somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেডিকেল ভর্তিঃ আমার কিছু ভাবনা

১০ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আত্মীয়বলয়ের ভেতর অনেকেই এবার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে। রেজাল্টও হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে- মাধ্যমিক শ্রেণীর পরিসংখ্যানের সূত্র মেনেই- দুয়েকজন টিকেছে, কেউ কেউ অপেক্ষমান, বেশিরভাগকেই ভগ্নচিত্ত হতে হয়েছে। ব্যাপারটা নিয়ে পারিবারিক পরিমণ্ডলে একটু হুল্লোড় পড়েছে বলা চলে। সাফল্য-ব্যর্থতার ফিরিস্তি আলোচিত হচ্ছে। সাফল্যের কারণ- কাঁচা-পেতিভা নাকি উদয়স্ত বলীবর্দের খাটুনি; ব্যর্থতার কারণ- মস্তিষ্কে সরিসৃপপ্রবৃত্তির উপস্থিতি নাকি সনিষ্ঠ ফাঁকিবাজি, এ নিয়ে বিস্তর কাটাছেড়া চলছেই। উচ্ছ্বাস, আনন্দ, অভিনন্দন, প্রেরণা-প্রদানের’র পাশাপাশি হতাশা, মনঃক্ষুন্নতা, ঈর্ষা আর প্রচ্ছন্ন উপহাসের চর্চাটাও দস্তুরমতো জারি আছে। তবে এগুলো নিতিকার দৈব-মানসক্রিয়া আর মধ্যবিত্তের পারিবারিক রাজনীতিরই অংশ। সে আলোচনায় যাচ্ছিনে। তবে এ ফাঁকে আমার, ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত একটা বিশেষ ভাবনা, মাথায় হুঁড়িয়ে পড়লো।

বাংলাদেশের মেডিকেল ভর্তিপরীক্ষার নিয়ন্ত্রক সংস্থা- ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিস, সংক্ষেপে ডিজিএইচএস। সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা সম্ভবত একুশ, বেসরকারিগুলো মিলিয়ে সে হিসেব কত, জানিনা। গতবছর থেকে সবগুলোর পরীক্ষা একযোগে নেয়া হচ্ছে। মেডিকেল কলেজগুলোতে পরীক্ষা হয় একশোতে। এবারে পরীক্ষা দিয়েছে প্রায় পঞ্চাশ হাজার। তার মধ্যে প্রথম তিন হাজার চল্লিশজন সরাসরি সরকারি মেডিকেলগুলোতে পড়বার আমন্ত্রন পায়। আর প্রথম সাত হাজার জন প্রাইভেট মেডিকেলগুলোতে ভর্তি হবার সুযোগ পায়, অনুদান ব্যতিরেকেই।

এখন ছোট্ট একটা পরিসংখ্যানে আসি। এবার সর্বোচ্চ স্কোর হয়েছে ৬৯ (শতভাগ নিশ্চিতভাবে যদিও বলতে পারছিনা, তবে সম্ভাব্যতার পরিমাণ ঊর্ধ্ব-পচানব্বই)। তিনহাজারতম জনের স্কোর হলো প্রায় সাড়ে পঞ্চাশ (এবং এটারও সূচাগ্র-সঠিক্যের গ্যারান্টি দেই না।)। ঋনাত্মক মার্কিঙের জন্য যেহেতু ০.২৫ করে কাটা যায়, তাই ৬৯ থেকে ৫০.৫, এই শ্রেনীসীমার মধ্যে ল্যান্ডমার্ক হলো মোট চুয়াত্তরটি(৫০.৫, ৫০.৭৫, ৫১, ৫১.২৫… ) অর্থাৎ এই ভর্তি প্রক্রিয়ায়, তিন হাজার ছাত্রছাত্রীর মেধার মান, এই চুয়াত্তরটি স্থলে- বিভিন্নভাবে বন্টিত হয়েছে। তারসাথে মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকের গ্রেডিঙের কিছু হিসেব-নিকেশ মিলে আগপিছ করবার খানিক সুযোগ আছে। মাধ্যমিকের গ্রেডকে ৮ দিয়ে গুন এবং উচ্চমাধ্যমিকের গ্রেডকে ১২ দিয়ে গুন করে আরো বাড়তি একশো নম্বরের একটা ট্যালি যোগ করা হয়। তবে দেশ জুড়ে যেখানে হাজার চল্লিশেক ছাত্রছাত্রী জিপিএ পাঁচ নিয়ম করে হাঁকাচ্ছে, সেই খাত থেকে নির্দিষ্ট কারও একটু বাড়তি নম্বর কামিয়ে নেবার সবিশেষ সুযোগ নেই বললেই চলে।

এই পন্থাতেই নির্ণিত হয়েছে- কে কোন মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পাবে, কার পিতার পকেট থেকে বা পারিবারিক সিন্দুক থেকে মোটাঙ্কের আশরাফির ইস্তেমাল করতে হবে, বা আদৌ মেডিকেলের মুখ দেখবে কিনা। আমার ঠিক জানা নেই এখানে আর কোনো কুদরতী হিসেব নিহিত আছে কিনা। প্রতি ০.২৫ ব্যবধানে ৪০ জন করে ছাত্রছাত্রী, তাদের ক্রমিক নির্ধারনে আর কোনো ক্রাইটেরিয়ন আছে কি, নাকি এটা ড়্যান্ডম বিন্যাসকরণ? কেউ জানালে উপকৃত হবো।

যারা সাড়ে পঞ্চাশের নিচে পেয়েছে এবং অপেক্ষমান তালিকায় বিদ্যমান, তাদের জন্য অপশন বলতে আছে, আগে অবস্থানরত ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন প্রকৌশল বিদ্যাপীঠসহ অন্যত্র কোথাও ভর্তি হয় কিনা, সেটা। অর্থাৎ তাদের মালশা-কড়ি নিয়ে হরিনাম যপতে যপতে অগ্রবর্তীদের মানসিকতার পট পরিবর্তন করতে ঈশ্বরপানে তদবির করা ছাড়া ভালো কোনো উপায় নেই। নয়তো, তাদের পড়তে হবে- বাপদাদার টাকার শ্রাদ্ধ করে প্রাইভেট মেডিকেলগুলোতে, যাদের অনেকেরই সে অর্থের সংকুলান হবে না।

আমার জিজ্ঞেস হচ্ছে, উপরে বর্ণিত যে নিয়ম তার কার্যকারিতা কতটুকু। খুবই সংকীর্ণ এই নম্বরের ব্যবধানের মধ্যে জ্ঞানের যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে কিনা। পরীক্ষার সেই এক ঘন্টার সময়টা, প্রায় সবারই পুরো জীবনের একটি অদ্বিতীয় ঘন্টা। সেই ষাট মিনিটের সমষ্টি, কার স্নায়ু আর মস্তিষ্ককলায় কিভাবে প্রভাব ফেলবে, সে বিদ্যা সঠিকভাবে আওড়ানোর জো নেই।

পরিসংখ্যানগতভাবে যে ভালো ছাত্র, অর্থাৎ বোর্ড পরীক্ষায় ভালো করেছে, আমহাবিদ্যলয়োভর্তিকোচিঙ বলে কয়ে ভালো মার্কস ওঠাতো, মোটামুটি জোরমুখে বলা যায় সে মেডিকেলে চান্স পাবে। কিন্তু এসন্দেহও ঠিক, ছাত্রজীবনের যাবতীয় দাদাগিরি কি সে পরীক্ষার ওই ষাট মিনিটে ঠিকঠাক তদস্থলে রুপায়িত করতে পারবেতো ? যে কোনো ধরণের স্নায়বিক অস্বস্তির কারণে একটা বা দুটো ভুল, তাকে তার অভীষ্ট মেডিকেলটায় সুযোগ পেতে হয়তো দিচ্ছে না। যে ছেলে ডিয়েমসি, সলিমুল্লায় ভর্তি হবার স্বপ্ন দেখে এবং যোগ্যতা রাখে, তার জন্য পেছন দিকের মেডিকেলগুলোতে সুযোগ পাওয়াটা ব্যর্থতাই- বলা চলে। সেই ছেলের কাছে তার পারিপার্শ্বের, তার শুভানুধ্যায়ীদের যে প্রত্যাশা, সেটা সে পূরণ করতে ব্যর্থ হলে- সে হীনমন্যতায় ভুগতেই পারে। আর যেসব ছাত্রছাত্রীর প্রত্যাশায় একটু পিছিয়ে, সুযোগ পাওয়া-না পাওয়ার ক্লিফহ্যাঙারে দুলছে, তাদের ক্ষেত্রে হয়তো দেখা যাচ্ছে কোনো নেতিবাচক কারণ, দুয়েকটা অকিঞ্চিতকর ভুল, তার ডাক্তার হবার স্বপ্নকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। ব্যর্থতার প্রকৃতি ব্যক্তিবিশেষের কাছে ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু মস্তিষ্কে তার ট্রিগারিং সবক্ষেত্রেই একই রকম। অর্থাৎ ভবিষ্যতের জন্য ডিপ্রেশনের পটভূমি তৈরি করে দিতে ওটুকুই যথেষ্ট।

আমার ভাবনা এই, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (হয়তো অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েও) যেমন অনেকটা সময় ধরে পরীক্ষাটা নেয়া হয়, মেডিকেল কলেজগুলো (সংশ্লিষ্ট কর্তাপক্ষ- ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিস) কি সেই ব্যবস্থা করতে পারে না। সম্পূর্ণ নতুন একটা পরিবেশে গিয়ে থিতু হতেই তো ক্ষানিক সময় লেগে যায়। তার মধ্যেই যদি ফুড়ুৎ করে ঘন্টাটা চলে যায়, তাহলে তো কর্ম খতম। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজগুলো থেকে পরীক্ষা-কক্ষ ধার করতে হয় বলে, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কতৃপক্ষের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যবস্থাপনাগত অসুবিধা পোহাতে হয় কিনা, সে তথ্য আমার কাছে নেই। থেকেও যদি থাকে, সেটা অন্তত বিশেষ কোনো তরূনের ক্যারিয়ার এবং আশৈশব লালিত স্বপ্নকে জুয়ার মুখে ঠেলে দেওয়ার মত গুরুতর কিছু নিশ্চয়ই নয়।

খুটিনাটি অনেক তথ্য দেওয়ার কারণে ‘মাহবুব ময়ূখ রিশাদ ’কে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×