কাগজে-কলমে হট ফেভারিট। সব টুর্নামেন্টের আগেই নানা অঙ্ক কষে বের করা হয় সম্ভাব্য বিজয়ীর নাম। কিন্তু খেলাটা শেষ পর্যন্ত হয় মাঠে। তাই কাগজের 'গরম' অনেক দল মাঠে জমে যায় ঠাণ্ডায়। অবশ্য এবারের বিশ্বকাপে গ্রুপ 'বি' গতকাল পর্যন্ত যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে মাঠের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ এখন কাগজ-কলমের নানা অঙ্কও, কেননা, সাত দলের ছয়টিই যেমন পার হতে পারে গ্রুপ পর্বের সীমানা তেমনি আবার এই ছয় দলের যে কেউ চাপা পড়তে পারে সেই সীমানা প্রাচীরে। তাই কী হলে কী হতে পারে সেই হিসাবটা একবার করে ফেলা যাক।
শুরুটা হোক বাংলাদেশ দিয়ে। ৪ ম্যাচে ২ জয় নিয়ে সাকিব আল হাসানের দলের পয়েন্ট ৪। তাই অঙ্কটা সহজ, শেষ দুই ম্যাচে নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারালেই পাওয়া যাবে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট। অন্য দলগুলোর কে কাকে হারাল, তাতে তখন কিছুই যাবে-আসবে না বাংলাদেশের। কিন্তু যদি দুটি ম্যাচ জেতা না যায়? যদি এক ম্যাচে জয় আর অপর ম্যাচে হারতে হয়? তখন চলে আসবে নেট রান রেট আর অন্যরা কে কী করছে সেই প্রসঙ্গ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ৫৮ রানে অল আউট হওয়ার কারণে বাংলাদেশের নেট রান রেট এখন -১.২৪১। অথচ ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড চার দলেরই রান রেট 'প্লাস'-এর ঘরে।
'মাইনাস' নেট রান রেট নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়া যাবে না_এমন কোনো কথা নেই। বাংলাদেশ পরের দুই ম্যাচের একটি হারলেও শেষ আটের টিকিট পেতে পারে যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে যায় ইংল্যান্ড। দু'দলের ম্যাচটা অনুষ্ঠিত হবে চেন্নাইয়ের তপ্ত রোদে। বাদ পড়ার শঙ্কা নিয়ে প্রচণ্ড গরমে খেলতে নেমে ইংল্যান্ড সেদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না, সেটাই বড় হয়ে উঠতে পারে সাকিবের দলের জন্য। শেষ দুই ম্যাচের একটি জিতে বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার পথ আছে আরো। অন্য দলগুলোর অবস্থান আলোচনা করলে দেখা পাওয়া যাবে সেই পথের।
ইংল্যান্ডকে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে হলে হারাতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আর আশা করতে হবে অন্তত একটা ম্যাচে যেন হেরে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু ইংল্যান্ড যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে হেরে যায় বা টাই করে কিংবা বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়, তাহলে? তারপরও ইংল্যান্ডের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা থাকবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে হারতে হবে শেষ দুই ম্যাচ।
এবার আসা যাক ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রসঙ্গে। ৪ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট আর +২.২০৬ নেট রান রেট নিয়ে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছে ড্যারেন সামির দল। ইংল্যান্ড, ভারতের সঙ্গে শেষ দুই ম্যাচে তারা হারলেও কোয়ার্টার ফাইনালে যাবে যদি বাংলাদেশ তাদের শেষ দুটো ম্যাচে হারে। বাংলাদেশ সেখানে এক ম্যাচ জিতলেও নেট রান রেটের যা ব্যবধান, তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পেছনে ফেলা সাকিবের দলের জন্য প্রায় অসম্ভব।
দক্ষিণ অফ্রিকা যদি গতকাল ভারতের সঙ্গে (এ লেখার সময় খেলা চলছিল) হেরে থাকে তারপরও আয়ারল্যান্ড ও বাংলাদেশকে হারালে তারা চলে যাবে কোয়ার্টার ফাইনালে। কিন্তু যদি ভারতের কাছে হারার পর বাংলাদেশের সঙ্গেও হারে আর শেষ ম্যাচে জেতে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে? অন্যদিকে ইংল্যান্ড হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে, আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারায় ভারতকে, তখন? সে ক্ষেত্রে বাদ পড়ে যাবে গ্রায়েম স্মিথের দল!
৪ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে এই গ্রুপে শীর্ষে ছিল ভারত। তারা গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে থাকলে এরই মধ্যে চলে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। কিন্তু যদি ম্যাচটা হেরে থাকে? তারপর গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচেও হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে এবং ইংল্যান্ড হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা জিতে যায় নিজেদের দুটো ম্যাচ, তাহলে? সে ক্ষেত্রে ভারত আর ইংল্যান্ডের মধ্যে কে পরের রাউন্ডে যাবে তা নির্ধারিত হবে দু'দলের নেট রান রেটের ভিত্তিতে, অর্থাৎ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের আগ পর্যন্তও ভারতের কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়াটা কিন্তু নিশ্চিত ছিল না! তাহলেই বুঝুন গ্রুপ 'বি'-তে কেমন জট পাকিয়েছে!
এই জটটা আরো বাড়তে পারে যদি আয়ারল্যান্ড তাদের শেষ দুই ম্যাচে হারায় নেদারল্যান্ডস ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে। সে ক্ষেত্রে তাদের পয়েন্ট হবে ৬। বাংলাদেশ যদি এক ম্যাচ জেতে আর অন্যটিতে হারে আর ইংল্যান্ড হেরে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে তাহলে কিন্তু নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে কোয়ার্টার ফাইনালে চলে যাবে কেভিন ও'ব্রায়েনের দল!