‘শালা চাঁদ উঠেছিল গগনে’ গেয়ে রোদ্দুর ফের রবীন্দ্রভক্তদের কবলে পড়েছেন। কিন্তু রোদ্দুরের ‘খ্যাতাপুড়ি’ ভাব। গাঁজা খাচ্ছেন, সিগারেট জ্বালাচ্ছেন, হেঁড়ে গলায় গাইছেন। নিজেকে বলছেন 'বিশ্যো কবি'। রবীন্দ্রনাথ বা বিশ্বকবি টার্মটার উপর রাগ ঝাড়ছেন। ...বিশ্বকবি কিছু বলেছেন মানে সেটা প্রবাদ প্রতিম এরকম একটা ভাব থাকে অনেকের। এসব বলার পর রোদ্দুর গালাগাল দিয়ে বোঝাতে চাইছেন, বিশ্বকবি যা বলেছেন, যা করেছেন তাকে ধ্রুব ভাবার কিছু নেই।
এটা রোদ্দুরের কথাগুলোর মূল সারমর্ম।
ব্যাণ্ড সংগীত শিল্পী মাকসুদ বছর কয়েক আগে রবীন্দ্রনাথের ‘না চাহিলে যারে পাওয়া যায়’ নিজস্ব ঢং এ ফিউশন বানিয়ে গেয়েছিলেন। তখন দেশের রবীন্দ্রভক্তরা রাস্তায় নেমেছিলেন।
আবার নচিকেতা যখন গাইলেন যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে/তবে নাকি একলা চলতে হয়, কলকাতার সমাজ মেরে আসে কি তেড়ে আসে। বিকৃতির অভিযোগ।
তো রবীন্দ্রনাথের গান কেন ভেঙ্গে গাওয়া যাবে না? যারা রোদ্দুরের গায়কীতে জাত গেল জাত গেল করছেন তারাও সাংস্কৃতিক মোল্লা কম নন। নিজেকে সংস্কৃতি বোদ্ধা ভাবেন এরা অথচ রোদ্দুরের মত না পারে নিজেকে গালি দিতে, না পারে ব্যঙ্গ করতে। রাজনীতি নিয়ে তো বালাই ষাট। কিন্তু রোদ্দুরের মক্সা আলাপের প্রধান লক্ষ্যবস্তু রাজনীতি, শাসকদল, রাজনীতিবিদ, সংসদ। রোদ্দুর পাগল নন। রোদ্দুরের মতো রবীন্দ্রমোল্লাদের জীবনও ছ্যারাব্যারা কিন্তু প্রাচীন। হয়তো রোদ্দুরের গানটায় আমজনতা বিকৃতির কথা মনেই আনেনি বরং মজা করে গাচ্ছে। কিন্তু আপার ক্লাস বোর্ড বাঁধাইয়ের বাইরে আসতে পারছে না।
“আমাদের জীবনের শিক্ষিত শোভন সংস্করণে স্ল্যাংয়ের কোনও পাঠ না থাকলেও আমরা জানি এর চোরাগোপ্তা স্রোত আছে। কোনও কোনও দাম্পত্যের নিরীহ শোভন সংস্করণে স্ল্যাং তো একটি নিত্য-ব্যবহার্য আসবাব। আমাদের জীবনে যুগপৎ যৌনতা আছে এবং একটা ধরি-মাছ-না-ছুঁই-পানি গোছের ন্যাকান্যাকা ভাবও আছে।’’ ‘মেয়েদের চোরাগোপ্তা স্ল্যাং’ বইয়ে তৃপ্তি সান্ত্রা যথার্থই বলেছেন।
সাহিত্যে স্ল্যাং অবদমিত মানুষের মুখে জোর করে বসিয়ে দেয়া হয়নি, নাগরিক জীবনে খেয়াল করে দেখুন শব্দগুলো আপনাআপনি চলে আসে! কেন আসে? কারণ মানুষের ভাষার সীমাবদ্ধতা। মানুষকে তার বৈচিত্র্যময় অনুভূতির প্রকাশ ঘটাতে বিভিন্ন প্রকার রূপকের আশ্রয় নিতে হয়। গালি হচ্ছে ভাষার মেটাফরিক উপস্থাপন। আবার যখন বলার কথাটা বলতে পারছেন না, তখনও রূপকের আশ্রয় নিতে হয়। আধুনিক সাহিত্য অনেক টুলস ব্যবহার করে। সাহিত্য সরাসরি বলে না। জীবনে যা ঘটে তাই সাহিত্য নয়। জীবনের মা যেভাবে কাঁদে সাহিত্যের মা সেভাবে কাঁদলে আর যাই হোক শিল্প হয় না।
কিন্তু রোদ্দুর সেটাই করছেন। সরাসরিই বলছেন তবে সচেতন পাগলামি মিশিয়ে একটা ভান ধরতে হয়েছে তাকে। পাগলামিটা গা বাঁচানোর তাগিদে। সাহিত্যের তাগিদ আছে বলে মনে হয় না। যদিও কলকাতার লিটল ম্যাগ পরিবারে তার বেশ পরিচিতি। বেশ কয়েকটা বইও আছে তার।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৬