somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মার্কিন প্রতিবন্ধী আইন

২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমেরিকায় প্রতিবন্ধীদের জন্য চাকরির কোন কোটা আছে শুনিনি। তবে তারা যাতে অন্য সাধারণ লোকের সাথে যে কোনো চাকরির জন্য সমান প্রতিযোগিতা করতে পারে, কর্মস্থলে সে ধরণের সুযোগ সুবিধা রাখতে এবং শুধুমাত্র প্রতিবন্ধিতার কারণে যেন তাদের বাদ দেয়া না হয়, নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে আমেরিকার প্রতিবন্ধী আইন (Americans with Disabilities Act) রয়েছে। আমেরিকান প্রতিবন্ধী আইন (ADA) ২৬ জুলাই, ১৯৯০ সালে আইনে স্বাক্ষরিত হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল আমেরিকান সমাজকে প্রতিবন্ধীবান্ধব করা। ২০০৮ সালে, ADA সংশোধনী আইন (ADAAA) পাস হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল প্রতিবন্ধীতার সংজ্ঞাকে বিস্তৃত করা।

একটা কল্যাণধর্মী রাষ্ট্রের প্রতিবন্ধীদের জন্য চাকরির একটা নির্দিষ্ট কোটা রাখা বাদেও আরো অনেক কিছুই করার আছে। উন্নত দেশগুলোতে যে সকল সুযোগ সুবিধা ওদের জন্য দেয়ার ব্যবস্থা আছে তার সব আমাদের দেশের মতো দরিদ্র দেশের পক্ষে এক্ষুনি দেয়া হয়তো সম্ভব নয়, তবে ধীরে ধীরে দিতে চেষ্টা থাকা দরকার। নিচে এ বিষয়ে আমেরিকার প্রতিবন্ধী আইনে কি আছে তার একটা সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো, যাকে সামনে রেখে ধীরে ধীরে আমাদের দেশেও বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।

ADA পাঁচটি শিরোনামে বিভক্ত:
১) কর্মসংস্থান
এ আইন নিয়োগকর্তাদের প্রতিবন্ধী আবেদনকারী এবং কর্মচারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সকল ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধিতার ভিত্তিতে বৈষম্য নিষিদ্ধ করে। তারাও যেন কাজ করতে কোনো অসুবিধার সম্মুখীন না হয় সে জন্য যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা বলতে বুঝায়, চাকরি পুনর্গঠন করা, কর্মস্থল এবং কর্মস্থানকে সহজ করা, সময়সূচি পরিবর্তন করা, দোভাষী সেবা প্রদান করা, এবং সরঞ্জাম এবং নীতি পরিবর্তন করা। এছাড়াও ওদের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষাও সহজ করা।

২) সরকারি সেবা
o সরকারি সেবা (যার মধ্যে রাজ্য ও স্থানীয় সরকার এজেন্সি, জাতীয় রেলপথ, অন্যান্য কমিউটার কর্তৃপক্ষ অন্তর্ভুক্ত) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সেবা প্রদানে অস্বীকার করতে পারবে না, সাধারণ লোকজনের জন্য যে কোনো অনুষ্ঠান বা প্রোগ্রামে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে বাধা দেয়া যাবে না। পাবলিক পরিবহন ব্যবস্থা, যেমন পাবলিক ট্রানজিট বাস, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সহজলভ্য হতে হবে।

৩) সার্বজনীন সুবিধা
o সার্বজনীন সুবিধার মধ্যে রেস্তোরাঁ, হোটেল, মুদি দোকান, খুচরা দোকান ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত, পাশাপাশি বেসরকারি মালিকানাধীন পরিবহন ব্যবস্থা। নতুন নির্মিত দোকান পাটে প্রতিবন্ধীদের জন্য সেবা নেয়ার জন্য ঢুকা বেরুনোর সহজ ব্যাবস্থা থাকতে হবে। পুরাতনগুলোতে বিদ্যমান বাধা দূর করে এ ধরণের সুবিধাগুলো সংযোজন উচিত যদি তা অল্প খরচে সম্ভব হয়। তেমনি বেসরকারি মালিকানাধীন যানবাহনে ভ্রমণ, উঠা নামার সহজ ব্যাবস্থা থাকতে হবে।

৪) টেলিযোগাযোগ
o জনসাধারণকে টেলিফোন সেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলির বধিরদের জন্য টেলিযোগাযোগ যন্ত্র (TTYs) বা অনুরূপ যন্ত্র ব্যবহারকারীদের জন্য টেলিফোন রিলে সেবার ব্যাবস্থা থাকতে হবে।

৫) বিবিধ
o এর অধীনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিগৃহীত বা হুমকি দেওয়া এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সাহায্যকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া নিষিদ্ধ করে।

এ আইনের আওতায় সুবিধা/সুরক্ষা পেতে পারেন এমন প্রতিবন্ধীর সংজ্ঞা হলো:
• কারো এমন কোনো শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধকতা যদি থাকে যা তার এক বা একাধিক প্রধান জীবন ক্রিয়াকে উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত করে।
• যার আগে থেকেই একটি প্রতিবন্ধকতার রেকর্ড আছে।
• আগে থেকেই তাকে প্রতিবন্ধী গণ্য করা হয়ে থাকলে।

জানুয়ারি ২০০৯ থেকে কার্যকর সংশোধনী ADAAA প্রতিবন্ধীতার সংজ্ঞা বিস্তৃত করে নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে আরো কিছু ব্যাক্তিকে প্রতিবন্ধী আইনের আওতায় সুবিধা/সুরক্ষা পাওয়ার উপযুক্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যেমন:
* পিতামাতা, যারা একটি পরিচিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত।
* যারা ADA এর অধীনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার জন্য নিগৃহীত বা প্রতিশোধের শিকার হন।

যদিও কর্মসংস্থান বিধানগুলি কোনো প্রতিষ্ঠানে ১৫ বা বেশি কর্মচারী থাকলেই অবশ্য পালনীয়, সার্বজনীন সুবিধার বিধানগুলি সকল ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কর্মচারীর সংখ্যা যাই হোকনা কেন। রাজ্য এবং স্থানীয় সরকারগুলির ক্ষেত্রেও আকার নির্বিশেষে প্রযোজ্য।

প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক ভাবে সবার সহানুভূতিশীল হওয়া আবশ্যক। এ কথাও মনে রাখতে হবে যে সকল প্রতিবন্ধকতাই সব সময় দৃশ্যমান নয়, একজনকে দেখে সুস্থ, আর দশজনের মত মনে হলেও তার কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকা অসম্ভব নয়। চাকরির একটা নির্দিষ্ট কোটা রাখা বাদেও সমাজকে পুরোপুরি প্রতিবন্ধীবান্ধব করে তুলতে আমাদের এখনো আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে!



সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:৩০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:০৩

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

বেশ কিছুদিন যাবত ডক্টর ইউনুস সাহেব এক সাক্ষাৎকারে "রিসেট বাটন" শব্দদ্বয় বলেছিলেন- যা নিয়ে নেটিজেনদের ম্যাতকার করতে করতে মস্তিষ্ক এবং গলায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধু ভগবান না হয় ইশ্বর!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫২



মানুষ বঙ্গবন্ধুর ওপর এতোই ত্যক্তবিরক্ত যে আজকাল অনেকেই অনেক কথা বলছে বা বলার সাহস পাচ্ছে। এর জন্য আম্লিগ ও হাসিনাই দায়ী। যেমন- বঙ্গবন্ধু কলেজ, বঙ্গবন্ধু স্কুল (হাজারের কাছাকাছি),... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:২৮





বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত জুলাই-আগস্টের গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ শুনে কোন গালিটা আপনার মুখে এসেছিলো?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬



"খবিশ মহিলা", গালিটি বা তার কাছাকাছি কিছু?

মতিয়া চৌধুরী (১৯৪২-২০২৪) ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সৎ রাজনীতিবিদ। গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ও সবচেয়ে নিবেদিত-প্রাণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বে চরম দারিদ্র্যে বাস করা প্রায় অর্ধেক মানুষই ভারতের

লিখেছেন সরকার পায়েল, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮


বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ দারিদ্রে দিন কাটাচ্ছে। তাদের প্রায় অর্ধেকই যুদ্ধ-সংঘাত লেগে থাকা দেশের বাসিন্দা। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।


ইউএনডিপির বরাতে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×