তাহলে তার শিক্ষার্থীরা কেমন হত?
জানা
ক্লাশের মার্কা মারা ভালো ছাত্রী। ক্লাশ মনিটর হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত। দুষ্টু ছাত্র ছাত্রীদের শায়েস্তা করার ব্যাপারে শিক্ষকদের চেয়েও এক ডিগ্রি উপরে। সবাই তাকে সমীহ করে, আবার ভালোওবাসে। তবে তার অতিরিক্ত মডারেশন স্যরি মনিটরিংয়ের কারণে অনেকেই বিরক্ত হয়ে অন্য স্কুলে ট্রান্সফার হয়ে যায়।
ফিউশন ফাইভ
অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। সবার এ্যাসাইনমেন্ট করে দেয়। তবে ক্লাশে উপস্থিত থাকেনা কখনও। সে অনলাইন শিক্ষণে নিয়োজিত। তাই তাকে কেউ দেখেনি কখনও। তারপরেও বার্ষিক পরীক্ষায় ঠিকই এ প্লাস গ্রেড বগলদাবা করবে!
অন্যমনস্ক শরৎ
নামে অন্যমনস্ক হলেও সবদিকে খেয়াল তার। সবসময় সিরিয়াস 'মড' এ থাকে। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সে। কবিতা এবং ফটোগ্রাফিতে পারদর্শী। এবং স্কুলের যেকোন কম্পিটিশনে তার কর্ম "নির্বাচিত' হয়!
জীবনানন্দ দাসের ছায়া
একটু উদাস এবং ভাবুক টাইপের ছাত্র। প্রথাগত পরাশোনার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। স্কাউটিং পছন্দ করে। দূর দূরান্তের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা করতে চলে যায় তার স্কাউট দল নিয়ে। ক্লাশ টেস্ট প্রায়ই মিস হয়। বাংলা এবং ইতিহাস জাতীয় পরীক্ষায় কম নাম্বার পায়। কারণ তার লেখাগুলো হয় ছোট ছোট।
রেজোওয়ানা
জীবুর মত আরেক স্কাউট। পড়াশোনা বাদেও এক্সট্রা কারিকুলাম এ্যাকটিভিটিজে প্রবল আগ্রহ। তবে পড়ালেখায়ও খুব মনোযোগী। জুনিয়র থেকে হাই স্কুলে উঠলেও দুষ্টুমি করার স্বভাব যায় নাই।
ঘুড্ডির পাইলট
তুমুল জনপ্রিয় এক ব্যাকবেঞ্চার। ক্লাশকে হাসিতে মাতিয়ে তুলতে জুড়ি নেই তার। তবে ব্যাকবেঞ্চারদের ক্ষেত্রে যা হয় আর কী! বানান ভুলের কারণে নিয়মিত ঝাড়ি খায় টিচারদের কাছে। তবে তার লেখা খারাপ না। এ গ্রেড মিস হয়ে যায় শুধুমাত্র বানান ভুলের কারণেই!
অমি রহমান পিয়াল
স্পষ্টভাষী একজন ব্যাড বয়! মুখের লাগাম নেই। তবে সত্য কথা বলতে ভয় পায় না। এক শ্রেণীর ছাত্র তার ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতো। ব্যাড বয়দের প্রতি সবারই এক ধরণের আকর্ষণ এবং ঘৃণা দুইই থাকে। তার ক্ষেত্রে প্রথমটাই অধিকতর প্রযোজ্য। লাস্ট এ্যসাইনমেন্টে শিক্ষকদের সম্পর্কে অপ্রিয় কিছু সত্যি বলার ফলে তার গ্রেড নামিয়ে দেয়া হয়। প্রতিবাদে সে অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে, এবং খুব ভালো রেজাল্ট করছে।
ত্রিভুজ
নাম শুনে মনে হতে পারে সে প্রবল জ্যামিতি প্রিয়। কথাটা মিথ্যে নয়। কাঁঠালপাতার শীর্ষবিন্দু কোনটা, অন্তঃস্থ রেখাগুলো সংযোগ করলে কী ধরণের জ্যামিতিক আকৃতি বের হবে এসব নিয়ে তার ব্যাপক আগ্রহ। বনভোজনের সময় ছাগলের মাংস দেবার প্রতিবাদে তিনি তীব্র প্রতিবাদ করেন। আপাতত তিনি এই পাঠশালা ছেড়ে কোন এক ছাগশালায় ভর্তি হয়ে মহানন্দে আছেন। তবে রেখে গেছেন অসংখ্য কাঁঠালপাতা প্রিয় অনুসারী যাদেরকে নিয়মিত প্রহার করা হয়।
আরজুপনি
অতি মনোযোগী এক ছাত্রী। শুধুমাত্র শিক্ষকদের বাণী আত্মস্থ করেই সে ক্ষান্ত দেয়নি। ছাত্ররা কেমন করছে এ নিয়ে তার প্রখর মনোযোগ। তাই সামু স্কুলের মাসিক শিক্ষাপ্রতিবেদন তৈরিতে তার নামই সর্বাগ্রে আসে।
মামুন রশিদ
স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখা একটা গর্হিত অপরাধ। কিন্তু এই ছাত্রটি
সিনেমা দেখে এসে তার মোহনীয় গল্প করে শিক্ষক ছাত্র সবাইকে সম্মোহিত করে ফেলে। তার কারণেই ব্ল্যাকবোর্ডের জায়গায় একবার সিনে-প্রজেক্টর স্টিকি হয়েছিলো বেশ কিছুদিন!
কাল্পনিক_ভালোবাসা
পড়ার সময় পড়া, খেলার সময় খেলা, আর লুলামির সময় লুলামি। এই হচ্ছে তার নীতি! যদিও দুর্মুখেরা বলে থাকেন তার এই স্কুলে ভর্তি হবার প্রধান কারণ এটা একটা উচ্চ সুন্দরীময় কম্বাইন্ড স্কুল। বালিকারা তাকে পাত্তা দিচ্ছে কী না এই ব্যাপারে নিশ্চিত না হলেও রেজাল্টে হাই গ্রেড এবং ভলান্টারি ওয়ার্কে দক্ষতা শিঘ্রই তাকে কাঙ্খিত স্থানে পৌঁছে দেবে বলে আশা করা যায়।
নোমান নমি
ছেলেটা প্রচুর খাটে। সামুতে পড়াশোনা করার পরে বাড়তি রোজগার করতে সে অন্য একটা স্কুলে পড়ায়। সেখানে সে 'চেহারা' পরিপাটি রেখে 'বই' পড়ায়। নমির জন্যে কোন একটা নমিনেশন বরাদ্দ করা দরকার!
চেয়ারম্যান০০৭
সামু স্কুলে মাত্রাতিরিক্ত বাঁদরামি করার কারণে কোন ডিটেনশন না পাওয়া স্বত্তেও সে নমির মত অন্য স্কুলে ট্রান্সফার নিয়েছে। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে চেয়ারম্যান হয়ে দেশের সেবা করার সুপ্ত বাসনা আছে তার। তবে টিন চুরি করবে না এই নির্বাচনী ওয়াদা দেয়াতে টিনেজ বালকেরা তাদের টিন জিএফদের ব্যাপারে আশ্বস্ত হয়েছে!
নস্টালজিক
একদম কপিবুক ভালো ছাত্র। ক্লাশে কখনও শাস্তি পেতে হয় নি। বানান ভুল করে না। ক্লাশ নির্দেশিকা মেনে চলে। ক্লাশের মধ্যে উদাস মনে খাতায় লিরিক লেখে। সেই লিরিক দেখে বালিকারা মোহিত হয়। আর কুদ্দুস বয়াতী গান গায়,
"আম খায়ো জাম খায়ো তেঁতুল খায়োনা
অল্প বয়সে বিয়া করলে প্রাণে বাঁচতা না!"।
তবে সে তেঁতুল খেয়েছে। এবং ভালোই আছে!
তন্ময় ফেরদৌস
ক্লাশে কী কী পড়ানো হচ্ছে এর চেয়ে কীভাবে ক্লাশ এবং স্কুলটাকে আরো জনগণগ্রাহ্য করা যায় এই ব্যাপারেই তার আগ্রহ বেশি। ক্লাশের লোগোতে কি থাকলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকৃষ্ট হবে? কী ধরণের রোডসাইন দিলে সবাই সুরসুর করে এখানে এসে উপস্থিত হবে? এসব নানাবিধ চিন্তায় আক্রান্ত এই বালক।
রাজসোহান
একসময় তুখোড় ভালো ছাত্র ছিলো। রোল নাম্বার ছিলো ১! কিন্তু প্রেমের প্যাচে পড়ে বেচারা অনেক পিছিয়ে গেছে। এখন মনে হয় শেষের দিকে রোল। তারপরেও অভ্যাসবসত ক্লাশে উপস্থিত হলে নাম ডাকার সময় বলে ওঠে "পুত্তুম প্লিজ!"
(ত্রিভুজ ছাড়া অন্য কেউ মাইন্ড খাইলে লেখককে দায়ী করা যাইবেক না।)