ধর্মের উত্স নিয়ে রিচার্ড ডকিন্সের লেখা অনুবাদ করেছি। তার মধ্যে একটি অংশ খুব মজার – যেখানে ডকিন্স একটি নতুন ধর্মমত কিভাবে তৈরি হয় তা নিয়ে একটি কেস স্টাডি করছেন। কেস স্টাডি হল কার্গো কাল্ট নিয়ে।
কার্গো কাল্ট হল প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জগুলোতে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসগুলোর একটি সম্মিলিত নাম। এরা মনে করত কার্গো জাহাজ গুলো আসলে স্বর্গীয় দূতের প্রেরিত – আর সব সামগ্রী তাদের জন্য ঈশ্বর-প্রদত্ত। জাহাজের ইউরোপিয় নাবিকরা কিভাবে রেডিও শোনে, কিভাবে রাতে আলো জ্বালায় – সবই ছিল এই আদিবাসীদের বিস্ময়ের বিষয়। আসলে উন্নত টেকনলজির সাথে ম্যাজিকের খুব একটা তফাত নেই। পরবর্তীকালে তাদের ধর্মবিশ্বাসেও এইসব ‘ম্যাজিক’ প্রবেশ করে, গঠিত হয় মিশ্র ধর্ম।
ভানুয়াটুর তান্না দ্বীপে আমেরিকান নাবিকদের রীতিমত পূজো করা হত। তান্নায় একটি কাল্ট এখনও আছে – যার কেন্দ্রে আছে জন ফ্রাম নামে এক নাবিক। যদিও নিশ্চিতভাবে কেউ বলতে পারেনা এই নামে সত্যি কেউ ছিল কিনা, সরকারি নথি আনুসারে, ফ্রাম দ্বীপে এসেছিলেন ১৯৪০ সালে। তিনি অনেকগুলো ভবিষ্যতবাণী করে গিয়েছিলেন। তার বক্তব্য আনুসারে, তিনি আবার দ্বীপে ফিরে আসবেন, জাহাজ ভর্তি সামগ্রী নিয়ে, আর সাদা আমেরিকান ও মিশনারীদের দ্বীপ থেকে তাড়িয়ে দেবেন। এমনকি, তার পুনরাগমনের সময় তিনি প্রচলিত ঔপনিবেশিক মুদ্রার পরিবর্তে নতুন ধরণের মুদ্রার প্রচলন করবেন। সেই প্রভাবে ১৯৪১ সালে আদিবাসীরা কাজ বন্ধ করে দিল। যা টাকাপয়সা ছিল তা দিয়ে জিনিসপত্র কিনতে শুরু করল। দ্বীপের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হল। কিছুদিন পরে, যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকান বাহিনী দ্বীপে পদার্পণ করল, আদিবাসীরা মনে করল জন আসবে এবার। জনের বিমান যাতে দ্বীপে নামতে পারে, সেজন্য দ্বীপে রানওয়ে তৈরি হল, বাঁশের কন্ট্রোল টাওয়ার, হেডফোন বানানো হল।
পঞ্চাশের দশকে চিত্রপরিচালক ডেভিড অ্যাটেনবরো দ্বীপে যান তথ্যচিত্র তৈরির জন্য। দেখেন, নাম্বাস নামে এক স্বঘোষিত পুরোহিত নবগঠিত কাল্টের দায়িত্বে আছেন। তিনি জনের সাথে নিয়মিত ‘যোগাযোগ’ রেখে চলেন। জনের রেডিও-র সাথে যোগাযোগের পন্থাও অদ্ভূত। এক বৃদ্ধা, কোমরে বৈদ্যুতিক তার জড়ানো, মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে অস্ফুটস্বরে কথা বলতে থাকে। নাম্বাস সেটা বুঝে সবাইকে জানায় – এটাই হল জনের বার্তা। স্বাভাবিকভাবেই, তাদের সমাজে নাম্বাসের কদরই অন্যরকম। নাম্বাসের বক্তব্য অনুসারে কোনো এক বছর ১৫ই ফেব্রুয়ারী জন ফিরে আসবে। তাই, ঐ দিনে ধর্মীয় উৎসব পালন হয়, সবাই একটা খোলা জায়গায় একত্রিত হয়ে জনের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা জানায়।
সব দেখে অ্যাটেনবরো তার বন্ধু স্যামকে জিজ্ঞেস করেন যে কেন জনের পুনরাগমনের প্রতিশ্রুতির ঊনিশ বছর পরেও এরা একইভাবে জনের অপেক্ষায় বসে থাকে? স্যামের উত্তর, যদি আমরা দুহাজার বছর ধরে খ্রীষ্টের পুনরাগমনের প্রতীক্ষা করে যেতে পারি – তবে এরাই বা কেন মাত্র ঊনিশ বছর জনের জন্য প্রতীক্ষা করতে পারে না?
সম্পূর্ণ অনুবাদ :
ধর্মের উত্স সন্ধানে