সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ মৌখিক আদেশে যা বলেছিল, লিখিত আদেশে তা নেই। ২৮ ফেবু্রয়ারি বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল, যা পরের দিন দেশের প্রতিটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। এতে সংক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা আদেশটি না মানার প্রকাশ্য ঘোষণা দেন। সাংবাদিকদের সমাবেশে হাইকোর্ট বিভাগের এই বিধিনিষেধ না মানার ঘোষণা দিয়েছিলেন সাংবাদিক নেতারা। তবে গতকাল হাইকোর্ট বিভাগের এ বিষয়ক লিখিত আদেশটি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে দায়িত্ব পালনকারী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আলতাফ হোসেন।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামে একটি মানবাধিকার সংগঠনের এক রিট আবেদনে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি রুল জারি করেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। রুল জারি করে আদেশে বলা হয়, এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে কোনো ‘মনগড়া’ প্রতিবেদন যাতে প্রকাশিত না হয়, তথ্যসচিবকে তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি ছাড়া পুলিশ গণমাধ্যমে এ মামলার বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে পারবে না।
ওই আদেশের পর থেকেই এ দুটি নির্দেশনার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন সাংবাদিক নেতারা। বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওইদিন আদালতে যে দুটি নির্দেশনা দিয়েছিল, লিখিত আদেশে তা নেই জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা গতকাল আদালতের আদেশের লিখিত অনুলিপি পেয়েছি। সেখানে ওই ধরনের কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি।’
২৮ ফেব্রুয়ারি রুল জারির দিন আদালতের মৌখিক আদেশের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আদালত ওইদিন ওপেন কোর্টে আদেশ দেন। পরে তাদের স্বাক্ষরিত লিখিত আদেশ বের হয়। এই লিখিত আদেশই চূড়ান্ত।’
তিনি জানান, লিখিত আদেশে ওই দুটি নির্দেশনা না থাকলেও সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার মন্তব্যের বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ রয়েছে।
ওই রুলের অগ্রগতি জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমরা এখনও রুলের জবাব পাইনি। তবে ডিবি পুলিশ ও আইজিপি দুটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দিয়েছেন। আশা করি, আগামী ৮ এপ্রিল কোর্ট খোলার আগে রুলেরও জবাব পেয়ে যাব।’
আদালতের লিখিত আদেশে বলা হয়েছে, ‘অনেক ঘটনা দুর্ঘটনা নজরে আনার ক্ষেত্রে সাংবাদিক বন্ধুরা সহায়ক ভূমিকা পালন করায় আমরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অনেক আদেশ প্রদানে সক্ষম হয়েছি।... আমরা প্রত্যাশা করি, তদন্ত প্রক্রিয়ায় কোনো অনিষ্টকর প্রভাব যাতে না পড়ে সে বিষয়ে তারা সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন। সারবত্তাহীন অনুমাননির্ভর প্রতিবেদন তদন্ত প্রক্রিয়াকে অতলে ডুবিয়ে দেয়।’
আদালত বলেছে, তদন্ত অবশ্যই পুঙ্খানুপুঙ্খ, সঠিক, পক্ষপাতহীন এবং স্বচ্ছ হতে হবে, যাতে প্রকৃত অপরাধীরা গ্রেফতার হয় এবং বিচারের আওতায় আসে।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছারাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারওয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। ওই ঘটনায় ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ ব্যক্তিদের আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। এ মামলার তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ঘটনার দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন জানিয়েছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর একদিন পর পুলিশের আইজি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যেই বিস্তারিত জানানো হবে। এরপর থেকে ঝিমিয়ে পড়ে এ মামলার তদন্ত কার্যক্রম। আজ প্রায় দেড় মাস পার হয়ে গেলেও দেশের মানুষ জানতে পারেনি সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কারা। কেন তারা খুন হয়েছেন। উপরন্তু প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন কারও বেডরুম পাহারা দেয়া সম্ভব নয়।
Click This Link