আমাদের বিশ্বে অনেক রকম জাতি ও উপজাতি বসবাস করে। সবাই ভিন্ন ভিন্ন রীতিনীতি মেনে চলে এবং তাদের সমগোত্রীয় হতে হলে তাকে তাদের মতোই হতে হবে।
নর্থ-আফ্রিকার ক্যামেরুন থেকেও ৩৫০ কি.মি এর বেশি দূরে রয়েছে বায়া নামক এক উপজাতি। বায়াদের গ্রামটি খুবই ছোট। এতটাই ছোট যে, সেখানে মাত্র ২৬ জন বসবাস করে। নেই কোন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, নেই কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা। কোন প্রকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সেখানে নেই। সবচেয়ে কাছের শহরটা গ্রাম থেকে ২০০ কি.মি দূরে। আফ্রিকা বলতে আমরা যা ধারনা করে থাকি তার সবটাই সেখানে আছে। যেমন কাল বর্ণের মানুষ, প্রচণ্ড গরম, খাবার পানির সঙ্কট, পোশাকে ভিন্নতা, আর খাওয়া দাওয়া। বায়া উপজাতির নারীরা ঘর আর বাচ্চা সামলায় আর পুরুষেরা বাইরে।
বায়াদের প্রধান খাদ্য রক পাইথন। যাকে বিশ্বের ভয়াবহ সাপেদের মধ্যে একটি বলে গণনা করা হয়। নাবালক পুরুষেরা সাবালক হবার পরিচয় দেয় রক পাইথনের গর্তে নিজের মাথা ঢুকিয়ে তাকে বাইরে বের করে নিয়ে এসে। কি অদ্ভুত রীতি তাই না? কিন্তু তাকে এই কাজ করতেই হবে। নইলে পুরো গ্রামটাই অনাহারে থাকবে। অর্থাৎ পুরুষেরা শিকার করে নিয়ে আসবে এবং গ্রামের সবাই সেটা খেয়েই জীবন ধারন করবে। আসলে বেঁচে থাকতে হলে সামনে যা আসে তাই খেয়েই টিকে থাকার এই লড়াই চালিয়ে যেতে হয়।
শুধু তাই নয়...
মৌমাছির বাসার মধ্যে হাত ঢুকিয়ে মধু নিয়ে আসতে হবে একজন নাবালককে। তাও আবার একদমই খালি হাতে।
রাগী মৌমাছির দল কি ওকে ছেড়ে দেবে বলে আপনার মনে হয়?
শত শত হূল ঢুকিয়ে দেওয়া শর্তেও ওকে সেই ভয়ানক কাজটিই করতে হবে। ওর বিচক্ষণতা প্রমাণ করতে না পারলে সমাজে ওকে কেউই মূল্যায়ন করবে না। মেয়েরা ওকে হাসির পাত্র বানাবে। আর ওকে নিয়ে মজা করবে। তাছাড়া ওকে কেউই বিয়ে করতে চাইবে না। কারন সে সাবালকের প্রমাণ দিতে অক্ষম।
আর রাতের মজা উঁই পোকাদের সাথে। ঝাকে ঝাকে উঁই পোকারা আগুনের আলোতে এসে খেলা করে আর বায়ারা সেগুলো ধরেই মুখে ঢুকিয়ে নেয়। তাছাড়া নাচ-গান তো আছেই। পাতা আর বাকলের তৈরি অর্ধনগ্ন পোষাক পরে নিজস্ব রচিত গান ও নিজস্ব বাদ্যযন্ত্রের সাহায্যে নিজস্ব নানান ভঙ্গিমায় নাচ করে তারা। সবাই সেটা বেশ উপভোগ করে। তখন তাদের দেখলে মনে হয় তারা তাদের জীবন নিয়ে সত্যিই অনেক খুশি। পৃথিবীর বুকে টিকে থাকার লড়াই কতটা কঠিন ও ভয়াবহ তা বায়া উপজাতিকে দেখলে বোঝা যায়।