দম্পতিরা তরুণ বয়সে এক অপরের সব কথায় মনোযোগ না দিলেও গবেষকেরা বলছেন, মধ্য-বয়সে এসে পরিণত আর স্থির হওয়ার পাশাপাশি সঙ্গীর কথায় এ বয়সেই বেশি মনোযোগ দেয় মানুষ।
স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের কথা কতখানি শোনেন ও তার গুরুত্ব দেন তা পরীক্ষা করতে কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪ থেকে ৭৯ বছর বয়সী দম্পতিদের নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। দীর্ঘ সংসারজীবন কাটাচ্ছেন এমন দম্পতিদের নিয়ে করা এ গবেষণায় দেখা গেছে, অপরিচিত কারো কণ্ঠস্বরের চেয়ে পরিচিত কণ্ঠস্বর বা নিকটজনের কণ্ঠই বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে অধিকাংশ ব্যক্তির ক্ষেত্রে।
দাম্পত্যে প্রাত্যহিকের নানা কথা স্বামীকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন স্ত্রী । অনেকেরই অভিযোগ থাকে যে, বিভিন্ন সময়ে নানা বিষয় নিয়ে স্ত্রীর বলা কথাগুলো স্বামী ঠিকমতো শোনেন না বা শুনছেন না।
গবেষকেরা এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, দাম্পত্যের এক পর্যায়ে সব কথার গুরুত্ব স্বামী বা স্ত্রী কারো পক্ষেই দেওয়া সম্ভব হয় না। এর একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখা খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। ‘সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে এ গবেষণার তথ্য।
গবেষকেরা আরও জানিয়েছেন, অধিকাংশ সময় দম্পতিরা পরস্পরের কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনলেও তাদের ক্ষেত্রে বয়সের বিশাল পার্থক্য রয়েছে। কথায় মনোযোগ দেওয়ার বিষয়টি আদতে নির্ভর করে বয়সের ওপর। গবেষণায় দেখা গেছে, মধ্যবয়সী ব্যক্তিরাই তাঁর সঙ্গীর কথা বেশি মনোযোগ দিয়ে শোনেন।
কথা শোনা ও কথা নির্বাচনের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক সব সময় ক্রমাগত সিদ্ধান্ত নিতে থাকে। আলোচনার পর্যায়ে মস্তিষ্কে সব কথা প্রবেশ করলেও গুরুত্বপূর্ণ ও অগুরুত্বপূর্ণ কথার সিদ্ধান্ত তত্ক্ষণাত্ মস্তিষ্ক গ্রহণ করে ফেলে। এজন্যই অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সব কথার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটি বেছে নেওয়া সম্ভব হয় এবং ভুলে যাওয়া কথাগুলো আবারও মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বামী স্ত্রীর কথা অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা কমে যায়। স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও টিকে থাকার প্রশ্নে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গীর ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে যায়। পরস্পরের কথা শোনার আগ্রহ বাড়ে। অনেক শব্দের ভিড়েও সহজেই প্রিয়জনের কথা শনাক্ত করা সম্ভব হয়। দাম্পত্যের শুরুতে কথায় মনোযোগের ক্ষমতা যতটুকু থাকে বয়স বাড়লে সে সক্ষমতা বৈজ্ঞানিকভাবেই বেড়ে যায়।
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা শোনা বা না শোনা নিয়ে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে গবেষকেদের পরামর্শ হচ্ছে, পরস্পরের কথাকে গুরুত্ব দিতে হবে, যথেষ্ট ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। সুখী দাম্পত্যের জন্য পরস্পরের মতামত ও যুক্তিগুলোকে মন দিয়ে শোনা ও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সঙ্গীর প্রতি আস্থা, বিশ্বাস ও উদার হওয়া প্রয়োজন। তাঁদের বক্তব্য, রাগকে না বলে ঝঞ্ঝাট এড়িয়ে কথার গুরুত্ব দিতে পারলেই ঘরে থাকবে দীর্ঘ দাম্পত্য সুখ।