আমি বেড়াতে যাওয়ার কারণে বেশ ক'দিন ব্লগে আসতে পারিনি। আজকে এসে দেখি একটা টপিকে অনেকগুলো ব্লগ পোস্ট এসেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আমার লেখা।
মূল খবরটা হল, ভারতীয় কোনো একটি সংবাদপত্রে খবর এসেছে যে ভারত থেকে ৫০ জনের একটি কম্যান্ডো ফোর্স বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসে পাঠানো হবে। এর পরে বাংলাদেশে একটি নিউস চ্যানেল ও সংবাদপত্র এই বিষয়টি জনসমক্ষে এনেছেন বাংলাদেশের জন্য হুমকি হিসাবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি কিছু প্রশ্নের ও অভিযোগের উত্তর দিই।
কেন বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে কম্যান্ডো?
এমনিতে দূতাবাসের নিরাপত্তার দায়িত্ব রিসিভিং দেশের, কিন্তু হাইকমিশনের কর্মীদের বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে সেন্ডিং দেশ তাদের নিরাপত্তার জন্য কর্মী পাঠাতে পারে। ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস ইতিপূর্বে বেশ কিছু থ্রেট লেটার পেয়েছে [৫], কিছুদিন আগে লস্কর-ই-তৈবার ভারতীয় দূতাবাস আক্রমণের একটি পরিকল্পনার কথা বাংলাদেশের গোয়েন্দা সূত্রে [১] জানা গেছে। এর পরেই নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য এই পদক্ষেপ।
অন্যান্য দেশেও কি এরকম উদাহরণ আছে?
ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের প্রহরায় ১৬ জন কম্যান্ডোকে পাঠানো হয়েছে [২]। পাকিস্তানও একইভাবে দিল্লীতে তাদের এলিট বাহিনীর কিছু নিরাপত্তাকর্মীকে পাঠানোর কথা ভাবছে বলে সংবাদে প্রকাশ[৩]। কাঠমান্ডুতে ভারতীয় দূতাবাসে গত পাঁচ বছর যাবত নিরাপত্তাকর্মীরা আছেন। কাবুলে ভারতীয় দূতাবাস প্রহরায় থাকেন ইন্দো-তিবেতান ফোর্সের লোকজন - অর্থাৎ ভারতে মূলত তিব্বতীদের নিয়ে গড়া একটি বাহিনীর সৈন্যরা।
হাইকমিশন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন কি কোনটি?
বিদেশে হাইকমিশন আন্তর্জাতিক ডিপ্লোম্যাটিক মিশনের অংশ। আন্তর্জাতিকভাবে যে কোনো দেশের ডিপ্লোম্যাটিক মিশন পরিচালিত হয় ১৯৬১ সালের জেনেভা কনভেনশন অন ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশনশ [৪] দ্বারা। ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েই এই চুক্তি মেনে চলে।
এই আইন বিদেশে কম্যান্ডো পাঠানো সংক্রান্ত বিষয়ে কি বলে?
আর্টিকেল ৭ অনুসারে সেন্ডিং দেশ (এক্ষেত্রে ভারত) দূতাবাসের কর্মী নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বাধীন। তবে কোনো নিরাপত্তা কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে আগে থেকে রিসিভিং দেশ প্রয়োজন বোধ করলে তাদের নামগুলো নিতে পারে ও তাদের অনুমতির দরকার পড়তে পারে। (In the case of military, naval or air attachés, the receiving State may require their names to be submitted beforehand, for its approval.) আর্টিকেল ১১ (২) অনুসারে রিসিভিং দেশটি রেসিপ্রোকাল ও নন-ডিসক্রিমিনেটরি বেসিসে সেই অনুরোধ নাও রাখতে পারে। (The receiving State may equally, within similar bounds and on a non-discriminatory basis, refuse to accept officials of a particular category.)
আমার কাছে এর মানে দাঁড়ায় এই যে বাংলাদেশ ইচ্ছা করলে ভারতীয় কম্যান্ডোদের ফেরত যেতে বলতেই পারে কিন্তু সেটা non-discriminatory basis হতে হবে, অর্থাৎ বাংলাদেশে তাদের নিজ-নিজ হাইকমিশনে অবস্থান অন্যান্য দেশের কম্যান্ডোদেরও একই ব্যবহার করতে হবে।
বাংলাদেশের কোন মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে অবহিত করতে হয়?
বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীরা সকলেই ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে যান, সুতরাং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের জানা উচিত কে কে বাংলাদেশে আসছেন। আর্টিকেল ১০(১)(এ) একই কথা বলে। তবে এদের মধ্যে কে কে নিরাপত্তাকর্মী তা বাংলাদেশ জানতে না চাইলে ভারত জানাতে বাধ্য নয় (আর্টিকেল ৭)। সুতরাং বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রণালয়ের জানার কথা নয় পঞ্চাশজন কম্যান্ডো না কেরাণী পাঠানো হচ্ছে।
ভারতীয় দূতাবাসের বাইরে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষীরা সমস্যার সৃষ্টি করছেন। এটা কি আইনত সম্ভব?
বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসের চত্বর(“premises of the mission”) কতটা তার ওপর নির্ভর করছে। সাধারণভাবে ঘেরা জায়গার বাইরের রাস্তা-ঘাট চত্বরের বাইরে রাখা হয়। সুতরাং, বাইরের ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বাংলাদেশের পুলিশের হওয়া উচিত। চত্বরের মধ্যে আর্টিকেল ২২ অনুসারে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব সীমিত, অথচ চত্বরের বাইরের রক্ষার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের (আর্টিকেল ২২(২) ও ৪৫(এ) )। দিল্লীতে মার্কিন দূতাবাসের সামনের রাস্তার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল করে দিল্লী পুলিশই। তারাও স্থানীয় বাসিন্দাদের যথেষ্ট হয়রানির কারণ। বাংলাদেশের সংবাদ অনুসারে ভারতীয় দূতাবাসের জন্যও বাংলাদেশের তরফেই প্রচুর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে [৫] - আর নিরাপত্তার ব্যবস্থা মানেই সাধারণ মানুষের হয়রানি।
সূত্র -
১) Click This Link
২) http://www.zeenews.com/news569020.html
৩) Click This Link
৪) Click This Link
৫) Click This Link