somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সড়ক দুর্ঘটনা ও বিন্দুসূর্য

২৬ শে আগস্ট, ২০০৮ রাত ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সূর্যটা ক্রমে ছোট হয়ে আসছে। আরো ছোট। আগের চেয়েও। একটু আগে ছিল পঞ্চাশ পয়সা। এখন পঁয়ত্রিশ। না না, পঁয়ত্রিশ পয়সা হয় না। তাহলে আরেকটু পর পঁচিশ হবে। পর্যবেকের দৃষ্টিতে সূর্যটা পঁচিশ পয়সা হলে তা কতোদূরে আছে? কোন সূত্রে ফেললে বের করা যাবে? এ মুহূর্তে জানি না। এ মুহূর্তে আর কিছু জানার প্রয়োজন নেই।
সাইরেনের শব্দ পাচ্ছি। বাইনারি শব্দ। জোরে এবং আস্তে। আছে এবং নেইয়ের মতো। সূর্যটা বোধহয় আরেকটু ছোট হলো। আমাকে এখন সূর্য দেখতে হচ্ছে। আর কিছু দেখছি না। ঘাড় ঘোরানোর শক্তি নেই। প্রয়োজনও নেই।

এ মুহূর্তে কী কী ভাববো তা আগেই ভাবা ছিল। তবু তা ভাবতে ইচ্ছে করছে না। সূর্যের ছোট হওয়া নিয়ে অঙ্ক করতে ইচ্ছে হচ্ছে। চারপাশে এতো যন্ত্র। কিন্তু অঙ্ক করা সম্ভব নয়। সূর্যটা তাই কতো দূরে মাপতে পারছি না।

প্রিয় পাঠক। খানিক্ষণ আগে আমার একটা কিছু হয়েছে। সম্ভবত মগজের একটা অংশ কাজ করছে না। তাই বলতে পারছি না আমার কী হয়েছে।
এ মুহূর্তের কথা আমি বেশ যত্ন করে মস্তিষ্কের কুঠুরিতে লিখবো ভেবেছিলাম। তাই লিখছি। অনেক দিন পর কোনো যন্ত্র আমার মগজের কথাগুলো পড়তে পারবে। ভবিষ্যতের সেই পাঠকের কথা ভেবে মনে মনে লিখছি।

সূর্যটা ছোট হচ্ছে। তবে মাঝে মাঝে হুট করে নেই হয়ে যাচ্ছে। আমার অনুভূতিও বাইনারি হয়ে যাচ্ছে ক্রমে। ব্যথা আছে, ব্যথা নেই।
কানের পাশে ভেজা ঘাসের খোঁচা। আমি মানুষ না হয়ে সোলার প্যানেল হলে বেশ হতো। এতোক্ষণে তবে কতো ওয়াট বিদ্যুৎ হতো? মাপতে গেলে যন্ত্র লাগবে। যন্ত্র নিয়ে একটা ছড়া লিখেছিলাম। মনে পড়ছে না। এটুকু মনে আছে, যন্ত্র এবং যন্ত্রণা নিয়ে একটা অন্তমিল আছে। সূর্যেরও যন্ত্রণা আছে। যন্ত্রণা থেকে বিদ্যুৎ।

কে যেন আমার হাত ধরলো? কে? জাহানারা? না সে নয়। এ হাত যার সে প্রতিদিন তার গোঁফ ছাঁটে। এ তথ্য আমায় কেউ জানায়নি। আমার ইচ্ছেমতো আমি ভাবছি। তাতে কিছু যায় আসে না।
সূর্যকে ঢেকে দিয়ে একটা চিল উড়ে গেল। চিলটাকে মনে হচ্ছে আছে এবং নেইয়ের মাঝামাঝি। বাইনারি চিল ওড়ে পম্পেইর আকাশে। কবিতা কেউ শুনলো? তা না হলে এতো সোরগোল কীসের? ছন্দ মেলেনি? না মিললেই বা কী! কিছু এসে যায় না তাতে।

আমি সরে যাচ্ছি, তবু সূর্যটা আগের জায়গায় আছে। ওটা ধ্রুব তাই। সূর্যের বোধহয় ঠেকা পড়েনি ছোট হওয়ার। অনেকক্ষণ ধরে পঁয়ত্রিশ পয়সাতেই রয়ে গেছে। আমিই বোধহয় ছোট হয়ে যাচ্ছি।

সূর্য ঢেকে গেছে। কারণ দূরে একটা বিরক্ত তালগাছ। ঝাঁকি দিয়ে উড়িয়ে দিল দুটো বাবুই পাখি। নির্লিপ্ত কাক। আমি থেমে গেলাম। আবার আকাশ। আকাশ কিন্তু সূর্য নয়। ওটা তাই বড় হচ্ছে। এবং যে আমাকে ধরে রেখেছে সে জাহানারা নয়। আমি ড্যাম শিওর। কারণ যে ধরেছে সে প্রতিদিন শেভ করতে গিয়ে গাল কেটে ফেলে। এরপর রাগ ঝাড়ে কাজের ছেলেটার ওপর। আমি জানি। আমি সব জানি, এমনটা ভাবতে আমার বেশ লাগছে। তাহলে ধরে নিই, আমি জানি জাহানারা আমাকে ভালবাসে। আমার জন্য সে রোজ একটা কিছু করে। যেমন...। আমিও বাইনারি হয়ে যাচ্ছি? যতোক্ষণ আছি ততোক্ষণ ভাবছি। যখন নেই তখন স্থির। কল্পনার কি দম আটকে আসে? চারপাশে এতো উত্তর, কিন্তু কী প্রশ্ন করবো? কাকে করবো? প্রশ্ন কি অন্যকে করতে হয়?

আবার চলতে শুরু করলাম। বাইনারি সাইরেন। চারপাশে পায়ের শব্দ। কোনো মানুষ নেই। কারণ আমি দেখছি আকাশ। যা দেখি না, তা নেই। পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে আইনস্টাইন আর কী বলেছেন? মনে পড়ছে না।
যা দেখি, তাও মাঝে মাঝে নেই হয়ে যায়। আমার কল্পনা। নিউরনে এক ঝলক বিদ্যুৎ। তারপর ‌'নেই'। সূর্য দেখছি না। তবু মনে হচ্ছে ওটা আরো ছোট হয়ে গেছে। জানি, সূর্য ছোট হতে বাধ্য। আকাশে চিল নেই। তবু ভাবছি চিল আছে। আকাশ ঢেকে দিচ্ছে।

এক ঝলক ঠাণ্ডা হাওয়া। আমি বোধহয় চিল চিনি না। কাককে চিল ভাবছি। ভেজা ঘাসের ফাঁক দিয়ে তালগাছে কাক দেখছি। নির্বিকার।

সাইরেনের শব্দে আমার কাকদেখা শেষ হলো। 'দেখা' শেষ হবে কখন? কবে অদেখা দেখবো? যা দেখছি, আমার কি তাই দেখার কথা ছিল?
জাহানারার চেহারাটা মনে পড়ছে না। চেহারাটা যেমন ইচ্ছে ধরে নিতে পারি। এই তেলরং তো এই চারকোল। মনে হচ্ছে, কল্পনায় তাকে দেখাটা নেহাৎ অপ্রয়োজনীয় নয়। তবু এতো অস্পষ্ট হচ্ছে কেন? আরো দূরে! জাহানারা তো সূর্য নয়! সে কেন পঁয়ত্রিশ পয়সার মতো ছোট হয়ে আছে?
সাইরেন। কে শুনেছে সবার আগে? চিলটা নিশ্চয়ই। তা না হলে এতো অস্থির হয়ে উড়ছে কেন? চিল উড়ছে। বৃত্ত হচ্ছে। নিখুঁত বৃত্ত। চিল কি অঙ্ক বোঝে? উত্তর দেবে কে?

সব দৌড়াচ্ছে। সময় পালাচ্ছে। ওকে কেউ ধরছে না কেন? মনে হলো চিলের ঠোঁটে একঝলক সময়ের হাসি দেখলাম। ওটা বোধহয় দেখা সম্ভব ছিল না। চিলের ঠোঁট সরে যাচ্ছে। পয়সার চেয়েও ছোট হচ্ছে সময়ের চাকতি। আরো ছোট।

ভেজা ঘাস অন্ধকারে ঢেকে গেছে। তবু স্পর্শ আছে। এখন আর আমাকে কেউ ধরে রাখেনি। আমিও ধরিনি। সূর্যটা এবার পঁচিশ পয়সা। সব কালো। সব কালো, এটা আমায় কেউ বলছে না। আমাকে বোধহয় আর কেউ কিছু বলবে না। দূরে একটা বিন্দুর মতো সূর্য। বিন্দুটা সত্যি আছে? ধরে নিই বিন্দু আছে কিংবা বিন্দু নেই।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×