হার্ট এটাক কি?
সর্বপ্রথম টেকস্পেটে প্রকাশিত
আমাদের পুরো শরীরে অনবরত রক্ত সরবরাহ করে চলেছে হৃৎপিন্ড। রক্তের মাধ্যমে পুষ্টি পেয়ে বেঁচে থাকে আমাদের শরীরের কোষগুলো। এই হৃৎপিন্ড নিজে পুষ্টি পায় কোথা থেকে? করোনারি আর্টারি নামে হৃৎপিন্ডের গায়ে থাকে দুটি ছোট ধমনী। এরাই হৃৎপিন্ডে পুষ্টির যোগান দেয়। কোন কারনে এই করোনারি আর্টারিতে যদি ব্লক সৃষ্টি হয় তাহলে যে এলাকা ঐ আর্টারি বা ধমনীর রক্তের পুষ্টি নিয়ে চলে সে জায়গার হৃৎপেশি কাজ করে না। তখনই হার্ট এটাক হয়ে থাকে। এর কেতাবি নাম মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন।
হার্ট এটাকে বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভূত হয়। এই ব্যাথা ২০-৩০ মিনিট স্থায়ী হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগী হাসপাতালে পৌছার আগেই মৃত্যুবরন করে। তাই এটি একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি।
কখন হয়?
যেকোন সময় হতে পারে।
→ঘুমের সময় হতে পারে
→বিশ্রামের সময় হতে পারে
→হঠাৎ ভারী কায়িক শ্রমের পর হতে পারে
→বাইরে ঠান্ডা আবহাওয়ায় বেরুলেন, তখন হতে পারে
→ইমোশনাল স্ট্রেসের জন্য হতে পারে
হার্ট এটাকের কারনঃ
→>এথেরোস্ক্লেরোসিস (Atherosclerosis) – সোজা ভাষায় করোনারি আর্টারিতে রক্তের জমাট বেঁধে যাওয়া ও ধমনী প্রাচীর মোটা হয়ে সহজে রক্ত প্রবাহিত হতে না পারা।
Thrombus formation
↓
Atherosclerotic stenosis
↓
Coronary artery stenosis
↓
MI [হার্ট এটাক]
এবং →>দীর্ঘস্থায়ী করোনারি স্পাজম
হার্ট এটাকের কিছু অনিয়ন্ত্রন যোগ্য রিস্ক ফ্যাক্টর আছে। যেমন-
→বয়স
→লিঙ্গ
→বংশগত
হার্ট এটাকের কিছু নিয়ন্ত্রন যোগ্য রিস্ক ফ্যাক্টর আছে। যেমন-
→ধুমপান
→উচ্চ রক্তচাপ
→হাইপার লিপিডেমিয়া
→ডায়াবেটিস
→মুটিয়ে যাওয়া
→কায়িক পরিশ্রমের অভাব
→উচ্চ চর্বি জাতীয় খাদ্য গ্রহন ও আঁশ জাতীয় খাদ্য কম খাওয়া
→মানসিক চাপ
→মদ্যপান
→হাইপো-ইস্ট্রোজেনোমিয়া
→জন্মনিয়ন্ত্রক পিল
কিভাবে বুঝবেন হার্ট এটাক?
বুকে প্রচন্ড ব্যাথা হবে। এরকম লাগতে পারেঃ
→ হঠাৎ অনুভব করবেন ভারি কিছু একটা যেন বসে আছে আপনার বুকের উপর
→ একটা ব্যাথার ব্যান্ড বুকের চারপাশে অনুভব করবেন
→ বুকের ব্যাথা মনে হবে যেন বুক চিপে ফেলছে
→ হজম হবে না পেটের উপরের অংশে জ্বালাপোড়া করবে
এছাড়াও
→ ছোট ছোট শ্বাস প্রশ্বাস
→ঘেমে যাওয়া
→অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
→ঝাপসা দেখা
→বমি, এসব হতে পারে
তখন কি করা যাবে না?
নিজে নিজে গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে রওনা দেবেন না
এক মুহুর্ত দেরি করবেন না হাসপাতালে যেতে।
কি করা উচিত?
→হার্ট এটাক হয়েছে ধরতে পারলে রোগিকে তাৎখনিক এসপিরিন/ ওয়ারফেরিন জাতীয় ওষুধ খাইয়ে দেয়া ভাল। এতে রক্ত জমাট বাঁধা বন্ধ হবে।
→জিহবার নিচে নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে দিতে হবে।
→রোগিকে আশ্বস্ত রাখা
চিকিৎসাঃ
হাসপাতালে নেবার পর ডাক্তার নানান ধরনের চিকিৎসা দিতে পারেন। প্রয়োজন মোতাবেক ডাক্তার আপনাকে –
→ ECG করতে পারেন
→ কৃত্তিম উপায়ে অক্সিজেন দিতে পারেন
→আপনার হাতে intra venous ফ্লুইড (মেডিসিন) দিতে পারেন
→নাইট্রোগ্লিসারিন দিতে পারেন
→এছাড়াও আপনার চিকিৎসক আপনাকে অবস্থা বুঝে অন্যান্য চিকিৎসা দিতে পারেন।
সার্জারিঃ
যদি মেডিসিনে কাজ না হয় তাহলে আপনাকে সার্জনের টেবিলে যেতে হবে যেখানে-
→এনজিওগ্রাম করে দেখা হবে আপনার ব্লক কতটুকু
→যদি ব্লক বেশি হয়, আর অষুধে কাজ হবে না বলে মনে করেন তাহলে আপনাকে এনজিওপ্লাস্টি করাতে হবে। এই পদ্ধতিতে আপনার ছোট হয়ে যাওয়া ধমনীতে কতগুলো মাইক্রো-রিং পরিয়ে দেয়া হবে।
→যদি এরপরও ভবিষ্যতে আবার হার্ট এটাক হয় তাহলে এমনকি ওপেন হার্ট সার্জারি বা বাইপাস সার্জারি করতে হতে পারে। এক্ষেত্রে সার্জন আপনার সার্জারি করে আপনার হার্টের ধমনীটিকে পা থেকে একটি শিরা (গ্রেট সাফেনাস ভেইন) কেটে নিয়ে সেটি দিয়ে ধমনীর সমস্যাযুক্ত অংশদিয়ে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহের একটি বাইপাস রাস্তা তৈরি করে দিতে পারেন।
-এছাড়াও আপনার চিকিৎসক আপনাকে অবস্থা বুঝে অন্যান্য চিকিৎসা দিতে পারেন।
প্রতিরোধঃ
-ধুমপান না করা
-মাদক থেকে দূরে থাকা
-দুশ্চিন্তা না করা
-রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা
-ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন
-কলেস্টেরন নিয়ন্ত্রন
-চর্বি জাতীয় খাদ্য কম খাওয়া
-শাকসবজি – ফল বেশি খাওয়া
-দেহের অতিরিক্ত ওজন ঝেড়ে ফেলা
-প্রতিদিন শারীরিক ব্যায়াম করা । অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা
এখন এ সম্পর্কে কিছু জানলেন। এবার সাবধানে থাকুন, ভাল থাকুন।
ডিসক্লেইমারঃ উপরোক্ত তথ্য শুধু জ্ঞানার্জনের জন্য। রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া চিকিৎসা আইনত দন্ডনীয়।
এ ধরনের আরো লেখাঃ
হার্নিয়া: কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার
এপেনডিসাইটিস: কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার
গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যঃ
েমা আশরাফুল আলম বলেছেন: একেবারে প্রথমে ওয়ারফেরিন কোনো কাজে দেবে না, অ্যাসপিরিন আর জিটিএন (GTN) দিতে হবে জিভের নিচে, আর সাথে সাথে হাসপাতালে নিতে হবে।
সেখানে ২য় স্টেপের চিকিতসা শুরু হবে।
অ্যাসপিরিন আর জিটিএন (GTN) দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে রোগীর কোন রিসেন্ট অপারেশন, পেপটিক আলসার, বা স্ট্রোক হয়েছে কিনা, না হলে আবার internal bleeding শুরু হতে পারে , BP টাও দেখা দরকার।