যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বুয়েট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালর অবস্থান ৩০১-৩৫০'র মধ্যে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অবস্থান ৩৫১-৪০০'র মধ্যে। এছাড়া, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ৪০১-৫০০'র মধ্যে এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৫০১-৬০০'র মধ্যে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের অবস্থান দেখা যাচ্ছে বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় , বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় , নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও ব্র্যক ইউনিভার্সিটিরও নীচে এবং তা পঞ্চম স্থানে !!। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাবির অধঃপতন এর শুরু বহু আগেই থেকেই। কিন্ত নিজ দেশে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়্গুলো থেকে মান এত নীচে নেমে যাওয়ার পেছনের কারনগুলো অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে,এর জন্য এককভাবে দায়ী ঢাবির কুৎসিত শিক্ষক রাজনীতি । World University Rankings সিস্টেম কয়েকটি ফ্যক্টরের উপড় নির্ভর করে । যেগুলো হচ্ছে - Teaching -the learning environment , Research environment, Research quality , International Outlook ,Industry Income এবং The Subject Rankings।
বিগত কয়েক বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্পর্কে অসংখ্য নেতিবাচক খবর গনমাধ্যমে সংবাদ শিরোনাম হতে দেখা গেছে। ঢাবির সাবেক ভিসির সর্বোচ্চ ভাইরালকৃত বক্তব্য হচ্ছে '' দশ টাকায় এক কাপ চা, একটা সিঙ্গারা, একটা চপ এবং একটি সমুচা পাওয়া যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জানতে পারলে গিনেস বুকে রেকর্ড হবে''। এত অথর্ব , অদক্ষ ,কুশিক্ষিত , নিল্লজ্জ ও দলবাজ ভিসি আমাদের দেশের ইতিহাসে আর দেখা যায়নি। ছাত্র শিক্ষক রাজনীতি এদেশে নতুন কিছু নয়। দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই এই কুৎসিত রাজনীতি আছে। তবে ঢাবির শিক্ষকদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা এখনকার মতো ভয়াবহ অতীতে কখনোই ছিল না । অন্য আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এতটা প্রকাশ্যে দলবাজি রাজনীতি করতে দেখা যায়নি। কোনো রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় নেওয়া অথবা ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা শিক্ষকদের কাজ নয়।কিন্তু ঢাবির শিক্ষকদের কাজ কারবারে মনে হয় এটাই তাদের প্রধান দ্বায়িত্ব! প্রফেসর একে আজাদ চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৯৬ - ২০০১ সাল পর্যন্ত ঢাবির উপাচার্য ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানও ছিলেন। উভয় পদেই তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের শাসনামলে। তিনি মনে করেন, শিক্ষকরা রাজনীতিসচেতন হবেন। কিন্তু দলীয় লেজুড়বৃত্তি শিক্ষকদের মানায় না। শিক্ষকদের প্রধান কাজ পাঠদান ও গবেষণা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক আরেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ বলেছেন, শিক্ষকতা ছাড়া রাজনৈতিক দলবাজি কিংবা অন্য কোনো পদের প্রতি মোহ থাকা শিক্ষকদের জন্য উচিত নয়।
লন্ডন-ভিত্তিক শিক্ষা বিষয়ক সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে র্যাংকিং প্রতি বছর প্রকাশিত হয় সেখানে দেখা গেছে বিগত কয়েক বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ক্রমাগত অবনতির দিকেই যাচ্ছে।২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিচিং-এর (শিক্ষার পরিবেশ) ক্ষেত্রে ২১.৭ স্কোর করেছিল।কিন্তু ২০১৮ সালে সে স্কোর কমে হয়েছে ২০.৪। !! বর্তমানে এই টিচিং স্কোর নেমে এসেছে ১৭তে !! গ্লোবাল র্যাংকিং এর প্রধান ফ্যক্টরই হচ্ছে Teaching -the learning environment । শিক্ষকদের কার্যক্রমই যদি বিতর্কিত হয় , তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবেই ব্যহত হয় শিক্ষার মান, শিক্ষার পরিবেশ, গবেষনা ও অন্যান্য বিষয়াদি।
দলীয় লেজুড়বৃত্তি রাজনীতি করা শিক্ষকদের অবস্য ঢাবির এই Rank এ কিছুই যায় আসে না। নিজেদের পদ , পদবি ও ব্যক্তিগত স্বার্থ টিকিয়ে রাখাই তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য। দিনশেষে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ূয়া মেধাবী শিক্ষার্থীরা। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃ্ষি বিশ্ববিদ্যালয়কে অভিনন্দন যে তারা দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান দখল করে নিয়েছে। গ্লোবাল র্যংকিং এ শিক্ষকতার মান বাকৃবি - 29.5 , জাবি 24.1 , বুয়েট 21.7 এবং ঢাবি 17.5 । পাবলিক চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল র্যাংকিং এর পুর্নাঙ্গ ডাটা নীচে দেয়া হল।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
বুয়েট
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
তথ্য সুত্র ঃ বিবিসি বাংলা , যুগান্তর
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৪