রাষ্ট্র তার অপকর্ম ঢাকতে আমাদের অন্ধ করে দেবে। পরকীয়া লুকাতে মা নিজ সন্তানকে খুন করে ফেলে। সন্তান জন্ম দেয়া মাতৃত্বের গৌরব বৈ কিছু নয়। আমরা দেশমাতৃকার সহজাত সন্তান।
টিয়ারশেল মেরে সিদ্দিকের চোখ কানা করে দেয়া হলো। পরীক্ষার দাবিতে ছিলো ব্যতিক্রমী রাস্তায় নামা। পরীক্ষা পেছাতে বুয়েট ছাত্ররা দাবি তুলতে পারে বটে। তাদের ব্রাইট ফিউচার-দেরি করে বেরোলে সমস্যা নাই। তিতুমীরের সিদ্দিকের সমস্যা আছে। মায়ের ছাগল আর মুরগি বেচা টাকায় তার পড়াশোনা। ডিম বেচা টাকায় সিদ্দিক যখন পরীক্ষার ফি দিচ্ছে, ইমরান সরকারকে ডিম মারছেন আপনি! রাষ্ট্রের বাহবা কুড়াচ্ছেন- ভুলে যাচ্ছেন ইমরান রাষ্ট্রীয় বাই-প্রোডাক্ট।
দেশের পুলিশ আর পারেটা কি? একই ব্যক্তির ছয় অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা ছয়টি ছবি পাঠানো হলে যারা পরেরদিন ছয়জনকে গ্রেফতার করে আনে, তখন রাষ্ট্রের নাবালক পুলিশকে আমি ভয় করি। রাষ্ট্রের পুলিশ-সন্ত্রাস আমি ভয় করি যখন দেখি বন-রক্ষার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমি ঘাবড়ে যাই যখন পকেটে গাঁজা ঢুকিয়ে নিরীহ শিক্ষককে করা হয় হয়রানি। একটা যৌক্তিক আবেদন ছিলো সিদ্দিকের। সেশান জটের কবলে অতীতে নাভিশ্বাস উঠত। চার বছরের অনার্স শেষ করতে চলে যেতো যৌবন। এখন যায় চাকরি পেতে পেতে। বেকারত্বের কারণে বিয়ে করতে পারি না- এটা কি বেয়ার ট্রুথ নয়? জঘন্য ভিসিয়াস সারকেল স্বীকার করতে আমার লজ্জা লাগে না।
সেশান জট, চাকরির অপর্যাপ্ততা, বেকারত্ব, কুরে খাবার মতো হতাশা আপনাকে জাপটে ধরুক- বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি এটাও চায়। চাকরির বয়স বাড়িয়ে আপনাকে ব্যস্ত রাখতে চায় টেবিল চেয়ারে। শাহবাগে আপনি করেন চাকরির বয়স বাড়ানোর আন্দোলন! তার দরকার পড়ে না।
সিদ্দিকের মুভমেন্ট শিক্ষা ব্যবস্থার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায়। সেশান জটের দুর্ভোগকে ইঙ্গিত করে। সরকারের এতো উন্নয়ন তার চোখে পড়লো না ক্যান- এই ক্ষোভেই বুঝি তার চোখ কানা করে দিলা? রাষ্ট্র চোখের বদলে চোখ নিয়ে নেয়। রাষ্ট্র জানে না বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গা ভাসিয়ে দেয়া হাজার হাজার ছাত্রের কথা। রাষ্ট্র জানে না হল-ক্যাম্পাসে পলিটিক্সের ‘বড় ভাই’দের অবস্থা ভয়াবহ। রাষ্ট্র স্বীকার করে না টাকার বিনিময়ে অনেকের বেকারত্ব ঘুচিয়েছে বটে! রাষ্ট্র জানে না স্রেফ উপরির উপর বেঁচে আছে কেউ কেউ? ক্যান্টিনে ফাও খেয়ে কারো মাস চলে? আমি হলে ছিলাম। প্রমাণ চেয়ে বিব্রত করবেন না প্লিজ। সিট না পেয়ে হলের বারান্দা আর মসজিদে ঘুমিয়ে যারা রাত পার করেছে তারা বিসিএস ক্যাডার। দেখা হলে ‘এই ভালো আছো’ বলে দ্রুত হাঁটে বড় ভাই; পালিয়ে যেতে পারলে যেন বাঁচে। বেকার সে ভাইদের মতো হতাশ আর কে? আস্ত ক্যারিয়ার নষ্ট করে ফেলা তাদেরই কারো কারো শেষ আশ্রয় রাজনীতি। টিকে থাকতে হলে রাজনীতি ছাড়া গন্তব্য নাই। রাজনীতির নামে রাষ্ট্র তাদের সঙ্গে রাজনীতি করে। “পলিটিক্স ইজ দা লাস্ট রিসোর্ট অব এ স্কাউন্ড্রেল” রাষ্ট্রের এ কথা গায়ে লাগে না।
রাষ্ট্রের বড়ই দেমাগ। জিজ্ঞেস করে বসে তাহলে কি মেধাবীরা রাজনীতি করছে না? করছে তো বটে। তোমার হাতে পরিবর্তনের শপথ নিয়ে তোমারই ‘সিস্টেমে’ পড়ে গেছে তারাও। রাষ্ট্র জানে ‘রাজনীতির মধ্যে পলিটিক্স ঢুকে গেছে।’ রাষ্ট্র জানে- “রাজনীতিকে মনে করা হয় দ্বিতীয় প্রাচীনতম পেশা; কিন্তু কেন জানি মনে হয় প্রথম প্রাচীনতম পেশা পতিতাবৃত্তির সঙ্গে এর লক্ষণীয় সাযুজ্য আছে।” রোনাল্ড রিগ্যানের কথা। রাষ্ট্র ফাটাবে গলা- রাজনীতি দেশ ও জনগণের জন্য। উন্নয়নের হালখাতা করবে রাষ্ট্র। হাড্ডি-মাংস খাবে তোষামোদি কুকুর। সেবার জন্য রাজনীতি- সামান্য ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার পদে তবে লাখ লাখ খরচ করছো ক্যান- প্রশ্ন করলেই তুই রাজাকার তুই রাজাকার।
রাষ্ট্র! তোমার গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? আমার তো জানা আছে দেশে ৫৭ ধারা আছে! সিদ্দিকের হয়ে ওকালতি করছি বটে, তুমি পাকড়াও করলে কোন শালা আমাকে বাঁচায়?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:২৬