নদীর পাড়ে বিষণ্ণ মনে হাঁটছিলাম। সামনে আমার এমএসসি ফাইনাল পরিক্ষা। আর্কিটেকচারের জটিল ভলিউম ফাংশন গুলো কিছুতেই আয়ত্তে আনতে পারছিলাম না বলেই মনটা কে হালকা করার জন্য নদীর পাড়ে এসে বসা। হটাতই একটা মেয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। কি যেন বলছিল আমি ভাল করে ভুঝতে পারছিলাম না। নদীর গর্জনে তার কথা হারিয়ে যাচ্ছিল। তবে আমাকে যে ইশারা করে ডাকছে সেতা বুঝতে পারলাম। বাতাসে মেয়েটির চুল গুলো ফুরফুর করে উড়ছিল। আমি মুগদ্ধ হয়ে দেখছিলাম। হটাতই মেয়েটি প্রচণ্ড শব্দ করে হাসি লাগাল। কেউ হাসলে সাধারণত আমি সেটা সহ্য করতে পারিনা তাকে ধমক লাগায়, কিন্তু মেয়েটির হাসিটা কেন যেন খুব ভাল লাগছিল। আমি মুগ্ধ হয়ে হাসিটা দেখছিলাম। মেয়েটি হাসছে আবার থামছে আবার হাসছে। হাসি যেন ফুরাতেই চাচ্ছে না। হটাতই আমার ছোট বোন আমাকে ধাক্কা দিয়ে জরে জরে বলতে লাগলো। দাদু ভাই তোর ফণ এসেছে কেন ফোন ধরতেছিস না। তুই কি হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছিস না। না ধরলে ফোন বন্ধ করে রাখ আমি পড়ছি। হাসির শব্দে ব্যাঘাত ঘটছে।
আমার তখন হুস হল যে হাসির স্বপ্ন টা তাহলেই কোথায় থেকে আসছে। ফোন দ্ধরে দেখলাম বাসের কাউন্টার থেকে ফোন দিয়েছে। ফোন ধরতেই অপাশ থেকে কাউন্টার ম্যানেজার মৃদু ধমকের সুরেই বলল, কি ব্যাপার শাহিদ ভাই আমি কি যাবেন না ঢাকা। বাস ছাড়ার সময় হয়ে গেছে এখন আপনি এসে পোঁছান নি। এবং না আস্তে পারলে ত ফোন করে জানিয়ে দেওয়া দরকার ছিল আপনার।
আমি উনাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, সরি ভাই আমি ভুলে গেছিলাম। আমি আসতেছি বিশ মিনিটের মধ্যে।
আমি যত্রতত্র রেডি হয়ে কাউন্টার এসে দেখলাম সবাই আমাকে বকা দেবার জন্য দারিয়ে আস্পিস আস্পিস করছে। সবাই কে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই আমি আমি সিট খুজে বসে গেলাম। মনে মনে রাতের স্বপ্নটার বিষয়ে ভাবতে থাকলাম। মনে মনে কল্পনা করতে থাকলাম আমার পাশের সিট টাতে হয়তো কোন সুন্দরি মেয়ে আমার সফরসঙ্গী হবে। কিন্তু আমার পুড়া কপাল মিনিট পাঁচেক পরেই আমার পাশে এসে ৬৫ বছরের এক মোটা বৃদ্ধা মহিলা এসে বসল। উনি এতই মোটা যে উনার একা দুইটা সিট বুকিং দেওয়ার দরকার ছিল। আমার মেজাজ টা একে বাড়ে ২২০ কারেন্টে মুহূর্তে উত্তপ্ত হয়ে গেল। কি ব্যাপার আমার পাশে তো কোন মেয়ের সিট পড়ার কথা কিন্তু এটা কি।
আমি আমার বন্ধু আরিফ কে ফোন দিলাম, যার মাধ্যমে আমি সবসময় বাসের টিকিট বুকিং দেই। ওকে বলেছিলাম, আমার পাশে যেন কোন মেয়ের সিট দেওয়া হয়। আরিফ ফোন ধরেই বলল, হ্যা শাহিদ বল, বাসে উঠেছিস?
আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, অই শালা তুই আমাকে এ সিট দিয়েছিস কেন? আমি তোকে কি বলেছিলাম?
-কেন দোস্ত, কি হয়েছে? পাশে মেয়ের সিট পড়েনি?
-শালা তুই ফাজলামো করিস? এইটা মেয়ে? এত দেখছি মহিলা, তুই জানিস এই মহিলার বয়স ৬০-৬৫ বছরের!
-হাহাহাহা, তাই নাকি। দোস্ত মানিয়ে নে। আসলে আজ আমার গারী নেই, আজ আমি বিশ্রামে আছি। আগামিবার তোকে এই পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর মেয়ের সফরসঙ্গী করাবো, প্রমিজ।
-শালা তুই হাসছস। মনে হচ্ছে খুব মজা পাচ্ছিস। দাড়া আমি আসছি আমি এসে তোর বারোটা বাজাচ্ছি। আমি এই সিটে যাব না আমি চুয়াডাঙ্গা গিয়ে নেমে পড়বো।
-দোস্ত রাগ করিস না আসলে আমি তো তোর সিট সুন্দর মেয়ের পাশের দিয়েছিলাম, হয়তো কোন সমস্যা হয়ে গেছে।
আমি আরিফের ফোন কেটে দিয়ে আমার ফুফাতো বোন মিতুল কে ফোন দিলাম। মিতুল আরেক ধরনের চিস, এই মেয়েটাকে আমি খুব রাগায়। ওর বিয়ে হয়েছে চুয়াডাঙ্গা শহরে এক ব্যবসায়ি ছেলের সাথে। ছেলেটি খুব কালো। গায়ের রঙ আর পাতিলের কালির মধ্যে কোন ফারাক থাকলে যেমন তার গায়ের রঙ টাও সেই পাতিলের কালির মত কালো। এই নিয়ে আমি সারাক্ষণ মিতুল কে রাগায়। এমন কি আমি মিতুলের স্বামী সালামের সামনেও তাকে বলি। মিতুল এই নিয়ে আমার সাথে অনেক রাগারাগি করে তারপরেও আমাকে ও খুব ভালবাসে। বিয়ের আগে অবশ্য আমাকে সে একপাক্ষিক প্রেম নিবেদন করেছিল। আমি তাঁতে সাড়া দেইনি। বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত ৩ বছরের একবারও আমি মিতুলের স্বামী সালামের বাসায় যায়নি। মিতুল বারবার আমাকে অনুরধ করে যায় যখন বেড়াতে আসে আমি বলি তোর ওই নিগ্র স্বামির বাসায় গেলে আমি নিজেও হয়তো অমন কালো হয়ে যাবো। এরপর থেকে মিতুল আমার সাথে কথা বলে না।
অনেক ভাবনা চিন্তার পরে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আজ মিতুলের বাসায় যাবো এবং সরি বলব। আজ এই মহিলার পাশে সফর করা আমার সম্ভব না। একদিক দিয়ে এমন একটা মন খারাপ অবস্থা থেকে মুক্তি মিল্বে আবার ভাই বোনের সেই পুরানো সম্পর্ক আবার জোড়া লাগবে। তাছাড়া বাসায় থেকে কতদিন থেকে বলছে মিতুল কে যেন আমি সরি বলি। এতো কিছু ভাবতে ভাবতে মিতুলের কাছে ফোন দিয়ে দিলাম।
-হ্যা কি ব্যাপার আজ সূর্য কোন দিক দিয়ে উঠেছিল যে আমার ভাই আজ কে আমায় ফোন দিয়েছে। মিতুল ব্যঙ্গ করে জবাব দিল।
-সূর্য কোনদিকে উঠেছিল জানিনা তবে ইচ্ছা করল তাই দিলাম, তাছাড়া তুই এসব কি বলছিস আমি কি তোকে কখনও ফোন দেয়না?
-তুই আমাকে কবে ফোন দিতিক। আমিই তোকে ফোন করে কথা বলতাম।
-যাই হউক। শোন তোর সেই নিগ্র আফ্রিকান ছাগল টা সরি, সরি সরি আবারো ভুলে গেছিলাম। দুলাভাই কোথায়? আমি এখন তদের বাসাতেই আসতেছি। আমার প্রিয় সব খাবার গুলো একে একে রান্না করে ফেল। আমি এসে খাব।
-মিতুল এবার হাপাতে লাগলো। সত্যি শাহিদ তুই আসবি আমার বাসায়! আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না। বলে কেঁদে ফেলল। এই মেয়েটার এটা আরেকটা সমস্যা এতো আবেগি মেয়ে দুনিয়াতে আছে কিনা সন্দেহ।
-অবিশ্বাস করার কি আছে। এখন থেকে আমাকে বিশ্বাস করতে শেখ আমি আসছি। সব রান্না করে রাখ। এভাবে মিতুলের সাথে আর কিছুক্ষন কথা বলে ফোন রেখে দিলাম। আমি চোখের সামনে দেখছি মেয়েটা আমার জন্য সব কিছু জোগাড় করার জন্য এলাহি কাণ্ড বাধিয়ে দিয়েছে। এভাবে ভাবতে ভাবতে একসময় দেখলাম বাস চুয়াডাঙ্গা এসে থামল। আমি তাড়াহুড়া করে নামার জন্য ওই বৃদ্ধ মহিলা কে বললাম, দেখি এক্তু সাইড দ্যেন আমি এখানে নেমে যাবো।
-মহিলা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, বাস ভাল করে থামুক, আমিও এখানে নেমে যাবো।
-আমি মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, নাম্বেন মানে এখানে বাস মাত্র ৩ মিনিট অপেক্ষা করবে, তখন আপনি আর উঠতে পারবেন না। আপনার যদি কিছু লাগে এদের কাউকে বলুন কিনে এনে দেবে।
-উনি আমাকে অবাক করিয়ে দিয়ে বলল, আমি তো এখানেই নামার জন্য উঠেছি। আবার উঠার তো প্রয়োজন নেয়।
-আমি মনে মনে কিছুটা খুশি হলাম। যাক এবার তাহলে যাওয়া যাবে। পরক্ষনেই মিতুলের কথা মনে পড়লো। এজন্য আমিও নেমে যাবো সিদ্ধান্ত নিলাম। এজন্য আমি আমার ল্যাগেজ টা উপরের র্যা ক থেকে নামাতে যাচ্ছিলাম, হটাতই পিছন থেকে একটা মিষ্টি কণ্ঠের আহবানে ফিরে তাকালাম। মনে হচ্ছিল স্বপ্নে দেখা সেই মেয়েটা অথবার তার চেয়েও সুন্দরি এক নারী। বয়স ২৩ থেকে ২৬ এর মধ্যে হবে। কি অসাধারণ মেয়েটির কণ্ঠ। আমি মোহিত হয়ে গেলাম। আবারো সংবিত ফিরে পেলাম মেয়েটির আহবানে।
-এক্সকিউজ মি, ভাইয়া, জানালার পাশের সিট টা কি আপনার? আসলে আমি জানালার পাশে ছাড়া বস্তে পারিনা, যদি কিছু মনে না করেন কষ্ট করে আপনি পাশের আমার সিট টাতে বস্লে আমার সুবিধা হয়।
-আমি কি বলব, কিছুই ভাবতে পারছিলাম না, ওই মেয়েটির দিকে তাকালেই যেন মোহিত হয়ে সব কথা ভুলে যাচ্ছিলাম। কোন কথা না বলেই আমি আমার জানালার পাশের প্রিয় সিটটা ছেড়ে দিয়ে ওই মেয়েটির সিটে বসলাম। মনে মনে ভাবলাম এতো সুন্দর মেয়ের জন্য এতটুকু স্যাক্রিফাইস করাই যায়।
এবার মেয়েটির একটু বর্ণনা দেয়। মেয়েটি ৫” ৬ ইঞ্চি লম্বা হবে। চেহারা আমেরিকান দের মত সাদা ফরসা। চুলগুলো খুব মসৃণ এবং যথেষ্ট লম্বা। তবে মেয়েটির চোখে পাওয়ার ওয়ালা চশমা দেখে বঝা যায় মেয়েটির চোখে বড় ধরনের সমস্যা আছে।
-এবার আমার সিদ্ধান্ত বদলাতেই হল। মিতুলের বাসায় যাবার চিন্তা মাথা থেকে ছেড়ে ফেললাম। আবারো আরিফ কে ফোন দিয়ে ধন্যবাদ জানালাম। মিতুল কে ফোন দিয়ে জানালে সে মানবে না, বরঞ্চ অনেক কথা খরচ সুতরাং তাকে ফোন না দেওয়ায় ভাল। তার থেকে যতটা সম্ভব আগামি দুইমাস দূরে থাকতে হবে। তাতেই তার নিজে থেকেই রাগ পড়ে যাবে।
আমি ব্যাগ পত্র সব থিক করে রেখে মেয়েটির সিটটাতে বসলাম আর সুযোগ খুঁজতে থাকলাম, কি ভাবে মেয়েটির সাথে কথা বলা শুরু করবো। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে দেখলাম মেয়েটি কিছুক্ষনের মধ্যেই গভীর ঘুমে চলে গেল। আমি মেয়েটির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। কি মায়া কাড়া চেহারা মেয়েটির। তবে মনে হচ্ছে কোথায় যেন একটু বিষণ্ণতা মেয়েটিকে গ্রাস করে আছে। মেয়েটি ঘুমের মধ্যে সিট থেকে মাথা টা সরে এসে আমার কাধের অপরে লাগলো। এবার মেয়েটির ক্লিভেজের ভাজ টা দৃষ্টিগোচর হল। বাসের মৃদু ঝাকুনিতে মেয়েটির স্তনযুগলের ঊর্মি খেলা শুরু হয়ে গেল। মেয়েটি বাসের আরেকটা বড় ঝাকুনিতে পুরোপুরি আমার গায়ে পড়ে গেল। ওড়না টা বুক থেকে সরে যেতেই সেই গুপ্ত বেশুমার অঙ্গগুলি আমাকে নাড়া দিতে লাগলো।
কিন্তু মেয়েটির মুখের বিষণ্ণতা আমাকে সব কিছু থেকে নিবৃত্ত করে রাখল। আমি নিজে হাতেই মেয়েটির ওড়না ঠিক করে দিলাম। মনের মাঝে উকি দেওয়া কুমন্ত্রকে ভালবাসার বেড়াজালে আটকে দিলাম। তাইতো এতো সুন্দর মেয়েকে শুধু ভালবাসা যায় তাকে নিয়ে যৌন সামগ্রি বানানো যায়না।
মেয়েটির ঘুম ভাঙল দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে যখন বাসের ভিড়ের দীর্ঘ সারিতে আমাদের বাস অপেক্ষা করছে। সেখানে বিশাল জ্যাম লেগে ছিল। সামনে নাকি একটা বাস এবং একটা ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়ায় দুই পরিবহন ড্রাইভারের হাতাহাতি বেধেছে। তাছাড়া ফেরি ঘাঁটেও বিশাল জ্যাম। আমাদের বাসটা দুই ঘণ্টা থেকে সেই নিজের জায়গাতেই দাড়িয়ে আছে। সবাই বাস থেকে মাঝে মাঝে নামছে উঠছে। এটা ওটা কিনছে। সিগারেট খাচ্ছে। আমি যেতে পারছিলাম না শুধু মেয়েটির জন্য, কারন মেয়েটি আমার কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিল আমি উঠলে যদি ওর ঘুম ভেঙ্গে যায়?
মেয়েটির ঘুম ভাঙ্গার পর আমি নিচে নামি ফ্রেশ হওয়ার জন্য। অনেক্ষন থেকে আমি প্রস্রাব আটকে রেখেছিলাম কষ্ট করতেছিলাম। ফ্রেশ হয়ে আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে ধূমপান করতে করতে ভাবছিলাম মেয়েটি সম্পরকে। বাসে ফিরে যেতে যেতে ভাবছিলাম কিভাবে মেয়েটির সাথে ফ্রীভাবে কথা শুরু করবো।
বাসে ফিরতেই মেয়েটি নিজে থেকেই আমার সাথে কথা বলতে শুরু করলো। বলল, আপনি কোথায় গিয়েছিলেন আমি আপনাকে খুজতেচ্ছি।
-কেন আমাকে খুজতেছেন কেন? কোন সমস্যা? আমি বললাম।
-না মানে। বাস এখানে কতক্ষন থাম্বে বলতে পারেন? মেয়েটি জিজ্ঞাসা করলো।
-না টা বলতে পারব না। তবে কন্ট্রাক্টর কে জিজ্ঞাসা করলে হয়তো উনি বলতে পারবেন।
এবার মেয়েটি আমাকে অনুরধের স্বরে বলল, দীখেন না একটু জিজ্ঞাসা করে।
-আমি বললাম কেন। আপনি কি বাইরে যাবেন। আপনার কি খুব খিদা পেয়েছে? কি কি খাবেন?
-না মানে। এদিকে কোন পাবলিক টয়লেট পাওয়া যাবে আমার একটু টয়লেট করতে হবে।
আমি মেয়েটি কে বললাম, আপনি সামান্য অপেক্ষা করেন খজ নিয়ে আসি। এবং বাস কতক্ষন এখানে থাকবে সেটাও জেনে আসি।
আমি এসে বাসের কন্ট্রাক্টর কে জিজ্ঞাসা করলাম বাস কতক্ষন পর্যন্ত থাকতে পারে। কন্ট্রাক্টর আমাকে জানাল যে বাস এখানে হয়তো আরও ঘণ্টা দুই থাকতে পারে। নেমে গিয়ে টয়লেট খোঁজ করলাম। কোথাও কোন সন্ধান না পেয়ে একজনার বাসাতে ধুকে পড়ে তাদের অনেক অনুরোধ করে রাজি করালাম। মেয়েটি কে এসে জানিয়ে ওই বাসাতে নিয়ে গেলাম। মেয়েটি টয়লেটে ঢুকে গেল আমি উনাদের বাসার অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিন্তু মেয়েটি টয়লেটে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় কাঁটালো। তারপরেও বের হল না। আমি বাধ্য হয়ে টয়লেটে নক করলাম। অনেক ধাক্কাধাক্কির পর মেয়েটি দরজা খুলে বের হয়ে আসল। আমি মেয়েটিকে অনেক বকাবকি শুরু করলাম। কি ব্যাপার আপনি এতক্ষন কি করছিলেন। এতো সময় কখনও লাগে নাকি?
কি মেয়েটি একটা কোথাও বলল না। মনে হচ্ছে যেন মেয়েটি একটা ঘোরের মধ্যে আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কি ব্যাপার আপনার কি শরির খারাপ নাকি।? এমন ভাবে আছেন যে। চোখ এতো লাল কেন। ওই বাড়িওয়ালা আমাদের অনেক কথা শুনিয়ে দিল। আমরা বের হয়ে সেই বাসের কাছে এসে দেখি বাস চলে গেছে। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। আরও এক ঘণ্টা হেটে হেটে বাস খুঁজতে লাগলাম কিন্তু পেলাম না। শেষে কন্ট্রাক্টর কে ফোন দিলে উনি বলল, হটাত করে জাম ছেড়ে যাওয়ার আমাদের বাস সেই জাগাতে রেখে আপনার জন্য অপেক্ষা করা সম্ভব ছি;ল না। এজন্য চলে আস্তে হয়েছে। বাস এখন মানিকগঞ্জ ক্রস করতেছে।
মেয়েটি তো একবার আছাড় খেয়ে তার চশমা ভেঙ্গে ফেলল। উনি আবার চশমা ছাড়া দেখতে পায়না। এবার আমি মেয়েটিকে দোষ দিতে লাগলাম কিন্তু ওর মায়াবি বিষণ্ণ মুখের দিকে তাকিয়ে আর বকা দিতে পারলাম না। সিদ্ধান্ত নিলাম অন্য বাসে করে ঢাকা যাবো তবে মেয়েটির প্রতি আমার আর কোন খেয়াল রইল না। মেয়েটি কে আমি বললাম, শুনেন আপনার উপকার করতে গিয়ে আমার বাস হাতছাড়া হয়েছে। বাসে আমার ল্যাপটপ, মোবাইল তাকা সবকিছু আছে। জানিনা সেগুলা ফেরত পাব কিনা? আপনার সাথে আর নয়, আপনি আপনার মত জান আমি আমার মত।
মেয়েটি কোন কথা না বলে সেই জায়গাতেই বসে রইল। আমি সেখান থেকে উঠে একটা রিকশা ডেকে রাজবাড়ি বাস স্ট্যান্ড চলে এসে একটা ঢাকার টিকিট কাটলাম। এই বাস ছাড়বে সন্ধ্যার আজানের পর। আমি অপেক্ষা করতেছিলাম। হটাত মনে হল মেয়েটির কথা। না এভাবে মেয়েটিকে ফেলে চলে আসা আমার উচিত হয়নি। তাছাড়া মেয়েটি চোখে দেখে না। হয়তো মেয়েটির কাছে কোন টাকা পয়সা নাই। এইসময় তার উপকার করা উচিত। কিন্তু আমার কাছেও তো আর আছে মাত্র ৬০ টাকা। কিভাবে উপকার করবো? হটাত মানিব্যাগে থাকা ডাচ বাংলা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে চোখ আটকে গেল। আবার সেই স্থানে ফিরে আসলাম। কিন্তু মেয়েটি সেখানে নাই। আশেপাশে সব জায়গায় খুজলাম। কোথায় না পেয়ে যখন ফিরে যাচ্ছিলাম তখন হটাত মেয়েটিকে দেখলাম চায়ের দোকানের মাচালে ঘুমিয়ে আছে কি নিরাপদে।
-মেয়েটির কাছে গিয়ে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে ডাকলাম। দেখি কোন সাড়া শব্দ নাই। ঘুমিয়ে গেছে। তবে চোখ দিয়ে শুকনো জলের ধারা লেগে আছে। যা দেখে অনুমান করা যায় মেয়েটি খুব কেদেছে। আমি মেয়েটিকে ঘুম থেকে জাগালাম। কি ব্যাপার এখানে ঘুমাচ্ছেন কেন? ঢাকা যাবেন না। তাছাড়া এসব জাগা মেয়েদের জন্য নিরাপদ না। কখন কোন দুরঘত ঘটে কে জানে?
-মেয়েটি অন্নমনস্ক ভাবে বলল, আমার জীবনের আবার দুর্ঘটনা! আর কোন কিছুতেই ভয় করিনা।
-আমি তার এধরনের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না। শুধু বললাম, চলেন আমার সাথে। আমি দুঃখিত, আপনাকে এভাবে ফেলে যাবার জন্য। নেন হাত ধরেন, আপনি তো আবার চশমা ছাড়া কিছুই দেখতে পারেন না। ধরেন না হাত টা। এতো লজ্জা পাচ্ছেন কেন? আমি আপনার কোন ক্ষতি করবো না আমাকে আপনি নিরদিধায় বিশ্বাস করতে পারেন।
-বিশ্বাস! হ্যা আমি এখন কাউকেই বিশ্বাস করিনা এবং অবিশ্বাসও করিনা। মেয়েটি দীর্ঘশ্বাসের সাথে বলে থামল। তবে উঠে আমার হাত টা ধরল। এবং ফ্রী ভাবেই বলল, আমার খুব খুদা লেগেছে আমাকে খাওয়াতে পারবেন? আমার কাছে কোন টাকা নাই। অবশ্য ঢাকা গিয়ে দিয়ে দিবো।
-আমি বললাম, ঠিক আছে সব হবে চলেন আগে। সেখান থেকে আমরা সিএনজি করে ফরিদপুর শহরে ফিরে আসলাম বুথে টাকা তোলার জন্য। বুথ থেকে আমি ২০০০০ টাকা তুলে আগে একটা চশমার দোকানে ঢুকে ওর জন্য একটা চশমা নিলাম যাতে ও ভাল করে দেখতে পায়। তারপর একটা হোটেলে ঢুকে খাওয়া দাওয়া করলাম। সবশেষে এক প্যাকেট ব্যান্সন এন্ড হেজেজ সিগারেট নিয়ে বাসে উঠলাম দুজনে। বাস ছাড়ল সাড়ে আঁটটার সময়। বাসে এবার সে আমার পরিচয় নিল। আমিও তার সম্বন্ধে জানলাম। তার নাম রুহানা রাহমান। আজিমপুর ইডেন মহিলা কলেজে জীব বিজ্ঞানে পড়াশোনা করে। অনার্স ফাইনালের ছাত্রী। এরবেশি কিছু আমাকে তখনও জানায়নি। আমিও জানতে চায়নি।
আমাদের বাস যখন ঢাকা এসে থামল তখন বাজে রাত ২ টা ৪০ মিনিট। আমি রুহানা কে বললাম, এখন তো অনেক রাত। এখন কোন গাড়ি পাবে না আজিমপুর যাওয়ার। তুমি ইচ্ছে করলে থেকে যেতে পারো আমার বোনের বাসাতে। তুমি চাইলে আমি ম্যানেজ করতে পারি।
-রুহানা বলল, তাহলে তো ভালই হয়। আরও কিছুক্ষন তোমার সাথে কথা বলতে পারবো। ঠিক আছে আমি রাজি তুমি ব্যবস্থা কর।
-আমি দেরি না করে দুলাভাই এবং আমার মেজো আপুকে ফোন দিলাম। আপু ফোন ধরে বলল, কি ব্যাপার তোদের বাস চলে এসেছে সন্ধ্যার সময় এখন তুই কথা থেকে। তুই কি ঢাকা আসিস নি? আমি কাউন্টারে তোকে নিতে গিয়েছিলাম, ওরা বলল তুই নাকি নেমে গেছিস।
-আমি বললাম, সব বলব পড়ে এখন আমি টেকনিক্যাল মোড়ে বসে আছি, তুমি তাড়াতাড়ি গাড়ি পাঠাও। আমার সাথে আমার একটা বন্ধু আছে সেও থাকবে তোমার ওখানে। আমি নাও থাকতে পারি?
-কেন তুই থাকবি না কেন? তাড়াতাড়ি চলে আয় আমি ড্রাইভার কে দিয়ে গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
গাড়ি আসার পর আমি এবং রুহানা আপুর বাসায় গিয়ে উঠলাম। আপু কিছুক্ষন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থেকে মুস্কি মেরে হাসল। এবং বলল, কিরে শুধু বন্ধু নাকি আরও অনেক কিছু? দুইজন কে ঘর দেখিয়ে দিয়ে আমাকে বলল, শাহিদ গোসল করে নে। তাহলে মাথার ক্লান্তি ভাবটা কেটে যাবে। রুহানা চাইলে তুমিও গোসল করতে পারো। আমরা দুজননই গোসল করার জন্য আলাদা বাথরুমে চলে গেলাম। আপু আমার বাথরুমের পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমার সাথে কথা বলতে লাগলো। শাহিদ তোর পছন্দের তারিফ করতে হয়, এতো সুন্দর মেয়ে আমি আমার জীবনে দ্বিতীয়টি আর দেখিনি।
-দেখ আপু ওসব তুমি যা ভাবছ টা না। আমাদের মাঝে এমন সম্পর্ক নাই। তাছাড়া অতসুন্দর মেয়ে আমাকে কেন ভালবাসতে আসবে?
-তোকে এতো ভাবতে হবে না। আমি রুহানা কে ম্যানেজ করবো। আপু গড়গড় করে বলতে লাগলো।
-আমি বললাম দুলাভাই কবে চিটাগাং গেছে। আর আসবে কবে/
-গিয়েছে এক সপ্তাহ আগে, কাল সকালে চলে আসবে। শোন তোরা দুজন তোর দুলাভাই আসা পর্যন্ত থেকে যা। তোর দুলাভাই কে দেখানো দরকার।
-রুহানা থাকবে না। আমি বললাম।
-সেটা আমার চিন্তা।
গোসল শেষে আমি আপু এবং রুহানা ডাইনিং টেবিলে খেতে বসে আরও কিছুক্ষন গল্প করলাম। তারপর সাড়ে তিনটার দিকে ঘুমাতে গেলাম। আমার ঘুম আসছিল না বলে ছাদে গেলাম। মনের মধ্যে কিছু একটা ভাললাগা কাজ করতে ছিল। সিগারেট ধরিয়ে টানছিলাম আর ভাবছিলাম। কিছুক্ষন পর দেখি রুহানা ছাদে উঠে আসছে। রুহানা সরাসরি আমার পাশে এসে দাড়িয়ে বলল, একটা কথা বলব, কিছু মনে নিবেন না তো?
-না কি মনে করবো? বল। কিছুই মনে করবো না।
-না মানে আপনার কাছে এক্সট্রা সিগারেট আছে? আমাকে দুইটা দিতে পারবেন?
-আমি হতভম্বের মত চেয়ে রইলাম। আসলেই কি আমি ঠিক শুনেছি। বেশি কিছু না ভেবেই আমার প্যাকেট টা বের করলাম। কিন্তু আমাকে অবাক করিয়ে দিয়ে রুহানা সিগারেটের প্যাকেট টা আমার হাত থেকে নিয়ে নিল। একটা সিগারেট বের করে ধরাল। তখনও আমি ভাবছিলাম যে রুহানা হয়তো আমার সিগারেট খাওয়া পছন্দ করে না। এজন্য আমাকে সিগারেট ছাড়ানোর জন্য ও এভাবে সিগারেট ধরাচ্ছে।
কিন্তু আমার সব ভাবনা কে অবাক করে দিয়ে রুহানা একজন পরিপক্ক চেইন স্মকারের মত সিগারেট টানতে লাগলো। এভাবে রুহানা সেই খানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে পরপর ৪ টা সিগারেট খেয়ে সোজা নিচে নেমে গেলো। আমার মাথায় কিছুই ঢুকছিল না। আমি একবার ভাবছিলাম হয়তো আমাকে দেখানোর জন্য এমন টি করেছে। আবার ভাবছিলাম রুয়াহানা আগে থেকেই হয়তো এসব খায়। তাছাড়া ইডেন কলেজের মেয়েরা তো একটু আধুনিক হতেই হবে।
আমি রুমে এসে সব ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ঘুমাতে লাগলাম। কেবল একটু ঘুমের মধ্যে গেছি, আবার রুয়াহানা আম্মার দরজায় নক করলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কি ব্যাপার এখনও ঘুমাও নি?
-আপনার কাছে কি আর কোন সিগারেট আছে? রুহানা জিজ্ঞাসা করলো।
-আমি এবার হেসে ফেললাম। কি ব্যাপার তুমি সিগারেট ফেরত দিতে আসছ। দরকার নাই আমি এখন আর সিগারেট খাব না।
-আমি খাব। রুয়াহানা বলল।
-আমি বললাম, মজা করছো? সিগারেটের প্যাকেট টা হাতে নিয়ে দেখলাম সব খালি। তুমি কি সব গুলা ফেলে দিইয়েছ? নাকি সত্যি সত্যি খেয়েছ?
-আমি কখনও মিথ্যা বলি না। রুহানা বলল।
-আচ্ছা ঠিক আছে যাও এখন ঘুমাও গিয়ে।
-আমার ঘুম আসছে না। আমাকে এখন নেশা করতে হবে। তোমার কাছে কি হিরোইন জাতীয় কিছু আছে। রুহানা কাকুতির স্বরে জিজ্ঞাসা করলো।
-আমার মাথায় মনে হচ্ছে কারেন্ট বয়ে শক লেগে গেলো। আমি কোন কথা বলতে পারলাম না।
রুহানা আমার কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ করতে লাগলো, যেন আমি কোন ব্যবস্থা করতে পারি। আমি কোন কোথায় বলতে পারছিলাম না। হটাত রুহানার দিকে খেয়াল করতেই দেখলাম রুহানার মুখ দিয়ে সাদা সাদা ফেনা বার হচ্ছে। আমি বললাম, দেখ রুহানা আমি ওসব খায় না, তাছাড়া আমি এতো রাতে ওসব কোথায় থেকে ম্যানেজ করবো। আমি ভয়ে আপু কে ডাকতেও পারতেছি না যে এই অবস্থায় আপু যদি দেখে তবে অনেক খারাপ অবস্থা হয়ে যাবে আমার জন্য।
শেষে উপায় না থেকে বাসার দারোয়ান কে ঘুম থেকে তুলে আমার ঘরে নিয়ে আসলাম। উনি বিষয় টা দেখে বলল, এই মুহূর্তে উনাকে আপাতত হিরোইন খেতে দিতেই হবে না হলে মারা যেতেও পারে।
-আমি উনাকে বললাম, আমি টাকা দিচ্ছি আপনি কিছু একটা ব্যবস্থা করেন।
-ওই ব্যটা দারওয়ান কিছুক্ষনের মধ্যেই ব্যবস্থা করে ফেলল। সেটা রুহানা কে দিলে সে খেয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লো। আমি ওকে ওর বিছানা তে শুইয়ে দিলাম।
সকাল বেলা আমার ঘুম ভাঙল আপুর ডাকে। আপু আমাকে হাত ধরে নিয়ে গিয়ে বলল, আয় তোকে একটা জিনিস দেখাব। আপু নিয়ে গিয়ে আমাকে চারটা মরা টিকটিকি দেখাল। বলল, দেখ এই চারটি টিকটিকি কিভাবে মরেছে। কে এদের লেজ কেটে দিয়েছে?
আমি এবার ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। আমার জানা ছিল যারা হিরোইন খায়, তারা যদি সময় মত সেটা না খেতে পারে তবে টিকটিকির লেজ কে সিগারেটের মধ্যে দিয়ে নেশা করে। আমি আপু কে লুকানোর জন্য বললাম, হয়তো এরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে গিয়ে মরেছে।
-আপু বলল, হ্যা সেটাও হতে পারে। আচ্ছা ঠিক আছে আমি অফিসে চলে যাচ্ছি। নাস্তা বানানো আছে, রুহানা কে দেখলাম অঘোরে ঘুমুচ্ছে। জার্নি করে হয়তো ক্লান্ত হয়ে গেছে তাই ডাকলাম না। ও উঠলে একসাথে খেয়ে নিস।
-আপু চলে যাওয়াতে আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। রুহানার রুমে গিয়ে দেখলাম ও কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে। আমি ফ্রেশ হয়ে রুহানা কে ডাকলাম ফ্রেশ হওয়ার জন্য। রুহানা কোন কথা না বলেই লক্ষি মেয়ের মত উঠে ফ্রেশ হতে গেলো। আমি একা একাই নাস্তা খেয়ে ফেললাম। একবারও রুয়াহানার কথা মনে করলাম না। কারণ কাল রাতের পর থেকে আমি রুহানা কে একেবারে সহ্য করতে পারছিলাম না। আমি চাচ্ছিলাম যত তাড়াতাড়ি পারি রুহানা কে এখান থেকে বিদায় করতে। এমন একটা নেশাগ্রস্থ্য মেয়েকে আমার জীবনের সাথে জড়াতে পারবো না।
আমি নাস্তা সেরে এসে আমার রুমে বসে বসে সিগারেট খাচ্ছিলাম। হটাতই রুহানা ফ্রেশ হয়ে আমার রুমে ঢুকল। এই সকাল বেলাতে রুহানা কে আরও বেশি সুন্দর লাগছিল। যতবারই তাকে দেখছি ততবারই তার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি। অতীতের সকল কথা গুলো ভুলে যাচ্ছি তার মুখের দিকে তাকালে। টেবিলের ওপর সিগারেটের প্যাকেট রাখা ছিল সেটা থেকে একটা সিগারেট বের করে রুহানা ধরাল। সিগারেট খাওয়া শেষ করে রুহানা ঘরের দরজাটা আটকে দিয়ে এসে আমার পাশে বসলো।
-কোন প্রসঙ্গ ছাড়ায় হটাত রুহানা উঠে তার পরনের শাড়িটা ফেলে দিয়ে বলল, নেন আপনি যা ইচ্ছা আমার সাথে করতে পারেন। আপনি আমার অনেক উপকার করেছেন। অনেক ভালবাসার সন্ধান দিয়েছেন। আপনি এবং আপনার বোন আমাকে যে ভালবাসা দিয়েছেন টা কখনও ভুলবো না। আর আমি পারবো না সেসব ভালবাসার দাম দিতে। তাই আমি চাই আপনি আমাকে গ্রহন করে আমার ঋণের বোঝাটা একটু হালকা করার সুযোগ দিন।
-আমি পুরো হতবাক হয়ে চেয়ে রইলাম। কি বলব কিছুই যেন মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল না। একটু একটু করে তার কাছাকাছি গিয়ে তাকে সামান্য পর্যবেক্ষণ করলাম। তার শাড়ির আচল টা তুলে দিয়ে তাকে ভাল করে ঢেকে দিলাম। কোন কথায় যেন বলতে পারছিলাম না।
-রুহানা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, কি ব্যাপার আপনি কি এসব চান না। নিন নিন এখন কেউ আসবে না। তাড়াতাড়ি করে আমাকে দায় মুক্তি দিন, আমি আপনাকে ঋণ গুলো শোধ করে দিতে চাই।
-আমি কিছুই না বলে একটা জোরে থাপ্পড় দিলাম। সাথে সাথে মেয়েটি বিছানার উপর পড়ে গেল। কিছুক্ষন দুজনের মধ্যে আবার নিরবতা এসে ভর করলো। অনেক ক্ষণ পরে মেয়েটি উঠে বসলো। আমি তার দিকে তাকাতে পারতেছিলাম না আমার এই হীন অন্যায় করার দরুন।
-মেয়েটি নিজেই নিরবতা কাটিয়ে বলল, আমি জানি আপনি অনেক ভাল একটা ছেলে, এবং এও জানি আপনি এসব পছন্দ করেন না, কিন্তু কি করবো বলুন। আমার এটা সাড়া কোন উপায় ছিল না। আসলে এই মুহূর্তে আমার কাছে কোন টাকা নায়। এইজন্য...
আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, আমি কিন্তু আপনার কাছে এই ধরনের আচরণ আশা করিনি। আর আপনার সাথে কি আমি টাকা চেয়েছি?
-রুহানা আমাকে আবার থামিয়ে দিয়ে বলল, আপনি আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন না। আপনার জানা উচিত। আমি জানি আপনার মনে আমার প্রতি আস্তে আস্তে ভালবাসা সৃষ্টি হচ্ছে। এই জন্য আমার অতীত ব্যাপারে আপনার একটু হলেও জানা উচিত। আপনি জানেন আমার পেশা কি। আমি একজন কল গার্ল। টাকার বিনিময়ে আমি আমার এই সুন্দর দেহ টাকে একেক রাতে একেক জনের কাছে সমর্পণ করি। এই জন্যই আমি নিজেকে আপনার কাছে সামান্য সময়ের জন্য হলেও বিক্রি করতে চাই। যাতে কিছু টাকা আমি কামাতে পারি।
-আমি তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, কি বলছো রুহানা। ছি ছি, নিজেকে নিয়ে এসব কি বলছ, আমাকে তোমার পছন্দ না সেটা ঠিক আছে তাই বলে নিজেকে কোন পর্যায়ে নামাচ্ছ। ছি, তোমাকে আমি অনেক জ্ঞানি এবং বুদ্ধিমান মনে করে ছিলাম। কিন্তু...।
-শাহিদ ভাই, আমি কিন্তু মিথ্যা বলছি না। পারলে আপনি আমাকে পরিক্ষা করতে পারেন। এই যে আমার মোবাইল এ এখন যে কল টি এসেছে সেটা একটা কাস্টমারের। আপনি ফোন টা শুনতে পারেন আমি কথা বলছি। রুহানা ফোন টা ধরে লাঊড স্পীকার দিয়ে কথা বলা শুরু করলো। সেই কথা শুনে আমি পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হলাম যে রুহানা যা বলছে যা সম্পূর্ণ সঠিক তবুও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তাই প্রসঙ্গ পালটাতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমার বিশ্বাসের আগুনে পানি ঢেলে দিয়ে আরও একটা প্রমাণ হাজির করলো রুহানা। বলল, যদি তাতেও বিশ্বাস না হয় তবে আমি বলতে পারি এই বাসার চারতলাতে থাকা আফসার রহমানের কথা বলতে পারি। আমি একদিন এই বাসাতে এসেছিলাম উনার কল করাতে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে আফসার রহমান কে চিনি। উনি বায়ার সেকশনে চাকরি করে ভাল বেতন। তখন আমার বিশ্বাস করতে আর কোন কষ্ট হলনা।
আমি ওকে অপেক্ষা করতে বলে ভিতর থেকে কিছু টাকা নিয়ে এসে বললাম, এই নাও টাকা।
-মেয়েটি কিছু না বলে টাকা গুলো হাতে নিয়ে চলে গেলো। আমিও তার পিছন পিছন গেট পর্যন্ত এসে তাঁকে বিদায় দিয়ে চলে আসলাম।
রুহানার কথা ভুলার জন্য আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। তবে ওর কোন ফোন আমি রিসিভ করিনি। একসময় আমি বাংলাদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে আমারিকা তে চলে আসি চাকরি করার জন্য। আমেরিকাতে আমি ১৩ বছর কাটিয়ে শেষে ফিরে আসি। রুহানার কথা প্রায় ভুলেই গেছিলাম। কিন্তু হটাত করেই একদিন একটা বাচ্চা মেয়ে কত আর বয়স হবে ৮ কিংবা ৯ আমার সাথে দেখা করতে আসে আমার গ্রামের বাড়িতে। এদিকে বাসাতে আমার বিয়ে ঠিক করেছে এমন অবস্থা। মেয়ে দেখা চলছে। আবার আমাকেও মেয়ে পক্ষরা দেখতে আসছে। সবসময় মানুষ বাসাতে জমেই আছে। তাই আমি সভাবতই মনে করলাম যে হয়তো মেয়ে পক্ষের কেউ হয়তো পাঠিয়েছে।
-বাচ্চা মেয়েটি যখন আমার কাছে আসলো। তখনই রুহানার কথা মনে পড়লো। ঠিক সেই রকম সুন্দরি একটা মেয়ে। মেয়েটি এসে বলল, আঙ্কেল আমি রুহানার মেয়ে ইসানা। আম্মু আমাকে পাঠিয়েছে আপনার কাছে। কিন্তু কেউ আমাকে ভিতরে আসতে দিচ্ছে না। আম্মা আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই। একবার হলেই আপনি আমার সাথে চলুন।
-আমি ইশানা কে বললাম, তোমার আম্মু কোথায়? ডাকো উনাকে?
-আম্মু তো হাসপাতালে। এখানে কিভাবে আসবে? আপনি একটু চলুন।
-তোমার আম্মু হাসপাতালে? কেন? কি হয়েছে উনার? আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
-উনার নাকি একটা বড় অসুখ হয়েছে। উনি নাকি আর বাচবে না। সেই জন্য শেষ সময় আপনাকে একটু দেখতে চাই। আম্মু গত ৪ বছর থেকে অসুস্থ্য। কারো সাথে কথা বলতে পারেনা। শুধু আপনার নাম করে। মাঝে মাঝে আপনার কথা আমাকে খুব বলতো। সেই জন্যই আমি আপনার সাথে দেখা করার জন্য এসেছি। প্লিজ আঙ্কেল আপনি আমার সাথে একটু চলুন না?
আমি কোন কথা না বলেই ইশানা কে কাছে টেনে নিয়ে তার ছোট্ট গালে চুমা দিয়ে বললাম, কেদনা, তোমার আম্মুর কিছুই হবেনা। আমি আছি তো। চল এখনই তোমার আম্মুর কাছে যায়।
আমি যখন হাসপাতালে পৌছালাম তখন রুহানার শেষ মুহূর্ত চলছিলো বলা যায়। ডাক্তার দের জিজ্ঞাসা করতেই বলল, উনাকে বাঁচানো সম্ভব নয়। এখন আল্লাহ ব্যাতিত উনাকে কেউ আর সুস্থ্য করতে পারবে না। অতিরিক্ত নেশা দ্রব্য পান করায় উনার দুটি কিডনি, লান্স এবং ফুসফুস আগেই নষ্ট হয়ে গেছে, তাছাড়া উনি একজন এইডস রোগী। উনার দেহে এইচআইভি ভাইরাস সমগ্র রক্ত কনিকাকে ধংস করে দিয়েছে। আগামি ২০ কিংবা ২৫ মিনিটের মধ্যেই উনি মারা যাবেন। আপনারা তার সাথে শেষ দেখা করে নেন।
-আমি দ্রুতই তার কাছে গেলাম। রুহানা আমাকে দেখে উঠে বসার চেষ্টা করলো কিন্তু পারল না। আমি নিজেও তাঁকে নিষেধ করলাম। রুহানা শুয়ে শুয়ে ইশানার হাত টা নিয়ে আমার হাতে তুলে দিল। যেহেতু কথা বলতে পারছিলেন না তাই পাশে রাখা স্লেটে লিখে দিল, শাহিদ গত ১৩ বছরে আমি আপনার অনেক খোঁজ করেছি, কিন্তু পাইনি। আপনি আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন আরেকবার শুধু আমার জন্য আরেকটা কাজ করেন আমার মেয়ে ইশানা কে আপনি মানুশের মত মানুষ তৈরি করেন যাতে আমার মত অবস্থা না হয়। আরেকটা কথা বলা প্রয়োজন ইশানার আসল বাবা কে টা আমি নিজেও জানিনা।। ইশানা হটাত করেই আমার গর্ভে চলে আসে। তারপর থেকেই আমার সম কিছুতে বাধা হতে থাকে। পিতৃ পরিচয়ের অভাবে তাঁকে কোথাও কোন স্কুলে ভর্তি করাতে পারিনি। আপনি মেয়েটির জন্য কিছু করেন, না হলে ওর অবস্থাও হয়তো আমার মত হবে।
আর কিছু বলার আগেই ওর নিঃশ্বাস বের হতে গিয়ে আটকিয়ে গেলো। আর কিছু বলতে পারল না তবে আমার মনে হচ্ছিল আরও কিছু বলতে চাচ্ছিল। আমি ইশানার দায়িত্ত্ব নিলাম। এদিকে আমার যে জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়েছিল সেটা ভেঙ্গে গেলো ইশানা ও রুহানা বিষয়ক কিছু ভুল বুঝাবুঝির মাধ্যমে। আমিও ইশানা কে নিয়ে ঢাকা তে স্থায়ী হলাম, মনে মনে এও প্রতিজ্ঞা করলাম যে জীবনে আর কখনও বিয়ে করবো না। ইশানা কে আমি অনেক বড় করবো আমার মেয়ের মত। ইশানা কে আমি ঢাকার একটি সুনামধন্য স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলাম আমার পরিচয়ে। ইশানা তার যাবতীয় জিনিষ নিয়ে আমার সাথে ঢাকাতে আসলো।
মাস খানেক পরে আমি ইশানার বইপত্রের মধ্যে একটা সুন্দর ডায়েরি দেখি। খুলে দেখি আমাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছে। আমাকে তার জীবনের সকল কথা গুলো জানাতে চেয়েছিল। সে কেন কিভাবে ওই অন্ধকার পথে পা বাড়াল। ডায়েরির সারসংক্ষেপ এমন—
রুহানা রাহমান ময়মনসিং থেকে ইন্টার পাশ করে ঢাকা ইডেন কলেজে বায়োলজি তে অনার্স করার জন্য ভর্তি হয়। একটা বছর ভালই পার করে। কিন্তু তারপরেই তাদের রুমে নতুন দুইটা মেয়ে আসে। তারাই মুলত রুহানা কে বাধ্য করে এসব করাতে। সেই মেয়ে দুইটা আগে থেকেই কল গার্ল এর চাকরি করে। এতে রুহানা তাদের অনেক বার নিষেধ করে কিন্তু তারা রুহানা কে উলটো বোঝায় তুমি এই লাইনে চলে আসো। অনেক টাকা কামাতে পারবা। তাছাড়া তোমার এতো সুন্দর চেহারা দেখে কাস্টমার তোমাকে এক্সট্রা টাকা দিবে যাতে তুমি অনেক মজা পাবে। কোন অভাব থাকবে না।
-রুহানা তাদের সেদিন ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয়। সপ্তাহ খানেক পরে ওই দুটি মেয়ের সাথে রুহানার রাস্তা তে দেখা হয় তাদের সাথে অন্য একটা মধ্যবয়সী মেয়ে ছিল যে রুহানা কে কেমন করে যেন দেখতেছিল। সেদিন রুহানা সেখান থেকে দ্রুত চলে আসে। আর ওই তিনজন মেয়ে প্লান করে যে করে হউক রুহানা কে তারা তাদের দলে আনবে। অনেক প্লান করে যখন রুহানা তাতেও রাজি না হয় তখন ওরা ভয়ঙ্কর একটা প্ল্যান করে মুলত যার পরবর্তী ধাক্কা টা রুহানা কে এই নিশাচারি জীবনে নিয়ে ফেলে।
মেয়ে তিনটা তার গ্রামে তার বাবা মা এবং কাকা দের জানিয়ে দেয় যে রুহানা ঢাকাতে কল গার্ল এর কাম করে। সন্ধ্যের পর জিয়া উদ্যানে এবং রমনা পার্কে কাস্টমারের জন্য দাড়িয়ে থাকে। গ্রামের মানুষ তো গুজবে বেশি কান দেয়। কথা গুলো রটতে রটতে পুরো গ্রামে ছড়িয়ে যায়। রুহানার বাবা আহসান রাহমান সাহেব গ্রামের মসজিদের ইমাম। উনি এসব কথা উনাকে যথেষ্ট ভাবে আঘাত করে এতেই উনার স্ট্রোক হয় এবং উনি মারা যান।
রুহানা যখন খবর পায় তখনি ছুটে যায়। সে তখনও জানতো না যে তার নামে এসব রটানো হয়েছে। গ্রামে প্রবেশ করতেই মানুষের আজেবাজে কথা মন্তব্য রুহানা বুঝতে পারে। গ্রামের মানুষ সবাই মিটিং করে ফইসালা করে রুহানা কে গ্রাম থেকে বের করে দেয়। রুহানা ঢাকাতে ফিরে আসে। গ্রাম থেকে টাকা পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। অকুলে পাথারে পড়ে রুহানা হাবুডুবু খায়। তখন সেই মেয়ে দুটি তার কাছে এসে ওই ব্যাপারে আবার প্রস্তাব দেয়। রুহানা তাতেও রাজি হয়না। এভাবে তিনমাস তার সিট ভাড়া এবং খাওয়ার টাকা বাকি হয়ে যায়। কলেজ কমিটি তাঁকে ওয়ার্নিং দিয়ে দেয় তিন দিনের মধ্যে সমস্ত টাকা না দিলে তার সিট নাম কেটে দেওয়া হবে। তারপর আবার সেই মেয়ে দুটি তার পাশে দাড়ায়।
-তারা বলে, দেখ পৃথিবীতে কেউ কারো নয়। নিজের অর্থ না থাকলে কেউ তোমাকে দেখবে না। তুমি আমাদের সাথে কাম শুরু কর। প্রথম কইদিন খারাপ লাগবে তারপরে আস্তে আস্তে আমাদের মত অবস্থানে চলে আসবে। তখন তোমার টাকা পয়সার কোন অভাব থাকবে না। তাছাড়া তোমার পরিবারের ছোট ভাই বোন দের কে সাপোর্ট দেওয়া তোমার দায়িত্তের মধ্যে পড়ে।
-তারপরে আস্তে আস্তে সপ্তাহে একরাত, দুইরাত করে রুহানা কে দিয়ে প্রতিরাতেই কাস্টমারের ঘরে পাঠিয়ে ওই মেয়ে তিনটা অনেক টাকা ইনকাম করে। রুহানাও অনেক টাকা কামিয়ে ফেলে বছর খানেকের মধ্যে।
তারপর একদিন রুহানা ওর মা ভাই এবং ছোট বোন কে দেখার জন্য তার নানার বাসায় যায় সেখানে তার মা ভাই এবং মামারা তাঁকে অনেক বকাঝকা করে তাড়িয়ে দেয়। আর কোনদিন যেন না জায় সেকথাও বলে দেয়। রুহানা এসব কিছু ভুলে থাকার জন্য ওই লাইনের কিছু মেয়ের সাথে মিশে আস্তে আস্তে নেশার জগতে চলে যায়। যা ইনকাম করে তার প্রায় সব তাই নেশার পিছনে চলে যায়। এভাবেই একদিন আমার সাথে তার দেখা হয় মেহেরপুর ঢাকা গামী বাসে। রুহানাও আমাকে ভালবেসে ছিল। তাই সে তার সত্যি টা আমাকে জানালো কিন্তু আমি তাঁকে সেই অবস্থায় পাওয়ার পরে আমি রুহানা কে অবজ্ঞা করে আমেরিকা চলে যায়। রুহানা ভেবেছিল শাহিদ হয়তো তার সব দোষ গুলো কে ঢেকে রেখে তাঁকে ভালবাসবে। নেশা থেকে তাঁকে ফেরানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু আমি কোন তাই করিনি। আমি মুলত রুহানাকে সেই অবস্থায় পাওয়ার পরে থ্যেকে ঘৃণা করে এসেছি।
-তারপর থেকে রুহানা আমাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে। বাসায় গিয়ে জানতে পারে যে আমি দেশের বাইরে চলে এসেছি। তার কয়েক বছর পর হটাত করে ইশানা তার গর্ভে চলে আসে কি মনে করে রুহানা বাচ্চা টা নষ্ট না করার মন্সথাপন করে। আর এই মেয়েই সেই ইশানা।