অতীতে একসময় ঈদ আসলেই ঢাকা শহরে সবচেয়ে বড় আতংকের নাম ছিল ছিনতাইকারী … যতই ঈদের দিনটা ঘনিয়ে আসতে থাকে সেই সাথে বাড়তে থাকে ছিনতাইকারীদের উৎপাত ... আমরা ঢাকাবাসীরা এই সব আতংকের মাঝে বাস করতে করতে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে, এখন আর এই সব আমাদের জন্য তেমন কোন বড় আতংক নয় … এগুলো এখন আর আমাদের তেমন নাড়া দেয় না ...
.
এখন ছিনতাইকারীর চেয়েও বড় ছিনতাইয়ের ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকগুলো … জ্বি আপনি ঠিকই পড়েছেন, ব্যাংকগুলো … আরও নির্দিষ্ট করে বললে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথগুলো …
.
এই যেমন গতকাল আমি নিজেই ছিনতাইয়ের শিকার হলাম … DBBL বুথ থেকে ২০ হাজার টাকা উঠালাম, যার মাঝে ১ হাজার টাকার একটি নোট ছিল জাল … তোলার সময় বুঝি নাই … আর বুঝলেই বা কি করতাম? … মেশিনে কি রিটার্ন ঢুকাতাম? ...
.
মনে হতে পারে ১ হাজার টাকাইতো খুব বেশি নাতো … এটা ভাবার আগে কিনতু এটা মনে রাখা উচিত এই পৃথিবীতে এবারও কোটি কোটি শিশু ঈদ করবে … ছেড়া পুরোনো জামা পড়েই ঈদ করবে … অথচ মাত্র ১ হাজার টাকার একটা নোটই কিনতু এরকম একটা শিশুর মুখে হাসি ফোটানোর জন্য যথেষ্ট ছিল ... ঐ একটা নোট জাল না হলে কি আমি সংখ্যাটা ১ কোটি থেকে কমিয়ে নিরানব্বই লাখ নিরানব্বই হাজার নয়শ নিরানব্বই করতে পারতাম না? ...
.
LED মনিটর কিনতে গেলাম ... সেখানে আমাকে জানানো হল, স্যার এই নোটটা জ্বাল … কিছুই করার নেই ... এর কোন সমাধান নেই … কারণ অভিযোগ করেও কোন লাভ নেই … অভিযোগ করলে উলটা আপনি হয়রানির শিকার হবেন …
.
আর এই জ্বাল নোটটি যে, তাদের ATM বুথ থেকে বের হয়েছে সেটাই বা প্রমাণ করবেন কিভাবে? সিসি টিভিতে আপনি টাকা তুলতেছেন সেটা প্রমাণ করা গেলেও … মেশিন থেকে আসল না জ্বাল নোট বের হচ্ছে তা প্রমাণ করার কোন অবকাশ নেই …
.
ঈদ আসলেই জাল নোটের ছড়াছড়ি বেড়ে যায় ঢাকায় … আর ATM বুথ গুলোতে জাল নোট অজান্তেই ঢুকে পড়ে না … এর পেছনে কিছু ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাগণ ও জাল নোট চক্র জড়িত … দুই ঈদ আসলেই এটা খুব কমন ব্যাপার হয়ে গেছে …
.
আর ব্যাংক গুলোর ভল্টে জাল টাকা কিভাবে ঢুকছে ? … কারা এর জন্য দায়ী … নেই তার কোন সদুত্তর … ইচ্ছে করলেই এগুলো ঠেকানো সম্ভব … আমরা যখন ব্যাংকে মোটা অংকের টাকা জমা দেই … তখন যে মানি কাউন্টার মেশিন ব্যবহার করা হয় … আধুনিক অনেক আলট্রা মডার্ন মেশিন আছে … যদি টাকার বান্ডিলে জাল নোট থাকে তবে মেশিন তা গণায় ধরবে না … রিজেক্ট করে দেবে ...
.
জানি বান্ডিল ঠিকমত না বানালেও অনেক সময় ভুল গুণে থাকে এই মেশিনগুলো … সেটা ভিন্ন কথা … কিনতু জাল টাকা থাকলে আপনি যত ভাল করেই টাকার বান্ডিল করেন না কেন … মেশিন তা রিজেক্ট করবে … এই সব আধুনিক মেশিন গুলো বাংলাদেশের সব ব্যাংকে ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা উচিত …
.
আমরা সবাই জানি 1000 বা 500 টাকার নোট কোন দোকানদারের হাতে দিলেই … দোকানিরা বেশ ভালভাবে চেক করে নেয় তা জাল কিনা … অতীতে দোকানিরা যখন এমন করত তখন মুখে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে বুক ফুলিয়ে বলতাম … ভাই দেখতে হবে না … এই মাত্র ATM থেকে তুলসি … কেননা ঐ সময় ATM ছিল আসল নোটের বিশ্বস্ত সোর্স …
.
আর এখন মুচকি হাসিতো দূরের কথা দুরু দুরু বুকে যদি একই কথা কোন দোকানিকে বলি … তবে দোকানিরা ক্যামনে যেন তাকায় … মনে হয় যেন আমি চুরি করেছি বা এই মাত্র কোন অবৈধ কাজ করে এসেছি ... দোকানিরা তখন উলটা আরও বেশি সিরিয়াস হয়ে চেক করে যে নোট আসল না নকল … কারণ এখন মনে হয় জাল নোটের ১ নম্বর সোর্স হল ঢাকা শহরের ATM বুথগুলো... স্পেশালি এই ঈদের মৌসুমে :O ...
.
তাই এই রমযান মাসে আমার সবার প্রতি অনুরোধ … বড় অংকের টাকা তুলতে এই রমযানে ATM যথা সম্ভব এড়িয়ে চলুন … চেক দিয়ে টাকা তুলেন … তবু জাল টাকা পাবার সম্ভাবনা অনেক কমে আসবে …
.
আর মেয়েদের প্রতি একটা পরামর্শ হল … দিন যত যাচ্ছে সেই সাথে ছিনতাইকারীরা ছিনতাইয়ের নিত্য নতুন সব ট্রিক এপ্লাই করছে … এখন সবচেয়ে ভয়ংকর ট্রিক হল মোটর সাইকেল বা প্রাইভেট কারে বসা ছিনতাইকারী … এদের প্রধান টার্গেট থাকে রিক্সায় বসা মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগ বা পার্স গুলো ...
.
আপনি আপনার বান্ধবীর সাথে বসে আছেন … আর এই সময় হুট করে আপনার রিক্সা ঘেঁষে খুব দ্রুত একটি মোটর সাইকেল বা প্রাইভেট কার চলে যাবে … আর আপনার বান্ধবীর পার্স বা ব্যাগ হ্যাঁচকা টান দেবে …
.
তাই মেয়েদেরকে পরামর্শ ঈদে শপিং এ যাবার সময় সতর্ক থাকুন … আপনার পার্স বা ব্যাগ রিক্সার কোন ফাঁকা জায়গা দিয়ে বাইরে উঁকি-ঝুঁকি যেন না মারে সেদিকে খেয়াল রাখুন … শাড়ির আঁচল ও ওড়না যথা সম্ভব গুটিয়ে রিক্সায় বসুন ... আর যদি বাই চান্স দুর্ভাগ্য বসত এদের খপ্পরে পড়লে আপনার ব্যাগ টান দিয়েই ফেলে …
.
তবে তা হাত থেকে ছেড়ে দিন … কারণ এরা এতটাই ধূর্ত আপনি ব্যাগ ধরে রাখলেও এরা ব্যাগ ছাড়বে না … এই সব হ্যাঁচকা টানে গাড়ির চাকার নিচে পড়ে অনেক মেয়েদের আহত হতে দেখেছি নিজে স্বচক্ষে অনেকবার … তাই ব্যাগ ছেড়ে দিন …
.
ব্যাগ আর টাকা গেলে আবার ব্যাগ আর টাকা পাবেন … কিনতু জীবন ঐ একটাই ওটা গেলে আর ফেরত পাবেন না আপুরা … এই ঈদে সবার শপিং ভাল হোক … সবাই নিজ নিজ সাধ্যমত কেনাকাটা করুক … কেউ ছিনতাই কারীর কবলে না পড়ুক … এই প্রত্যাশা রইল ...
.
আমার ফেসবুক প্রোফাইলঃ https://goo.gl/NJFsPu