somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩০

২৫ শে অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৫:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুরুর জরাগ্রহণ ও যযাতির যৌবন-প্রাপ্তিঃ

দেশে ফিরে রাজা সিংহাসনে বসলেন এবং জ্যৈষ্ঠপুত্র যদুকে ডেকে বললেন শুক্রশাপে জরা তাকে আক্রমণ করেছে কিন্তু যৌবনভোগে তার মন এখনও শান্ত হয় নি। যদু তার জ্যৈষ্ঠ সন্তান এবং পরম পন্ডিত। সেই তার দুঃখ দুর করতে পারে, পিতার জরাগ্রহণ করে। এভাবে যযাতি পুত্রের কাছে পুত্রের যৌবন ভিক্ষা করলেন।

পিতার বাক্য শুনে যদু বিরস বদনে বললেন –জরার মত দুঃখ সংসারে আর কিছু নেই। শরীর শক্তিহীন হয়, দেহ হয় কুৎসিত, লোকে উপহাস করে।



তাই যদু পিতার জরা নিতে প্রস্তুত নন জানান। পিতার আরো চার পুত্র আছে তাদের এই প্রস্তাব দেওয়া হোক।

একথা শুনে রাজা ক্রোধ ভরে বললেন –জ্যৈষ্ঠ পুত্র হয়ে যদু পিতার বাক্য অমান্য করলেন তাই তার বংশের কেউ কোনদিন রাজা হবে না।

যযাতি এরপর তুর্বসুকে ডেকে সব বললেন এবং সহস্র বছর পর তিনি তাকে যৌবন দান করে জরা গ্রহণ করবেন–এ অঙ্গীকারও করলেন।

তুর্বসুও জরাগ্রহণে অপারগ হলেন। যযাতি তাকেও শাপ দিলেন পিতৃবাক্য অমান্য করায় তুর্বসু নীচজাতিদের রাষ্ট্রের দন্ডধর হবেন এবং তার বংশে যত পুত্র জন্মাবে তারা সকলে মূর্খ হয়ে অভক্ষ্য ভক্ষণ করবে।



এভাবে দেবযানীর দুই পুত্র কেউই যখন পিতার জরাগ্রহণ করলেন না, তখন রাজা শর্মিষ্ঠার পুত্রদের ডাকলেন।

শর্মিষ্ঠার জৈষ্ঠ্যপুত্র দ্রুহুও পিতার জরাযন্ত্রণা সহ্য করতে পারবেন না বললেন।
একথায় যযাতি তাকেও শাপ দিলেন যে দেশে চারজাতির ভেদ নেই সেই দেশের রাজা হবে তার ঔরসে। দ্রুহু যা আশা করবে সব নৈরাশ্যে ডুববে, তার মনকামনা কখনো পূর্ণ হবে না।

তারপর রাজা অনুকে ডাকলেন এবং তার যৌবন প্রার্থনা করলেন।

অনু বললেন –রাজন, জরাসম দুঃখ জগতে আর কিছু নেই। সদা অশুদ্ধ দেহ, অনাচার, কিছু খেলে উদরে তা জীর্ণ হয় না।

তাই সেও জরাগ্রহণ করতে পারবে না। রাজা ক্রোধে বললেন পিতার বাক্য অমান্য করায় অনু জরার যে যে দোষের কথা বলেছে সব ভোগ করবে এবং তার পুত্রেরা যৌবনে সবাই মারা যাবে।



এবার রাজা যযাতি চিন্তিত হয়ে সর্ব কনিষ্ঠ পুরুকে ডেকে পাঠালেন। বললেন সেই রাজার সর্বপ্রিয় পুত্র, সেই এখন তাকে সুখি করতে পারে।

পিতার বাক্য শুনে যোড়করে পুরু বলেন পিতার বাক্য লঙ্ঘনের সাহস তার নেই। যে জন পিতৃবাক্য রক্ষা করে না সে ইহলোকে অপযশ পায় এবং নরকে গমন করে। তিনি পিতার কাছে জরা প্রার্থনা করলেন এবং তার যৌবন পিতাকে ভোগ করতে বললেন।

পুত্রের এই বাক্যে রাজা আনন্দিত হন। তার মুখ চুম্বন করে বলেন –ধর্ম পথে পুরুর বংশবৃদ্ধি হবে, তার বংশধররাই রাজা হবে।

তারপর তিনি শুক্রাচার্যকে স্মরণ করেন এবং পুরুকে জরাদান করে যৌবনপ্রাপ্ত হন।



এরপর যযাতি ধর্মকর্মে লিপ্ত হন। যজ্ঞহোমে দেবতাদের তুষ্ট করেন।

শ্রাদ্ধাদি তর্পণের দ্বারা পিতৃপুরুষদের সন্তুষ্ট করেন।
দরিদ্র ভিক্ষুকদের দান করেন, প্রজাদের প্রতি যতার্থ সেবা করেন, অতিথি অভ্যাগতদের সেবা করেন।
তার প্রতাপে দুষ্টেরা রাজ্য ত্যাগ করে।
রাজা কামরসে কামিনীদের তুষ্ট করেন, প্রিয় ভাষণে বন্ধুবান্ধব-মন্ত্রীদের তুষ্ট রাখেন।


এভাবে যযাতি সহস্র বছর রাজত্ব করেন। এসময় তার পূর্ববাক্য স্মরণে আসে। জরা পীড়িত পুত্রকে দেখে রাজা আপনাকে ধিক্কার করেন।
ভাবেন নিজের জরার জন্য তিনি পুত্রকে দুঃখ দিলেন, ভোগে মত্ত হয়ে তিনি পুত্রের দুঃখ দেখলেন না।


ভাবলেন কামুকের কাম কখনো পূর্ণ হয় না, যত ইচ্ছা করে তত তা বাড়ে, মন কখনও তৃপ্ত হয় না।

এসব কথা চিন্তা করে রাজা পুত্রকে ডেকে বলেন –বহু ভোগ আমি করেছি তোমার যৌবন নিয়ে। তুমি প্রকৃতই পুত্রকর্ম করে আমায় সন্তুষ্ট করেছ। তোমার মহিমা সংসারে প্রচারিত হবে। এখন তুমি আমায় জরাদান করে যৌবন গ্রহণ করো।

রাজা তাকে ছত্রদন্ড দান করবেন কথা দিলেন।
এতকথা বলে যযাতি জরাগ্রহণ করলেন এবং পুরুকে যৌবন ফিরিয়ে দিলেন। পুরু আপন যৌবন প্রাপ্ত হলেন।
রাজা পাত্র, মিত্র, অমাত্যদের ডেকে ঘোষণা করলেন পুরুই পরবর্তি রাজা হবেন।

ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র-রাজ্যের সকলকে রাজা আমন্ত্রণ জানালেন।
পুরুর অভিষেক দেখে প্রজারা রাজাকে প্রশ্ন করলেন বিজ্ঞ রাজা জ্যৈষ্ঠ পুত্র বিদ্যমান থাকতে কনিষ্ঠকে রাজা করলেন কেন!

রাজা বলেন -যে পুত্র পিতামাতার বাক্য অমান্য করে সে কোন শাস্ত্রমতেই পুত্রের যোগ্য নয়। পুরুই কেবল আমার প্রকৃত পুত্র-অন্যরা অকারণ। পুরু পরম পন্ডিত, সেই কেবল পুত্রের কর্ম করেছে। জরা পীড়িত পিতাকে যৌবন দিয়েছে। অন্য চারপুত্র পিতার বাক্য মানেনি। পিতৃ আজ্ঞায় পুরু সহস্র বছর জরাগ্রহণ করলেন সে কারণেই সে প্রকৃত রাজ্যের উত্তরাধিকারী।


প্রজারা বলেন শুক্র তার দৌহিত্রদের এই বঞ্চনা সহ্য করবেন না, আর শুক্রের ক্রোধ সকলেই অবদিত।

রাজা বলেন শুক্র নিজেই এই আশির্বাদ করেছেন যে পুত্র তার জরাগ্রহণ করবেন সেই হবে রাজ্যের প্রকৃত দাবিদার। প্রজারা একথায় সন্তুষ্ট হয়।


সকলের সহমতে পুরুর অভিষেক সম্পন্ন হয়।

যযাতি পুত্রকে রাজনীতির শিক্ষা দান করেন।
..........................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ২৯
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ১১:০৯
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×