শাঃ বিঃ তে আসলে কি হচ্ছে ? ... সেই সাথে চলছে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল নাটক ... আমি আসলে উনার পক্ষেও সাফাই গাইব না আবার বিপক্ষেও না ... ক্যালটেকের বেল রিসার্চ ল্যাবরেটরির এই সাবেক ফেলো সম্পর্কে সমালোচনা করার জন্য যতটুকু শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা দরকার ... তা আমার নেই ... আমার মনে হয় আমি কেন আমার ফ্রেন্ড লিস্টের কারোরই নেই ...
.
তারপরেও যখন দেখি লিস্টের কেউ কেউ উনাকে নিয়ে পোস্ট করছে তখন একটু বিরক্তি আসে ... কারণ সমালোচনা তখনই মূল্যবান হয় যখন সমালোচকের সেই যোগ্যতা থাকে ...
.
জাফর ইকবাল আস্তিক না নাস্তিক তা আমি জানি না ... ইদানিং দেখি, অনেকেই উনাকে নাস্তিক বলে বেড়াচ্ছেন ... আমি আসলেই কারণ জানি না ... কারণ আমি খবর দেখি না ... প্রায় ১০ বছর আগে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার জন্য আমি আজ ১০ বছর ধরে টিভি দেখি না ... আমার রুমে কোন টিভি নেই ...
.
আবার বাসায় পত্রিকা রাখা হলেও ... পত্রিকা পড়াও ছেড়ে দিয়েছি আজ ২ বছর হবে ... কারণ, পত্রিকা খুললেই সেই একই রিপিট খবর বার বার ... কোন জায়গায় কে খুন হল, কোন মেয়েকে রেপ করা হইসে বা সরকারী কোন সেক্টরে কোন দুর্নীতি হল ... বা কোন মন্ত্রী কোন গাঁজাখুরী মন্তব্য করল ... এসব দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত ... তাই পত্রিকা টিভি এসব দেখা ছেড়ে দিয়েছি ...
.
তাই জাফর ইকবাল কি কারণে নাস্তিক আমি আসলেই জানি না ... আমি যা খবরা খবর পাই সব ফেসবুক বা অনলাইন থেকে ... মানুষের মুখে শুনে ... তবে একটি কথা, আমার ধর্মকে আঘাত করে যে-ই কিছু বলবে থোতা মেরে তাকে ভোতা করে দেব ... সে জাফর ইকবালই হোক বা হোক দেশের মন্ত্রী ...
.
মন্ত্রী প্রসঙ্গ আসায় একটা কথা মনে পড়ল ... আমাদের দেশে যে মন্ত্রীরা মহানবী (সাঃ) ও হজ্জ্ব নিয়ে কটূক্তি করার পরেও জামিন নিয়ে বাইরে থাকে ... যে দেশে মন্ত্রী বানী প্রদান করেন, "প্রধান মন্ত্রী যদি বলেন ... তবে উনি উনার ইসলাম ও নবীজি (সাঃ) নিয়ে কটূক্তি প্রত্যাহার করবেন" ... সেই সব মন্ত্রীদের তুলনায় জাফর ইকবাল-তো অনেক ভালো, নাকি? ...
.
ইদানিং হয়তো উনার মাথায় একটু সমস্যা হয়েছে ... কেননা এক দিন উনি ও উনার সহধর্মিণী একটি দলের সন্ত্রাসীদের হাতে মাইর খান ... আবার পরের দিনই বলে বসেন, সেই দলটি মহান ... তখন আসলেই বুঝি না উনার কি হয়েছে ... হয়তোবা বয়সের দোষে আবোল তাবোল বকছেন ... হতেও পারে, কেননা বুড়ো হয়েছেন তো ... তবে যে যাই বলুক, আমি এই লোকটার লেখা খুব পছন্দ করি ...
.
এখন শাঃবিঃ প্রসঙ্গে বলি, ফেসবুকে বিভিন্ন খবরের লিঙ্ক থেকে আমি যা বুঝলাম ... সেখানে ভিসি বিরোধী আন্দোলন চলছে ... এ আর নতুন কি ... আমাদের দেশের ঢাঃবিঃ থেকে শুরু করে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইলি সোপের নাম “ভিসি বিরোধী আন্দোলন” …
.
আমি আসলেই জানি না শাঃবিঃ ভিসি কতটা দোষী ... আসলে হয়েছে কি, আমাদের দেশে যখন যে সরকার আসে তখন তারা সবার আগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে নিজ দলের ট্যাগ লাগানো লোককে ভিসি বানিয়ে দেন ... আর যদি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিরোধী দলের ট্যাগ লাগানো ভিসি থাকেন, তখন তাকে নামানোর জন্য শুরু করে দেন সেই নিত্য “ডেইলি সোপ” ...
.
আবার ধরেন যদি এমন হয় বাস্তবেই কোন ভিসি আছেন ... যিনি নিরপেক্ষ ... সেক্ষেত্রেও হয়তো বা দেখা যায় ভিসি কিছু যোগ্য শিক্ষককে প্রমোশন দিলেন ... ব্যাস যারা প্রমোশন পায় নাই বা যাদের স্বার্থে আঘাত লেগেছে তারা এক জোট হয়ে শুরু করে দেন, সেই পুরান “ডেলি সোপ” ...
.
মূল কথা হল, ভিসি কোন দলের সাপোর্টরই হোন বা নিরপেক্ষ হোন না কেন ... “ডেইলি সোপ” হবেই ... কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই যে রাজনীতির সাথে জড়িত ও দু' দলে বিভক্ত ...
.
আমার এক জাপানি বন্ধু আছে ... কাজের সূত্রে পরিচয় ... কথায় কথায় তাকে আমাদের দেশের ছাত্র রাজনীতির কথা বললাম ... আমার কথা শুনে তো ও আকাশ থেকে পড়লো ... ও বলল “রাজনীতি? ... তাও বিশ্ববিদ্যালয়ে? ... আশ্চর্য ! ... ছোটরা কেন রাজনীতি করবে? ... রাজনীতি তো বড়দের কাজ ... তোমরা যে এগুলো কর, বাসায় মা-বাবা কিছু বলে না?” ...
.
তার কথা শুনে আমার হাসির চেয়ে কান্নাই বেশি এসেছিল ... আসলেই তাই, ছাত্ররা কেন রাজনীতি করবে? ... রাজনীতি করবে বড়রা ... আর ভাবি, মা-বাবা কিছু বলবে এই সব ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িতদের? ... জাপানিজ সেই বন্ধুকে বললাম, তোমরা অনেক সহজ সরল আর এগুলো বুঝো বলেই তোমরা আজ এত উন্নত ...
.
দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হাতে রাখতে, দেশের প্রধান দু' দলই দু' টি সন্ত্রাসী গ্রুপ লালন-পালন করেন ... এরা হেন ক্রাইম নেই যা করে না ... খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, রেপ থেকে শুরু করে কোনটাই বাদ নাই ... PK মুভির কথা মনে পড়ে গেল, দু' টোই রঙ নাম্বার …
.
আমরা এমন এক দেশে বাস করি … যে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে কত জন যে লাশ হয়ে ফিরেছে তার সংখ্যা জানা নেই … ঢাঃবিঃ, DMC থেকে শুরু করে বুয়েট পর্যন্ত কলঙ্কিত, কোনটাই বাদ নেই … উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ৮ জুন টেন্ডার নিয়ে বুয়েট ছাত্রদলের মুকি এবং এসএম হল ছাত্রদলের টগর গ্রুপের বন্দুক যুদ্ধের সময় ক্রসফায়ারে নিহত হন কেমিকৌশল ১৯৯৯ ব্যাচের মেধাবী ছাত্রী সনি …
.
আমরা কি করেছি? … কালো রঙের টাইলস দিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে সনির নামে একটা স্তম্ভ বানিয়ে আমাদের দায়িত্ব শেষ করেছি … খুব বেশি হলে সেই দিনটিতে স্তম্ভে ফুলের মালা চড়িয়ে আসি … তারপর বছরের বাকি ৩৬৪ দিন ফিরেও তাকাই না ... কয়জন মনে রেখেছে এই তুমুল মেধাবী মেয়েটার কথা ? … সবাই ভুলে গেছে … দিন শেষে, লসটা খেয়েছে ওই নিরীহ মেয়েটাই …
.
ঠিক সেই রকম শিক্ষকদের এই ভিসি বিরোধী আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত কোন না কোন পক্ষ লাভবান অবশ্যই হবে ... কিনতু দিন শেষে লসটা খাবে শাঃবিঃ তে অনেক স্বপ্ন নিয়ে পড়তে আসা নিরীহ ছেলে-মেয়ে গুলোই … লসটা ঐ সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরাই খাবে আর কেউ না ...
.
তাদের জীবন থেকেই মূল্যবান কিছু সময় ঝড়ে পড়বে যা তাদের শিক্ষা জীবনে কাউন্ট হবে না ঠিকই … কিনতু জীবনের খাতায় ঠিকই কাউন্ট হবে … জীবনের খাতায় এক চুল স্কিপ হবে না … লসটা নিরীহ ছেলে-মেয়ে গুলোই খাবে …
.
আমাদের দেশে, ছাত্র রাজনীতি বা শিক্ষকদের দলাদলি অনেকটা ক্যান্সারের রূপ নিয়েছে … শরীরের কোন অংশে ক্যান্সার বাঁধলে যেমন, কেমো থেরাপি দিয়ে সেই জায়গায় কোষ গুলো মেরে ফেলতে হয় … কেননা বাঁচিয়ে রাখলেই তা ধীরে ধীরে শরীরে আশেপাশে ছড়িয়ে এক সময় পুরো শরীরটাকেই গ্রাস করে ফেলে …
.
ছাত্র রাজনীতি বা শিক্ষকদের দলাদলি ক্যান্সারটা এখন আসলে ওই স্টেজে পৌঁছে গেছে … এখন আর কেমো দিয়ে লাভ নেই … পুরো শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে দেশের পুরো শরীরটাকেই পঁচিয়ে ফেলেছে … এর থেকে আর মুক্তি মনে হয় নেই …
.
আমি আরেকটা কথা এখানে না বললে অন্যায় হবে, ছাত্র রাজনীতি ছিল বলেই ১৯৭১ এ আমরা দেশটাকে স্বাধীন করতে পেরেছিলাম … পাকি সরকার যখন আমাদের মুখের ভাষা কাইরা নিতে চেয়েছিল, ১৯৫২ সালের সেই দিনটিতে কিনতু ঢাঃবিঃ আর ডিএমসি'র ছাত্ররাই সবার আগে গর্জে উঠেছিল … নিজের মা-বাবা, বোন, প্রেমিকা, স্ত্রীর কথা ভুইলা বুকের ছাতির মাঝে বুলেট ভইরা নিসিল … রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছিল এক একটা ...
.
কিনতু আফসোস সেই ছাত্র রাজনীতি আর এখনকার ছাত্র রাজনীতির কোন মিল নাই … এখন অছাত্র আর সন্ত্রাসীরাই ছাত্র রাজনীতি করে বেশি ...
.
শাঃবিঃ তে আমারও “রিয়াদ” নামের খুব মেধাবী স্টুডেন্ট পেট্রোলিয়াম ও মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছে … কিনতু দুঃখ জনক যে, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে তার সহপাঠী ও আমারই কিছু স্টুডেন্ট ২য় বর্ষ পার করি করি ভাব সেখানে তার মাত্র ২ সেমিস্টার শেষ হয়েছে ...
.
তাই শাঃবিঃ কর্তৃপক্ষ ও মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে আমার অনুরোধ … প্লিজ সমস্যা যত দ্রুত সম্ভব শেষ করুন … ছাত্র ছাত্রীদের জীবন বাঁচান … তাদের মূল্যবান শিক্ষা জীবনের অপচয় করবেন না প্লিজ … ভিসি সাহেব যদি আপনি দোষী হয়ে থাকেন … তবে দোষ স্বীকার করে নেমে যান …
.
এতে আপনার সম্মান হানি হবে না … বরং ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে সম্মান আরও বেড়ে যাবে … অন্তত তারা সারাটা জীবন বলবে যে … নাহ, সেই ভিসি আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট হতে দেন নাই ...