বন্ধু তোরে ভীষণ মনে পড়ে
আমি বুঝেছিলাম
সেদিনের তোমার আগমনি মুহূর্তে,
প্রতারনার আগুনে জলছিলাম,
তুমি ছিলে না কম তাতে।
অনেকটা দিন বতে গেলে প্রায় তিনটি বছর চলে গেল
তোমাকে পেয়ে নিমিশে হাসতে খেলতে।
শুরুতে আপনি থেকে তুমি শেসে তুই করে বলতাম।
তোর মনে আছে সেদিনের কথা,
যখন আমি কোন মেয়ের প্রসংশা করতাম
নিরাবিচ্ছিন্ন অশ্রু গড়াতো তোর
মায়াবি নজর কাড়া চোখে।
এই ন্যাকা কান্না আমার ভাল লাগে না, আমি বলতাম।
স্রস্টা কে তুই মানতিস না, এজন্য তোর সাথে আমার ঝগড়া হত
তোর ফিলশফি শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত হতাম, কিন্তু
তুই কত্না সুন্দর করেই বলতিস। সৃষ্টিবাদী অনেক
প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারতাম না,
তুই যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করতিস। ভূতপ্রেত কল্পকাহিনি ও
জিনতত্ত্ব যার কোন ব্যাংখ্যা আদতে ছিলনা
সেইসব কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তুই বলতিস।
আজ তুই নাই কিন্তু তোর সেই ক্ষেত্র আজ হাজার হাজার বাঙ্গালির রক্তে
যারাও এইসব আজগুবি গল্পে বিশ্বাস আর করেনা,
বিজ্ঞান তাদের চোখ খুলে দিয়েছে।
আমি নিজেও আজ তোর পথের একজন বলিষ্ঠ সৈনিক।
কিন্তু দোস্ত তোর আর আমার কাটানো সুখময়
স্রিতি গুলাকে আজ বড় মনে পড়ে।
দুজনের বন্ধুত্ত্বে হিংসে করেনি, এমন কাউকে খুজে পায়নি
কিন্তু কি জানিস, আমাদের ওই সম্পর্কের কোন ভবিস্যত পাইনি,
দুজন দুজনার জন্যে মরতে রাজি ছিলাম, কিন্তু পাইতে?
না কাছে এলে ঝগড়া অভিমান অভিযোগের বন্যা।
জানিস দোস্ত কতটা রাগ কেটেছে আমার নির্ঘুম, বারবার
ভেবেছি তোর সাথে কথা বলব না। কিন্তু তুই কিংবা আমি দুজনার
কেউ না ছাড়তে রাজি না পাইনিতে রাজি।
দোস্ত, তোর কি মনে আছে আমার জীবনে আস্তে চাও্যা কতটা মেয়ের সাথে
তোর চুলাচুলি, অথবা সেই লিলির কথা, যাকে এনেছিলি আমার গার্ল ফ্রেন্ড
বানাবি বলে, কিন্তু সেই লিলির সাথেই
কত জঘন্য ভাবে মারামারি আর চুলোচুলিই না করলি
আমার সাথে বেশি কথা বলাতে, আমার হাত ধয়ার অজুহাতে।
তারপর আমিই বলেছিলাম, চল না দোস্ত আমরা বিয়ে করে ফেলি, কিন্তু সেই
আবার তোর আগের বন্ধু বন্ধু খেলা, না আমিও
কারো হবো না কাউকে তোর হতে দেবো না।
তুই আসলে একটা সাইকি, এই কথা বলাতে
ইট দিয়ে আমার কপালে আঘাত করেছিলি
মনে আছে তোর । তারপর নিজের ধরে ডাক্তার দেখাতে নিলি
সেখানেও নার্স এর সাথে কত ঝগড়া করলি
আমার হাত ধরার জন্য। তারপর নিজেই সযত্নে
ব্যান্ডেজ দিয়েছিলি। পরের দিন তোর ভাইয়ে
খবর দিল তোর নাকি কপাল ফেটে গেছে
আমি ঠিকই বুঝেছিলয়াম আসলে কি ঘটেছিল।
তারপরের কতটা দিন আমরা হেঁটেছিলাম, ফুটপত দিয়ে,
জানিস দোস্ত আজও মনে পড়ে তোর
দায়িত্বশীলতার কথা, আমার রুমে এসেই
আগে আমার মানিব্যাগ দেখছিস, বলছিস,
তুই এত ফকিন্নি কেন, ব্যাগে টাকা কই?
তারপর নিজেই তাতে এক কোনে হাজার
টাকার নোট গুজে আবার নেড়ে চেড়ে বের করে
বলতি আরে দোস্ত তুই এত কিপটা টাকা লুকিয়ে রাকিস কোণায়!
মাঝে মাঝে তুই বুদ্ধি করে আমার বন্ধুদের
কাছে টাকা দিয়ে রাখতিস যাতে তারা
আমাকে ধার দেওয়ার নাম করে দেয়।
নিজের কাছে নিজেকে ছোট লাগতো,
তোর এমন এহসানের কারণে
বেকার জীবন কে উতরাতে খোজ করলাম
চাকরির, তুইও সাথে যেতিস মনে আছে তোর
এই শহরের এমন কোন রেস্তোরা, পার্ক, শপিংমল নাই
যেখানে আমাদের পদধূলি পড়েনিনি
বিজয় সারনির টোকাই গুলো কে তুমি কতটা
স্নেহ করতে তোমার কি মনে আছে?
তাদের কে নিয়ে তুমি বড় বড় রেস্টুরেন্টে যেতে,
আমি খুব রাগ করতাম তাতে মনে মনে,
মাঝে মাঝে আমি তোমার সংগ ত্যাগ করে চলে আসতাম।
দোস্ত তোর কি মনে আছে
আমার চাকরি পাও্যার আনন্দের দিনের কথাগুলা,
আমাদের মেসের ডাকবক্স তুই চেক করতিস,
সেদিনও তাই করেছিলি আর
লাফিয়ে উঠে আমাকে তোর
বুকের মধ্যে নিয়েছিলি, সেদিন আমি সত্যিই তোর উষ্ণতা
টের পাচ্ছিলাম,
ছাড়তে ইচ্ছে করছিলনা তোকে। শক্ত থেকে আরো শক্ত বাহুদ্বয়।
তুই আমাকে বলেছিলি, চাকরি পেলে যেন ঐ
টোকাই গুলারে আমি নিজে দাও্যাত করে খাওয়াই।
তারপর, আমি তুই, আমার বন্ধুরা এবং ঐ অনাহারি শিশুদের নিয়েছিলাম
হোটেল মেরিডিয়ান, তোর কি মনে আছে
ঐ টোকাই খাওয়াতে কেমন তড়িঘড়ি করছিল,
কে কত বেশি খেতে পারে প্রতিযোগিতায়!!
তোর কি মনে পড়ে আমার বন্ধুরা এবং
আমি তুই খেতে পেরেছিলাম না,
টাকা সংকুলানের জন্য। সেদিন আমার
বেতনের পুরা ১২০০০ টাকার খাবার
ঐ অনাহারি শিশুরা খেয়েছিলাম।
আমি অবশ্য খুব রাগ করেছিলাম সাথে
বন্ধুরা তো ছিল মহাখেপা। তারপর থেকে তো
তুমিই আমার খরচ চালাতে ঐ
মাসটাতে।
একদিন শুধু তুমি টাকা
এনেছিলে না, কিন্তু এমন কোন আইস্ক্রিম খেতে
ইচ্ছে হয়েছিল,
আবদার করেছিলে আমার কাছে,
সেদিনকার লজ্জা আমাকে এখনও খুব কাদায়।
তারপর থেকে আমি
মানিব্যাগে সবসময় টাকা রাখতাম।
কিন্তু দোস্ত, তুই কোথায়
চলে গেলি
কিছু কেন বলে গেলি না।
তারপরের দিন গুলা ছিল
তোর জন্য আমার প্রতিক্ষ্যার পালা,
মানিব্যাগে টাকা, রাস্তা থেকে টোকাই জোগাড় করা
কিন্তু না পর পর সাত সাত টা দিন,
না না দিন নয়
আমার কাছে, মাসও নয় কিংবা বছর
এযেন সাতটা শতাব্দী পার হয়ে গেল, তোর কোন খবর নাই।
বন্ধুদের মাধ্যমে খবর নিয়ে জানলাম,
তুই নাকি শাকিল ভাইয়ের সাথে গেছিস,
তোকে তো
আমি চিনি জানি তুই হয়তো
কাজে গেছিস কোন প্রয়োজনে,
কিন্তু আরো সাতদিন পরে
জানলাম বন্ধুরা যা বলছে তাই সঠিক।
তুই নাকি শাকিল
ভাই কে বিয়ে করেছিস সেইসব ছবিই
এলব্যাম ভরে তোর বাসাতে এবং শাকিল ভাই
এর বাসাতে পাঠিয়েছিস।
তারপর থেকে তোকে
ঘৃণা করা শুরু হল আমার, তোর সেই
পছন্দের টোকাই গুলা কে দেখলে
গা জ্বলে উঠত, অসহায় দুস্থ্য লোকদের কে
তোর মতই বেইমান মনে হত।
যাচ্ছেতাই ব্যবহার করতাম,
কারণে অকারণে
তাদেরে গায়ে হাত তুলতাম। তোর প্রতি বিদ্বেষ
যেন দিন কে
দিন বেড়েই চলেছিল। এই শহরের রাস্তা,
ফুটপাত, পার্ক, রেস্তোরা কিছুই আর
দেখতে ইচ্ছে করতো না।
জানিস দোস্ত তোর প্রতি ঘৃণা আমার
এতই বেড়েছিল যে যেদিন
আমার বসের মুখে শুনলাম
যে উনি আমাকে দেখে নয়, তোর
কথাতে নাকি চাকরি দিয়েছে। তারপরের দিন থেকে
আমি সেই চাকরি করিনি,
একবার ভেবেছিলাম তুই বিয়ে করেছিস তাতে আমার কি
তুই তো ছিল শুধু আমার
একজন বন্ধুমাত্র। তার বেশি তো কিছু নয়। কিন্তু
তোর অনুপস্থিতি আমাকে জালাময়ি করে রাখতো।
তোকে ছাড়া যেন রমনা হারিয়ে
তার সজীবতা, চন্দ্রিমা উদ্যান হারিয়ে তার প্রাঞ্জলতা,
ফুটপাত, ওভারব্রিজ হারিয়েছে তার
স্বকীয় কোলাহল।
আমার জন্য শুন্যতা ভর করেছে সারা অহময়।
তোর কাছে আমার একটাই চাওয়া ছিল,
তুইতো আমাকে বলতে পারতি,
দোস্ত তোর কি মনে নেই এর আগে
তুই কত ছেলেদের সাথে ডেটিং করেছিস, আমি
দিতাম তার পাহারা, আবার
আমিও করেছি তোর পাহারায়, কিন্তু
এবার তুই কেন এমন
কৃপণতার করলি। আমি তোর বিয়ের ঐ
রঘিন উৎসবে থাকলে বেশি খুশি হতাম,
না দোস্ত এই শেষ বার তুই জিতে গেলি যা
আগে আমি হেরে তোকে জিতিয়ে দিয়েছিলাম।
জানিস দোস্ত,
তোর বিয়ের ছবি দেখার পর, মাত্র
একসপ্তাহ আমি থাকতে পেরেছিলাম
আমার প্রিয় শহর ঢাকাতে। তোর স্ত্রিতি
থেকে বাচতে গ্রামে ছুটেছিলাম,
মনে আছে সেদিন
ছিল প্রচন্দ ঝড় বৃষ্টির ঢাকা শহর।
২৭ মার্চ,
ঢাকার অনুন্নত হ্যানহোলের রাস্তাগুলিতে ছিল
বুক সমান নৌকা চলা পানি,
কিন্তু কোন বাধা আমাকে আটকাতে পেরেছিল না।
আমি বাসায় পৌঁছানোর পর তুই
এসেছিল আমার মেসে,
আমার সাথে যোগাযোগ করার
চেষ্টা করেছিলি শুনেছিলাম,
কিন্তু আমি ফোন বন্ধ করায় সম্ভব হয়নি। আমি ঢাকা
থেকে চিরদিনের জন্যে চলে এসেছিলাম
যা আমার মেসমেটেরা তোকে বলেছিল, অবশ্য
তারা মিথ্যা বলেনি, আমিই বলে এসেছিলাম।
তারপর নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলাম
অনেক টা বছর, প্রায় ৬ তো হবেই, তবে ভাবিস
না তোকে ভুলে গেছিলাম,
না তোর সৃতিকেই
পুনরাবৃত্তি করেই কাটিয়েছি
৮ টা বছর।
এমন মনে হত যেন
তুই আছিস দোস্ত আমার সাথে,
তবে জানতে ইচ্ছে করত, তোর কোন সন্তান হন কিনা,
একদিন আমার ছোট ভাইয়ের সাথে বসে
বাংলাদেশ পাকিস্তান্নের ম্যাচ দেখছিলাম
যেখানে পাকিস্তান কে নাকি দীর্ঘ ১৬ বছর পর
হারাল সাথে নাকি বাংলাওাশ দিয়ে,
টিভি চ্যানেল পাল্টাতে গিয়ে একটা খবরে আটকে গেলাম,
"ফাবিহা ও তার স্বামী হত্যাকান্ড"
তদন্ত প্রতিবেদন,
ভেবেছিলাম অন্য কোন ফাবিহা কিন্তু স্ক্রিনের ছবি
আমাকে নড়েচড়ে বসাল।
দীর্ঘ প্রতিবেদনে বলল,
আজ থেকে ৮ বছর পূর্বে ২৮ মার্চ
এই হত্যাকান্ড ঘটেছিল। দীর্ঘ তদন্ত রিপোর্টের মাধ্যমে
CID নিশ্চিত হয়েছে তাদের
হত্যাকান্ডে কোন তৃতীয় পক্ষ্য ছিল না ,
শাকিল ফাবিহা কে তুলে নিয়ে জোরজবরদস্তি বিয়ে করে
এই জন্য ফাবিহা নিজের তার স্বামী শাকিল কে
হত্যা করে পরে নিজেও আত্মহত্যা করে।
জানিস দোস্ত এই খবর শুনার পর আমি,
নিজেকে অনেকগুন দোষী ্মানছি,
আমি যদি আরও কিছুদিন
থাকতাম তবে এমন হত না ,
তোকে বুঝাতাম।
পরদিন সেই আবেগময় শহরে এসে,
তোকে মিস করতে লাগলাম। অনেক
চেস্টার পর তোর বাবা মায়ের নতুন
ঠিকানা পেয়ে গেলাম, সত্যিই তারা অনেক ভাল
আজও আমাকে আগের মতই ভালবাসলেন,
আমি ডুকরে কেদে উঠলে তোর
বাবাই আমাকে সান্তনা দিল, তুই নিশ্চয় দেখেছিস,
তুই দোস্ত সত্যিই বড় স্বার্থপর,
সুখের ভাগটা দিলি, দুঃখের ভাগ একা বইলি
জানিস দোস্ত এখন আমি প্রতিদিন
বিজয় সারণি ও রোকেয়া সারণি থেকে টোকাই দের
নিয়ে রেস্টুরেন্টে খাওয়ায়
আর তোর মত মায়া দরদ ভরা দৃষ্টিতে দেখি।
সত্যি দোস্ত
এর মধ্যেই আছে শ্রেষ্ঠ প্রশান্তি। আজই
পূর্ণিমার রাতগুলাতে হাটি ঢাকার রাজপথে।
বুড়িগঙ্গা তে গিয়ে আগের
মতই নৌকা ভাড়া করি। বাতাস এসে
এলোমেলো করে দেয় আমার
চুল গুলা, যা তুই আগে করতি।
এক পলকের জন্য যেন মনে হয় এইতো আমার
দোস্ত আছে আশেপাশে।
শুনেছি মানুষ মারা গেলে নাকি
আত্মা হয়ে যায়, আর প্রিয় মানুষের আসে পাশে থাকে
তাদের সব কথা শুনতে পাই।
তাহলে দোস্ত তুই
কি শুনতে পাইতেছিস আমার রিক্ত হৃদ
মন্দিরের আর্তনাদ। তুই শুধু মানুষ কে দিয়েই গেলি,
আমাকেউ।
কিন্তু একটা সুযোগ চাই
তোর কাছে, আরেকবার ফিরে আই
সেই আগের বেশে।
তুই যেভাবে চাইবি সেইভাবেই।
না হতে দিবো কারো না আমি হব কারো
শুধুই অসীম অনন্তকালের জন্য বন্ধতুত্ব।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৩১