চন্দ্র
জন্মেজয় মুনিকে জিজ্ঞাসা করলেন –চন্দ্রবংশে ভরতের জন্ম। চন্দ্রের দ্বারা কি ভাবে বংশ স্থাপন হল, সে কাহিনী শোনান।
মুনি বলেন –শুন, সোম বংশের কাহিনী।
মরীচি ব্রহ্মার পুত্র নামে বিখ্যাত।
কশ্যপ নামে তার পুত্রও জগৎ খ্যাত।
এই কশ্যপ ও স্ত্রী অদিতির(যিনি দক্ষের কন্যা) বিবস্বান(সূর্য) নামে পুত্র হয়।
সূর্যের পুত্র হলেন বৈবস্বত। ইনি সপ্তম মনু নামে পরিচিত।
এনার কন্যা ইলা। ইলার বিবাহ হয় চন্দ্রের পুত্র বুধের সাথে।
এদের সন্তান হলেন পুরুরবা। অষ্টাদশ দ্বীপের তিনি নরপতি হন। পুরুরবা উর্বশীর সাথে অবস্থান করেন।
তাদের পুত্র হলেন আয়ু।
আয়ুর পুত্র নহুষ। স্বর্গের রাজা ইন্দ্র যেন এলেন।
যযাতি হলেন নহুষের পুত্র। যযাতির গুণ অপার। শুক্রের শাপে তার শরীর জরাগ্রস্থ হল। পুত্রকে জরা দান করে তিনি বহুদিন রাজ্য শাসন করেন।
....................................
শুক্র স্থানে কচের বিদ্যা শিক্ষাঃ
জন্মেজয় প্রশ্ন করলেন –যযাতি কোন দোষে শুক্রাচার্যের কাছে অভিশাপ পেলেন! কেনই বা ভৃগুর পুত্র যযাতিকে জরাগ্রস্থ করলেন!
মুনি এবার সে ঘটনার বর্ণনা শুরু করলেন।
দেবাসুরের সব সময় মহাযুদ্ধ লেগেই থাকত। তখন তারা আলোচনা করে নিজেদের মনমত পুরোহিত নিয়োগ করে।
দেবতাদের পুরোহিত হলেন বৃহস্পতি। অন্যদিকে দানবদের ভার্গব তথা ভৃগুপুত্র শুক্রাচার্য।
যুদ্ধে যত দৈত্যবধ হয় শুক্রের মন্ত্রে সকলে বেঁচে ওঠে। শুক্রাচার্যের সঞ্জীবনী মন্ত্রের প্রভাবে দানবদের যত মৃত্যু হয় তত তারা বেঁচে ওঠে।
এদিকে দেবতারা যুদ্ধে নিহত হলে অঙ্গিরা পুত্র বৃহস্পতি তাদের বাঁচাতে পারেন না।
দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য
শুক্রের ক্ষমতায় দেবতারা চিন্তিত হলেন।
কচ নামে বৃহস্পতির এক পুত্র ছিল। সকলে তাকে শুক্রের কাছে সেই গুপ্তমন্ত্র শিখতে পাঠালেন।
বললেন –তুমি অসুররাজ বৃষপর্বার কাছে যাও, সেখানে শুক্রাচার্যকে পাবে। শুক্রের প্রিয়কন্যা দেবযানীকে যদি সন্তুষ্ট করতে পার তবে নিশ্চয় মৃতসঞ্জীবনী বিদ্যা লাভ করবে।
বৃষপর্বপুরে শুক্রের বাস। শিষ্য হয়ে কচ সেখানে উপস্থিত হলেন।
শুক্রাচার্যের তাঁর সুন্দরী কন্যা দেবযানীকে অসম্ভব স্নেহ করতেন।
কচ শুক্রের কাছে নিজের পরিচয় দিলেন। অঙ্গিরার পৌত্র তথা বৃহস্পতির পুত্ররূপে।
তার প্রতি খুশি হয়ে শুক্রাচার্য তাকে শিষ্যরূপে গ্রহণ করলেন। তাকে সকল বিদ্যাপাঠ দিতে লাগলেন।
কচ নানা রূপে গুরুর সেবা করতে থাকেন এবং দেবযানীকেও তুষ্ট করতে থাকেন। কচ দেবযানীর সামনে হাতযোড় করে থেকেন, তিনি যা চান তাই সঙ্গে সঙ্গে করেন। নৃত্য, গীত, বাদ্যে সব সময় তাকে মনোরঞ্জন করেন। তার আজ্ঞার্থে পাশে পাশে থাকেন। এভাবে পঞ্চশত বৎসর অতিক্রান্ত হল।
কচ ও দেবযানী
কচ শুক্রের গাভীদের দেখাশোনা করতেন। গরুদের নিয়ে প্রতিদিন বনে যান।
একদিন দৈত্যেরা তাকে দেখতে পেল। সকলে যানে সে দেবতাদের পুরোহিত বৃহস্পতির পুত্র এবং মায়া করে এসেছে সঞ্জীবনী মন্ত্র শিখতে। তাই সকলে তাকে ধরে তীক্ষ্ণ খড়্গে খন্ড খন্ড করে বাঘকে সে মাংস খাওয়াল। এভাবে কচকে মেরে দৈত্যেরা ফিরে গেল।
দিন শেষ হল, গাভীরা গৃহে ফিরল কিন্তু কচ আর এল না। দেবযানী চিন্তিত হলেন। তিনি পিতার কাছে কেঁদে কচকে বাঘ, সিংহ বা দৈত্যেরা মেরেছে-অভিযোগ জানালেন। কচকে ছাড়া তিনি যে বাঁচতে পারবেন না, তাও জানালেন।
শুক্র কন্যাকে কাঁদতে বারণ করলেন এবং ‘এসো কচ’ বলে তিনবার ডাকতেই সঞ্জীবনী মন্ত্রের প্রভাবে কচ শুক্রের সামনে এসে উপস্থিত হলেন।
তাকে দেখে দেবযানী আনন্দিত হলেন এবং তিনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন জানতে চাইলেন। কচ জানালেন দৈত্যেরা তাকে মেরে ফেলে এবং গুরু তাকে পুনরায় প্রাণদান করেন। দেবযানী পিতাকে দিয়ে কচের গাভী রক্ষণবেক্ষণের কার্য বন্ধ করালেন।
..........................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ২৪
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৪