অনেকদিন আগে দূরদর্শনে দেখা একটি সিনেমা এত ভাল লাগে যে ডায়রীকে সে গল্প বলি...অনেকদিন পর পড়ে সবাইকে সেটা শোনাবার সখ হচ্ছে...
সিনেমাটি শুরু থেকে দেখতে পারি নি আর ভাষাও বুঝি নি, তবু নিচের ক্যাপসন দেখে যা বুঝেছি তাই বলছি-
একটি ছেলে ট্রেনে করে গ্রামের বাড়ি ফিরছে আর কিছু পুরনো স্মৃতি ফিরে আসছে। তারা দক্ষিণী ব্রাহ্মণ। বাবা খুব গোড়া ও স্বাত্ত্বিক মানুষ। পুজো, হোম, যজ্ঞ নিয়ে থাকেন। ছেলে গ্রামে লেখাপড়া শেষ করে দিল্লীতে চাকরী করে এবং এক আধুনিকা সুন্দরী খ্রীষ্টান মেয়েকে বাড়ির অমতে প্রেম করে বিয়ে করে।
এসময় বাবার চিঠি পেয়ে সে গ্রামের বাড়ি যাবে ঠিক করে। মেয়েটিও যেতে চায়। ছেলেটি ভয় পায়, মেয়েটি বোঝায় সেও বাড়ির বৌ, সে ঠিক মা-বাবাকে বুঝিয়ে মানিয়ে নেবে। ইচ্ছে না থাকলেও ছেলেটি বৌকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করে।
সে সময় কোন উৎসব চলছিল। গ্রামের বাড়িতে বাবা অনেক পুরোহিতদের নিয়ে যজ্ঞে বসেছেন, ঠিক সে সময় বৌমা জুতো পায়ে সেখানে প্রবেশ করে অবাক বিস্ময়ে সব কিছু দেখতে থাকে। ছেলেটিও প্রবেশ করে এবং বাবার রাগত মুখ দেখে আতঙ্কিত হয়।
ছেলে ও বৌমা এগিয়ে এসে বাবাকে প্রণাম করতে গেলে বাবা পূজার পাত্র ছুড়ে মারেন।
এসব ভাবতে ভাবতে ট্রেনে ছেলেটির চমক ভাঙে। এবার সে গ্রামে চলেছে অসুস্থ বাবাকে দেখতে।
বাড়ি এসে সে অবাক হয় দেখে যে তার প্রতাপশালী বাবা সম্পূর্ণ শয্যাশায়ী। কিছুই প্রায় করতে পারেন না। দক্ষিণ ভারতে সবার বাড়ি বড় বড় দোলনা ঝোলান থাকে, বাবা সেই দোলনাতেই সারাদিন অচেতনের মত পড়ে থাকেন। মা সেবা-যত্ন করেন। বাবার আঙ্গুলগুলি কেবল কোন এক এজানা সুরে তালেতালে নাচতে থাকে। মা জানান ছেলে ও বৌমার আলাদা হয়ে যাওয়ার সংবাদ শুনেই বাবা এমন হয়ে গেছেন। ছেলে শুনে অবাক হয়। কারণ ভিনধর্মী বৌমাকে বাবা বা মা কেউই মেনে নেননি।
তার মনে পরে যায়, আগেরবার অপমানিত হয়ে বৌ সঙ্গে সঙ্গে হোটেলে গিয়ে ওঠে। সে অনেক বোঝাতে চেষ্টা করে যে বাবা হঠাৎ এ আঘাত মানতে না পেরে জ্ঞানশূণ্য হয়ে অমন আচরণ করেছেন। সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। বৌ অত্যন্ত অপমানিত বোধ করে এবং শহরে ফিরে যায়। সেও সঙ্গে যায়। কিন্তু, তাদের সম্পর্কে কি এক ভাঙ্গন ধরে। সুখি দিনগুলি আর ফিরে আসে না। সামান্য সামান্য কারণে অশান্তি হয়, বাবা-মার প্রসঙ্গ এলে তা আরো চরম আকার নেয়। শেষে ছেলেটি বলে তাদের সন্তান হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু মেয়েটি এই অশান্ত পরিবেশে শিশুকে আনতে চায় না। তারা বোঝে তাদের আলাদা হলেই সকলের মঙ্গল। মেয়েটি ছেলেটিকে ছেরে চলে যায়।
এরপরেই বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে ছেলেটি গ্রামে ফেরে। গ্রামের ডাক্তার তার বাবাকে দেখতে আসেন। তিনি জানান- শরীরের অসুখ নয়, মনের অসুখে তার বাবা শয্যাশায়ী।
গ্রামের সকলে ছেলেটির বৌয়ের খবর নিতে উৎসুক। ছেলেটি বিরক্ত হয়ে ওঠে।
গ্রামের মন্দিরে পুজো দিয়ে ফেরার পথে পড়শী কাকির বাড়ি তাদের কুশল সংবাদ নিতে যায়। সে সময় সে বাড়ির সমবয়সী বিধবা মেয়েটি ন্যাড়া মাথায় বেড়িয়ে আসে। তাকে দেখে ছেলেটি দুঃখ পায়। মনে পরে যায় ছোট থেকে মেয়েটি তার মার কাছে আসত। মাথায় একঢাল চুল, ফুলের মালা জরালে অপরূপা লাগত। সকলের, এমনকি মেয়েটি ও ছেলেটিরও ধারণা ছিল বড় হলে তাদের বিয়ে হবে। কিন্তু শহরে সে প্রেম করে বিয়ে করলে, মেয়েটিকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়া হয় আর এখন সে বিধবা হয়ে, সব চুল বিসর্জন দিয়ে বাবার সংসারে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে প্রায়ই ডাক্তার আসেন, ওসুধ পাল্টান, কিন্তু বাবার শরীরে কোন উন্নতির লক্ষণ নেই।
এবার বাবার দিক থেকে দেখাচ্ছে- ছেলেটি বাড়ি ফিরলে মা তাকে নিয়ে বাবার কাছে গিয়ে জোরে জোরে তার নাম ধরে ছেলেকে চেনাতে চেষ্টা করেন। অনেক কষ্টে বাবা ছেলের নাম চিনতে পারেন। কিন্তু সেই নামে তার আট বছরের এক শিশুকেই কেবল মনে পরে। যে খুব দূরন্ত, যে সব সময় তার সাথে সাথে ঘোরে। যাকে তিনি খুব ভালবাসেন, আদর করেন। এত বড় মানুষকে তিনি চিনতে পারেন না।
দোলনায় শুয়ে শুয়ে সারাদিন তিনি অদ্ভূত সুন্দর নাচ দেখেন। এক সুন্দরী নাচ করছেন আর তিনি দোলনায় বসে বোল দিচ্ছেন।
ডাক্তার ওসুধ খাওয়াতে এলে তার গোয়ালে বাঁধা গরুর কথা মনে পরে। যাকে তিনি জোর করে ওসুধ খাওয়াতেন। ছেলে পুজো দিয়ে বাবার কপালে ঠাকুরের টিপ পরালে আবার তার গোয়ালের গরুর কথা মনে পরে। যাকে তিনি মঙ্গল দিনগুলি পুজোর পর টিপ পরাতেন।
এসময় ছেলেটি নিসঙ্গ গ্রামে ঘুরে বেড়াতে থাকে এবং সবার কছে তার বিদেশী বৌ ও বাবার অদ্ভূত অসুখের প্রতি অযথা কৌতুহল দেখে বিরক্ত হতে থাকে।
ঘুরতে ঘুরতে সে গ্রামের স্কুলে আসে। দেখে সেখানে তার বাল্যবন্ধু এখন শিক্ষকতা করছে। তাকে পেয়ে ছেলেটি হাফ ছেড়ে বাঁচে। বন্ধুকে তার মনের দুঃখের কথা জানায়। বৌ তাকে ছেড়ে গেল, বাবার বাড়িতে অদ্ভূত সব আচরণ-সে দিশেহারা, বুঝে পায় না কি করবে। ডাক্তার জানিয়েছেন বাবার অসুখ শরীরের নয় মনের-একথা সে বন্ধুকে বলে। তিনি সারাদিন মনে মনে কি সব বোল আওড়ান এবং আঙ্গুলে তাল ঠোকেন –সে কথাও জানায়।
বন্ধুটি তখন তার ছোটবেলার স্মৃতি হাতড়ে বলে -তার মনে পরে কাকু একজন শিল্পী ছিলেন। শোনা যায় প্রথম জীবনে তিনি নিয়মিত গানবাজনা করতেন। যদিও পরে তিনি গৃহী হয়ে পাঠশালায় পড়াতেন এবং সারাদিন পূজার্চনা নিয়ে কাটাতেন।
এ প্রসঙ্গে সে ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করে- কাকুর প্রথম স্ত্রীর সম্পর্কে কিছু জানা আছে?
ছেলেটি বলে- তিনি দুশ্চরিত্রা ছিলেন তাই বাবা তাকে ত্যাগ করেন।
বন্ধু বলে- একথা সম্পূর্ণ মিথ্যে। আসলে কাকু শিল্পী ছিলেন এবং তার প্রথম স্ত্রীও শিল্পী। শোনা যায় তাদের বিবাহিত জীবন খুবই সুখের ছিল। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই গান করতেন। এমন কি কানাঘুষো গুজব আছে কাকুর প্রথম স্ত্রী ভাল নাচও করতেন।
তাঁর সাথে এখন আর এদের সম্পর্ক আছে কিনা বন্ধু জানতে চায়।
ছেলেটি জানায়- শহরের কলেজে পড়ার সময় সে তার সৎ মাকে অপমানিত করার জন্য অনেক খুঁজে খুঁজে তার কাছে যায়। তিনি এখন শহরের থাকেন।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে ছেলেটি আরো জানায় সৎ মাকে দেখে সে খুবই আশ্চর্য হয়। কারণ তিনি এখনও তার বাবাকে ভোলেন নি। তিনি তার মার সম্পর্কে, ঠাকুমা সম্পর্কে, গ্রামের সবার সম্পর্কে খুঁটিনাটি খোঁজ খবর নেন, তাকেও অনেক যত্ন করেন।
তিনি যে খুব সাত্ত্বিক ও পবিত্র সে ব্যাপারে তার মনেও কোন সন্দেহ নেই।
বন্ধুটি বলে –তার বাবা সুখি ছিলেম তবু কেন তাদের ছাড়াছাড়ি হল এবং কেন তিনি তার প্রিয় স্ত্রীর নামে এমন দুর্নাম দিলেন, তা ভাবার বিষয়।
এবার মার দিকে ফেরা যাক! তার স্বামী এখন অথর্ব। তিনিওও পূজার্চনা, ধর্মগ্রন্থ নিয়ে থাকেন, স্বামী ও পুত্রই তার জগৎ । সারাদিন তিনি স্বামীর সেবা করছেন। যে কোন কাজ তিনি স্বামীর সম্মতি নিয়ে শুরু করেন। কিন্তু স্বামীর আজকাল আর পুজো বা ধর্মকর্মে মন নেই। সব কিছুর উপর তিনি বিতশ্রদ্ধ।
সেই স্বামী সারাদিন কি ভাবেন! তিনি আসলে ছোট ছোট ঘটনায় বহু যুগ আগে নিজের প্রতিদিনে ফিরে ফিরে যান।
তার প্রথমা স্ত্রী অতি-চঞ্চলা-সুন্দরী। তিনি পা ছড়িয়ে বসে বসে ফুলের মালা গাঁথছেন, স্বামী এই দোলনায় বসে তাই দেখতেন। স্ত্রী গান গাইতেন, তিনিও সঙ্গে গলা মেলাতেন। তার বিধবা মাকে কেবল তিনি প্রচন্ড ভয় পেতেন। কিন্তু তার স্ত্রী শাশুড়িকে একটুও ভয় পেতেন না।
একদিন মা বাড়ি নেই, দুজনে দোলনায় বসে গান গাইছেন, হঠাৎ মা এসে উপস্থিত। তিনি বৌমাকে গঞ্জনা দিতে শুরু করলেন। বৌমা তাকে দুষ্টুমি করে আরো রাগানোর জন্য আস্তে আস্তে জানায় সে শুধু গান জানে তাই নয়, লোকে বলে সে খুব ভাল নাচও করে! শুনে শাশুড়ি আরো চ্যাঁচাতে থাকেন। ছেলে পালায়। বৌ মুখে কাপড় গুঁজে ফুলে ফুলে হাসতে থাকে।
এমনই আরেকদিন মা ঘরে নেই। ছেলেও বাইরে। বৌ নিজের ঘরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাজতে সাজতে আনন্দে তার শেখা ধ্রুপদী নাচ করতে থাকে। নিজের প্রতিবিম্ব আয়নায় দেখতে দেখতে উৎসাহ পায়। এদিকে স্বামী কখন ধিরে ধিরে ঘরে ফিরে স্ত্রীর কার্যকলাপ প্রশ্রয়পূর্ণ নেত্রে দেখতে থাকে। স্ত্রী হঠাৎ স্বামীকে দেখে লজ্জা পায়।
স্বামী তাকে বলে –থামলে কেন, নাচ না! আমি কিছু বলব না।
লজ্জা পেয়ে স্ত্রী আর নাচতে চায় না। স্বামী বলেন ঠিক আছে তিনি স্ত্রীর জন্য উপহার এনেছিলেন, কথা না শুনলে তিনি আর তা দেবেন না।
স্ত্রী এবার ছেলেমানুষের মত উপহারের জন্য কাড়াকাড়ি করতে থাকে। স্বামীর হাত থেকে বাক্স নিয়ে খুলে খুব অবাক হয় এবং লজ্জা পায়। স্বামী তার জন্য রূপোর জোড়া মল এনেছেন। স্বামী তাকে দোলনায় বসিয়ে নিজে হাতে মল পরিয়ে দেন। স্ত্রীকে নাচের জন্য অনুরোধ করতে থাকেন। স্বামীকে প্রণাম করে স্ত্রী নাচ শুরু করেন। ধিরে ধিরে স্ত্রীর নাচের সাথে স্বামীও বোল দিতে থাকেন। ঘরে এক স্বর্গীয় পরিবেশ রচনা হয়।
সে সময় হঠাৎ বাইরে কড়ানাড়ার শব্দ শোনা যায়। স্বামী চমকে ওঠেন। মা ফিরে এসেছে। ঘরে তাকে দেখলে কি হবে ভেবে আতঙ্কিত হয়ে দোলনায় ঘুমের ভান করে পরে থাকেন। স্ত্রী গিয়ে দরজা খোলে।
শাশুড়ি ঘরে ঢুকেই কে গান গাইছিল জানতে চান। স্ত্রী জানায় সে নয়। শাশুড়ি বলে ছেলের গলা ছিল। খুঁজতে খুঁজতে দোলনায় ছেলেকে দেখে দিনেরবেলা ছেলে ঘরে বসে বৌ নিয়ে গান গাইছে বলে গঞ্জনা শুরু করেন। ছেলে মাথা নিচু করে সব শুনতে থাকে। সব দেখে স্ত্রী প্রতিবাদ করতে যায়। শাশুড়ি তাকেও গান গাওয়ার জন্য গালাগাল দিতে থাকেন। স্ত্রী জানায় সে শুধু গানই করেনি, নাচও করছিল। তার সাহস দেখে শাশুড়ি আশ্চর্য হয়। স্ত্রী জানায় স্বামীর অনুরোধেই তিনি নাচ করছিলেন। তার নাচের সঙ্গে স্বামীই বোল দিচ্ছিলেন। মাকে স্বামী ভয় পান, নাহলে স্ত্রীর নাচে তার কোন আপত্তি নেই।
বৌমার মুখে এসব কথা শুনে শাশুড়ি অশান্তি শুরু করে। ছেলেকে গঞ্জনা দেয়, মৃত স্বামীর উদ্দেশ্যে অনুযোগ, ছেলের ভীরুতা, বৌয়ের অত্যাচার-এসব কথা বলে বিলাপ করতে থাকে। শুনতে শুতে অধৈর্য হয়ে ছেলে মাকে থামতে বলে, শান্ত করতে চায়। কথা দেয় মা যা চাইবে তাই হবে।
মা বলে এই দুশ্চরিত্রা স্ত্রীকে এক্ষুনি ত্যাগ করতে হবে। কথা কাটাকাটি হতে থাকে। এসময় স্বামী স্ত্রীর গায়েও হাত তোলে। পরে আদালতে গিয়ে তারা বিবাহবিচ্ছেদ করে। আদালতে স্বামী কারণ হিসেবে সবার সামনে তার স্ত্রীকে চরিত্রহীনা বলে।
আদালতের শেষেরদিন আজও তার চোখের সামনে ভাসে। তিনি বেরিয়ে আসছেন, স্ত্রী বাইরে দাঁড়িয়ে। তিনি শান্ত ভাবে বলেন –তিনি স্বামীকে ভালবাসেন, তিনি বললে এমনিই তার জীবন থেকে তিনি সরে যেতেন। কিন্তু এত বড় কলঙ্ক মানুষ শত্রূর উপরও কারণ ছাড়া লাগায় না। তিনি শেষ পর্যন্ত যাকে একদিন প্রাণ প্রিয় বলতেন তাকেই এতবড় বদনাম, এতবড় কলঙ্ক দিলেন! কোন দিন তিনি এ আঘাতের কথা ভুলবেন না। চিরদিন তিনি স্বামীকে শ্রদ্ধা করতেন, করবেনও।
আজ এবৃদ্ধ বয়সে তিনি প্রতি মুহূর্তে তার প্রথমা স্ত্রীকে যেন দেখতে পান। তার সেই চঞ্চলা-লাস্যময়ী রূপে। তিনি যে সেদিন ভয়ে কত বড় অন্যায় করেছিলেন আজ প্রতিক্ষণে তা উপলব্ধি করেন। তার মনে হয় একবার যদি তিনি তার প্রাক্তন স্ত্রীর দেখা পান তো ক্ষমা চেয়ে নেন।
ওদিকে ছেলে তার বাল্যবন্ধুর সাথে বাবা ও তার স্ত্রী নিয়ে আলোচনা করছে। বন্ধুকে সে বাড়ি নিয়ে আসে। বাবার অদ্ভূত আচরণ দেখে মা চান বাড়িতে বড় করে পুজো হোক। পুত্রবন্ধুকে তার স্বামীকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলেন, স্বামী কি করে ভাল হন তার উপায় জানতে চান।
বন্ধুটি বলে তার বাবা-মা নেই, কাকু তাকে স্নেহ করতেন। যে করে হোক তার মনের কষ্ট সে লাঘব করবে।
বন্ধুটি ছেলেটিকে বলে তার বাবা প্রচন্ড অনুশোচনায় ভুগছেন। তিনি নিজে প্রথম জীবনে মার ভয়ে প্রাণ প্রিয় স্ত্রীকে মিথ্যে কলঙ্ক দিয়ে ত্যাগ করেন। আজ আবার তার কারণে ছেলেও তার স্ত্রীকে ত্যাগ করেছে শুনে তিনি আরো অপরাধবোধে জর্জরিত। সেই শোকে তিনি এমন হয়ে গেছেন। ছেলের উচিত যে করে হোক স্ত্রীকে মানিয়ে বাবার কাছে নিয়ে আসা।
ছেলেটি এসব মানে না। বলে বন্ধু বিয়ে করেনি তাই জানেনা। স্ত্রীর রাগ ভাঙালো অসাধ্য। তার বাবার আচরণে সে এতই ক্ষুদ্ধ যে আজ তাকেও সে সহ্য করতে পারে না। এখন তার কাছে যাওয়া আর বিষধর সাপিনীর কাছে যাওয়া সমান। তার পক্ষে স্ত্রীর কাছে ফেরা অসম্ভব।
বন্ধু বলে তাহলে তার সৎমাকে একবার ফিরিয়ে আনুক। তার কাছে ক্ষমা চাইলেও বাবা শান্তি পাবেন।
ছেলেটি চুপ করে থাকে। সে মার অমতে তার সর্বনাশ করতে পারবে না।
বাড়ি ফিরে মাকে সৎমার কথা বলতেই মা গম্ভীর হয়ে যান। ছেলে সামনে থেকে সরে যায়।
বন্ধুকে গিয়ে জানায় সে অসহায়, তার কিছুই করার রইল না।
বাড়িতে ডাক্তার এসে হতাশ হয়ে জবাব দিয়ে যায়। মা ডুঁকরে কেঁদে ওঠেন। বাড়িতে হোম-যজ্ঞ শুরু হয়। দোলনায় বাবা বোধশূণ্য হয়ে পড়ে থাকেন। হঠাৎ বাইরে গাড়ির শব্দ। ধিরে ধিরে ছেলেটির ভিনধর্মী স্ত্রী শাড়ি পরে, খালি পায়ে ঘরে প্রবেশ করে শ্বশুড়কে প্রণাম করে, স্বামীর কাছে নিরবে ক্ষমা চায়। ছেলেটি অবাক হয়, খুশিও হয়।
আবার সারা ঘরে নিস্তব্ধতা নেমে আসে, মনে হয় যেন আর এক নক্ষত্রের উদয় ঘটছে। অচৈতন্য বাবার চোখ চঞ্চল হয়ে ওঠে। হাত কাঁপতে থাকে। সে সময় তার প্রথমা স্ত্রীকে নিয়ে পুত্রবন্ধু প্রবেশ করে। বৃদ্ধের চোখ জলে ভরে ওঠে। অশ্রুপূর্ণ চোখে তিনি স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চান, হাত ওঠাতে চেষ্টা করেন। প্রথমা স্ত্রী এগিয়ে এসে তার হাত নিজের হাতে তুলে নেন।
সব শেষে ক্যামেরা দ্বিতীয়া স্ত্রীর মুখে গিয়ে থেমে যায়। মনে হয় তার কারণেই এ অসম্ভব সম্ভবপর হয়ে ওঠে।
.............................................
অদ্ভূত সুন্দর সিনেমা। গল্প বলাটা হয়ত ভাল হল না। যেহেতু পুরানো সিনেমা, তাই অভিনয় একটু উঁচুদাগের, মানুষগুলিও খুব স্বাস্থ্যবান। ছেলেটি আদুরে গোছের। বন্ধুটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, কিন্তু উপস্থিতি কম। সবচেয়ে ভাল লাগে ছেলেটির বাবার প্রথমা স্ত্রীকে। খুব তন্বী নন, স্বাস্থ্যবতী, গোলগাল লম্বা, ঢল ঢল সুন্দর মুখশ্রী। সুন্দর লাগে তার স্বামীর সাথে খুনসুটির দৃশ্যগুলি। তার চঞ্চল মূর্তি, নাচের দৃশ্য মন ছুঁয়ে যায়।
গল্পটা সত্যি সুন্দর। ছেলেরা যে এভাবে ভাবতে পারে, অন্যায় করে এভাবে বুঝতে পারে এবং তার জন্য অনুশোচনায় দগ্ধ হয় ও ক্ষমা চাওয়ার জন্য এত আকুল হয়ে উঠতে পারে-তা এ বইটা না দেখলে বুঝতাম না।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০৩