তাবলিগওয়ালারা ইজতেমার কোথা হতে পেল?
।
।
।
।
।
না ভাই!
এটা তাবলিগওয়ালাদের ইজতেমা নয়,এটা মুসলমানের ইজতেমা।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জামানা হতে ইজতেমার মত আজিমউস্সান আমল চলে আসছে। নামাজের জন্য যেমন আজান হয়,তেমনি যখনি দ্বীনের অনেকগুলো তাকাজা সামনে আসতো তখন প্রিয়নবী (সাঃ) এলান করতেন "আসসলাতু জামি'য়া"।
এই এলান এর পর সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম তাদের সমস্ত কাজকে কুরবানি করে আল্লাহর রাসূলের ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য দলে দলে ময়দানে জমা হতেন।
উনাদের মাঝে কারো বাবা মারা গেছে, মা অসুস্থ, কারো বিয়ে, কারো ব্যবসায়ের রমরমা অবস্থা, কারো খেজুর পেকেছে এরকম বিভিন্ন হালত থাকতো,কিন্তু তারা সকলে হালত উপেক্ষা করে দ্বীনের তাকাজাকে প্রধান্য দিয়ে রাসূলের(সাঃ) ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য ময়দানে বা মসজিদে সমাবেত হতেন।
প্রত্যেক সাহাবী নিজেকে প্রস্তুত রাখতেন,হয়ত দ্বীনের জন্য আমার সমস্ত মাল আল্লাহর রাস্তায় দেওয়ার তাকাজা আসতে পারে, তবে আমি তাই করবো।
হয়ত আল্লাহর জন্য আমার পরিবার, বিবি,বাচ্চা ছাড়তে হতে পারে তবে আমি তাই করব। হয়ত দ্বীনের জন্য আমার জান দিতে হবে,তবে আমি আমার জানটাও দিয়ে দিব। আমি তো এ কাজের জন্যই,আমাকে তো এ কাজের জন্যই পাঠানো হয়েছে।
যখন সাহাবায়ে কেরাম আজমাঈনগন সকলে ময়দানে হাজির হতেন।
তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) দ্বীনের তাকাজা পেশ করতেন।
*পারস্য, অমুক অমুক দেশে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে কে কে যাওয়ার জন্য তৈরি আছো? তখন সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম হাত তুলতেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রত্যেক সাহাবীকে এমনি ভাবে তৈরি করেছিলেন, যে প্রত্যেক সাহাবী দ্বীনের সকল তাকাজা পুরা করণেওয়ালা ছিল,দ্বীনের জন্য জান দেনেওয়ালা ছিল।
তখন আল্লাহর রাসূল (সাঃ) নাম ধরে ধরে বলতেন তুমি তুমি এবং তুমি অমুক তাকাজায় চলে যাও। সাহাবায়ে কেরাম তৎক্ষনাত ঘোড়া ছুটিয়ে দ্বীনের মোবারক তাকাজা পুরা করার জন্য রওনা হয়ে যেতেন।
বাড়ীতে গিয়ে কাজ গুছিয়ে তারপর চিন্তা করে তারপর রওনা হওয়া,পরিবারের এজাজত নেওয়া- এসব উনাদের চিন্তার বাইরে ছিল।
তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) অন্যান্য তাকাজা পেশ করতেন। যেসব জামাত আল্লাহর রাস্তায় গিয়েছে তাদের বাড়ির জিম্মাদারী দিতেন।
তাদের খোজ খবর সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) রা রাখতেন।
তারপর আল্লাহর রাসূল সীমান্ত রক্ষার জন্য আরেক জামাত কে পাঠাতেন। কেউ যদি কেন সাহাবীকে জিজ্জাসা করত,আপনাকে যে অমুক তাকাজা/জিম্মাদারী দেওয়া হয়েছে তা পুরা করতে পারবেন তো?
সে সাহাবী সাংঘাতিক রাগ করতেন! এবং বলতেন,
আমি কি মুসলমান নই?
আমি কি ঈমানওয়ালা নই?
তুমি কি আমাকে মুনাফিক মনে করো?
আমি তো এ কাজের জন্যই।
যখন সমস্ত তাকাজা পুরা হয়ে যেত তখন এলান করা হত, দ্বীনের সমস্ত তাকাজা পুরা হয়ে গেছে আপনার সকলে বাড়ী ফিরে যান।
এখন আপনাদের সামনে তিনটা কাজ।
১, আল্লাহর রাস্তার যেসব জামাত গিয়েছে তাদের বাড়ির নুসরত ও দেখাশুনা করা।
২, মসজিদ ওয়ার আমলের সাথে জুড়ে থাকা।
৩, নিজের জরুরতগুলো পুরা করে,পরবর্তি তাকাজার জন্য প্রস্তুত থাকা।
সাহাবায়ে কেরাম আজমাঈমন দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বাড়ির পথে এগোতেন। আর নিজেকে তিরস্কার করতেন,হায় আমার আমল হয়ত সুন্দর ছিল না তাই আল্লাহ তায়ালা আমাকে দ্বীনের তাকাজায় কবুল করেন নি,আল্লাহর রাসূল আমার নাম ডাকে নি।
নিশ্চই আমার আমলের কমি ছিল। আমাকে আরো আগে বাড়তে হবে।
আমার সাথিরা কতইনা আগে বেড়ে গিয়েছে। তারা এরপর থেকে আরো সুন্দর আমল করতেন,এবং নেক আমলের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দিতেন।
যখন ইজতেমার আমল চলছিল তখন,
১, আল্লাহ পাক রহমত বরকতের দরজা খুলে দিয়েছিলেন, বৃষ্টির মত অবিরাম ধারার আল্লাহ পাকের রহমত বরকত বর্ষণ হচ্ছিল।
২,আল্লাহ তায়ালা মানুষের মাঝে হক কবুলের যোগ্যতা দান করেছিলেন,তাই দলে দলে মানুষ ইসলাম কবুল করছিল।
৩, আল্লাহ তায়ালার মদদ ও সাহায্য বান্দার পক্ষে ছিল।
৪, দুআ কবুলের দরজা আল্লাহ তায়ালা খুলে দিয়েছিলেন।
সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) হালতে আল্লাহর কাছে চাইতেন,আল্লাহ তায়ালা সাথে সাথে তা কবুল করতেন।
৫, মুসলমানদের মাঝে ভাতৃত্ব,সহমর্মিতা তা তৈরি হয়েছিল। একটা সুন্দর সমাজ তৈরি হয়েছিল।
[ইজতেমা উপলক্ষে মিয়াজী মেহরাব সাহেব হজরতজ্বীর মোজাকারা]
আমরা কি এ ফাজায়েলগুলো চাই না?
ইজতেমার দ্বারা এটাই চাওয়া হচ্ছে।
ইজতেমার উদ্দেশ্যঃ
১, কিভাবে প্রত্যেক মুসলমান একশত থেকে একশতভাগ নারী পুরুষের সম্পর্ক আল্লাহ তায়ালার সাথে হয়।
২, কিভাবে প্রত্যেক মুসলমান একশত থেকে একশতভাগ নারী পুরুষ পরিপূর্ন দ্বীনের উপর চলনে ওয়ালা হয়ে যায়।
৩, কিভাবে প্রত্যেক মুসলমান একশত থেকে একশতভাগ নারী পুরুষ জাহান্নাম থেকে বেঁচে জান্নাতে যায়।
৪, কিভাবে প্রত্যেক মুসলমান একশত থেকে একশতভাগ নারী পুরুষ আল্লাহ আল্লাহর রাসূলকে সামনে রেখে চলতে পারে।
সকলের নিকট ইজতেমার দাওয়াত পৌছানো চাই।
যেন সকলে ইজতেমায় শরীক হতে পারে।
ইজতেমার কামিয়াবির জন্য মা বোনেরা নফল নামাজ, রোজা, সদকা, আল্লাহর জিকির, রোনাজারি, দুআ ইত্যাদি আমলের মাধ্যমে ইজতেমায় শরীক হই।
আল্লাহ তায়ালা দ্বীনের সকল তাকাজা পুরা করুন।
আমাদের সকলকে ইজতেমায় শরীক করুন।
এবং এই অধমকে দ্বীনের হার তাকাজায় লাব্বাইক থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৫