সন্ত্রাসের সংজ্ঞা ঐতিহাসিক বা ভৌগোলিক বা সময়ের কারণে পাল্টায়।
যেমন ধরুন আমাদের দেশের 71 এর মুক্তিবাহিনী, আমরা তাদের বলি মুক্তিযোদ্ধা আর পাকিস্তান সরকার বলত সন্ত্রাসী। আবার ভারতের ভগত সিং বা ক্ষুদিরামকে ব্রিটিশ সরকার বলত সন্ত্রাসী আর আমরা বলি মুক্তিযোদ্ধা।
আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ রাজতন্ত্র তাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়েছিল।
বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে তখনকার সরকার যে কাজের জন্য সন্ত্রাসী বলেছিল ঠিক সেই কাজের জন্যই 20 বছর পর তাকে শান্তিতে নোবেল দেয়া হয়েছে. তাহলে কি আপনি বলবেন একজন সন্ত্রাসীকে নোবেল দেয়া হয়েছে।
যারা ত্রাস সৃষ্টি করে তারাই সন্ত্রাসী । একজন চোরের জন্য পুলিশ সন্ত্রাসী। একজন দুষ্কৃতিকারীর জন্য একজন মুসলিম সন্ত্রাসী হবে।
আর এসকল পরিভাষার প্রয়োগ নির্ভর করে রাজনীতি ও মিডিয়ার উপর।
ধরুন আপনি কোন অতিথিকে আপনার ঘরে আশ্রয় দিলেন। আর কিছুদিন পর সে আপনাকে ঘর থেকে বের করে দিল। আপনি দরজার সামনে দাড়িয়ে বলতে থাকলেন আমার ঘর ফেরত চাই, ফেরত দাও। লোকে আপনাকে বলবে সন্ত্রাসী।
আর ঠিক এমনটাই হচ্ছে ফিলিস্তিনে। তারা ইহুদিদের জায়গা দিয়েছিল বন্ধু মনে করে। আর ইহুদিরা তাদেরকে বের করে দিয়েছে। এখন যখন ফিলিস্তিনিরা জন্মভূমি ফেরত পেতে আন্দোলন করছে ইহুদি ও পশ্চিমারা তাদের বলছে সন্ত্রাসী।
এভাবে মিডিয়াকে ব্যবহার করে ক্ষমতাশালীরা অন্যায় স্বার্থসিদ্ধি করে। আর মিডিয়া দিনকে রাত বানায়, সাদাকে কালো বানায়, হিরোকে ভিলেন বানায় আর ভিলেনকে হিরো।
তালেবান, আল কায়েদা, ওসামা বিন লাদেন এসব আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জানি. এগুলো আমেরিকা শুরু করেছে আবার আমেরিকাই শেষ করেছে।
আফগানিস্তানে মোল্লা ওমরের দল ক্ষমতায় ছিল. আমেরিকা ভূরাজনৈতিক স্বার্থোদ্ধারের জন্য তাদের অবাধ্য ইসলামপন্থী দলকে উচ্ছেদ করল. যখন তারা প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করল আমেরিকা তাদেরকে তালেবান, সন্ত্রাসী বলে সারাবিশ্বকে ধোকা দিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নাম দিয়ে একটি দেশ ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠল. আর যারা সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে সমর্থন দেয়নি তাদের বিরুদ্ধে হামলার হুমকিও দেয়া হয়েছিল। আর বিশ্বের প্রতিবাদ রুখতে তারা ব্যবহার করল মিডিয়াকে। হয় কোন আফগানির ন্যক্কারজনক ঘটনাকে হোক সত্য বা মিথ্যা, তালেবানের নির্যাতন বলে তুলে ধরল অথবা নিজেরা জোব্বা পাগড়ী পড়ে বানালো কোন এক নারী নির্যাতনের রোমহর্ষক ভিডিও(গুয়ান্তানামো বে এর কথা জানলে তাদের নিষ্ঠুরতা বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে না)। ব্যস গোটা বিশ্বের নেতাদের মুখে কুলুপ এঁটে গেল। তার আড়ালে চলল নিরীহ মানুষ নিধন। মিডিয়া সব আড়াল করে রাখল।
তারপর আসল ইরাকে, রাসায়নিক অস্ত্র গোপন আছে বলে আরেক ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করল। ইরাক দেশকে মরুভুমি করে দিয়ে লক্ষ লক্ষ সামরিক বেসামরিক(বা অসামরিক)নিরীহ লোক হত্যা করে, নিজেদেরও হাজার হাজার সৈন্যকে নিহত করে শেষ পর্যন্ত রাসায়নিক অস্ত্র না পেয়ে ফিরে গেল।
কয়েক বছর পর জর্জ বুশকে আমেরিকার জনগন এক নম্বর সন্ত্রাসী আখ্যা দিল।
আমাদের বিজ্ঞান মনস্ক ব্লগারেরা এসব দেখতে অক্ষম। যত খারাপ হোক তারাই(পশ্চিমারা) আমাদের মহামান্য গুরু। তারা যা করবে তাই আধুনিক, হোক তা নরহত্যা বা নারীপণ্যের সম্ভোগ। মুসলমানরা ভাল খারাপ যাই করুক তা হবে সেকেলে বা মধ্যযুগীয়। কিভাবে এরা সুশীলসমাজ আর মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:৫১