আদমচরিত ০২৮ বাই মুখফোড় (সচলায়তন)
ঈশ্বর তাকিয়ায় হেলান দিয়ে পান চিবাইতেছিলেন। আজরিল তাহার সম্মুখে দাঁড়াইয়া আনমনে ক্ষুরধার ভোজালিতে শান দিতেছে।
ঈশ্বর গলা খাঁকরাইয়া চিলুমচিতে পিক ফেলিয়া বলিলেন, "ভোজালিতে শান দিতেছ কেন?"
আজরিল শীতল কণ্ঠে কহিল, "কখন কী কাটিয়া আনিতে হয়, বলা তো যায় না। তাই ধার দিয়া রাখি।"
ঈশ্বর খুব একটা উচ্চবাচ্য করিলেন না। জুলিয়াস সিজারের ঘটনার পর হইতেই তিনি বুঝিয়াছেন, বিশ্বস্ত কেউ যদি নিকটে ধারালো অস্ত্র লইয়া অবস্থান করে, তাহাকে না চটানোই ভালো। এই কারণেই তিনি নাপিত জিলেটাইলের সহিত কখনও দুর্ব্যবহার করেন না।
ঈশ্বর গলা খাঁকরাইয়া কহিলেন, "ধার দিবার চর্চাটি মন্দ নহে। তবে দেখিও, সুদ আদায়ের ব্যবসায় অবলম্বন করিও না। অযথা আমার বদনাম হইবে। ইউনুসের ন্যায় কোনো কারবারও ফাঁদিয়া বসিও না যেন।"
আজরিল নিরুত্তর থাকিয়া ভোজালিতে শান দিতে লাগিল।
ঈশ্বর পুনরায় এক খিলি পান মুখে পুরিয়া চুনদানি হইতে এক আঙুল চুন তুলিয়া মুখে পুরিয়া কহিলেন, "তোমাকে ডাকিয়াছি বিশেষ একটি কাজে।"
আজরিল কহিল, "বলুন খোদাবন্দ, কাহার প্রাণ হরণ করিয়া আপনার কদমপদ্মে পেশ করিব?"
ঈশ্বর বিরক্ত স্বরে কহিলেন, "আ মোলো যা, ক বলিলেই ক্যাটাস্ট্রফি বুঝিয়া ফেল! প্রাণ হরণ করিতে হইবে কেন বাপু? ভোজালিখানা কোষবদ্ধ রাখিয়া গালে দুই চারটা চড় মারিতে পারিবে?"
আজরিল কহিল, "আলবাৎ হুজুর! কাহার গাল?"
ঈশ্বর দক্ষিণে-বামে চুপিচুপি চাহিয়া গলা নিচু করিয়া কহিলেন, "আদমের গাল!"
আজরিল দন্তে দন্তে প্রবল ঘর্ষণ করিয়া কহিল, "এখনই গিয়া পাজিটার গাল থাবড়াইয়া লোহিত করিতেছি জাঁহাপন!"
ঈশ্বর কহিলেন, "আরে শোনো না বাপু! বিস্তারিত শ্রবণ কর আগে। শুধু আদমকে চটকনা মারিলেই চলিবে না। তাহার বেয়াড়া ভার্যাটিকেও কেশের গ্রন্থি ধরিয়া ঘরছাড়া করিতে হইবে। পারিবে স্ত্রীলোকের দেহে হস্তক্ষেপ করিতে?"
আজরিল কহিল, "আমার কোনো জেণ্ডার বায়াস নাই সদাপ্রভু। অ্যাকশনে নামিয়া স্ত্রী-পুরুষ বৈষম্য করিব না। আদমের গণ্ডদেশে গণিয়া গণিয়া এক হালি থাপ্পড় কষাইব, আর তাহার মুখরা স্ত্রীটির কেশ মুষ্টিতে লইয়া ঘর হইতে বহিষ্কার করিব।"
ঈশ্বর কহিলেন, "উঁহু, ঘর হইতে উভয়কেই নিষ্ক্রান্ত করিতে হইবে। সম্ভব হইলে উহাদের ধরিয়া পৃথিবীতে ছাড়িয়া দিয়া আইস।"
আজরিল মুখ গোমড়া করিয়া কহিল, "পৃথিবীতে যাইতে হইবে?"
ঈশ্বর কহিলেন, "হাঁ। ঘুরিয়া আইস। টাকাপয়সা লাগিলে খাজাঞ্চিকে বলিও, কিংবা ফিরিয়া আসিয়া বিল করিয়া টিএডিএ তুলিয়া লইও।"
আজরিল কহিল, "জো হুকুম জাঁহাপন! পৃথিবীতে কারো প্রাণ হরণ করিতে হইবে?"
ঈশ্বর বিড়বিড় করিয়া কহিলেন, "এমন ট্রিগারহ্যাপি অনুচর লইয়া কী বাটে পড়িলাম!" তারপর গলা খাঁকরাইয়া কহিলেন, "আচ্ছা, মোটাতাজা ডাইনোসর যাতায়াতের পথে পড়িলে প্রাণখানি হরণ করিয়া আনিও। আমার কাছে আনিয়া দিবার দরকার নাই, ডানোর কৌটায় ভরিয়া স্টোররুমে রাখিয়া দিলেই চলিবে। এখন কাজে যাও।"
আজরিল কুর্ণিশ করিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল।
ঈশ্বর কহিলেন, "তা একবারও কি মনে প্রশ্ন জাগিল না, আদম আর ঈভকে কেন বিতাড়ন করিতেছি?"
আজরিল কহিল, "কেন হুজুর?"
ঈশ্বরের চোখ চকচক করিয়া উঠিল। তিনি ফিসফিস করিয়া কহিলেন, "কয়লা! কয়লা পাওয়া গিয়াছে উহাদের বাসগৃহের নিচে!"
আজরিল বলিল, "আচ্ছা।"
ঈশ্বর বিরক্ত হইলেন। নির্বোধ কতগুলি দূত নির্মাণ করিয়াছেন তিনি। কিছু কূট আলাপ করিবার যোগ্যতা নাই। রশ্মির অপচয় আর কাহাকে বলে?
তিনি গলা খাঁকরাইয়া কহিলেন, "আচ্ছা, তুমি কাজে লাগিয়া পড়ো বরং। আর দেখ গেস্ট রুমে এশিয়া এনার্জি হইতে কে যেন আসিয়া অপেক্ষা করিতেছে, তাহাকে আমার কক্ষে পাঠাইয়া দিও।"