বিঃ দঃ রাজকার ও জামাত ভাইয়েরা মাইনাচ দেওয়ার আগে একবার পোষ্টটা পড়ে দেখবেন এবং মাইনাচ কেন দিলেন বলবেন?
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিজেদের যতই একটি পৃথক রাজনৈতিক দল বলুক প্রকৃতপক্ষে তারা মাওলানা মওদুদীর রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী। এরা একটি আন্তর্জাতিক চক্রের অংশ। আর একথা জামায়াতের এদেশীয় নেতা গোলাম আযম ও প্রয়াত আব্বাস আলী খানের বক্তব্য থেকেও জানা যায়। ২০০৮ সনের অক্টোবর মাসে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের ছাত্র ফ্রন্টের মুখপত্র মাসিক 'হাম কাদাম' পত্রিকায় জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের একটি সাক্ষাৎকার সংক্ষিপ্ত আকারে ছাপা হয়। এতে গোলাম আযম নিজের মুখে বলেছেন: "বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীও" মাওলানা মওদুদীর রাজনৈতিক দর্শন (Political thoughts) অবলম্বন করেছে।" [ মাসিক হাম কাদাম, লাহোর, অক্টোবর ২০০৮ সংখ্যা পৃ-৮]
প্রয়াত আব্বাস আলী খান তার রচিত পুস্তক 'জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস' বইতে লিখেছেন: "বর্তমান কালে এ উপমহাদেশের ছ'টি রাষ্ট্রে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, জম্মু ও কাশ্মীর এবং আজাদ কাশ্মীরে 'জামায়াতে ইসলামী' ইসলামী আন্দোলন করে যাচ্ছে" (গ্রন্থকারের কথা)। আবার ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত Justice Munir ও Justice Kayani-র সমন্বয়ে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন রিপোর্টেও উল্লেখ করা আছে, জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমস্ত বিশ্বে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা (পৃষ্ঠা-২৪৩)। অতএব এখানে কোন দেশের 'জামায়াতে ইসলামী'-কে পৃথক করে দেখার অবকাশ নাই। এরা সবাই মওদুদীবাদের অনুসারী। আর মওদুদীর শিক্ষা ও দর্শন যে সন্ত্রাসী ও যুদ্ধংদেহী মনোবৃত্তির ধারক ও বাহক একথা পরবর্তী কয়েকটি উদ্ধৃতির মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হবে ।
জামায়াতে ইসলামী একটি কপট দলের নাম। এরা ইসলামের নাম ভাঙিয়ে রাজনীতি করলেও এদের মাঝে ইসলামের সার বা মূল শিক্ষা নাই। পবিত্র ইসলাম ধর্মের শিক্ষা হলো: 'তোমরা প্রতিমা পূজার অপবিত্রতা পরিহার কর আর তোমরা মিথ্যা বলাও পরিহার কর (সূরা হজ, আয়াত নম্বর-৩০)। কিন্তু এ বিষয়ে জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা গুরু মাওলানা মওদুদীর বক্তব্য হচ্ছে: "বাস্তব জীবনে এমন কিছু চাহিদা রয়েছে যেগুলোর খাতিরে মিথ্যা বলা কেবল জায়েযই নয় বরং ওয়াজেব" (মাসিক তরজুমানুল কোরআন, ৫০তম খণ্ড, ২য় সংখ্যা, শাবান ১৩৭৭ হিঃ পৃষ্ঠা নম্বর-১১৮) এরপর তিনি তার বক্তব্যের সমর্থনে পবিত্র হাদীসের মনগড়া এবং বিকৃত অর্থ করতেও দ্বিধা করেন নি। যে রাজনৈতিক দল ইসলামের মতো সত্য ও সুন্দর ধর্মের নামে মিথ্যাচারের শিক্ষা দেয় তার কাছে নৈতিকতা ও সততার কিইবা আশা করা যায়?
জামায়াতে ইসলামী ধর্মের নামে বলপ্রয়োগ ও অস্ত্রপ্রয়োগে বিশ্বাসী। এরা মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ করার নীতিতে বিশ্বাসী। মওদুদীর স্পষ্ট বক্তব্য হলো: মহানবী (সাঃ) তের (১৩) বছর পর্যন্ত আরবের লোকদের মধ্যে ইসলামের মৌখিক ওয়াজ ও দাওয়াতের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হবার পর শেষে যখন অস্ত্রধারণ করেছিলেন তখন মানুষের মন আপনা-আপনি সত্য গ্রহণের জন্য বিগলিত ও ইসলামে শামিল হবার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল।
(দেখুন: আল জিহাদ ফিল ইসলাম, ১৭ দশ মুদ্রণ-২০০২ ইং, পৃ-১৭৩, ১৭৪) অর্থাৎ একদিকে তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে ব্যর্থ হবার অপবাদ দিচ্ছেন, অন্যদিকে তিনি ইসলামের পবিত্র নবীর প্রতি অস্ত্রবলে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের কলঙ্ক লেপন করছেন। অথচ তিনি একই পুস্তকের পূর্ববর্তী পৃষ্ঠাগুলোতে নিজেই বিবেক ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা নিশ্চিতকারী ১৪/১৫টি কোরআনের আয়াত উল্লেখ করেছেন! তিনি কোরআন প্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্বন্ধে ভালোভাবে জানতেন তা সত্ত্বেও তিনি ইসলামের নবীর প্রতি বল প্রয়োগের ঘৃণিত অপবাদ উত্থাপন করেছেন। পরবর্তী দুই পৃষ্ঠাতেও তিনি একই কথা এভাবে উল্লেখ করেছেন:
"মাত্র এক শতাব্দীর মধ্যে আরবের মতো অন্যান্য দেশ এবং বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ মানুষ কেবল এজন্যই এত শিগগিরই ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়েছিল কেন না, ইসলামের তরবারি তাদের মনের সমস্ত অন্ধকার আবরণ ছিন্নভিন্ন করে সেই কলুষিত পরিবেশকে একেবারে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছিল যে পরিবেশে কোনো উত্তম চারিত্রিক শিক্ষা বিকাশ লাভ করতে পারে না। ইসলাম ধর্ম এমন সব রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সরকারের মূলোৎপাটন করেছিল যারা ছিল সত্যের শত্রু আর মিথ্যার পৃষ্ঠপোষক"। তিনি আরও বলেছেন, "ইসলাম ধর্ম কেবল অস্ত্রবল প্রয়োগ করে মানুষকে মুসলমান বানায় একথা বলা যেমন ভুল, ঠিক তেমনি ইসলামের প্রচার ও প্রসারে অস্ত্রের কোনো ভূমিকাই নেই-একথা বলাও সঠিক নয়। প্রকৃত সত্য এই দুইয়ের মাঝামাঝি অবস্থিত। আর তা হলো, অন্য সব সত্যতার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঠিক একইভাবে মৌখিক তবলিগ ও অস্ত্রের প্রয়োগ উভয়েরই ভূমিকা ছিল। তবলিগ বীজ বপনের কাজ করে আর তরবারি নিড়ানি দেয়। প্রথমে তরবারি মাটি নরম করে যেন এতে বীজ উদ্গমের পরিবেশ সৃষ্টি হয়, এরপর তবলিগের মাধ্যমে বীজ বপন ও সেচ পরিচর্যার কাজ সম্পন্ন করা হয়।" (আল জিহাদ ফিল ইসলাম: পৃঃ ১৭৪-১৭৫)।
যে রাজনৈতিক দল নিজেদের ক্ষমতা লাভের নেশায় মত্ত হয়ে ইসলামের পবিত্র নবীর জীবনী ও তাঁর পবিত্র শিক্ষাকে বিকৃত করার ধৃষ্টতা দেখায় জনগণ এদেশে তাদের এই গর্হিত কার্যকলাপ দেখতে চায় না।
জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের নাম রেখেছে জিহাদ। আর এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এ দলটি বলপ্রয়োগ করার শিক্ষা দেয়। 'হাকিকাতে জিহাদ' পুস্তিকায় মওদুদী এ কথা বার বার লিখেছেন। এই পুস্তিকার এক স্থানে তিনি বলেছেন: "যে ব্যক্তি সত্যিই আল্লাহর পৃথিবী থেকে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা দূর করতে চায়, যে ব্যক্তি মানবজাতির সংশোধন চায়, তার পক্ষে কেবল মৌখিক উপদেশদাতা ও শুধু বাহ্যিক শুভাকাঙ্ক্ষীর ভূমিকা পালন করা অর্থহীন। তার রুখে দাঁড়ানো উচিত এবং ভুল নীতির রাষ্ট্র-ব্যবস্থা নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে আর দুষ্কর্মকারীদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সঠিক নীতি ও পদ্ধতির রাষ্ট্র-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা উচিত।" (মওদুদী রচিত 'হাকিকাতে জেহাদ' পুস্তিকা, পৃষ্ঠা-১১)। তিনি আবার বলেছেন: "যে দেশেই তোমরা সরকারি ক্ষমতা লাভ কর, সেখানেই মানুষের সংশোধনকল্পে সোচ্চার হও, ভুল রাষ্ট্রনীতিসমূহকে শুদ্ধ করতে চেষ্টা কর। আল্লাহ-ভীতিশূন্য আর লাগামহীন মানুষদের হাত থেকে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা ও আনুগত্য লাভের অবস্থান কেড়ে নাও।" (মওদুদী রচিত 'হাকিকাতে জেহাদ' পুস্তিকা, পৃষ্ঠা-১৫)।
এক পর্যায়ে একই পুস্তিকার আরেক জায়গায় মওদুদী তার নিজ দলের পরিচয় নিজেই এভাবে তুলে ধরেছেন: "এটা ধর্ম প্রচারকারী উপদেষ্টা বা সুসংবাদদাতাদের জামায়াত নয় বরং এটি হচ্ছে আল্লাহর সেনাদল.... তাই এই পার্টির জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নাই" [প্রাগুক্ত পৃ-৫৫]
খুব সম্ভব এজন্যই বিচারপতি মুনির ও কায়ানী আজ থেকে অনেক বছর আগেই জামায়াতে ইসলামী সম্বন্ধে লিখেছিলেন:
The Ideology of the Jama'at-i-Islami is perfectly simple. It aims at the establishment of the sovereignty of Allah throughout the world which, in other words, means the establishment of a religio-political system which the Jama'at calls Islam. For the achievement of this ideal it believes not only in propaganda but in the acquisition of political control by constitutional means and where feasible by force." (Report of the Court of Inquiry, 1954 Page, ২৪৩)
অথচ পবিত্র ইসলাম ধর্মের নামে কোনো ধরনের উৎপীড়ন ও বল প্রয়োগের অনুমতি দেয় না। পবিত্র কোরআনের অমোঘ ঘোষণা হচ্ছে "লা ইকরাহা ফিদ্দীন" (সূরা বাকারাহ : ২৫৬ আয়াত) অর্থাৎ ধর্মে কোনো ধরনের বলপ্রয়োগ নাই। আরও বলা হয়েছে "লাকুম দীনুকুম ওয়ালিয়া দীন" (সুরা কাফেরুন)। অর্থাৎ তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম, আমার জন্য আমার ধর্ম। তাই ইসলামের নামে এই ফ্যাসিষ্ট দর্শনের ধারক ও বাহকদের এদেশের পবিত্র মাটিতে তাদের অন্যায় কর্মকাণ্ড পরিচালনার অনুমতি দেওয়া যায় না।
বাংলায় বলে, চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। জামায়াতীরা যেমন ক্ষমতা দখল ও বলপ্রয়োগের ইসলামে বিশ্বাসী ঠিক তেমনি আফগানিস্তানের তালেবানরাও এই একই পথ অবলম্বন করেছিল। সমগ্র বিশ্বে ধিকৃত ও নিন্দিত এই তালেবানদের সখ্যতা ছিল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে। একেবারে ভেতরকার তথ্য উদঘাটন করে Barnett R. Rubin তার লিখিত পুস্তক "In search of peace in Afghanistan: From Buffer State to Failed State" এর ৩৫ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেছেন:
‡eneral Zia's regime, which was trying to legitimate itself through a program of Islami“ation, took advantage of the latitude it received to create a system of aid that protected Pakistani security interests. It did so by weakening Afghan nationalism and favoring the most radical Islamist groups. Both Zia and the Saudis subcontracted much of the dealings with the Mujahidin groups to the Pakistani Islamist group Jamat-i Islami, which supported Zia's Islami“ation program, Maû the ISI officers who carried out the policy were members of Jamaat.
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, আজ যে জামায়াতে ইসলামী নিজেকে গণতান্ত্রিক বলে সাব্যস্ত করতে মহাব্যস্ত তার প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই অস্বীকার করে গেছেন। মওদুদী এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, "যেসব এসেম্বলী বা পার্লামেন্ট বর্তমান যুগের গণতান্ত্রিক নীতিতে গঠিত ও পরিচালিত এগুলোর সদস্যপদ লাভ করা হারাম, এগুলোর জন্য ভোট প্রদান করাও হারাম।" (রাসায়েল ও মাসায়েল, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৯০)
সিয়াসী কাশমাকাশ-এ মওদুদী লিখেছেন বর্তমান সমাজের হাজারে নয়শ নিরান্নব্বই জন ইসলাম সম্বন্ধে অজ্ঞ। এরপর তিনি বলেছেন: "গণতান্ত্রিক নির্বাচনের উপমা দুধ থেকে মাখন বের করার মত। দুধ যদি বিষাক্ত হয় তাহলে মাখন তার চেয়ে বেশি বিষাক্ত হবে। তেমনই নষ্ট সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে যারা নির্বাচিত হয়ে আসবেন তারা সেই সমাজের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিবিম্ব আকারেই নির্বাচিত হবেন। (পৃ-১৩২)
তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, মানুষের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধন না করে এরা এই বিষাক্ত নির্বাচনে অংশ নিতে চায় কেন? উত্তর একটাই আর তা হলো : তোরা যে যা বলিস ভাই আমার সোনার হরিণ চাই। ছলে বলে কৌশলে যেভাবেই হোক ধর্মের নাম ভাঙিয়ে আমাকে ক্ষমতায় যেতেই হবে। এটাই তাদের আসল উদ্দেশ্য বরাবরের ন্যায় এবারও ছিল। তবে এবার জাতি ভুল করেনি তাদের চিনতে। গত ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮-এর জাতীয় নির্বাচনে এদেরকে জাতি উচিত শিক্ষা দিয়েছে। এদের যদি সামান্য পরিমাণও ইসলামের প্রতি দরদ থাকে তাহলে আর কোনোদিন ইসলামের দোহাই দিয়ে অন্তত পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না আর এরা যেন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে ব্যবস্থাও বর্তমান সরকারের করা উচিত ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।