অরণ্যে পাখির চোখে- ৭ : সাজেক সুন্দরী অভিমুখে কিংবা স্বপ্নভঙ্গ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
জারুলছড়ি থেকে গঙ্গারামমুখে ফিরতেই আমাদের বিদায় জানাল অম্পিকা চাকমা। আমরা ছুটলাম সাজেক রোড ধরে। আগের চেয়ে রাস্তার অনেকটাই সরু হয়ে এসেছে। বাঁকও বেড়েছে। দেখা যায়, পাহাড়ীরা পেছনে থুরঙ নিয়ে হেঁটে পাহাড়ী পথে বাড়ি ফিরছে। সালাম তাদের ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এক সময় পাহাড়ীদের এ ধরনের থুরঙ নিয়ে বাজার করতে দেখা গেলেও এখন দৃশ্যটি অনেকটাই বিরল। আধুনিক জীবনযাত্রার প্রভাবে এখন তারা অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে তাদের স্বকীয়তা। সামনে যেতেই টাইগার টিলা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের এক অপরূপ লীলাভূমি। হাতের বামদিকে সুউচ্চ একটি পাহাড় আর তার প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে আমরা কয়েক মুহুর্ত থমকে দাঁড়ালাম। ডান পাশে পাহাড়ে সাদা কাশফুলের মত কি ফুল ফুটে যেন পেজা তুলোর মত হয়ে আছে। সেখানে ওড়তে দেখা গেল কিছু নীলপাখিকে। পাখিগুলোর নাম আমরা কেউই জানি না। তবে তাদের সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হতে তো কোন বাধা নেই। সূর্য ডুবে যাওয়ায় আলো স্বল্পতার জন্য ছবি তোলা যাচ্ছে না। এ নিয়ে বেদনাবোধ হল। সালাম পাখির ও পাহাড়ের ছবি তুলতে গিয়েই তুলে আনলো এক অপূর্ব রূপসী পাহাড়ীনির ছবি। আমরা কথা বলতে বলেতেই দেখি অনেকটা দৌড়ে অনেক নিচু পাহাড়ের ঢাল থেকে রাস্তায় ওঠে আসছে শিশু সন্তানকোলে এক পাহাড়ী রূপসী। একটু পরই সে ওঠে এল। হাপাতে হাপাতে বললেন, বাঙালী দেখে সন্দেহ করছিলাম এদিকেও সহিংসতায় পুড়বে কিনা। কিছুটা সামনে যেতেই চম্পাতলী ব্রীজ। ব্রীজের কাজ চলছে। অনেক উচু পাহাড়ী রাস্তা খাড়া নেমে গেছে ব্রীজে। ব্রীজ পেরিয়ে আবার খাড়া ওঠে গেছে পাহাড়ে। ব্রীজের কাজ চলায় আমরা গাড়ি থেকে নেমে চড়াই পেরিয়ে পাহাড়ের চুড়ার দিকে যাই।
ব্রীজ পেরিয়ে কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পর মাসালং আর্মি ক্যাম্প। এ পথে দেশের সর্বশেষ চেকপয়েন্ট। পরিচয় দিয়ে অনুমতির কথা জানালে আমাদের ছেড়ে দেয়া হয়। আর তখনই সামনে এসে পড়ে এক পুলিশ সদস্য। তিনি কিছুতেই যেতে দেবেন না। একবার অফিসারকে ডেকে আনে আবার রোড এণ্ড হাইওয়ের লোকজনকে। শেষে যুক্তি দাঁড় করালেন, ব্রীজভাঙা তাই সাজেক যাওয়া যাবে না। আমরা অনেকটা হতাশ হয়ে নানা শলাপরামর্শ করছি এমন সময় একজন বললেন, বিকালে আরও তিন সাংবাদিক বাইক নিয়ে সেখানে গেছেন। জুবেরী বলে ওঠলেন, ওহ আমাদের খামিন। অন্যদিকে ছালাম আমাকে রীতিমত পেয়ে বসেছে। আপনার জন্য দেরি হল, আপনার জন্য ওঠা হল ইত্যাদি। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে খামিনরা তিনজন একটি মটর সাইকেল নিয়ে হাজির। ততনে আমি মাসালং ক্যাম্পের পাশে একটি দোকানে ব্যাটারীচালিত ব্যবস্থায় মোবাইল চার্জ করলাম।
খামিন পরিস্কার জানাল- গাড়ি নিয়ে সাজেক যাওয়া এক কথায় অসম্ভব। পথে কয়েকটি ব্রীজ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, কিছু ভেঙ্গে গেছে। এখন একমাত্র বাইক নিয়েই সেখানে যাওয়া যাবে। খুবই ঝুকি নিয়ে আমরা সেখানে গিয়েছি। মন খারাপ হলেও উপায় নাই। সবাই মনুন্ন হয়েই ফিরতি পথের চলা শুরু হল। এ যেন মক্কা এসে কাবা না দেখে যাওয়ার মত। আমরা ফিরতি পথে চলতে শুরু করলেও কল্পনায় দেখছি সাজেকের অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ, সেখানকার মেয়েদের রূপের বিচ্ছুরন আর বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ পাহাড়ী সংস্কৃতির সম্মিলনের নানা চিহ্ন। মন বলছে, নেমে পড়ি আর হাটতে হাটতে জোৎসনা মাখা পাহাড়ী পথ ডিঙিয়ে সাজেক চলে যাই। তবে পাহাড়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থাসহ নানা কারণে সেটা আর হয়ে ওঠে না। এক কিলোমিটার না যেতেই খামিনদের মোটর বাইকের তার ছিড়ে যায়। তারা অনেক চেষ্টা করেও আর এগুতে পারে না। ফলে পাশের একটি পাহাড়ী বাড়িতে তাদের মোটর বাইকটি রেখে সবাই ভীড় করে গাড়িতে চড়ে বসলাম।
খায়রুল আমিন ওরফে খামিন। যে কেউ তাকে দেখে পাহাড়ী ভেবে ভুল করতে পারেন। খামিন নামটাও আপনাকে বিভ্রান্ত করবে। তার কথাবার্তার টোন, চালচলন, চেহেরার গঠন থেকে শুরু করে একটি পাহাড়ী যুবকের মত। আমি গত কয়েকদিন ধরে তাই মনে করছিলাম। তবে জুবেরী আমার ভুল ভেঙে দিল। খামিন আসলে বাঙালী ছেলে। বাড়ি কক্সবাজারে। তার আসল নাম খায়রুল আমিন। সে কয়েকটি পাহাড়ী ভাষা জানে। আর প্রায়ই পাহাড়ে যাওয়া আসা করে। কিছুদুর ফেরার পর উলুছড়ায় দেখি রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে আছে বেশ কয়েকজন পাহাড়ী। গাড়ি থামতেই তারা চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। সেখানে আসলে খামিনদের দাওয়াত ছিল। তারা সেখানে থাকবেন। আর আমাদেরও থাকার জন্য পাহাড়ীরা জোর করতে শুরু করলেন। তবে আমি ছাড়া আর কেউ থাকার পে নয়। কারণ ফেরার পথে সেনাবাহিনী নানা ঝামেলা করতে পারে। এবার তারা খাওয়ার জন্য জোর করতে লাগলেন। শেষে চা খেয়েই আমরা বিদায় হলাম। উলুছড়ায় একটি পাহাড়ী বাঁকে এ চায়োর দোকানটি। জোৎসনা মাখা পাহাড়ী মোডে রাতে দাঁড়িয়ে আমি কয়েকমিনিটের জন্য বাস্তব জগত থেকে হারিয়ে গেলাম। এত সুন্দর হতে পারে আমাদের পৃথিবী, আমাদের প্রকৃতি? না জানি আর কয়েক যুগ আগে কেমন ছিল এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ? ফেরার পথে গঙ্গারামমুখে দেখলাম যাত্রী চাউনির পাশেই খোলা আকাশের নিচে বসে গোল হয়ে বসে আছে সে পাহাড়ী পরিবারগুলো। গাড়ি দাঁড়াতেই একজন এগিয়ে এসে জানতে চাইলেন আমরা দ্রুত ফিরছি কেন। আরেকজন বললেন, ভাই দয়া করে সত্য লিখুন।
মনে এক ধরনের কষ্ট নিয়ে আমরা শহরের দিকে ছুটলাম। বাঘাইহাট জোনে গাড়ি আটকালো না। তবে দীঘিনালা ক্যাম্পে আমাদের অনেকন দাঁড় করিয়ে রাখলেন। একজন বলে বড় স্যারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আরেকজন বললো এত দেরি করলেন কেন... ইত্যাদি ইত্যাদি। অন্তত ২৫ মিনিট আমাদের অপোয় রাখলেন। আমি গাড়ি থেকে নেমে বাসায় ফোন করলাম। আমার বউ বিএনপি বিটের পিকনিক থেকে বাসায় ফিরেছে। আমরা যখন রাঙ্গামাটির ওই দূর্গম অঞ্চলে রিপোর্টের সন্ধানে বেড়াচ্ছি তখন আমাদের বিএনপি বীটের সবাই মুন্সিগঞ্জের লৌহজং পদ্মার চরে পিকনিকে গেছে। আর আমার প্রতিনিধি হিসেবে অন্যদের মত আমার বউ পিকনিকে গেছে। রাতে খাগড়াছড়ি ফিরেই সোজা শৈল সূর্বনা হোটেলে ওঠলাম। অন্যরা হোটেল ছেড়ে দিলেও আমি উঠলাম নতুন রুমে।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন