নমরূদ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-কে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার হুকুম দিল। অতঃপর তার জন্য বিরাটাকারের আয়োজন শুরু হয়ে গেল।
...
আল্লাহ বলেন, وَأَرَادُوْا بِهِ كَيْداً فَجَعَلْنَاهُمُ الْأَخْسَرِيْنَ، ‘তারা ইবরাহীমের বিরুদ্ধে মহা ফন্দি অাঁটতে চাইল। অতঃপর আমরা তাদেরকেই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত করে দিলাম।’
(সূরা আম্বিয়া ২১/৭০)
...
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, فَجَعَلْنَاهُمُ الْأَسْفَلِينَ، ‘আমরা তাদেরকে পরাভূত করে দিলাম।’
(সূরা সফফাত ৩৭/৯৮)
...
অতঃপর ‘একটা ভিত নির্মাণ করা হ’ল এবং সেখানে বিরাট অগ্নিকুন্ড তৈরী করা হ’ল। তারপর সেখানে তাকে নিক্ষেপ করা হ’ল।’
(সূরা সফফাত ৩৭/৯৭ )
...
হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কে যখন আগুনে পুড়িয়ে মারার জন্য নমরুদ ৮ মাইলপরিমান জায়গা আগুন জ্বালালো , তখন একটা নতুন সমস্যা দেখা দিল। আগুনের উত্তাপ এতই বেশি ছিল যে তার কাছে পৌছানো যাচ্ছিল না। তাই একটা চরক বানানো হল যার মাধ্যমে ইবরাহীম (আঃ) কে ছুড়ে আগুনে নিক্ষেপ করা যায়।
...
কিন্ত রহমতের ফেরেশতা রা চরকের একপাশে ভর করে থাকায় চরক ঘুরানো যাচ্ছিল না। তখন শয়তান নমরুদকে কুবুদ্ধি দিল যে কিছু নগ্ন পতিতা এনে চরকের আশপাশে পুরুষদের সাথে খোলা আকাশের নীচে অসামাজিক কাজকর্মে লিপ্ত করে দিতে, কারন এ অবস্থায় রহমতের ফেরেশতারা থাকতে পারবে না। তাই করা হল এবং ফেরেশতারা চলে গেল এবং ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কে আগুনে নিক্ষেপ করতে তারা সক্ষম হল।
...
পরবর্তিতে ঐ নষ্টা মেয়েগুলোকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দান করা হল এবং তাদের মাথায় তীলক পরানো হল। যেটা এখন আমাদের কাছে টিপ নামে পরিচিত।
------------------------------------------------------------------------------------
------------------------------------------------------------------------------------
আমাদের পিতার যুগের অবস্থা আবার ফিরে এসেছে। কিছু নষ্টা নারী ও পুরুষ মিলে ইভেন্ট খুলেছে যে তারা খোলা আকাশের নীচে সেই ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপের সময়ের মত অসামাজিক কাজে লিপ্ত হবে।
...
আমাদের ওপর যে সকল অবস্থা আসে সেগুলো আমাদের হাতের কামাই। মুসলমান যখন জিহাদ অর্থাৎ দাওয়াত আর কিতালকে ভুলে গেছে তখন থেকে তাদের ওপর হতে আল্লহর রহমত সরে যেতে শুরু করেছে।
...
আমরা নিজেরা তো ইসলাম থেকে সরে যাচ্ছিই, আমাদের সন্তানসন্ততি দেরও ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখছি। এই ইভেন্ট মূলত আমাদের ঈমানের অবস্থা নির্দেশ করছে। ফেইসবুকে দুটো হাদীস পোস্ট করে বা সুন্দর লেখা পোস্ট করে আমরা হাজার হাজার লাইক পেয়ে আমরা আমাদের ঈমান নিয়ে সন্তষ্ট হয়ে গেছি। তাই প্র্যাক্টিকালি দাওয়াতের মেহনত আমারা ছেড়ে দিচ্ছি। এখন আমাদের দাওয়াত আর ঈমান ভার্চুয়াল। জান্নাতও যে ভার্চুয়াল হয়ে যেতে পারে এটা আমাদের মাথায় নেই। জাহান্নাম কিন্ত প্র্যাকটিকাল হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। আমরা আজকে ইসলামকে মসজিদের ভেতর সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। মসজিদে আসে সব বুড়োরা। এটাও ইয়াহুদীদের চক্রান্ত।
...
তবে দাওয়াতের মেহনতের কারনে অবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে। মানুষ দ্বীন বুঝতে পারছে। কিন্ত কিছু মানুষ আবার এই দাওয়াতের মেহনতের বিরোধীতা করে। বুঝে বা না বুঝে।
------------------------------------------------------------------------------------
------------------------------------------------------------------------------------
সহীহ বুখারীতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রদি আল্লহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে যে, জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপের সময় ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বলে ওঠেন, حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ، ‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি কতই না সুন্দর তত্ত্বাবধায়ক’।
(বুখারী, হা/৪৫৬৩ তাফসীর অধ্যায়, সূরা আলে-ইমরান)
...
একই প্রার্থনা শেষনবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন, উহূদ যুদ্ধে আহত মুজাহিদগণ যখন শুনতে পান যে, আবু সুফিয়ান মক্কায় ফিরে না গিয়ে পুনরায় ফিরে আসছে মদীনায় মুসলিম শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য, তখন ‘হামরাউল আসাদে’ উপনীত তার পশ্চাদ্ধাবনকারী ৭০ জন আহত ছাহাবীর ক্ষুদ্র দল রাসূলের সাথে সমস্বরে বলে উঠেছিল حَسْبُنَاللّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ، ‘আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি কতই না সুন্দর তত্ত্বাবধায়ক’ ঘটনাটি কুরআনেও বর্ণিত হয়েছে’।(আলে ইমরান ৩/১৭৩; আর-রাহীক্ব পৃঃ ২৮৬)
...
এভাবে পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও পুত্র মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিপদ মুহূর্তের বক্তব্যে শব্দে শব্দে মিল হয়ে যায়। তবে সার্বিক প্রচেষ্টার সাথেই কেবল উক্ত দো‘আ পাঠ করতে হবে। নইলে কেবল দো‘আ পড়ে নিষ্ক্রিয় বসে থাকলে চলবে না। যেমন ইবরাহীম (আঃ) সর্বোচ্চ পর্যায়ে দাওয়াত দিয়ে চূড়ান্ত বিপদের সময় এ দো‘আ করেছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিরোধী পক্ষের সেনাপতি আবু সুফিয়ানের পশ্চাদ্ধাবনের পরেই উক্ত দো‘আ পড়েছিলেন।
...
বস্ত্ততঃ এই কঠিন মুহূর্তের পরীক্ষায় জয়লাভ করার পুরস্কার স্বরূপ সাথে সাথে আল্লাহর নির্দেশ এল
قُلْنَا يَا نَارُ كُونِيْ بَرْداً وَّسَلاَماً عَلَى إِبْرَاهِيمَ،
‘হে আগুন! ঠান্ডা হয়ে যাও এবং ইবরাহীমের উপরে শান্তিদায়ক হয়ে যাও’ (সূরা আম্বিয়া ২১/৬৯)।
...
অতঃপর ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মুক্তি পেলেন। অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইবরাহীম (আঃ) ফিরে আসেন এবং এভাবে আল্লাহ কাফিরদের সমস্ত কৌশল বরবাদ করে দেন।
...
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন যে, “দুনিয়ার জীবন তো একটি ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়।”
...
আর এক জায়গায় তিনি এরশাদ করেছেন,“তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা তো শুধুমাত্র দুনিয়ার জীবনের ক্ষণস্থায়ী সুখ। আল্লাহর নিকট যা কিছু সংরক্ষিত আছে তা চিরস্থায়ী, এটা শুধু তাদের জন্য যারা তাদের রবের উপর ঈমান এনেছে।”
(সুরা আশ শুয়ারা: ৩৬)
...
“মানুষের জন্য শোভনীয় করা হয়েছে নারী, সন্তান-সন্ততি, রাশিকৃত স্বর্ণ ও রৌপ্য, অশ্ব এবং গবাদিপশু ও উর্বর শস্যক্ষেত্র। কিন্তু, এ সবকিছুই দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী সুখের উপকরণ। নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটেই শ্রেষ্ঠতম অবস্থান।”
(সুরা আলি ইমরান: ১)
...
ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর জীবন নিয়ে আমাদের আজকের এ আলোচনার উদ্দেশ্য হল তাঁর ঘটনাবহুল জীবনকে নতুন করে উপলব্ধি করা এবং তা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা।
...
এক আল্লাহর দাসত্বের দিকে মানুষকে আহবান করতে গিয়ে তিনি যে পরিমাণ কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন, ধৈর্য্য, সাহসিকতা এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে সেগুলোকে মোকাবিলা করেছেন এবং সর্বোপরি, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সন্তষ্ট চিত্তে তাঁর সকল আদেশ মাথা পেতে নিয়েছেন (যেমন দাওয়াতের কাজের জন্য স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে মক্কায় খাদ্য ও আশ্রয়হীন ভাবে ফেলে রেখে আসতেও দ্বিধা করেননি), তা আমাদের জন্য সত্যিকার অর্থে অনুকরনীয় ও অনুসরণীয়। এটাই আসল মিল্লাতে ইব্রাহীম।
...
আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে তাঁর এই প্রিয় বান্দার জীবন থেকে শিক্ষাগ্রহণ করার তৌফিক দান করুন এবং তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমাদের মহান রবের নৈকট্য অর্জন করার সৌভাগ্য দান করুন।
আল্লহুম্মা আমিন।