অরণ্যে পাখির চোখে-৩: হাস্যকর শান্তিমিছিল
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
অসন্তোষের শহরে ২৫শে ফেব্রুয়ারী আমার প্রথম সকালটি উদয় হল। ২০১০ সাল। ঘুম থেকে ওঠেই ছুটলাম শহরের দনিপ্রান্তে গোলাবাড়িতে। গতরাতে কারফিউর মধ্যেই সেখানে দুইটি বাঙালী বাড়ি পোড়ানো হয়েছে। ইব্রাহীমের বাইকে চড়ে অগ্নিদগ্ধ বাড়িতে গেলাম। সামনের রাস্তায় টহলরত সেনাদল। তাদের ছবি তুলতে চাইতেই আপত্তি জানালেন। পরে পরিচয় দিতেই বললেন, চলন্ত অবস্থায় নেয়া যাবে। সেখান থেকে শহরে ফিরতেই দেখি একটি শান্তি মিছিল বের করা হয়েছে। সরকারী দল আওয়ামী লীগের একাংশই মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিভিন্ন সরকারি অফিসে কর্মরত পাহাড়ীরাই মিছিলের ভরসা। মিছিলটি শহরের কয়েকটি মোড় ঘুরে ডিসি অফিসে যায়। পথেই পুর্ণিয়ার সঙ্গে দেখা হল। আগের রাতে কোথায় থাকব তাকে বলা হয়নি। সে ভীষন অভিমান করল। আসলে ভুলে গিয়েছিলাম তাকে জানানো দরকার। আমার মাঝে মধ্যেই এ ধরনের অসামাজিক ধরনের ভুল হয়ে যায়। যাহোক মা চাইলাম। ডিসি অফিসে গিয়ে দেখি টেলিভিশন চ্যানেলের তারকা রিপোর্টার কেরামত উল্লাহ বিপ্লব। দৃশ্যত যেমন সুপুরুষ, ব্যবহারও তার অমায়িক। আমাকে দেখেই উৎফুল্ল হয়ে জানতে চাইলেন কখন পৌছালাম। সেখানে কয়েকজন বাঙালী নেতা ও পাহাড়ীর সঙ্গে কথা হল। একজন মারমা মহিলা অভিযোগ করে বললেন, যাদের সঙ্গে গণ্ডগোল সে চাকমাদের কেউ এ মিছিলে আসেনি। পাহাড়ী জাতীয়তাবাদী সংগঠন ইউপিডিএফ, জেএসএস কিংবা বাঙালী জাতীয়তাবাদী সংগঠন সমঅধিকার আন্দোলন বা পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদের কেউ মিছিলে আসেনি। তাহলে এ কেমন শান্তি মিছিল! শহরে গুমোটভাব। লোকজনের চলাফেরা কম। দোকানপাট বেশিরভাগ বন্ধ। সন্ধ্যায় হোটেলে পূর্নিয়ার রুমে গিয়ে নিউজ তৈরি করে অফিসে পাঠাই। তারপর রাতে কারফিউর মধ্যেই ফিরি ইব্রাহিমের বাসায়। ফায়ার ব্রিগেডে কর্মরত পূর্নিয়ার এক বন্ধু আমাকে ইব্রাহিমের বাড়িতে পৌছে দেন। পরদিন সকালে কিছুটা দেরি করেই ঘুম ভাঙে। নাস্তা সেরে চুল-দাঁড়ি কাটতে গেলাম সেলুনে। সেলুনেই দেখা হল- আমার সাবেক সহকর্মী আল ফারুক আজমের সঙ্গে। দুপুরে পৌর কার্যালয়ে ডিসি ও এসপি’র নেতৃত্বে ও পৌর চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিনের উদ্যোগে সম্প্রীতি সমাবেশ। সমাবেশে পাড়ায় পাড়ায় শান্তি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হল। এসপি অনেকটা সরকার দলীয় মনোভাব নিয়েই বক্তব্য দিলেন। সমাবেশের বাইরে কান্নাকাটি করছিলেন নিখোঁজ বাঙালী তরুণ রনীর মা। শালবাগান এলাকার একটি বাড়িতে পাহাড়ীদের ধরিয়ে দেয়া আগুন নেভাতে গেলে পাহাড়ীদের রোষানলে পড়ে নিহত হন পৌরকর্মচারী আনোয়ার। তাকে ছুরিকাঘাতের পর আগুনে পুড়ে মারা হয়। সেই সময় তার সঙ্গে থাকা রনীকে খুঁজে না পেয়ে আহাজারি করছিলেন মহিলা।
দুপুরেই পূর্ণিয়ার সঙ্গে শহরের হোটেল শৈল সুবর্ণায় উঠি। বিকালে ঢাকা থেকে এসেছেন নিউ এজের আবদুল্লাহ জুবেরী। ঢাকায় পেশাগত কাজে পূর্নিয়া ও জুবেরীর সঙ্গে আমার একটি হৃদ্যতা আছে। আমরা একসঙ্গে থাকতে স্বচ্ছন্দবোধ করি। বিকালে খবর পাই ওই ঘটনায় ভারতীয় স্বাধীনতাকামী এনডিএফবি’র ছয়জন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে কিছুন পরপর নতুন নতুন তথ্য আসতে শুরু করল। সেদিন কারফিউ দুইঘন্টা এগিয়ে আনা হল। রাতে শুরু হল ব্যাপক হারে ধরপাকড়। রাতে সর্বশেষ নিউজ পাঠিয়ে দেখি অনেক রাত হয়ে গেছে। কারফিউর কারণে শহরের মূল পয়েন্টের সমস্ত খাবার দোকান বন্ধ। ফলে হোটেলের কাছেই শহরের প্রান্ত সীমার দিকে একটি হোটেলে (যথার্থই আল ছালাদিয়া) ডিম দিয়ে কেরোসিনের গন্ধমাখা ভাত খেয়ে নিলাম। এই দুইদিন আমি নিউজে সৌজন্যবশত ইব্রাহিমের নাম দিলেও বাস্তবে সে আমাকে একটি তথ্যও যোগাড় করে দিতে পারেনি। স্থানীয় কয়েকজন পাহাড়ী ও বাঙালী সাংবাদিকের কল্যাণে আমি নিউজগুলো তৈরি করেছি একাধিক সোর্সের মাধ্যমে কনফার্ম করে। আমি বুঝতে পারি না, কোন যোগ্যতায় এরা নিয়োগ পায়। একজন স্টাফ রিপোর্টার হলেও তার কাছে নেই কারও মোবাইল নম্বর, নাই সোর্স, নাই সাহস। এমনকি দৌড়ঝাপ করার মানসিকতাও নেই। নিউজের কারণে আমার টেনশন যতই বাড়ে ইব্রাহীমের আয়েশী কথাবার্তা ততই দীর্ঘ হয়। রাতে নিজের টাকায় কেনা দুই বোতল পাহাড়ী মদ কয়েকজন মিলে সাবাড় করলাম।
পরদিন সরকারি ছুটি হওয়ায় নিউজ নিয়ে তাড়াহুড়ো নেই। ওদিকে ঢাকায় বিএনপি বিটে কর্মরত রিপোর্টারদের পিকনিক। ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে মিজানুর রহমান সিনহার বাগান বাড়িতে যাবে স্বপরিবারে। নিজে যেতে পারছি না বলে আপে নেই। তবে ঢাকায় বৌয়ের হাতে টিকেটটি ধরিয়ে দিয়ে এসেছি। কথা ছিল আমার ফিরতে দেরি হলে সেই সবার সঙ্গে যাবে। রাতে নার্গিসের কাছেু ফোন করে তাকে পিকনিকে যাওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিলাম। বিটের কয়েকজন সহকর্মীকে ফোনে জানিয়ে দিলাম আমার পরিস্থিতি ও অবস্থানের কথা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন