গোপাল ভাঁড়কে রাজা জিজ্ঞেস করলেনঃ আচ্ছা গোপাল তোমার মতে সবচেয়ে আরামদায়ক কাজ কি?
গোপাল একেবারে চাঁপাই নবাবগঞ্জের ভাষায় বল্লোঃ “গোস্তাকি মাফ করবেন জাঁহাপনা। আমার মনে হয় ঝাড়া-ফিরা মানে হাগা অধিক আরামদায়ক কাজ।” প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়া’র মত মার্জিত শব্দ গোপাল জানতেন না সেদিন। শব্দগুচ্ছের বয়স ও গোপালের বয়সী নয়। গোপালের উত্তরে রাজা বিব্রত হলেন। বাথরুম ওয়াশরুম এগুলো তো এই গতকালের শব্দ।
কনে কে বরপক্ষের প্রশ্নঃ বলতো মা সবচেয়ে মিঠা জিনিস কি?
নবাবগঞ্জের মেয়ে। ঝটপট উত্তর। “লবণ”। মেয়ে পাস। লবণ ছাড়া চিনির ক্ষীর রান্না করে খেয়ে দেখেন, মিঠা নাই। “পাত্রী পছন্দ হইছে। বিহা জুড়ো।” ছেলের দাদু বিয়ের পাকা কথা দিয়ে ছাতা ফুটিয়ে বাড়ি ফিরে।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র একদিন নৌকা বিহারে বের হলেন। সঙ্গে ওয়ান অ্যান্ড অনলি গোপাল। প্রাতঃরাশ না সেরেই বের হয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পর রাজামশাই প্রকৃতির ডাক ফীল করলেন। মুশকিল হলো সাড়া দেবেন কোথায়?
নৌকা ভিড়াও গোপাল- আদেশ হলো। নৌকা তখন মাঝ নদীতে।
“জলদি করো ইয়ার।” রাজার তীব্র বেগ পেয়েছে। পানিতে সারাও যায় না সহাও যায় না। গোপাল মনে মনে হাসে। দশ মিনিট পর এক জায়গায় নৌকা ভিড়ালে রাজা এক লাফে পাটক্ষেতে ঢুকে পড়লেন।
কাম সেরে রাজামশায় ফিরলেন। “গোপাল, মনে হয় তোমার কথাই ঠিক। ওহ বাপরে বাপ।” রাজা হাফ ছাড়েন। গোপাল ও স্বীকৃতি পায়।
আমরা পাড়ার ছেলেরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়া’র কর্মটি অধিকাংশ সময় মাঠে ঘাটে শৈশবের সঙ্গী বা কাজিনদের সঙ্গে সারতাম। আগান-বাগান, জোলা আর কানটা মানে বাড়ির পিছনের জায়গা বিশেষ করে ঝোপ ঝাড়গুলো ছিলো আমাদের শৌচাগার। বাঁশবাগান ছিল মুরুব্বিদের চয়েস। গ্রামের বেশিরভাগ মহিলা-পুরুষ শিডিউল মেনে কম্মটি সারতেন। তখনও ঘরে ঘরে পায়খানা হয়নি। রিংপাটের পায়খানা ছিল আমাদের। সাদা কিলবিলে পোকার ভয়ে ঢুকতাম না।
যত্রতত্র মলত্যাগের কারণে শিশুকালে গু সাথা মানে গুয়ে পা ফেলা ছিলো অতি সাধারণ ঘটনা। বর্ষার দিনে বাগান দিয়ে হাঁটা যাইত না- খিতখিত করতো। সে এক জঘন্য ব্যাপার।
বছর চারেক আগে মনিরার কাছ থেকে এরকম একটা এসএমএস পেয়েছিলামঃ খুব ভোরে/ মৃদুমন্দ বাতাসে/ বাড়ির বাইরে/ খোলা মাঠে/ .............../ কখনো হাগিয়াছো কি? “হুম হাগিয়াছি, বহুত হাগিয়াছি।”
প্রতিবেশিকে পাকা পায়খানা বানাতে দেখে গরিবের স্কুল-পড়ুয়া ছেলে বায়না ধরলোঃ আব্বা আমাদের একটা পায়খানা করো না জি। কানটায় পায়খানা করতে খারাপ লাগে।” ছাপোষা বাপের উত্তরে দীর্ঘশ্বাসঃ “কী খাইয়া হাগবি বাপ? হামারঘে কী অত টাকা আছে।”
চাঁপাই নবাবগঞ্জের বন্ধু মালেককে এস এম হলের কে না চিনে? মালেকের নিজের ঘটনা। রমজান মাস। ডায়রিয়া হয়েছে। এদিকে এক ইফতার মাহফিলে তার দাওয়াত। অতিথি গোছের লোক। অসুস্থ শুনে এক জুনিয়র তাকে নিতে এসেছে। যেতেই হয়।
নবাবগঞ্জের দিয়াড় এলাকা। কাঁচা, খটখটে মাটির রাস্তা। সাইকেল তিড়িং বিড়িং লাফায়। মালেকের নাট বল্টু সব ডায়রিয়ায় ঢিলা। আচমকা সাইকেল খালে পড়া মাত্র লুঙ্গি সারা। কাপড় নষ্ট হয়ে গেছে! মালেক সাহেব বন্ধুর বাসায় লুঙ্গি পালটিয়ে ইফতার মাহফিলে যায়।
প্রতিবেশি প্রয়াত মোস্তফা বিশ্বাসের একটি দরোজাবিহীন পুরনো আমলের খোলা-মুখ পায়খানা ছিলো। পানির বধনা মানে বর্তন দরোজায় রেখে বসতে হত। জরুরি অবস্থায় আমিও দু’চারদিন গেছি।
রমজান মাস। যে কারনেই হোক মোস্তফা বিশ্বাস সেদিন রোজা ছিলেন না। মুরুব্বি মানুষ। কিন্তু আকামটা ঘটলো অন্য জায়গায়। দুপুর বেলা। পায়খানায় বসে বিড়ি টানতে টানতে হাগু করছিলেন। আগুন বাইরে ফেললে কেউ দেখে ফেলতে পারে। বিড়ির চুঁটি ফেলে দিলেন পায়খানার ভিতর! আগেই বলেছি খোলা-মুখ পুরনো বাথরুম। গরম কাল। কয়জন জানে বায়োগ্যাস না ফায়োগ্যাস না মিথেন। চুঁটি ফেলবি কি ফ্যাল দাউ দাউ করে আগুন ধরে গেলো। বিপদের উপরে বিপদ। পায়খানার উপর দিয়ে তেত্রিশ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ লাইন গেছে। চোখের পলকে বিশ্বাসের নিম্নাঙ্গ পুড়ে শেষ। রাজশাহি মেডিকেলে চিকিৎস্যার এক মাস পর হাঁড়ি মুখে বাড়ি ফিরেন মোস্তফা বিশ্বাস।
মোস্তফা বিশ্বাসের দোসরা তরফের ছেলে বাক্কার ল্যাংড়া। মালেক সাটারিং এর বেটা সালেক বা জালালের বেটা জিয়া কিংবা নুরুলের সঙ্গে ঝগড়া লাগলেই “হোল-পুড়ার বেটা হোল-পুড়া” বলে ওকে গালি দেয়। গালির ছন্দ আছে বটে।
কম্মটি সারার সময়ও আমরা বেকুবের দল বকবক করতাম। সন্ধ্যার লগেভগে হলে তো কথায় নাই। ভুতের ভয় তাড়ানোর জন্য জোরে জোরে গল্প করতাম। একটা গল্প মনে পড়ে গেলো। দুলালের মা পায়খানা গেলে কখনো দুয়া পড়তেন না। দুয়া মানে আল্লাহুম্মা আউজুবিকা মিনাল খুবসে অয়াল খাবাইসে। দুলালের মার ভয়ঃ ভুত তাড়ানোর দুয়া পড়ার কারনে যদি শয়তান ক্ষেপে গিয়ে অ্যাটাক করে বসে! জানি না দুলালের মা কোথায় আছে।
যা বলছিলাম, কম্মটি সারার সময় ও আমরা বেকুবের দল বকবক করতাম। গল্প করতে করতে হাগার মজা ভারতে এখনো আছে। পয়োঃ ব্যবস্থার নিম্নমানের ও একটা পজিটিভ দিকঃ মাঠের উর্বরতা বাড়ে। আবার খোলা মাঠে হাগতে গেলে আপনার চারদিকে যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা দরকার। অদূরে কারো উপস্থিতিতে আপনার ত্যাগ-ক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হবার কথা। ভারতে মাঠ পড়ে আছে। তারা দিব্যি পারে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামেও মাঠে ঘাটে মলত্যাগের ব্যাপারটা আছে। ঢাকায় বা দিল্লিতে সে সুযোগ নাই। তবে যত্রতত্র মুত্রত্যাগে ঢাকার প্রথম দিকেই থাকার কথা। পারলে প্রকাশ্যে হাগতেও ছাড়ে না। এ নিয়ে কপাল শিরোনামে কয়েকটা লাইন লিখেছিলামঃ
শহরে গাছের গোড়া মুতের আড়ত
সব শালার মুতের বেরাম
গাছ দেখলেই মুতার বারাত লাগে
(কেউ কেউ বিচ্ছিরি হাগে)
হাবুমোন্নার মত
তুমি যেমন উঠতে বসতে
আমার কপালে মুতো।
....................................
প্রায়ই দেখা যেত মসজিদের পেশাবখানায় কেউ হেগে রেখেছে। বাচ্চারা সাত সকালে মক্তবে আসে। প্রসাব করতে গিয়ে চাপ সামলাতে না পেরে “ছেড়ে” দেয়।
ইয়েমেনের বাদশা আব্রাহার খুব রাগ। মক্কায় হজ্জ চলবে না। এখন থেকে সানায় হজ্জ হবে। আব্রাহা কাবা ঘরের আদলে রাজধানী সানায় ‘কাবা’ তৈরি করে ঘোষণা করলঃ এখন থেকে মানুষ মক্কায় নয়, সানায় আসবে।
মক্কাবাসির কাছে খবর পৌঁছাল। তারা উদ্বিগ্ন।
আব্রাহার ‘কাবা’ রেডি। দুদিন বাদেই উদ্বোধন হবে। সকালে দেখা গেলো তার নির্মিত ‘কাবা’র ভেতরে রাতেরবেলা কে মলত্যাগ করে পালিয়েছে।
ক্রোধে ফেটে পড়লেন আব্রাহা। মক্কা আক্রমণের ঘটনা ও পরিণতি সকলে জানি।
মোল্লাটোলা প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। মূল বিল্ডিঙে সবার জায়গা হয় না। ছাত্র সঙ্কুলানের নিমিত্তে পশ্চিমে আরো দুইটা পাকা ঘর নির্মাণ করা হলো।
স্কুলের পশ্চিমে পাখরা বংশের একটা মাত্র ঘর বাস করে। বিশ বছর আগের কথা। নাম ভুলে গেছি। কর্তা মাছ ব্যবসায়ি। বাড়িওয়ালী আকাট মূর্খ আর ঝগড়াটে। ছেলেগুলো বাপের মত কুচকুচে কালো। স্কুলে আসতো না।
নতুন বিল্ডিঙয়ে টিনের চাল। আলো বাতাস চলাচলের জন্য দেয়ালের উপরাংশে বেশ কিছুটা ফাঁকা রাখা হয়েছে। বিল্ডিঙয়ের দু’রুমের একটায় ক্লাস থ্রি- থিরি খায় বিড়ি- আমরা জায়গা পেলাম। পাশের রুমে ক্লাস ফোর পাকা চোর। তার আগে গাছের নিচে টোলে পড়ানোর মতোই মতি স্যার মান্নান স্যাররা আমাদের পড়াতেন।
একদিন ক্লাসে গিয়ে দেখি এক্কেরে সামনের হাই বেঞ্চের উপর কে জঘন্যভাবে হেগে রেখেছে। কুমড়ার বড়ি বা লাটিমের মতো করে করে হেগেছে। না পানি না টিস্যু। তখন টিস্যু! স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কাজ শেষ করে সীট বেঞ্চের উপরে পুচ্ছ ঘষেছে।
জানটা খিচড়ে গেলো। পাশের বাড়ির পাখরা সন্তানদের বেয়াদবি দেখেও চুপ থাকতে হলো। কে বাড়িওয়ালী শ্রিউকে টেম করবে? শেষে আমাদেরই পরিষ্কার করা লাগলো!
রামচন্দ্রপুর হাটের গদাধরের মিষ্টির দোকানের পাশের হোমিও দোকানটি রশিদ স্যারের। বেলা এগারোটার দিকে বাজার করতে গিয়ে দেখলাম স্যারের দোকানের সামনে তিন চারটি কুকুর মরার মত পড়ে আছে। জানে পানি নাই। “আপনার উপর কিছু কর্তব্য কিন্তু এসে পড়ে স্যার। কুকুরগুলা না খেয়ে মরার জোগাড়। আপনার চোখের সামনে এটা হতে পারে না।”
স্যার হাসলেন। “শুন, আগে বস তারপরে কহছিঃ হোটেলের বাসি-পচা খাবার তো এখন আর কেহ ফেলে নারে, কুকুরগুলাও আগের মত খাইতে পায় না।” পরে যা বললেন তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। “আগে মানুষ মাঠে ঘাটে হাগতো মনে কর, কিছু না পাইলে শেষমেশ কুকুরে কাঁচা গু খাইত। এখন সেটাও নাই। ঘরে ঘরে পায়খানা। কে আর খোলা মাঠে হাগে কহছিস?”
“শুন”, স্যার বলতে থাকেন, “আগে ধর গাঁ গেরামে বিহা শাদি হইতো। মুসলমানি হইতো। কুকুর টুকুরগালা মাঝেমধ্যে ভালোমন্দ খাইতে পাইত। এখন তো তাও নাইরে। কমুনিটি সেন্টার। ফুটানি বেড়েছে। কুকুরের তো আর দাম বাড়েনি।”
মার্ক টোয়েন মনে পড়লো। দাম বাড়েনি মানে? “যত বেশি মানুষকে জানছি, ততো বেশি কুকুরকে ভালো বাসছি।” তা হোক। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ বলেছেন। একবার আমি মার্ক টোয়েনের উদ্ধৃতি দিলে বন্ধু (সুফি) আল মামুন মন্তব্য করেছিলঃ আল্লাহ মানুষকে অকৃতজ্ঞ করেই সৃষ্টি করেছে দোস্ত। মার্ক টোয়েন আর নতুন কী?
রশিদ স্যারের কথায় একদল বেওয়ারিশ কুকুরের দাওয়াত খাওয়ার গল্পটা মনে পড়ে। গাঁয়ের এক বিয়ের অনুষ্ঠান। কতিপয় সারমেয় সেখানে কামড়া কামড়ি করে সারাদিন দাওয়াত খেলো। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। “মেলা তো খালি, লে বাড়ি চল”- মুরুব্বি সাগরেদদের পাত্তাড়ি ঘুছাতে বলে। “হুজুর আরেকটু দাঁড়ান, রাইতের মত খাইয়া যাই”- এক নতুন তালবিলিম রিকোয়েস্ট করে। “বুঝছি, মাংতা (মুগুর) না খাইলে যাবি না।” “মাংতা কী হুজুর?” “খাইলেই বুঝবি।” জুনিওর কুকুরগুলো ভাবলো মাংতা নিশ্চয় কোন উপাদেয় খাবার।
গ্রামের অধিকাংশ ছেলেপিলের কুকুর মারার প্রবণতা থাকে। কুকুর দেখলেই হল- মার ইট। শিশুদের “তু তু ধর ধর” বলে ভয় দেখানোর ফলেই কি বড় হয়ে কুকুর-মারা কর্তব্য মনে করে? ভারতবর্ষে ন্যাক্কারজনকভাবে শিখ মারার মত? কত নিরীহ কুকুরকে যে অকস্মাৎ ইট মেরে খাম করেছি তার হিসাব নাই।
কুকুরের দল কামড়া কামড়ি করছিলো। এমন সময় বিয়ে বাড়ির এক বদের-হাড্ডি ঝগড়ারত ঘেউদের টার্গেট করে দিলো এক মাংতা। লাগবি কি লাগ লোভী তালবিলিম সেই কুকুরটার মাথায়। “হুজুর চলেন, প্যাট ভইরা গ্যাছে” লাঞ্ছিত কুকুরের দল বিদায় নেয়। বিয়ের প্যান্ডেল ভাঙ্গে।
মাংতা বা মুগুরের কথা উঠলে ডেগার কথা মনে পড়ে। আট দশ বছর আগের কথা বলছি। পল্টু বিশ্বাস একটা কুকুর পুষত। পোষা কুকুর ডেগা। একদিন দেখি বিশ্বাসের বড় বউ- মোহাম্মদ আলির বিধবা মা- ডেগাকে মুগুর দিয়ে পিটাচ্ছে। ভাবলাম কুকুরটা পাগল হয়ে গেছে বলে হয়তো মেরে ফেলছে। আসল ঘটনা জানলাম তিন দিন পর। বিশুকানার ছেলে-বউ মানে মিতুর মার কাছ থেকে। “ওদের অবস্থা খুব খারাপ। কুকুর কে খেতে দিবে কী, আখা জ্বলে না।” শুনে থ হয়ে যাই। পল্টু বিশ্বাসের সংসারে টানাপড়েন চলছিলো। ডেগার খোরাকি জুটেনি।
ডেগার জন্য শিরোনামে একটা কবিতা লিখেছিলামঃ
হায় অমরতা
দেয়ালে তোমার সেঁটে দাও নাম
দেলাওয়ার জাহান।
মানুষের জন্য কিচ্ছু করিনি আমি
পল্টু মামুর কুকুরটাকে সস্নেহ ডেগা বলে ডাকা ছাড়া।
কুকুরেরও ক্ষুধা ছিলো তাই
পল্টু মামুর বড় বউ-
পল্টু বিশ্বাস আমাকে মামু বলতো কেন জানি না-
পল্টু মামুর বড় বউ- মোহাম্মদ আলির মা
সপরিবার-
ডেগাকে পিটিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরে ফেললো একদিন
আমাদের চুতমারানি প্যাট
অভাবে সে বড় হয়ে যায়
পল্টুদের হাঁড়ির খবর সেইদিন
বিশুকানারা চারিয়ে চারিয়ে উপভোগ করে
...................................................
কয়েকদিন আগের কথা। বন্ধু শিবলি বলছিলোঃ এক অনুষ্ঠানে ফুটফুটে একটা বাচ্চা। খুব কিয়ুট। কোলে নেবে নেবে ভাবছে এমন সময় “আম্মু হাগু করে দিয়েছি” বলে ভেউভেউ শুরু করে দিলো। শিশুর আর কী দায়। তবু তো নিজের প্যান্টেই সেরেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী আমরা তো বাথরুমের কমোড আর প্যানের উপরেই সেরে রাখি।
“যে সবে হাগিয়া ঢালে না পানি/ সে সব তাহার জন্ম নির্ণয় ন’ জানি” আবদুল হাকিমের কবিতা বাথরুমে প্যারোডি হলে কার কি? সাহিত্য সর্বজনীন!
এফ রহমান হলের বাথরুমে দেখলামঃ “বাথরুম ব্যবহারে বংশের পরিচয়।” তা আমরা প্রতিবার পরিচয় রেখে আসি বটে।
এস এম হলের কথা বলি। বাথরুমগুলো ‘বাচ্চারা’ প্রায় নোংরা করে রাখে। কাম সেরে ফিরেও দেখে না। মার্কার দিয়ে দেয়ালে লেখাঃ “হাগিয়া পানি ঢালুন, কেউ আপনার শিল্পকর্ম দেখতে আগ্রহী নয়।” “আপনার হাগু আপনার ব্যক্তিগত সম্পদ, কমোডে ফেলিয়া যাবেন না!”
বাথরুমে পানি ঢালার জন্য কতো আদেশ, অনুরোধ, উপদেশ। দেখা যাকঃ “হাগারাম হেগে যা, বেশি পানি ঢেলে যা।”, “মনোযোগ দিয়ে হাগুন। খেয়াল করে পানি ঢালবেন। “ঐ বেটা, পানি ঢাল কৈলাম!” “কী চিন্তা করতেছ? পানি ঢালার কথা ভুলিয়া যাইয়োনা।”। নসিহত শুনলে তো!
লেখা রয়েছেঃ “কমোডের উপরে না, ভেতরে হাগুন।” পাশে আরেকজন লিখছে “নো টেনশন বস, আমার টার্গেট ভালো!”
একটা বাথরুমে লেখা এরকমঃ “এখানে সকল ধরনের বাদ্য-যন্ত্র বাজানো নিষেধ বিশেষ করে গীটার!”
সকাল বেলা সিরিয়ালে ছিলেন এক বড় ভাই। হলের মেস বয় সুমন বের হয়ে গেলো। ভাই ঢুকেই দেখে বিচ্ছিরি অবস্থা। “দাড়া মাদারচোদ” বলে দিলেন হুঙ্কার। সুমন্যা ভোঁ দৌড়। মেসের ছেলেপিলে ইচ্ছা করে বাথরুমের উপরে হাগে বলে অভিযোগ।
পূর্ব ব্লকের নীচতলার বাথরুমে এ অবস্থা চলতেই থাকে। জানা গেলো ইংরেজি বিভাগের দৃষ্টি প্রতিবন্ধি রনির কাজ। চোখে দেখে না। যেখানে সেখানে বসে পড়ে। বাথরুমের বারোটা বাজায়।
একই ব্লকের নীচ তলার মাথা বরাবর দোতালার সিঙ্গেল বাথরুমে লেখা ছিলোঃ “খবরদার পাদবি না!” চাবি দিয়ে খোদাই করা।
ফার্স্ট ইয়ারে হলের বারো নাম্বার রুমে কিছুদিন ছিলাম। এক রাতে দেখা গেলো গোসলখানার পানির কলের মাথায় কোন শাখামৃগ ব্যবহৃত কনডম ঝুলিয়ে রেখে গেছে!
মেয়েদের হলগুলোতে কি সেইম কাহিনী? জানতে চেয়ে বান্ধবি তানিকে ফোন করেছিলাম। মেয়েদের হলের অবস্থা আমাদের মত এতো নাজুক নয় বলে দাবি করেছে।
এতো গেলো হলের ‘হাগিয়া ঢালিয়ো পানি’র কথা। পাবলিক টয়লেটের দিকে নজর দেয়া যাক।
পাবলিক লাইব্রেরি (শাহবাগ) এর তিন তলায় লেখাঃ “আপনি শিক্ষিত। বাথরুম ব্যবহারে প্রতিফলন প্রত্যাশিত।” সেখানেও বাম্পার ফলন। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে টিস্যু পড়ে আছে।
এক পাবলিক টয়লেটে লেখা দেখলাম, “আপনি যত বড় অহংকারী ব্যক্তিই হোন, এখানে এসে আপনাকে প্যান্ট খুলতেই হবে।”
পুরনো কৌতুকঃ
পানু দা একটা পাবলিক টয়লেটে গেছে। ভেতরে বসে দেখে দরজায় লেখা “ডান দিকে তাকাবেন না।”
তবুও পানুদা তাকালো। ডানদিকে লেখা “পেছনে তাকাবেন না”।
পানু দা ভাবলো কি আর হবে দেখি একটু...
এবার লেখাঃ “কুত্তার মতো এদিক ওদিক ঘুরছিস কেন। যেটা করতে এসছিস করে বেরিয়ে যা ...”
পানু দা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বেরিয়ে এলো।
ট্রেনে টয়লেট সেরে আয়নায় তাকাতে যাত্রী দেখে আয়না নেই, ইট দিয়ে লেখাঃ “এ দেশ আমার, এ দেশের সম্পদ আমার, তাই আমার অংশ আমি বুঝে নিলাম।”
টয়লেটে কিছু বিজ্ঞাপনও চোখে পড়ে। “রুনা মাগির ফোন নাম্বার” “ফোন সেক্স করতে কল করুন” “বয় টু বয়” ইত্যাদি ইত্যাদি।
শৌচকর্ম শেষ করে বধনা বধনা পানি ঢালা না হয় সময় সাপেক্ষ মানলাম, কিন্তু যেখানে আধুনিক কমোড আর ফ্ল্যাশ আছে সেখানেও নোংরামি। স্বভাব যায় না মলে। মলেও যায় না, মরলেও যায় না।
মানলাম বাঙালি আনকালচারড। সিঙ্গাপুর? যেখানে নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া থুতু ফেলা দণ্ডনীয়, শুনেছি লিফটে টুপ করে কেউ হাগু করে পালায়! মামুর বেটা, বেশি নিয়মের এক ঝামেলা। ফাকাররা লুকিয়ে হলেও বাঁদরামি করে। তবু করে।
আইনজীবীর পাত্রী সঙ্কট ও অন্যান্য গল্প/দেলাওয়ার জাহান থেকে নেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:৫২