আগেকার দিনে জমিদাররা তাদের বাগানবাড়িতে কিছু মেয়েমানুষ নিয়ে এসে ফুর্তি করে থাকত।সেইসব জমিদার এখন আর নেই,তাদের ভূমিকা হাতবদল হতে হতে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির হাতে এসে পড়েছে।এরই সাথে তাদের বাগানবাড়ির ভূমিকাও বদলে গেছে।সে সব বাগানবাড়ি এখন কনসার্ট নামে পরিচিতি পেয়েছে।কিছু মানুষ টাকা বিনিয়োগ করে কিছু গায়ক-গায়িকা,নায়ক-নায়িকা,নৃ্ত্যশিল্পী ধরে নিয়ে আসে।ভাড়া করে আনা এসব মানুষগুলো কিছুক্ষণ নেচে বা গেয়ে ঐসব বিনিয়োগকারীগুলোকে আনন্দ প্রদান করে থাকে।আর তারা তাদের আনন্দ বিভিন্নভাবে প্রকাশ করে।
আগেকার দিনেও সেসব বাগানবাড়িতে এমনটা হত।একজন মেয়ে নাচত আর কিছু লোক বাদ্যবাজনা বাজিয়ে জমিদারদের আনন্দ প্রদান করত।জমিদাররা কিছু টাকা তাদের দিকে ছুঁড়ে মারত এবং নানা অঙ্গভঙ্গি করে আনন্দ প্রকাশ করত।
সুতরাং দেখা যায়,বাগানবাড়ির ভূমিকা তেমন একটা বদলায়নি।
আজকে শাহ্রুখের কনসার্ট দেখে এসব কথা মনে হচ্ছিল।এগুলো মনে হবার সাথে সাথে সেটা দেখার রুচি নষ্ট হয়ে যায়।তবুও দেখি,কারণ বাসার প্রায় সবাই অনুষ্ঠানটা দেখছিল।
ছোটবেলায় রাণী মুখার্জীর করা একটা ইন্ডিয়ান বাংলা মুভি দেখেছিলাম 'বিয়ের ফুল' নামে।তখন খুব ভালো লেগেছিল।সাথে মুখার্জীকেও ভালো লেগেছিল।সে ভালো লাগা অনেকদিন টিকেছিল,তবে পরে নষ্ট হয়ে যায়।আজকে তার নাচ আর গেটআপ দেখে সে ভালো লাগা পুরোপুরি ভ্যানিশ হয়ে গেছে।খুবই বিরক্তি লেগেছে তার নর্তন-কুর্দন দেখে।মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের মানুষ এক নায়িকাকে ধরে এনেছে ঐ বাগানবাড়ির মেয়েগুলোর মত আনন্দ প্রদানের জন্য।সে উপরি হিসেবে বাংলায় কিছু কথা বলল।যা বাংলার মানুষ শুনে তৃপ্ত হয়েছে।
শাহ্রুখের বেলায়ও একই কথা।সে এসে কিছুক্ষণ নাচল,এরপর কিছু বিটলামিপূর্ণ কাজ করে বাংলার মানুষকে আনন্দ প্রদান করল।
অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বিরক্তিকর পর্ব হচ্ছে শাহ্রুখের সাথে দুইজন প্রেমিক-প্রেমিকা অথবা স্বামী-স্ত্রীর অংশটা।আমি একবার পেপারে পড়েছি শাহ্রুখকে এক থেকে দেড় লক্ষ রুপি দিলে সে যেকোন অনুষ্ঠানে গিয়ে নাচানাচি করে থাকে।সে গেষ্টদের সামনে অনুষ্ঠানের মূল ব্যক্তিদের সাথে এমন ভাব করে থাকে যেন তারা তার কতদিনের পরিচিত!গেষ্টরাও তার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়।
আজকে ঐ দুই ব্যক্তির সাথে শাহ্রুখ যা করল তা দেখে আমার সে কথাগুলো মনে পড়ে গেল।আমার এখন মনে হচ্ছে তারা দুইজন শাহ্রুখ খানকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছে।একারণে সে তাদের দুইজনের সাথে এতকিছু করল।
এরপর বাংলাদেশের কিছু কুলাঙ্গারকে দেখা গেল যারা শাহ্রুখ বা হিন্দী বলতে পাগল।তারা এসে শাহ্রুখের সাথে কিছু ফালতু বকর বকর করল,শাহ্রুখ কিছু ভাঁড়ামী করল আর আমি বিরক্ত হলাম।
শাহ্রুখ আসার আগে 'সুরেশ' (নামটা আমি ভালো করে জানি না) নামের এক গায়ক এসে লাফালাফি করে নিজের শরীর গরম করল।তার লাফালাফি দেখে মনে হচ্ছিল তার গায়ে বিছুটি পাতা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।কিভাবে যে এসব মানুষ এত লাফাতে পারে!তাকে সে অবস্থায় যদি কেউ হঠাৎ দেখে,তাহলে নির্ঘাৎ কনফিউজড হয়ে যেত।সে তখন ভাবত,"এই আজব প্রাণীটা কি গাইছে নাকি লাফাচ্ছে?"
অনুষ্ঠান এখনও মনে হয় চলছে।কিন্তু আর দেখার ইচ্ছে নেই, যা দেখা দেখে ফেলেছি।
অনুষ্ঠানটা বা কনসার্টটা তেমন ভালো হয়নি।বৈশাখী চ্যানেলের প্রচারে অনভিজ্ঞতা,দেবাশীষ বিশ্বাসের ভেতরকার উত্তেজনা তথা উপস্থাপনায় ত্রূটি,শাহ্রুখের পাগলামী,কিছু পাগলের ফালতু কথাবার্তা-সব দেখে আমার কাছে কনসার্টটা যথেষ্ট বাজে লেগেছে।
জানি না,শাহ্রুখকে এনে বাংলাদেশের মানুষ কি পেল।