somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তাঃ এমন শ্বশুর তুমি করিবে চয়েস...

০৮ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিয়ে নিয়ে কী লিখবো, ফ্রান্সিস বেকন মাত্র এক পাতায় সব লিখে ফেলেছেন। “স্ত্রী হচ্ছে যুবকের প্রণয়িনী, মধ্যবয়সের সঙ্গিনী, বৃদ্ধের সেবিকা। সুতরাং সব বয়সেই বিয়ের কোন না কোন কারণ দেখাতে পারে ইচ্ছুক পুরুষ। ...তবে বিয়ে না করার প্রধানতম কারণ স্বাধীন থাকার ইচ্ছা।” তাঁর মত কনসাইজ অথচ ক্ষুধা মিটিয়ে কয়জন লিখতে পারেন? এই যেমন আমি বড় করে লিখি বলে অনেকের অভিযোগ। আজকে তুলনামূলক ছোট করে লিখবো ইনশাল্লা। বর্তমান লেখাটি “আইনজীবীর পাত্রী সঙ্কট”র সেকেন্ড এপিসোড হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

ইংলান্ড/ অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে খেলতে এসে কন্ডিশন কন্ডিশন করে। আমাদের গরম ওয়েদার ওদের শুট করে না। আর বাংলাদেশের মানুষ ইয়োরোপ গেলে জ্যাকেট কিনতে ফতুর! খালি গায়ে ঘুরে বেড়ানো জার্মান পোলাপান দেখে গরগর করতে থাকি।

অনেকের শীত ভালো লাগে শুনেছি। “গোসল ফাঁকিবাজ” নাকি? বাংলাদেশের ৩০-৩২ ডিগ্রি তাপমাত্রা এনজয় করা উচিত! আমার শীতকাল অপছন্দ।

ধান ভানতে শিবের গীত হয়ে গেলো। তবু যদি শিব একটু খুশি হন! বাবা-মা আসছে শীতে আমার বিয়ে দিয়ে ছাড়বে-বাঁচাও বাঁচাও! দেখছেন শিব এগিয়ে আসছে না! বৃথায় গীত গাইলেম।

রুমি আপার চাচাতো ননদের বিয়ে। শাশুড়ি বললে একটু আধটু গীত না হলে বিয়ে বাড়ি মানায়? এটুকুই শেষ কথা। ব্যাস! বলতে বলতেই জিন্দা মানুষ শেষ! এর ডাক্তারি নাম হার্ট অ্যাটাক।

কাজের লোক গুদোড় শুনলো বড় সাহেব হার্ট ফেল করেছে। খবরটা শুনে সে কিছু বুঝলো না। কাজের বুয়ারে জিগাইলো- এতো এতো পাস দিয়া সাহেব কিনা শেষ বয়সে ফেল করলো? “এই ফেল পরীক্ষার ফেল নারে মফিজ” - জরিনা ধমক মারে।

আব্বা আমাদের উপর খুব বিরক্ত। চার ভাইয়ের সবকয়টা বাড়ির বাইরে। সংসার তাঁর ভালো লাগে না। বয়স হয়েছে। আজকাল হাঁটতেও পারেন না। নাতিপুতি নিয়ে খোশ গল্পে দিন কাটানোর কথা উল্টো বাজার করা লাগে। কথা বলার মানুষ বাড়িতে নাই। মা খুব কম কথা বলা মানুষ।

আব্বার রাগ আমার উপরে বেশি। “তোর বই জোগাতে পারবো না। বৃষ্টির পানি পইড়া সব নষ্ট হয়া যাইছে। বেটারা ঘর দুয়ার করবে না। রাজশাহীতে বাড়ি করবে। বাপের ডিহি ফাঁকা ফেলে রাখবে ইত্যাদি ইত্যাদি...” রাজশাহী বলে সেজো ভাইকে খোঁচা দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে হাজার বারশো বই কিনেছিলাম। বেশিরভাগ নীলক্ষেতের সেকেন্ড হ্যান্ড। অত্যন্ত মুল্যবান কিছু বই। সাহিত্য রাজনীতি ইত্যাদি ইত্যাদি। বইগুলো বইগুলো বাড়িতে। আব্বার ঘরে। উনি পড়ুয়া মানুষ। ওখান থেকে বই এদিক ওদিক হবার আশঙ্কা কম।

কিন্তু ঝামেলা আরো প্রকট হয়েছে। ঘরের উপর বিশুকানার আশিনা আমের গাছ। অনুরোধ সত্ত্বেও গাছটা কাটেনি। ঝড় বাতাসে দড়াম দড়াম করে আম পড়ে। একেকটা আমের ওজন এক কেজি! পচা আম পড়ে পড়ে পুরনো টিনের ছ্যাদা আরো বড় হয়েছে। “একটু খানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি” অবস্থা।

আব্বা কারো কথা না শুনেই তার রিটায়ারমেন্টের টাকা তুলে গত মাসে দুটা ঘর বানিয়ে ফেলেছে। “আপনার টাকা দিয়ে কেন, আমরা আছি না? আমরা বানাতাম”– আমাদের কথা শুনে আরো বিরক্ত। “তোরা কি করবি জানা আছে। ঢাকা ছাড়তেও পারবি না, বাড়িও করা হবে না। আমরা বুড়াবুড়ি এখান থেকেই কবরে চলে যাবো!” শুনতে আনইজি লাগে। “তোর বইগুলা সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মিস্টার! ঘর না হলে হয়?” একটু পর বোমা মারেন “তোর বিয়ে শাদি দিতে হবে না? আর কত পড়াশুনা করবি? নিজের বাচ্চাকাচ্চা মানুষ করবি কবে?” আমি মাথা নিচু করি। জিয়া ভাই ঘি ঢালে- আসছে শীতে বিয়ে করে ফেলো। সংসার আল্লা চালাবে!

ভাবছেন বিয়ের কথায় ডরাচ্ছি কেন? ভাইরে বয়স এখন উনিশ নয়, উনত্রিশ। অর্ধেক জীবন গত হয়ে গেছে তার হিসাব কুলাচ্ছে না। যেটুকু বাকি আছে তাতে অনেক কাজ। পড়াশুনা শেষ করতে ছাব্বিশ শেষ। দেড় বছর নামকাওয়াস্তে জুনিয়ারশিপ করেছি। চেম্বার ছেড়ে দিয়েছি দুমাস হলো। পড়াশোনা আর টুকটাক লেখালেখি ছাড়া কিচ্ছু পারি না। অন্য কিছু চেষ্টা করলে একটা জীবন নষ্ট করা হবে। স্টিভ জবস শুনি আর কষ্ট পাই- তোমার যা ভালো লাগে তাই করো...।

“ধর্ষকের নুনু কেটে দেয়া ও অন্যান্য প্যাঁচাল” পড়ে সিনিয়ার আলী ভাই ফোন দিয়েছিলেন। এমনি চেম্বারে কাজ নিয়া গালি খাই আবার যদি দেখে কি সব লিখি। রাত ১২ টায় ফোন। ঘাবড়ে গেলাম। না- উনি বললেন আমার লেখালেখি করা উচিত। এবং সিরিয়াসলি তাঁর একটা পরিকল্পনার কথাও বললেন। লেখালেখির কাজে আমার প্রফেশনাল এঙ্গেজমেন্ট চেয়েছেন। তার আগে তাঁর নিজের পাকাপাকি সিদ্ধান্তের দরকার আছে। পরের কথা পরে।

জিয়া ভাই তো বলে দিলেন আসছে শীতে বিয়ে করতে হবে। সংসার নাকি আল্লা চালাবে! বোঁ বোঁ করে মাথা ঘুরছে। সামনের বর্ষা পেরুলে শীত। বুকে কোন বর্শা বিঁধে কে জানে। এ বর্ষা নিশ্চয়ই রবীন্দ্রনাথের ‘আজি ঝর ঝর মুখর বাদর দিন’ নয়।

ভাবছিলাম ফুল টাইম লিখবো। মাথা গিজগিজ করছে। লেখার সময় পাচ্ছি না। বিয়ে করলে পরিকল্পনা এক্কেবারে ভেস্তে যাবে বলে মনে হচ্ছে। কেমনে পালাবো বুঝে উঠতে পারছি না। কেমনে বলি বিয়ে করবো না! অথচ সংসার কোন কালেই ভালো লাগে না।

মাঝে মাঝে বুদ্ধিও আসে। বেশিরভাগই কুবুদ্ধি- টাকাওয়ালা লোকের মাইয়া বিয়া কইরা ফালানো। সুপ্রিম কোর্টের লাইসেন্সটা কাজে লাগানোর এখনই সুযোগ! বসে বসে লেখা যাবে। এরকম সম্বন্ধ মাঝে মাঝে আসেও। মেয়ের ভালো না লাগলে ডিভোর্স দিয়ে নিজে থেকেই চলে যাবে। একটু কষ্ট হবে হয়তো- নগদ মোহর দিয়ে বিয়ে করলে সুবিধা। এক লাখের মধ্যে রাখা যাবে। এর বেশিতে আমি রাজি হলে তো! বিয়ের পর প্যানপ্যান করলে ভাগ! কিন্তু বাকি-মোহর কমসে কম দশ লাখ। ছাড়াছাড়ি হলে কোথা থেকে দিবো?

দেখলাম চার্লস ল্যাম্ব অনেক আগে সেইম ফন্দি এঁটেছিলেন! রঙিন স্বপ্ন ছিলো তাঁর- যদি কখনো বিয়ে করেন জমিদারের মেয়ে বিয়ে করবেন এবং তখন তিনি শুঁড়িখানায় বসে ঠাণ্ডা ব্রান্ডি জল দিয়ে পান করতে পারবেন। পকেট গড়ের মাঠ অথচ শুঁড়িখানায় এসে পড়লাম! ঐ যে কোণায় ওমর খৈয়াম বসে আছে। লোকটা এখানেই জীবনটা পার করে দিলো।
“পান করো। কারণ তুমি জানো না কোথা থেকে এসেছো,
পান করো। কারণ তুমি জানো না তুমি কোথায় যাবে।”

কোথায় যাবো জানি না বলেই তো ক্লাস ফাইভেই স্কুল ছেড়েছিলাম। হেডমাস্টার মরতুজা স্যার বাড়ি এসে সে খবর দিয়েছিলো পনরো দিনের মাথায়। কারো বিশ্বাস হচ্ছিলো না আমি স্কুল ছেড়েছি। মগরেবের সময় জিয়াদাদার হাতে যে প্যাদানি খেয়েছিলাম তা সম্ভবত নরকে পাপিষ্ঠের কপালে জোটে। মাতাল তো ছিলাম সেদিন - আজ হাড়ে হাড়ে বড় হিসেব করে চলতে হয়।

মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর অপরাধে এক ব্যক্তিকে পুলিশ আদালতে চালান দিয়েছে। জবানবন্দিতে সে বলছে- মাতাল অবস্থায় গাড়ি না চালিয়ে আমার উপায় নাই। বউ বাড়িতে মদ খেতে দেয় না। পুরো বোতল আমাকে গাড়িতে বসেই শেষ করতে হয়!

আমেরিকান জামাইয়ের এ অবস্থা! বাংলাদেশের ছেলেরা তো বউয়ের কাছে নেহাত মুরগি। বিয়ে করে প্রথমে বিড়ি ছাড়ে। তারপর কালেভদ্রে যে মদ খেতো- তাও। অবশেষে আড্ডা। একদিন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা না দিলে যাদের ভাত হজম হতো না একসময় তাদের টিকিটিও দেখা যায় না। “অবিবাহিতরা হচ্ছে সেরা বন্ধু, সেরা মনিব, সেরা ভৃত্য, কিন্তু সবসময় এরা সেরা প্রজা নয়, কারণ পালিয়ে যাবার মত যথেষ্ট হাল্কা থাকে তারা; প্রায় সব ফেরারিরই এ অবস্থা”- মহামতি বেকন ভয়ানক প্রাসঙ্গিক।

চার্লস ল্যাম্বের বুদ্ধিটা ভালো কিন্তু এ লেখা পড়ার পর কোন ধনাঢ্য ব্যক্তি আমার সঙ্গে তাঁর মেয়ের বিয়ে দেবেন বলে আশা ছেড়ে দিয়েছি।

ঢাকা, ০৩।০৬।২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১১:১৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×