somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আন্তর্জাতিক শেয়ার বাজারের পতন ও ফাইনান্সিয়ালাইজেশানের সংকট

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“ অর্থনৈতিক প্রবৃব্ধি এখন শূণ্যের কোঠায়। আমরা একেবারে থমকে গেছি”
----- অ্যালান গ্রীনস্প্যান

পারমানবিক বোমা নয়, ভয়ংকর জীবাণু বোমাও নয়- স্রেফ একটা বুদ্বুদের বিস্ফোরণেই বিশ্বপুঁজিবাদ ও সাম্রজ্যবাদের কেন্দ্রভূমি আমেরিকার অর্থনীতি এখন বিপর্যস্ত। বুদ্বুদটির জন্ম ২০০১ সালের কোন এক সময় আর মৃত্যু ২০০৭ সালের জুলাই মাসে। এর নাম গৃহায়ন বুদ্বুদ বা Housing Bubble। দৈনিক পত্র-পত্রিকার অর্থনীতির পাতায় চোখ বোলানের সুবাদে স্বপ্নভূমি আমেরিকার অর্থনীতি বিষয়ক খবরে প্রায়ই সাবপ্রাইম মর্টগেজ, হাউসিং বাবল ইত্যাদি শব্দাবলীর বহুল ব্যবহারে প্রথমে কৌতুহলী, পরবর্তীতে এর তাৎপর্য বুঝতে পেরে চিন্তিত ও মর্মাহত এবং অবশেষে আর দশটা বিষয়ের মতই এক্ষেত্রেও আমরা যখন ইতোমধ্যে বিরক্ত তখনই বুম!!!!!!! ওয়াল স্ট্রীট সহ সারাবিশ্বে বড় বড় সব শেয়ার বাজারের পতন, রাশিয়ার মত দেশের শেয়ার বাজার কয়েকদিনের জন্য একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়া, গতশতকের ত্রিশের দশকের মত মহামন্দার আশংকায় হাজার বিলিয়ন ডলারেও বেশী পাবলিক মানির শ্রাদ্ধ করে Freddie Mac, Fannie Mae কিংবা সর্বশেষ American Internatinal Group (AIG) এর মত কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাইভেটাইজেশানের স্বর্গভূমি আমেরিকার সরকার কর্তৃক জাতীয়করন......ইত্যাদি আমাদের মাঝে নতুন করে আগ্রহ তৈরী করেছে। এ সুযোগেই আমরা চেষ্টা করব এই ঘটনাগুলোর প্রকৃত কার্য-কারণ অনুসন্ধানের।

বুদ্বুদের জন্ম:
পুঁজিবাদি অর্থনীতিতে ঋণ জিনিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন গুরুত্বপূর্ণ যে কোন কোন মহান পুঁজিবাদী ঋণকে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদির মত একটি মৌলিক অধিকার বলে প্রচার করার চেষ্টা করেন। তো এক মৌলিক অধিকার বাসস্থান বন্ধক রেখে আরেক 'মৌলিক' অধিকার ঋণ নেয়া- এই নিয়ে ফাইনান্সিয়াল জুয়া খেলার পরিণতিতেই বুদ্বুবটির জন্ম, যদিও পুঁজিবাদীরা এই জুয়া খেলাটিকে ফাইনান্স, বিনিয়োগ, ষ্টক ব্যবসা ইত্যাদি সুন্দর সুন্দর নামে অভিহিত করতে ভালোবাসে। বিষয়টিকে পরিস্কার করার জন্য বুদ্বুদের জন্ম প্রক্রিয়াটিকে আমরা ৫টি ধাপে ভাগ করতে পারি:

ধাপ ১: বিভিন্ন বাড়ির মালিকের ঘর-বাড়ি বন্ধক(Mortgage) রেখে ঋণ দেয়ার পর ব্যাংকগুলো সেই ঋণকে সিকিউরিটি(Securities) তে পরিণত করলো। এই সিকিউরিটির নাম হলো Mortgage Based Securities(MBS)। এই ধরনের সিকিউরিটি ক্রয়করার মানে হলো ঋণের বিপরীতে প্রাপ্য অর্থের অধিকার ক্রয় করা। ধরা যাক 'A' একটি কমার্শিয়াল ব্যাংক, 'B' একজন বাড়ির মালিক যার ঋণের প্রয়োজন এবং 'C' একজন বিনিয়োগকারী যার হাতে বিনিয়োগ করার মত উদ্বৃত্ত অর্থ রয়েছে। 'B',ধরা যাক, 'A' এর কাছে তার বাড়ি বন্ধক রেখে বার্ষিক ১০% সুদে ১০ লক্ষ ডলার ঋণ নেয়। 'B' যদি ভালো গ্রেডের ঋণ গ্রহীতা হয় অর্থাৎ তার ক্রেডিট হিষ্ট্রী যদি 'AAA' গ্রেডের হয় তবে ব্যাংক 'A' কে তিনি প্রতিবছর সুদ-আসল মিলিয়ে ১.১ লক্ষ ডলার করে কিস্তি পরিশোধ করবেন। ফলে ১০ বছর শেষে ব্যাংকটি মোট ১১ লক্ষ ডলার পাবে। ব্যাংকটির পরিচালক ঠিক করলো সে বাড়তি ১ লক্ষ ডলারের জন্য এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা না করে বিনিয়োগকারী 'C' এর কাছ থেকে এককালীন ১০.৫০ লক্ষ ডলার নিয়ে 'C' কে 'B' এর কাছ থেকে পুরো ঋণের কিস্তি গ্রহনের অধিকার দিয়ে দেবে। এভাবে ব্যাংকটি আসলে 'B' এর ঋণকে সিকিউরিটিতে পরিণত করলো যার নাম হলো Mortgage Based Securities বা MBS। কিন্তু ব্যাংকটি এভাবে সবসময় 'C' এর মতো ক্রেতা নাও পেতে পারে কেননা ঋণগ্রহীতা 'B' এর ক্রেডিট হিষ্ট্রী(Credit History) না জেনে বিনিয়োগকারী সেই MBS এর উপর আস্থা রাখতে পারবে না। এই ক্ষেত্রে আবির্ভাব হলো একদল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকারের।

ধাপ ২:
ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকারদেরকে এক্ষেত্রে বলা হয় Special Investment Vehicle বা SIV। SIVকোন এক বা একাধিক ব্যাংকের MBS গুলোকে কিনে নিয়ে সেগুলোকে একত্রিত করে আবার ঋণের ঝুঁকি অনুসারে ৩ টি ভাগে ভাগ করে:
1)ইকুইটি বন্ড(Equity Bond)
2)মেজানাইন বন্ড (Mezanine Bond)
3)ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড বন্ড (Investment Grade Bond)

SIVগুলো হয়তো ব্যাংকের সকল MBS কে এমন ভাগে ভাগ করলো যে ৭০% MBS হলো ইকুইটি বন্ড, ২০% হলো মেজানাইন বন্ড আর বাকি ১০% হলো ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড বন্ড। ভালো ক্রেডিট হিস্ট্রি সম্পন্ন ঋণগ্রহীতার মর্টগেজ ভিত্তিক বন্ড থেকে হয় ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড বন্ড। ফলে এর ঝুঁকি সবচেয়ে কম, আর ঝুঁকি সবচেয়ে কম বলেই এর বিপরীতে আয়ও সবচেয়ে কম। অন্যদিকে খুব দুর্বল ক্রেডিট হিস্ট্রি সম্পন্ন ঋণগ্রহীতার মর্টগেজ ভিত্তিক ( যে মর্টগেজকে বলা হয় সাবপ্রাইম মর্টগেজ) বন্ডকে বলা হচ্ছে ইকুইটি বন্ড। যেহেতু Subprime Mortgage এর ডিফল্ট হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশী , সুতরাং এই মর্টগেজ ভিত্তিক সিকিউরিটিস এর ঝুঁকিও বেশী এবং এগুলোর বিপরীতে আয়ও বেশী। মেজানাইন বন্ডের অবস্থান মাঝামাঝি। এভাবে মর্টগেজগুলোকে বিভিন্ন স্তরে বিভিক্ত করে ঋণের ঝুঁকি কোন একটি ব্যাংকের কাছ থেকে একাধিক বিনিয়োগকারীর মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে যে বন্ডগুলো তৈরী করা হলো এগুলোকে সাধারণভাবে বলা হয় CDO বা কো-ল্যাটারাল ডেব্ট অবলিগেশান(Collateral Debt Obligation)। ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড বন্ডের ঝুঁকি কম বলে SIV গুলোর পক্ষে এগুলো কিনতে ইচ্ছুক বিনিয়োগকারী বা ইনভেস্টার প্রতিষ্ঠান খুঁজে পেতে সমস্যা হয় না। ঝুঁকিবহূল ইকুইটি বা মেজানাইন বন্ডগুলো কিনবে কে?

ধাপ ৩: হেজ ফান্ড(Hedge Fund)গুলো প্রবেশ করে ঠিক এই পর্যায়ে। প্রথম ধাপের ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকগুলোই বিভিন্ন ভাবে এই হেজ ফান্ডগুলো গঠন করে। উদ্দেশ্য উচ্চ ঝুঁকির CDO গুলো নিয়ে বাণিজ্য করা। ব্যাংক হয়তো প্রাথমিক ভাবে ১০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে হেজ ফান্ডটি গঠন করলো। এই হেজফান্ড তখন উচ্চঝুঁকির CDO গুলো ক্রয় করে।

গৃহায়নশিল্পের সুসময়ে ঘর-বাড়ির বাড়তি দামের কারণে সেই সব ক্রমশ বাড়তে থাকা মূল্যের বাড়ি বন্ধক রেখে ঋণগ্রহীতার ডিফল্টার হওয়ার ঝুঁকিও কমতে থাকে। কেননা ব্যাংক/CDOএর মালিক যে কোন সময় উচ্চমূল্যে বাড়িটি বিক্রি করে ঋণের টাকা আদায় করে নিতে পারবে। ফলে ইকুইটি বন্ডের অবস্থা বেশ রমরমা হয়ে উঠে। যে বাড়িটির মর্টগেজের উপর ভিত্তি করে ইকুইটি বন্ডের যাত্রাশুরু সেই বাড়ির মূল্য আরও বাড়বে এই আশায় (ঋণগ্রহীতা বাড়ির মালিকের ক্রেডিট হিস্ট্রি যাই থাকুক না কেন) উচ্চঝুঁকির ইকুইটি বন্ডগুলোর দাম বাড়তে লাগলো চড়চড় করে। ফলে হেজফান্ডগুলোকে এখন আর সেই ব্যাংকের দেয়া প্রাথমিক ফান্ডের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে না, বিভিন্ন উৎস থেকেই সে ফান্ড পাচ্ছে।

ধাপ ৪: হেজ ফান্ডের আসল ভুমিকা এ ধাপেই। ব্যাংক যেমন তার ঝুঁকি SIV-গুলোর উপর দিয়ে দেয়, এসআইভি-গুলো যেমন তার ঝুঁকি হেজ ফান্ডের উপর দিয়ে দেয়, হেজ ফান্ডগুলোও তেমনি সেই ঝুঁকিপূর্ণ বন্ডগুলো নিজের হাতে রাখেনা । তারা এই CDO-গুলোকে কোন ব্যাংকের কাছে জমা রেখে ব্যাংক থেকে ধার করে এবং সেই অর্থ আবার বিনিয়োগ করে। ইকুইটি সিডিও-গুলোর মূল্য যত বেশী হবে হেজফান্ড তার বিনিময়ে ব্যাংক থেকে তত বেশী অর্থ পাবে। একারণে হেজ ফান্ডের ম্যানেজারদের উপর চাপ থাকে ইকুইটি সিডিও-গুলোর মূল্য বাড়িয়ে দেখানো। সিডিও-গুলোর আসল ভিত্তি যে বাড়িটি, এতগুলো ধাপ পেরিয়ে এসে সেই বাড়ির মূল্যের সাথে আর বাঁধা থাকেনা সিডিও-এর মূল্য।

ধাপ ৫: হেজ ফান্ড-গুলোকে ঋণদানকারী ব্যাংকগুলো ও হাউসিং মার্কেট চড়া থাকার কারণে এবং ভবিষ্যতে আরও চড়া হলে এগুলো বিক্রি করে প্রভূত মুনাফা লাভের প্রত্যাশায় নির্দ্বিধায় অতিমূল্যায়িত সাব-প্রাইম মর্টগেজ এর উপর ভিত্তি করে তৈরী করা সিডিও-গুলোর বিনিময়ে ঋণ দিতে থাকে। সেই টাকায় হেজ-ফান্ডগুলো এসআইভি-এর কাছ থেকে বেশী বেশী সিডিও নিতে থাকে, ১ম ধাপের ব্যাংকগুলোও মর্টগেজের কালি শুকানোর আগেই তার সমস্ত ঝুঁকি সহ মর্টগেজগুলোকে এসআইভি এর হাতে হস্তান্তরেরের সুযোগে আরো বেশী বেশী করে সাব-প্রাইম ঋণ দিতে থাকে।

বুদ্বুদের বিস্ফোরণ :

এভাবেই প্রত্যাশার সাগরে জন্ম নেয়া বুদ্বুদ একেবারে আকাশে উঠে যেতে থাকে। কিন্তু সাব-প্রাইম ঋণ উচ্চসুদের হওয়ার কারণে এবং অধিকাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ এর গ্রহীতা হওয়ায়, একসময় দেখা যায় তারা আর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না। স্বাভাবিক ভাবেই সাব-প্রাইম মর্টগেজের উপর ভিত্তি করে তৈরী করা সিকিউরিটিগুলোর বর্তমান মালিক (ব্যাংক বা কোন ব্যাক্তি বিনিয়োগকারী) যখন বাড়িটি বিক্রি করতে চাইলো তখন সবাই মিলে বাড়ি বিক্রিকরার হিড়িকের কারণে সে উপযুক্ত মূল্য পেলনা এমনকি তার হাতে থাকা সিকিউরিটিগুলো বিক্রি করতে গিয়েও সে ক্রেতা পেলনা। কেননা কেউই তখন জানেনা এই সিকিউরিটিস এর ভিত্তি মূল্য আসলে কত। যখন সবকিছু ভালোয় ভালোয় চলছিল, তখন কেউ ভিত্তিমূল্যের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। কিন্তু সাবপ্রাইম ঋণগ্রহীতার ডিফল্টার হওয়া এবং হাউসিং বাজার পরে যাওয়ার কারণে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মূল্যের সিকিউরিটি আক্ষরিক অর্থেই টয়লেট পেপারে পরিণত হলো। কেননা ফাইনান্সের দুনিয়ায় এর আর কোন মূল্য নেই, ভবিষ্যতে উচ্চমূল্য পাওয়ার আশা না থাকায় কেউ আর এগুলো কিনতে চাইছে না।

বুদবুদের প্রথম বড় ধরনের ঝাঁকিটি অনুভুত হয় ২০০৭ সালের জুলাই মাসে যখন দু'টি বিয়ার স্টার্ন হেজ ফান্ডের একটি তার ৯০% মূল্য হারায় আর আরেকটি একেবারে মূল্যহীন হয়ে যায়। এই ধরণের হেজ ফান্ডগুলোর সাথে ব্যাবসা করতো এমন ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার বড় বড় ব্যাংকগুলোও স্বীকার করতে শুরু করলো যে তারাও বিষাক্ত সাব-প্রাইম ঋণের স্বীকার। ফাইনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশানগুলোর মাঝে লেনদেন প্রায় বন্ধ হয়ে এলো- কেননা কেউ জানেনা কার হাতে কতটুকু বিষাক্ত মর্টগেজ আছে। সারা বিশ্বের ফাইনান্স জগতে দ্রত আতংক ছড়িয়ে পড়লে। কেননা তারা প্রত্যেকেই মর্টগেজ নিয়ে এই জুয়া খেলার সাথে কোন না কোন ভাবে যুক্ত। সর্বব্যাপি একটা ভয় ছড়িয়ে পড়লো যে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ২.৫% এর নীচে নেমে যাবে অর্থাৎ মন্দার কবলে পড়বে।

অবশেষে মন্দা:


"Bernanke Warns of 'Deep and Extensive Recession' If Feds Don't Take Action"
-----Fox news
Friday, September 19, 2008
"Hello recession, my old friend Economic downturns? He's seen more than a few."
------------------------Matthew DeBord
September 21, 2008, Los Angeles Times

"Depression or recession? I know which one I'd choose"
------------------- Brendan Keenan
Sunday September 21 2008
The Irish Independent

এ মাসের মাঝামাঝি এসে অবশেষে ঘটনাটি ঘটতে শুরু করে। উপরোক্ত হেডলাইনগুলোর মতো অসংখ্য হেডলাইনে সংবাদ সংস্থাগুলো ভেসে যেতে থাকে। সবারই একই কথা- ১৯২৯ এর পর আবার আসছে মহামন্দা। বিয়ার স্টার্ন তার দুটি হেজ ফান্ডকে রক্ষা করে ৩.২ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে। Goldman Sachs তার আলফা নামের হেজ ফান্ডকে রক্ষা করে ৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে। এরপর ২০০৭ সালের শেষ দিকে আমেরিকার ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট জাতীয়করন করে Freddie Mac আর Fannie Mae কে আর ব্রিটেন জাতীয় করণকরে Northern Rock কে। Bear Stern তার দুটি হেজ ফান্ডকে রক্ষা করলেও নিজেকে কিন্তু রক্ষা করতে পারেনি। ২০০৮ এর মার্চ মাসে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ৩০ বিলিয়ন পরিমাণ সরকারী ডলার খরচ করে বিয়ার স্টার্ন কে বেইল আউট( অর্থা? বিপুল পরিমাণ তারল্য বা অর্থ সরবরাহ করা) করে। এর পর সেপ্টেম্বরের শুরুতে Lehmen Brothers এর পতন ঘটলে সরকার নিরব থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও তার পরপরই যখন AIG, ১০০০ বিলিয়নের বেশী মর্টগেজ ভিত্তিক সিকিউরিটি ধারনকারী বিশ্বের বৃহত্তম ইনসিউরেন্স কোম্পানীর যখন পতন ঘটে তখন ফেডারেল রিজার্ভ আর বসে থাকতে পারেনি, তারা জনগনের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে সেই কোম্পানী এবং তার সম্সত্দ মর্টগেজ ব্যাক্ড সিকিউরিটির জাতীয়করণ করে!এর ফলাফল কি? পুজিঁবাদে যা কিছই ঘটুক না কেন তার ফলে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয় খেটে খাওয়া মানুষ। এবারের মন্দাক্রান্ত অর্থনীতেও তাই ঘটছে। ইতিমধ্যেই আমেরিকায় চাকরি হারিয়েছে ৬ লক্ষেরও বেশী শ্রমিক, গৃহহীন হয়েছে হাজার হাজার নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং সবশেষে এই যে প্রাইভেট লসের জাতীয়করণ তার খেসারতও বহন করতে হবে সাধারণ জনগণকে অতিরিক্ত ট্যাক্স প্রদানের মাধ্যমে! বিষয়টি লক্ষ করে Financial Times এর কলামিস্ট Willem Buit বলছেন:

"বর্তমান বাস্তবতা কি এমন যে, লগ্নীপুঁজি নিয়ন্ত্রীত অর্থনীতিতে যখন সবকিছু ভাল চলে, তখন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলো বেসরকারী মুনাফা কামায় আর যখনই কোন সমস্যা হাজির হয় তখন সাময়িক ভাবে সেই সমস্যাগ্রস্থ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানটিকে সাময়িক সরকারীকরণ করা হয়, যার ফলে সমস্ত লসের দায়ভার বহন করে জনগণ? তাই যদি হয়, তবে এগুলোকে চিরস্থায়ীভাবেই জাতীয়করণ করা হচ্ছে না কেন? "


ফাইনান্সিয়ালাইজেশানের সংকট:
গৃহায়ণ বুদবুদের জন্ম, বিভিন্ন ফাইনান্সিয়াল ইন্সট্রুমেন্টের মাধ্যমে এর আকাশে উঠা, এবং অবশেষে সাব-প্রাইম মর্টগেজের ঋণ পরিশোধের অক্ষমতা ও হাউসিং সেক্টরের পতন ইত্যাদির কারণে বুদবুদটির বিস্ফোরণ - চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, উৎপাদনমুখী অর্থনীতি থেকে যতই আলাদা স্বাধীন সত্ত্বা হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হউক না কেন ফাইনান্সিয়ালাইসেশান কখনই উৎপাদনের অর্থনীতির বিকল্প হতে পারেনা এবং পুজিঁবাদী অর্থনীতির যে মৌলিক সংকট অন্তর্নিহিত, তার সত্যিকারের সমাধান করতে পারেনা। পুঁজিবাদী রিয়েল ইকোনমি'র সংকট, মন্দা বা স্থবিরতার সময় ফাইনান্সিয়ালাইজেশান সেক্টরের বিকাশের মাধ্যমে সাময়িক ভাবে কিছু অনুৎপাদনশীল সেক্টরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তার মাধ্যমে কৃত্রিম ভাবে পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করা সম্ভব হলেও পরিণামে তা আরো গভীর সংকটের সৃষ্টি করে।
বর্তমান সাম্রজ্যবাদী অর্থনীতি উৎপাদন ও বিনিময়ের এক বিশ্বব্যবস্থা যার মাধ্যমে সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণীকে শোষণের মাধ্যমে উদ্বৃত্ত মূল্যের বৈশ্বিক উৎপাদন হয়। আর এই উদ্বৃত্ত মূল্য উৎপাদনের নিরিখে ফাইনন্সিয়ালাইসেশান একদিকে বিশ্বপুঁজিবাদের টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় এবং অন্যদিকে পরজীবি একটি প্রক্রিয়া। পরজীবি- কেননা এটি কোন উদ্বৃত্ত তৈরী করেনা বরং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন উদ্বৃত্তে ভাগ বসায়। প্রয়োজনীয়- কেননা উদ্বৃত্ত মুনাফার পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে কেন্দ্রীভবন এবং তার মাধ্যমে মুনাফা তৈরীর নতুন রাস্তা তৈরী করা ও দ্রুত পুঁজি লগ্নি করে মুনাফা তুলে নেয়া আর ঝুঁকি দেখলে আরও দ্রুত সেই লগ্নি পুঁজি প্রত্যাহার করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেকারণে ফাইনান্সিয়ালাইসেশানের যুগে, উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, লগ্নি পুঁজি আজকে থাইল্যান্ডের রিয়েল এস্টেট মার্কেটে গেল তো কাল সেখান থেকে মুনাফা তুলে নিয়ে ব্রাজিলের ইথানল উৎপাদনে লগ্নিকৃত হলো আবার সুযোগ বুঝে আমেরিকার মর্টগেজ মার্কেটে লগ্নী হলো। এর সাথে আরেকটি বিষয় যুক্ত- লগ্নী পুঁজির স্বল্পমেয়াদী আগমন ও বহির্গমণের মাধ্যমে কোন একটি দেশের স্থানীয় পুঁজিকে বশবর্তী রাখা হয় ও পুঁজির পূণর্বিন্যাস করা হয়- একটা বৃহৎ শিল্প কারখানাকে ঋণ না দেয়া কিংবা পুঁজি প্রত্যাহার করে সর্বসান্ত করে ফেলার হুমকীর মাধ্যমে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আর এই ধরণের ফাইনান্সিয়াল শৃঙ্খলা তৃতীয় বিশ্বের সবগুলো দেশের উপরেই আরোপ করা হয়- আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত আইএমএফ যাতে মূল ভূমিকা পালন করে। যেকারণে ফাইনান্সিয়াল দুনিয়ার অস্থিরতা বর্তমান পুঁজিবাদের বিশ্বায়িত ও লগ্নী পুঁজি নিয়ন্ত্রিত বাস্তবতা এক ধ্রুব সত্য।

তথ্যসূত্র:
# Matthias Chang এর The Shadow Money Lenders
# The Economist, Sep 18th 2008.
# http://www.greenleft.org.au/2008/768/39617

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১২:৫৯
২৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×