মিতিনের অভ্যাস হল, সে বাবুদের সিনেমা বা কার্টুন দেখতে দেখতে ভাত খাবে। ওর প্রিয় অ্যানিমেশন ফিল্ম-- মাই নেইবার তোতোরো। মিতিন অবশ্য এত কঠিন নামটা বলতে পারে না। সে শুধু তোতো বলে। বাবা অথবা মায়ের কাছে এসে তোতো বললেই তারা সিনেমাটি চালিয়ে দেয়।
সিনেমাটি দেখতে দেখতে ওর প্রায় পুরোটাই মুখস্ত হয়ে গেছে। দুইবোন, সাতসুকি আর মেই কখন কী করবে সব জানে সে। তবে তার সবচেয়ে প্রিয় অংশ হল যখন মেই এর সঙ্গে তোতোরোর দেখার অংশ। তোতোরো বিশালদেহী এক জঙ্গলদানব। তবে সে কারও ক্ষতি করে না। আর বাচ্চাদের তো সে খুবই ভালোবাসে। বাচ্চারাও তাকে দেখে ভয় পায় না একটুও। তোতোরোর একটা গাড়ি আছে। বিশাল বড় বিড়ালের মতো দেখতে। ভালো বাচ্চারা কোনো বিপদে পড়লে তাদের উদ্ধার করে এই ক্যাটবাস, মিতিন যার নাম দিয়েছে মিয়াওগাড়ি!
মিতিনের খুব শখ এমন একটা মিয়াওগাড়ি কেনার। সে তার বাবাকে বলেছে অনেকবার। বাবা তার কথা হেসে উড়িয়ে দেয়। মিয়াওগাড়ি নামে কোনোকিছু নাকি নেই, সবই কার্টুনের অংশ। বড়দের এই ব্যাপারগুলো মিতিনের খুব পচা লাগে। ওরা কোনোকিছুই বিশ্বাস করে না, এইটা নাই, ঐটা নাই সবকিছুতেই তাদের বাধা। মিয়াওগাড়ি যদি নাই থাকে তাহলে সাতসুকি আর মেই কীভাবে দেখা পেল তার? মাকে বলে দেখেছে। সেও একই কথা বলে। মিতিন মনে মনে ভাবে, যখন সে বড় হবে, যখন তার অনেক টাকা হবে, তখন সে বড় একটা মিয়াও গাড়ি কিনবে। সে তো এখন প্লে-গ্রুপে পড়ে, ক্লাস টুতে উঠলে সে বড় হয়ে যাবে। তখন সে ইচ্ছামতো চকলেট খাবে, তোতোরোর সঙ্গে মিয়াওগাড়িতে করে ঘুরতে যাবে। কেউ কিচ্ছু বলবে না তাকে।
গত জন্মদিনে মিতিনের আব্বু তাকে রংপেন্সিল কিনে দিয়েছে। নতুন এই উপহার পেয়ে মিতিন খুব খুশি। এখন সে ইচ্ছেমতো যা খুশি তাই আঁকতে পারবে। সে অনেককিছু এঁকে ফেলেছে ইতোমধ্যে-- গাছ, ফুল, বাঘ, গ্রাম, নদী আরও কত কী! সবাই তার অনেক প্রশংসা করেছে। বলেছে, মিতিন বড় হয়ে অনেক বড় আর্টিস্ট হবে। দিনকে দিন মিতিনের আঁকার ইচ্ছে বেড়েই চলে। এখন সে মিয়াওগাড়ি আঁকতে পারে। মিয়াওগাড়ি এঁকে ঘুড়ির মতো করে বানিয়ে আকাশে উড়িয়ে দেয়। এসব দেখে মিতিনের আব্বু-আম্মু হাসে ঠিকই; কিন্তু তারপরও তারা স্বীকার করে না যে মিয়াওগাড়ি বলতে সত্যি কিছু আছে। এ জন্য মিতিনের মন কিছুটা খারাপ।
একদিন মিতিনের অনেক জ্বর হল। তার কিছু ভালো লাগছিল না। বাবা-মা তার জন্য সারারাত জেগে, কপালে পানিপট্টি দিয়ে, কোলে করে হেঁটে মিতিনকে আদর করতে লাগল। জ্বরের ঘোরে মিতিনের মনে হচ্ছিল সে দুলছে... দুলছে!
শরীরটাকে হালকা লাগছিল খুব! ওই অবস্থায়ও সে কার্টুন নিয়ে ভাবছিল। তোতোরো আর তার ক্যাটবাস! তোতোরোকে ছোট্ট বাবুরা ছাড়া আর কেউ দেখতে পায় না। ক্যাটবাসকেও। সাতসুকি আর মেই যেমন বিপদে পড়েছিল, তখন তাদের উদ্ধার করেছিল মিয়াওগাড়ি! এখন বাবার কোলে দুলতে দুলতে সে বুঝতে পারল, বাবা আর মা তার জন্য তোতোরো আর মিয়াওগাড়ি। এই দুজন থাকতে তার আর কোনো ভয় নেই।
স্বস্তি পেয়ে ঘুম দেওয়ার চেষ্টা করে মিতিন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:২৯