(আজকের এই গল্পটার প্লট আমার না । আমি গল্পটা কলেজে শুনছি । কাজেই কেউ যদি দাবি করেন যে এইটা তার গল্প তাইলে আমার কোনো দোষ নাই ।আমি আমার মত করে লিখলাম।)
আজ রুদ্রর মন খুব খারাপ । মনে বড় আশা নিয়ে সে আজ নিশিকে নিয়ে এসেছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । কিন্তু কিছুতেই কিছু হলোনা । ডাক্তার স্পষ্ট বলে দিয়েছেন কোনো ব্যাক্তি যদি নিজের ইচ্ছায় তার দুটি চোখ দান না করে তবে নিশি কোনো দিনই এই সুন্দর পৃথিবী দেখতে পাবেনা । হয়তবা ভাবছেন এরা কারা তাইনা ? থাক আপনাদের আর শুধুশুধু ভাবনার মাঝে ফেলে রেখে লাভ নেই । রুদ্র আর নিশি আমার এই গল্পের মুল চরিত্র । রুদ্র,দেশের স্ব্নামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত এবং বড়লোক বাবার একমাত্র সন্তান । আর নিশি,রুদ্রর বন্ধু এবং সহপাঠি । যখন সে শাদা শাড়ী গায়ে জড়িয়ে কোথাও যায় দেখতে ইন্দ্রানীর মত লাগে তাকে । জীবনে একটাই খুঁত তার,নিশি জন্মান্ধ । আর তার আরেকটা পরিচয় তাকে রুদ্র পাগলের মত ভালবাসে,যদিও সে অপেক্ষায় আছে একটা সুযোগ পেলেই সে নিশি কে বলবে।নিশির অন্ধত্ত সে জয় করবে ভালবাসা দিয়ে ।
চলো সবাই জীবনের আহবানে সামনে এগিয়ে যাই । এগিয়ে যাচ্ছে দিন এগিয়ে যাচ্ছে সময়।কালের বিবর্তনে বদলে যাচ্ছে মানুষ।অনেটা সুজার দেয়া উক্তির মতই “মানুষ মরে গেলে পচে জায়,বেঁচে থাকলে বদলায়,কারণে অকারণে বদলায়,সকালে বিকালে বদলায় ।”শুধু বদলায়না নিশির প্রতি রুদ্রর ভালবাসা । আর এই ক্রমাগত দিন পরিক্রমায় সাহস সঞ্চয় করে একদিন নিশির সামনে যেয়ে দাঁড়ায় সে,জানায় তার ভালবাসার কথা । বদলে নিশি তার অন্ধত্ত’র কথা বলে অপারগতা প্রকাশ করে । বলে যে সে নিজে অন্ধ,কাজেই সে রুদ্রর উপযুক্ত নয় । শুধু শুধু রুদ্রকে সে ঠকাতে পারবেনা,কাজেই সে রুদ্রকে বিয়ে করতে পারবেনা । আর বিয়ে করতে না পারলে মিছে ভালবাসাকে অপমান করে কি হবে ? তখন রুদ্র বলে কি করলে সে রুদ্রকে ভালবাসবে । জবাবে নিশি বলে যদিকোনোদিন সে অন্ধত্তর অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় তবে সে রুদ্রকে বিয়ে করতে রাজি আছে । শুরু হয় রুদ্রর নিরন্তর ছুতে চলা,এখান থেকে ওখানে,একজোড়া চোখের খোজে।কিন্তু সব জায়গাতে একই জবাব,”সম্ভব না”।
একদিন সকালে নিশির বাসায় আসে রুদ্র । বলে তোমার চোখের ব্যাবস্থা হয়েছে।আজ ডাক্তারের কাছে যাব । সত্যিই তার চোখের ব্যাবস্থা হয়েছে । দেখতে দেখতেই তার অপারেশনের দিন ঠিক হয়ে গেল । নিশি বারবার চাচ্ছিল তার দাতার সাথে কথা বলতে কিন্তু ডাক্তার দেয়নি । কেননা এতে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে । এক সকালে নিশির অপারেশন হয়ে গেল । কিন্তু সেইদিন আর রুদ্রর দেখা পাওয়া গেলনা । পরের দিন আবার সে হাজির । চোখে ব্যান্ডেজ নিয়ে রুদ্রর সাথে গল্প চলতে লাগলো,আগের মতই দিনরাতের পার্থক্যহীন অবস্থায় । অবশেষে তার ব্যান্ডেজ খোলার দিনটি এলো । দুই পরিবারের সবাই হাজির । ধীরে ধীরে নিশির সামনে উন্মুক্ত হলো একটা নতুন জগত,সবার আগে দেখতে পেল তাকে যে তাকে পাগলের মত ভালবাসে,যার একান্ত চেষ্টায় অন্ধত্ত পরাজিত হয়েছে নিশির কাছে । তাকে ধরতে চায় নিশি । কিন্তু একি ? যেই অন্ধত্তের অভিশাপ সে নিজে বয়ে বেরিয়েছে সারা জীবন আজ সে যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছে সে নিজেইতো অন্ধ । না এ হয়না,আমি কোনো অন্ধকে বিয়ে করতে পারবোনা । সমস্ত ঘরে পিনপতন নিস্তব্ধতা বিরাজ করে । শুধু মুচকি হাসে রুদ্র । তারপর উলটো ঘুরে হাটতে থাকে । কেবিনের দরজার সামনে গিয়ে হঠাত থমকে দাড়ায় সে,নিশির দিকে তাকিয়ে বলে “আমার চোখদুটির যত্ন নিও প্লিজ । তারপর সে চলে গেল । চোখের সামনে থেকে,মনের সামনে থেকে,হয়তবা জীবন থেকেও ….