আমাদের এলাকায় বকরি-পাড়া নামে একটা পাড়া ছিলো। আব্দুল্লা বকরি আমার ক্লাসমেট। নামকরণের শানে নুযূল এতক্ষণে পাঠকের বুঝে ফেলার কথা! রিউমারঃ এ পাড়ার এক লোক বকরি চরাতে গিয়ে নিজেই পাঁঠার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলো। অবাক হচ্ছেন? বিস্টিয়ালিটি বলে একটা টার্ম আছে। পর্ণ সাইটেও এরকম একটা ক্যাটাগরি আছে। ইয়োরোপের লোকজনের কুত্তা পোষা নিয়া বহুত মুখরোচক গল্প আগে বিশ্বাস হতো না। এখন অস্বীকার করি না।
একটা ভিডিও ছিলো এরকমঃ শো-রুমে সাজিয়ে রাখা প্লাস্টিকের মডেল/ডলের বুকে পাছায় হাত বুলাচ্ছে এক যুবক! ইদানিং বহুত প্রাঙ্ক বের হয়। ইউটিউবে সার্চ দিনঃ টাচিং ১০০ গার্লস বুবস ইন পাবলিক। গ্রিক দেবীর সুডৌল বুক। হেফাজতের ওজু নষ্ট হলে দোষ তো বাংলাদেশের!
সিনিয়র আলী ভাইয়ের কাছে গোঞ্জা মিয়ার গল্পটা শুনেছিলাম।
গোঞ্জা মিয়া ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞেস করলোঃ ওজু ভেঙ্গে গেলে কী করবো? হুজুর বললেন, ক্যান আবার ওজু করবা। গোঞ্জা মিয়া জিজ্ঞেস করলোঃ ধরেন নামাজে দাঁড়িয়ে ওজু ভেঙ্গে গেলো। হুজুর বললেন, আবার ওজু করে নামাজে দাঁড়াবে। গোঞ্জা মিয়া ফের প্রশ্ন করলোঃ মনে করেন দু’রাকাত হয়ে যাওয়ার পর ফের নষ্ট হয়ে গেলো। আবার কি ওজু বানানি লাগবে? হুজুর বিরক্ত হয়ে বললো, গোঞ্জা মিয়া! তোমার নামাজ পড়া লাগবেনানে, তুমি পাইদ্যাই বেড়াও!
গ্রিক দেবীর অমন বুক আর লদলদে পাছা দেখে হেফাজত কতবার ওজু নষ্ট করবে আর কতবার রিনিউ করবে? তার চেয়ে “মূর্তি” সরানোই ভালো। পানি বাঁচে। কাপড়ও বাঁচে।
মূর্তি অপবাদ দিয়ে সুপ্রিম কোর্টে স্থাপিত গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলা হলো। খোদার কসম, মূর্তি ট্যাগ দিয়া রাতের আঁধারে ভাস্কর্য অপসারন দেশের পুটকি মারার পথ অবারিত করবে। “তুই মুসলমানের বাচ্চা, তোর পুটকি ফাটে কেন?”- বলতে চাচ্ছেন তো? ভবিষ্যতে জাতির জনকের ভাস্কর্য মূর্তি বলে অপসারণের ষড়যন্ত্র হলে জাতি হিসেবে মুখ দেখানো সম্ভব হবে না। আইন দিয়ে সন্ত্রাস কিংবা ষড়যন্ত্র ঠেকানো যায় না। আইন বড়জোর ভয় দেখাতে পারে। আইনের উদ্দেশ্যও তাই। শর্ষে ভূত থাকলে সে ভিন্ন আয়োজন- ওঝার নয়।
ভেলকিবাজির শিকার ইসলামের ইমেজ ধ্বংসকারী একটা জনগোষ্ঠীর কথা বলছি। হেফাজতি মুসলমানরা দেশ দেশ করে বটে তাদের সাম্প্রদায়িক চিন্তাটা জাতিগতভাবে লজ্জার। তাদের মামার বাড়ির আবদারে প্রগতিশীল রাজনৈতিক সরকারও বিক্রি হয়ে যায়। সুযোগে দাও মারে বাইরের ষড়যন্ত্র যারা দুনিয়ার রাজনীতিকে এক আঙুলে নাচায়।
প্রধান বিচারপতি বলেছেন, “সুপ্রিম কোর্টের সামনের ভাস্কর্যকে কেন্দ্র করে আমি কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা চাই না। এটি সরিয়ে নেওয়া হোক।” “ন্যায় বিচারের প্রতীকী ভাস্কর্য হিসেবে ও সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ আমার ভাস্কর্যটি স্থাপন করেন।”- মৃণাল হক বলছিলেন। অবশ্য “ন্যায় বিচারের প্রতীকী ভাস্কর্য” না থাকলেও কিছু আসে যায় না। কোর্টে যাই বা না যাই, আমি সুপ্রিম কোর্টের তালিকাভুক্ত উকিল বটে! আদালতের ঘুষ খাওয়ার গল্প করলে অবমাননার মামলা খাইয়া ফাক হয়ে যাবো।
ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারী ওলামাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেনঃ “আমি নিজেও এটা পছন্দ করিনি। বলা হচ্ছে এটা নাকি গ্রিক মূর্তি। আমাদের এখানে গ্রিক মূর্তি আসবে কেন? আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা এখানে থাকা উচিৎ না। গ্রিকদের পোশাক ছিল এক রকম। এখানে আবার দেখি শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে। এটাও হাস্যকর হয়েছে।” পত্রিকা থেকে কোট করলাম।
শাড়ি পড়াতে নিশ্চয়ই গ্রিক দেবীর ইজ্জত যায়নি। দেশটা দুদিন পর চুড়ি পরে বসে থাকবে, প্রগতির ব্যাচেলররা চুক চুক করে দেবীর মাই চুষবে- তার বেলা?
শুধু মূর্তি না - সমান তালে ভাঙ্গা হচ্ছে ভাস্কর্য। একটারও তদন্ত হয় না।
২০০৮ সালে এয়ারপোর্টে “অচিন পাখী” শিরোনামে লালন ভাস্কর্যটি গুড়িয়ে দেয় বর্বরেরা। একই বছর মতিঝিলের বলাকা ভাস্কর্যটি ভেঙ্গে দেয় মৌলবাদীরা।
২০১২ সালে গুজব রটিয়ে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ মূর্তি ভেঙ্গে-পুড়িয়ে দেয়া হয়। সে বছর ফেব্রুয়ারীতে বনানীর নেভাল হেডকোয়ার্টারের সামনে মৃণাল হকেরই “অতলান্তিকে বসতি” ভাস্কর্যটি কে বা কারা ভেঙ্গে দেয়। তার কিছুদিন আগে নেভির পক্ষ থেকে ভাস্কর্যটিকে মূর্তি হিসেবে উল্লেখ করে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল শিল্পী মৃণাল হককে!
২০১৩ সালে সিলেটে জুম্মার নামাজের পর জঙ্গি মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাংচুর ও মাতৃভাষা দিবসে দেয়া ফুলে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছিলো। সে বছর ঝিনাইদহের এক হাইস্কুল প্রাঙ্গনে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ভাংচুর করা হয়।
মৃণাল হক বলে দিয়েছেন, “সব কিছুকে মূর্তি বলে তা সরানোর দাবি মেনে নেয়াটা হবে আত্মসমর্পণ। এরকম দাবি মেনে নিলে দেশে থাকার মতো পরিবেশ থাকবে না।” মাথামোটা মুসলমানদের খুশি করতে একটা কবিতার জন্যে ১৯৭৪ সালে কবি দাউদ হায়দারকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিলো। দেশ ভেসে যাচ্ছে যাক ক্ষমতার চেয়ারটা যেন বাঁচে।
এইসব আমি বলছি কেন? আমার জানের কি “হেফাজতের” দরকার নাই? নাকি বিনা ভিসায় জার্মানি যাওয়ার ফন্দি? লাথিটা আস্তে মারবেন প্লিজ, আমি ইন্ডিয়া যেতে পেলেই খুশি। ওখানকার পথ ঘাটও কিছুটা জানাশোনা আছে।
# দেলাওয়ার জাহান
ঢাকা, ২৬.০৫.২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৫:১১