somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কান্নাঝরা সেই বিভৎস রাতের ইতিহাস

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাত্র এক ঘণ্টার অপারেশন। বর্বর ঘাতকরা সেই অল্প সময়েই নৃশংসভাবে খুন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্য, ভাই, আত্দীয়স্বজনসহ আঠারজনকে। পাষণ্ড ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পায়নি শিশু রাসেল, শিশু বাবু, এমনকি অন্তঃসত্ত্বা বধূও। ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে ১৫ আগস্ট ভোর ৬টা পর্যন্ত_সেই হত্যাযজ্ঞের পুরো কাহিনী নিয়েই এই প্রতিবেদন।

১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট। দিনটি খুব ভালো ছিল না। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছিল খামাখাই উত্তেজনা। পরদিন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যাবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে। নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তারা উদ্বিগ্ন তা নিয়েই। কিন্তু কে জানত সেই সময়ই উত্তরপাড়ায় চলছে বঙ্গবন্ধু হত্যার মহড়া।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই সক্রিয় হয়ে উঠল সেনাবাহিনীর টু-ফিল্ড রেজিমেন্টের কামানবাহী শকট যানগুলো। রাত ১০টায় বেঙ্গল ল্যান্সারের টি-৫৪ ট্যাঙ্কগুলো রাজকীয় ভঙ্গিতে এসে জড়ো হলো বিমানবন্দরের বিস্তীর্ণ বিরান মাঠে। জড়ো হলো ১৮টি কামান ও ২৮টি ট্যাঙ্ক। রাত সাড়ে ১১টায় জড়ো হলো মেজর ডালিম, মেজর নূর, মেজর হুদা, মেজর শাহরিয়ার, মেজর পাশা, মেজর রাশেদসহ ঘাতকরা। ১৫ আগস্টের প্রথম প্রহর রাত সাড়ে ১২টায় পরিকল্পনা ব্রিফিং করে মেজর ফারুক। এই প্রথম সবাই জানতে পারল সে রাতেই হত্যা করা হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
তখন মনি পত্রিকা পড়ছিলেন
তখন ভোর সোয়া ৫টা। আক্রান্ত হয়েছে ধানমণ্ডি। চারদিকে ছুটছে বুলেট। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন দুই ট্রাক সৈন্য নিয়ে উপস্থিত হয় ধানমণ্ডির শেখ মনির বাসার গেটে। প্রতিদিনকার অভ্যাসমতো তখন ঘুম থেকে জেগে উঠেছেন শেখ ফজলুল হক মনি। ড্রয়িং রুমে বসে পড়ছিলেন পত্রিকা। খোলা দরজা দিয়ে সটান ঢুকে পড়ে মোসলেম। কিছু বলতে চাইছিলেন শেখ মনি। কিন্তু সে সুযোগ না দিয়ে গর্জে উঠল মোসলেমের হাতের স্ট্রেনগান। লুটিয়ে পড়লেন শেখ মনি। চিৎকার শুনে এগিয়ে এলেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। ব্রাশফায়ারে প্রাণ হারালেন তিনিও। কেবল প্রাণে বেঁচে যান শেখ মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ ও শেখ ফজলে নূর তাপস। রক্ষা পায়নি চার বছরের বাবুও
ভোর ৫টা ১৫ মিনিট। এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে ধানমণ্ডির আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসা আক্রমণ করে মেজর ডালিম। পাহারারত পুলিশকে নিরস্ত্র করতে ছোড়া হয় গুলি। গুলির শব্দে জেগে ওঠেন সেরনিয়াবাত। ব্যস্ত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ফোন করতে। সে সময় দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে ঘাতক ডালিম ও তার সৈন্যরা। ড্রয়িং রুমে জড়ো করা সবাইকে। তারপর নির্দয়ভাবে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয় আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ১৪ বছর বয়সী মেয়ে বেবী, ১২ বছরের ছেলে আরিফ, চার বছরের নাতি বাবু (আবুল হাসনাত আবদুল্লার ছেলে), ভাতিজা শহীদ সেরনিয়াবাত, ভাগনে আবদুল নইম খান রিন্টু (আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর খালাতো ভাই), তিন অতিথি এবং চার কাজের লোককে। কেবল আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে যান সেরনিয়াবাতের বড় ছেলে হাসনাত।
শেষ লক্ষ্য সেই ৬৭৭ নম্বর বাড়িটি তখন ভোর সাড়ে ৫টা। পুরো অপারেশন শেষ করে ঘাতকদের ভিড় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধুর সেই ৬৭৭ নম্বর বাড়ির গেটে। ততক্ষণে আবদুর রব সেরনিয়াবাতকে হত্যার খবর জেনে গেছেন বঙ্গবন্ধু। প্রধান গেটেও চলছে হট্টগোল। বঙ্গবন্ধুর ঘরের বাইরের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন দুই গৃহকর্মী মোহাম্মদ সেলিম (আবদুল) ও আবদুর রহমান শেখ (রমা)। নিচতলায় ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী এ এফ এম মহিতুল ইসলাম। মহিতুলকে টেলিফোনে বঙ্গবন্ধু বলেন, 'সেরনিয়াবাতের বাসায় দুষ্কৃতকারীরা আক্রমণ করেছে। জলদি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন লাগা...।' কিন্তু পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে কোনো সাড়াশব্দ পেলেন না মহিতুল। চেষ্টা করতে থাকেন গণভবন (তৎকালীন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়) এক্সচেঞ্জে।
'আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব...'
গোলাগুলির শব্দ শুনে বারান্দায় এসে দাঁড়ান বঙ্গবন্ধু। ঘুম থেকে জেগে উঠেছেন গৃহকর্মী আবদুল আর রমা। বেগম মুজিবের কথায় রমা নিচে নেমে এসে দেখেন, সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য গুলি করতে করতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে এগোচ্ছে। ভীতসন্ত্রস্ত রমা বাড়ির ভেতরে এসে দেখেন, লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরা বঙ্গবন্ধু নিচতলায় নামছেন। রমা দোতলায় উঠে গেলেন। দেখলেন, আতঙ্কিত অবস্থায় ছোটাছুটি করছেন বেগম মুজিব।
রমা এবার চলে যান তিনতলায়। ঘুম থেকে ডেকে তোলেন বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল ও তাঁর স্ত্রী সুলতানা কামালকে। ঘটনা শুনে শার্ট-প্যান্ট পরে নিচতলায় নামেন শেখ কামাল। পিছু পিছু সুলতানা কামাল আসেন দোতলা পর্যন্ত।
তিনতলা থেকে আবার দোতলায় নেমে আসেন রমা। ঘুম থেকে ডেকে তোলেন শেখ জামাল ও তাঁর স্ত্রীকেও। জামা-কাপড় পরে শেখ জামাল তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে দোতলায় বেগম মুজিবের কক্ষে যান।
বাইরে তখন গোলাগুলি। নিচতলার অভ্যর্থনা কক্ষে বঙ্গবন্ধু। তাঁর সামনেই বিভিন্ন জায়গায় ফোন করতে থাকেন মহিতুল। পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও গণভবন এক্সচেঞ্জে চেষ্টার একপর্যায়ে মহিতুলের কাছ থেকে রিসিভার টেনে নিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, 'আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব...।' ব্যস, এ পর্যন্তই। কথা শেষ হলো না তাঁর। জানালার কাচ ভেঙে একঝাঁক গুলি এসে লাগে অফিসের দেয়ালে। এক টুকরো কাচে ডান হাতের কনুই জখম হয় মহিতুলের। টেবিলের পাশে শুয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু। কাছে টেনে শুইয়ে দেন মহিতুলকেও।
এর মধ্যেই আবদুলকে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে তাঁর পাঞ্জাবি ও চশমা পাঠিয়ে দেন বেগম মুজিব। কিছুক্ষণ পর গুলির শব্দ থামলে উঠে দাঁড়ান বঙ্গবন্ধু। পাঞ্জাবি ও চশমা পরেন। অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে বের হয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ান। পাহারায় থাকা সেনা ও পুলিশ সদস্যদের বলেন, 'এত গুলি হচ্ছে, তোমরা কী করছো?'_এ কথা বলেই উপরে চলে যান বঙ্গবন্ধু।
হ্যান্ডসআপ!
বঙ্গবন্ধু উপরে উঠতে না উঠতেই নিচে নামেন শেখ কামাল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে বলেন, 'আর্মি আর পুলিশ ভাইরা, আপনারা আমার সঙ্গে আসেন।' শেখ কামালের পেছনে গিয়ে দাঁড়ান মহিতুল ইসলাম ও পুলিশের ডিভিশনাল সুপারিনটেনডেন্ট (ডিএসপি) নূরুল ইসলাম খান।
ঠিক তখনই সৈন্যদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঢোকে মেজর নূর, মেজর মুহিউদ্দিন (ল্যান্সার) এবং ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা। গেটের ভেতর ঢুকেই তারা 'হ্যান্ডসআপ' বলে চিৎকার করতে থাকে। মহিতুল ইসলামকে টেনে ঘরের ভেতর নিয়ে যান নূরুল ইসলাম খান। বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা শেখ কামালের পায়ে গুলি করে বজলুল হুদা। লাফ দিয়ে ঘরের মধ্যে গিয়ে পড়েন শেখ কামাল। মহিতুলকে বলতে থাকেন, 'আমি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল। আপনি ওদেরকে বলেন।' মহিতুল ঘাতকদের বলেন, 'উনি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল।' আর তখনই বজলুল হুদার হাতের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ঝাঁঝরা করে দেয় শেখ কামালের দেহ। প্রাণ হারান তিনি। একটা গুলি এসে লাগে মহিতুলের হাঁটুতে, আরেকটা নূরুল ইসলামের পায়ে।
ক্যান ইউ গেট আউট?
নিচতলার বারান্দা তখন রক্তে ভাসছে। বন্ধ ঘরের ভেতর ফোনে ব্যস্ত বঙ্গবন্ধু। ফোনে তাঁর সামরিক সচিব কর্নেল জামিলউদ্দিনকে বলেন, 'জামিল, তুমি তাড়াতাড়ি আসো। আর্মির লোকেরা আমার বাসা অ্যাটাক করেছে। শফিউল্লাহকে ফোর্স পাঠাতে বলো।'
তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউল্লাহকে নিজেও ফোন করেন বঙ্গবন্ধু। তাঁকে বলেন, 'শফিউল্লাহ, তোমার ফোর্স আমার বাড়ি অ্যাটাক করেছে। কামালকে (শেখ কামাল) বোধ হয় মেরে ফেলেছে। তুমি জলদি ফোর্স পাঠাও।' ফোনের ওপাশ থেকে শফিউল্লাহ বলেন, 'আই অ্যাম ডুয়িং সামথিং, ক্যান ইউ গেট আউট?'
পেঁৗছা হলো না জামিলের বঙ্গবন্ধুর কথা শোনার পর ব্যক্তিগত লালরঙের গাড়িটি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসার উদ্দেশে রওনা দেন কর্নেল জামিল। সঙ্গে ছিলেন নিজের গাড়িচালক আয়েন উদ্দিন মোল্লা। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে পেঁৗছা হলো না তাঁর। পথেই সোবহানবাগ মসজিদের কাছে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে ঘাতকরা। পালিয়ে বেঁচে যান আয়েন উদ্দিন।
তখন বঙ্গবন্ধুর বাড়ির গেটের সামনে লম্বালম্বি লাইনে দাঁড়ানো মহিতুল, নূরুল ইসলাম, আবদুল মতিন ও পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যসহ কয়েকজন। ঘাতকদের একজন পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যকে গুলি করে। তারপর গুলি করতে করতে চলে যায় ওপরে। সেখানে শেখ জামালের ঘরের বাথরুমে আশ্রয় নেওয়া আবদুলকে গুলি করে। হাতে ও পেটে গুলিবিদ্ধ আবদুল সিঁড়ির পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে থাকেন।
তোদের এত সাহস!
ভোর প্রায় ৫টা ৫০ মিনিট। বঙ্গবন্ধুর ঘরে তিনিসহ বেগম মুজিব, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। বন্ধ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ঘাতকরা। ততক্ষণে গোলাগুলি থেমে গেছে। দরজা খুলে বারান্দায় বেরিয়ে আসতেই বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ফেলে ঘাতকরা। নামিয়ে আনতে থাকে নিচে। সিঁড়ির মুখে মেজর হুদাকে দেখে বঙ্গবন্ধু চিৎকার করে ওঠেন, 'তোরা কী চাস? তোরা কি আমাকে মারতে চাস? মেজর হুদা বলে, 'আমি আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি?' বঙ্গবন্ধু বলেন, 'তুই আমাকে মারতে চাস? কামাল কোথায়? তোরা কামালকে কী করেছিস?' উত্তরে হুদা বলে, 'স্যার, কামাল তার জায়গায়ই আছে। আর আপনি তুই তুই করে বলবেন না। আপনি বন্দি। চলুন।' এবার গর্জে উঠলেন বঙ্গবন্ধু_'কী, তোদের এত সাহস। পাকিস্তান আর্মিরা আমাকে মারতে পারেনি। আমি বাঙালি জাতিকে ভালোবাসি। বাঙালি আমাকে ভালোবাসে। কেউ আমাকে মারতে পারে না।'
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে রক্তের স্রোত
সিঁড়ির মাঝামাঝি এসে দাঁড়াতেই সিঁড়ির নিচে অবস্থান নেয় বজলুল হুদা ও মেজর নূর। নূর কিছু একটা বললে সরে দাঁড়ায় মহিউদ্দিন। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে ওঠে হুদা ও নূরের হাতের স্টেনগান। আঠারটি গুলি ঝাঁজরা করে বঙ্গবন্ধুর বুক ও পেট। বিশালদেহী মানুষটি ধপাশ করে পড়ে যান সিঁড়ির ওপর। বঙ্গবন্ধু তখন মৃত। তাঁর বুকের রক্তে ভেসে যায় সিঁড়ি। সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে থাকে সে রক্তের স্রোত।
রক্তক্ষরণে বিবর্ণ সুলতানা কামালের মুখ
এর কিছুক্ষণ পরই দোতলায় উঠে আসে মেজর আজিজ পাশা ও রিসালদার মোসলেউদ্দিন। সঙ্গে সৈন্যরা। গুলি আর ধাক্কায় এক সময় দরজা খুলে সামনে দাঁড়ান বেগম মুজিব। সবাইকে নিচে নেমে আসার নির্দেশ দেয় ঘাতকরা। নিচে নামতে থাকেন বেগম মুজিব, শেখ রাসেল, শেখ নাসের ও রমা। সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বেগম মুজিব। চিৎকার দিয়ে বলেন, 'আমি যাব না, আমাকে এখানেই মেরে ফেল।'
শেখ রাসেল, শেখ নাসের ও রমাকে নিচে নিয়ে যাওয়া হয়। আর ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে আসে বেগম মুজিবকে। তারপর সেই ঘরে আজিজ পাশা ও রিসালদার মোসলেউদ্দিন একে একে গুলি করে হত্যা করে বেগম মুজিবসহ শেখ জামাল, সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে।
বেগম মুজিবের নিথর দেহটি ঘরের দরজায় পড়ে থাকে। বাঁ-দিকে পড়ে থাকে শেখ জামালের মৃতদেহ। রোজী জামালের মুখে গুলি লাগে। আর রক্তক্ষরণে বিবর্ণ হয়ে আসে সুলতানা কামালের মুখ।
'পানি... পানি...'
নিচে দাঁড় করানো হলো শেখ নাসের, শেখ রাসেল আর রমাকে। শেখ নাসের ঘাতকদের উদ্দেশে বলেন, 'আমি তো রাজনীতি করি না। কোনো রকম ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাই। আমাকে কেন মারবে?' অফিস সংলগ্ন বাথরুমে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। গুলি করা হয় সেখানে। অসহায় নাসেরের গুলিবিদ্ধ দেহ গড়াতে থাকে মেঝেতে। এ সময় 'পানি... পানি...' বলে গোঙাতে থাকেন তিনি। পানি নয়, ঘাতকরা আরেকবার গুলিবর্ষণ করে তাঁর ওপর।
'আমাকে মারবে না তো ভাইয়া?'
রমাদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলও। অসহায় শিশুটি প্রথমে রমাকে ও পরে মহিতুল ইসলামকে জড়িয়ে ধরে বলে, 'ভাইয়া, আমাকে মারবে না তো?' কোনো জবাব নেই রমার মুখে। মহিতুল বলেন, 'না ভাইয়া, তোমাকে মারবে না।' এ কথা শুনে শিশুটি তার মায়ের কাছে যেতে চায়। দোতলায় নিয়েও যাওয়া হয় তাকে। কিন্তু মা নয়, পাঠানো হয় মৃত্যুর কোলে। গুলি করে হত্যা করা হয় শিশুটিকে। কোটর থেকে চোখ বেরিয়ে আসে। থেঁতলে যায় মাথার পেছনের অংশ। নিথর রক্তমাথা একরত্তি দেহটি পড়ে থাকে সুলতানা কামালের পাশে।
বেঁচে যান দুই মেয়ে
বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে সেদিন তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছিলেন না। বড় মেয়ে শেখ হাসিনা স্বামীর সঙ্গে ছিলেন জার্মানিতে। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানাও। তাই বেঁচে যান তাঁরা।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×