আমার এই পোস্ট পড়ে অনেকেই আমাকে গালাগালি করতে পারেন, তবু আমি মনে করি আমার ধারণা ঠিক আছে । DU তে ২০১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা 2nd time পরীক্ষা দিতে পারবেনা। খুব সম্ভবত DU আজীবনের জন্যই এই সিস্টেম করতে যাচ্ছে। শুনলাম এই ইস্যু নিয়ে শহীদ মিনারের সামনে অনশন চলছে, দুদিন যাবত অনশন করা ছেলে মেয়েদের মধ্যে ইতিমধ্যে ৭জন হাসপাতালে এবং ৯ জন ওখানে অসুস্থ অবস্থায় আছে।
কথা হল এই ব্যাপারে আমি DU কর্তৃপক্ষের সাথে সহমত। কেন সহমত? তার কারণ অনেক, এখন একটা ছেলে যদি মাত্র ৫/৬ মাস প্রস্তুতি নিয়ে DU’র একটা মোটামুটি টাইপ বিভাগে চান্স পেল, আরেকজন প্রথমবার চান্স না পেয়ে, দীর্ঘ ১ বছরেরও বেশি সময় প্রস্তুতি নিয়ে টপ লেভেলের একটা বিভাগে সুযোগ পেল, তাহলে আপনার কি মনে হয় না এটা অন্যায়? যে প্রথমবারই মাত্র ৫/৬ মাসের প্রস্তুতি নিয়ে সুযোগ পেল তার সাথে এটা অনেক বড় অন্যায়। সেই সাথে এটা অনৈতিকও, কিভাবে অনৈতিক? যে ছেলেটি মাত্র ৫/৬ মাসের প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে তার প্রস্তুতির সাথে যে ছেলেটি দীর্ঘ ১ বছরেরও বেশি সময় প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে তার প্রস্তুতির বিশাল ফাঁরাক রয়েছে। অথচ দু’জনের ফলাফল প্রণয়নের সময় সময় কোন পার্থক্য করা হচ্ছে না, এটা যারা প্রথমবার পরীক্ষা দিচ্ছে তাদের সাথে ঘোরতর অন্যায়।
আবার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, হয়তো প্রথমবার পরীক্ষা দেয়া ছেলেটা সুযোগ পাচ্ছে Physics এর মত কোন Department এ অথচ দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেয়া ছাত্রটি সুযোগ পেয়েছে Pharmacy, Applied Chemistry বা Applied Physics এর মত টপ ক্লাস Department এ!!! এটা কি অন্যায় নয় ? তাহলেতো প্রথম বছর পরীক্ষা না দিয়ে দীর্ঘ ১ বছর খুব ভালমতো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেয়াই অনেক ভাল, তাই নয় কি?? তাহলে ভাল বিভাগে সুযোগ পাবার সম্ভাবনা বাড়ল ।
২০০২ সাল পর্যন্ত BUET এ 2nd time পরীক্ষা দেবার সিস্টেম চালু ছিল। তবে তা কখনওই প্রশ্নবিদ্ধ ছিলনা। BUET এ ভর্তি ফর্ম কেনার পর সেখান থেকে মাত্র ৬৫০ জন কে ভর্তি পরীক্ষা দেবার অনুমতি দেয়া হয়। BUET এ 2nd time পরীক্ষা দেবার নিয়ম প্রশ্নবিদ্ধ ছিলনা কারণ, তখন যারা 2nd time পরীক্ষা দিত, তাদের HSCতে মোট প্রাপ্ত নম্বর (তখন নম্বর পদ্ধতি ছিল) থেকে ৮০ নম্বর বিয়োগ করার পরও যদি তাদের ৬৫০ জনের তালিকায় আসার যোগ্যতা থাকত তবেই তাদের এই ৬৫০ জনের লিস্টে ঢুকানো হত । বুঝাই যায় ৮০ একটি বিশাল সংখ্যা এত নম্বর বিয়োগ করার পরও লিস্টে শুধু তারাই আসতে পারত, যারা চরম মেধাবী । ফলে BUETকে কখনওই প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়নি । পরে GPA সিস্টেম আসার পর BUET ২০০৩ থেকে 2nd time পরীক্ষা দেবার সিস্টেম বাতিল করে, কারণ তখন আর আগের মত নম্বর পদ্ধতি না থাকায়, প্রাপ্ত GPA বা Physics, Chemistry, Math n English এ প্রাপ্ত পয়েন্ট থেকে কিছু বিয়োগ করে কাউকে 2nd time সুযোগ দেয়া সম্ভব নয় ।
এখন আমার মতে DU যদি 2nd time পরীক্ষা দেবার সিস্টেম বহালই রাখে তাহলে তারা BUET এর পুরনো সিস্টেম follow করতে পারে । যেমন, যারা 2nd time পরীক্ষা দিচ্ছে তাদের ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর থেকে ১৫/২০ বিয়োগ করে ফলাফল প্রণয়ন। DU পরীক্ষায় ১৫/২০ বিশাল নম্বর, এর ফলে লাভ হবে এই যে ১ বছর পড়ালেখা করে আর যাই হোক তারা ৫/৬ মাসের প্রস্তুতি নেয়াদের টপকে প্রথম সারির Department এ সুযোগ পাবেনা । যারা 1st time পরীক্ষা দিচ্ছে এতে তাদের সাথে যে বৈষম্য হয় তা অনেকটা কমে যাবে বলে আমি মনে করি । এই সিস্টেম না হোক অন্তত এমন কোন সিস্টেম করা হোক যেন পুরনো ব্যাচের শিক্ষার্থীরা নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের টপকাতে না পারে।
অনেকেই বলবে তাহলে BUETও-তো তা করতে পারে তারা কেন করছে না । ভাই BUET কে-তো আগে ৬৫০ জনের একটা তালিকা করতে হয়। DU কে তো এমন কোন তালিকা করা লাগেনা, পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা থাকলেই পরীক্ষা দেয়া যায় ।
জানি আমার পক্ষে-বিপক্ষে অনেকে অনেক কথা বলবেন । আবার অনেকে বলবেন অনেক ভাল ছাত্র কিনতু প্রথমবার সুযোগ নাও পেতে পারে, তবে তাদের কি একটা সুযোগ দেয়া উচিৎ নয় ? আমি বলব, জ্বি আমি স্বীকার করি, দেয়া উচিৎ কিনতু বছরের পর বছর ধরে, পুরনো ব্যাচের শিক্ষার্থীরা যে ১ বছরেরও বেশি সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে নতুনদের পেছনে ফেলে টপে আসতেছে, নতুনদের সাথে হওয়া এই অন্যায়ের ব্যাপারে কি বলবেন ? নতুনরাতো সময় অনেক কম পেয়েছে তাইনা ? কোথায় ৫/৬ মাস আর কোথায় দীর্ঘ ১ বছরেরও বেশি সময় !
শোনেন, যে সুযোগ পায় সে একবারেই পায় আর যে পায় না সে দশবারেও পায় না । একটা কথা আছে না “ওস্তাদের মাইর শেষ রাতে” কিনতু আমি মনে করি “সত্যিকারের ওস্তাদ শুধু শেষ রাতে মাইর দেয় না, যে সত্যিকারের ওস্তাদ সে দিনেও মাইর দিতে জানে”