না। মনে হল, তার কাছেই পেলাম নির্মোহসব তথ্য। (পরে এ নিয়ে একাধিক রিপোর্ট করেছি।) আলাপ শেষে আমি ও জুবেরী তাদের সঙ্গে কয়েকটি ছবি তুললাম মোবাইল ক্যামেরায়। সেখান থেকে ফেরার পথে দেখলাম পুলিশের একটি দল সাতভাইয়া পাড়ার দিকে যাচ্ছে। আমরা কলজেটা মোচড় দিয়ে ওঠল। জুবেরীকে ইঙ্গিত করতেই তিনি ফোন করলেন মিঠুন চাকমাকে।
সিস্টেম হোটেলে আমাদের জন্য অপো করছিলেন- পুর্ণিয়া, ইব্রাহীম শেখসহ সাংবাদিকরা। ফেরার পর সিস্টেম হোটেলে বাঁশের ভেতরে রান্না করা পাহাড়ী মুরগীর মাংসসহ কয়েক পদের পাহাড়ী তরকারি দিয়ে দুপুরের খাবার সারলাম। সেখানে কয়েকটি ছবিও তুলে নিলাম। এরই মধ্যে আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে পুর্ণিয়া ঢাকার পথ ধরলেন। আমি ছুটলাম জেএসএস-এর সহ-সভাপতি ও একদা শান্তিবাহিনীর প্রশাসনিক প্রধান সুধাসিন্দু খীসার বাড়িতে। শহরের একটি পাহাড়ের ওপর ওয়াল ঘেরা ছিমছাম একটি বাড়ি। আঙ্গিনায় নানা ফলের গাছ। গেট খুলে দিলেন তার স্ত্রী। সুধাসিন্ধু তখন দুপুরের খাবার সেরে ঘুমোচ্ছিলেন। আমরা যেতেই টিশার্ট গায়ে দিয়ে তিনি বেরিয়ে এলেন। আমাকে ও ইব্রাহিম শেখকে সামনের ঘরে বসিয়ে তিনি স্ত্রীকে বাশের হুক্কা দেয়ার নির্দেশ দিলেন। গোলগাল চেহেরার শান্তশিষ্ট মহিলা হুক্কা দিয়ে আমাদের পাশে বসলেন। কিছুনের মধ্যেই আমাদের চা এনে দিলেন। ইতিমধ্যে আমাদের আড্ডা জমে ওঠেছে। এ সুধাসিন্ধু খীসা ফরিদপুরে রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ইন্টার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সম্মানসহ এমএ পাশ করেছেন। গল্পের এক পর্যায়ে জানালেন তিনি পাকিস্তানের শেষ অনার্স ও বাংলাদেশের প্রথম এমএ ব্যাচ। তিনি ইউপিডিএফ এর সমালোচনার পাশাপাশি তাদের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরলেন। ইউপিডিএফ নেতাদের গড়ে ওঠার পেছনের অনেক গল্প বললেন। এমনকি নির্মোহভাবে পাহাড়ে নৈরাজ্যের বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করলেন। তার সঙ্গে কথার নোট নিয়ে প্রায় সন্ধ্যার আগমুহুর্তে বেরিয়ে যাওয়ার আগে আঙ্গিনায় কয়েকটি ছবি তুললাম। এক পর্যায়ে তিনি জানালেন এ বাড়িটি তার নিজের নয়। এটি শান্তিচুক্তির পর সরকারের বরাদ্দ দেয়া বাড়ি।
সুধাসিন্ধুর বাড়ি থেকে ছুটলাম যুবলীগ নেতা ও পার্বত্য অস্থিরতায় ঘটনায় মূল ব্যক্তিদের একজন রফিকুল ইসলামের বাড়িতে। তবে তিনি বাড়িতে আমাদের সময় দিলেন না। সন্ধ্যার পর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার কথা বললেন। হোটেলে ফিরে আগের দুইজনের বক্তব্যগুলো লিখে আবার ছুটলাম তার অফিসে। ধানের গুদামের দুইতলায় কার্যালয়ের ছাদে নিয়ে গেলেন ইব্রাহিম শেখ। সেখানে গিয়ে দেখি মুড়িমাখা খাচ্ছেন সদর থানার সেকেন্ড অফিসার সহ কয়েকজন। তাদের মধ্য আকারে ইঙ্গিতে কথাবার্তা হচ্ছে। পুলিশ অফিসার আমাকে চিনতে না পারায় তার কিছু কথাবার্তা আমার কানে বাজতে লাগল। অনেকন অপোর পর যুবলীগ নেতা সময় দিলেন। তার বক্তব্যে তিনি সেদিনের ঘটনার অনেক কথা কৌশলে স্বীকার করলেন। এরই মধ্যে খাগড়াছড়ি বিএনপি সভাপতি ও সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভূইয়ার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ হল। তিনি কথা দিলেন কিছুন পর নিজেই ফোন করবেন এবং তাই করলেন। তার সঙ্গে দীর্ঘ আধাঘন্টার বেশি কথা হল। তিনিও নৈরাজ্যের পেছনের অনেক তথ্যসহ পাহাড়ে উত্তেজনার নানা কারণ ব্যাখ্যা করলেন। তবে খেয়াল করলাম তারা পরস্পরকে দোষারোপকে বক্তব্য দিচেছন। রাতে হোটেলে ফিরে লেখাগুলো তৈরি করলাম। পরদিন সকালে একই বিষয়ে কথা হল খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র বিএনপি নেতা জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে। তিনিও স্বীকার করলেন ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা। দেখালেন অনেক যুক্তিও। সবমিলিয়ে জনতার চোখের জন্য তৈরি করলাম লিড রিপোর্ট।

১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×