উৎসর্গ:
জিননূরিন নাহার রাজা
রাজবদন হায়! কোন জলে ভেসে যায় লক্ষণসিঁড়ি নদী।
---------------------------------------------------------------------------
ওহী
মাইলের পর মাইল প্রস্ফুটিত পারাবাস্তব জ্বর
দেবীঘরে ধীমান থাকি ওহীগ্রস্হ পয়গম্বর।
প্রার্থনা
দূরতম রয় পাতালের জল। আর হবে না পরিন্দা শিকার জহুরার বনে।
প্রমাণ-আবাসে আমার লগ ছাড়িয়া দেও।
কেহ কেহ বয়াত রাখে চন্দ্রছড়ির মোকামে। ব্রজবালা রচিয়া যায় বক্ষভরা মাজারের সনেট। আজও মূর্খ রয়ে যাই, বায়ুজন্মে ক্ষয় করি সোনার তনাই।
আমারে ভিখ দেও, আমার লগ ছাড়িয়া দেও।
নিবেদন
প্রাণের বিষ্টায় আমি তো নষ্ট চারা
আমারে একবার কবি কও মাই।
পাখির পেটে মানবের শাবক শুয়ে আছি
মৃত্যুর অবিধা খুঁজে আমি না আল্লার কাছে যাই
ও মাই, আমারে একবার পুত কও।
একদিন দিয়ো পুরাতন ছায়া
বাদামি বিচির বয়স, হে বটগাছ
আমারে একবার কবি কও মাই।
ছায়াসঙ্গী
আর আমারে দেখিয়ো না মানুষের মতো
মানুষ দূরে যায়...
সখির সংসারে
আমারে দিয়ে আর তো হবে না বৃক্ষের বুনন
এমন গরমের দিনে
না-হয় তুমি রুয়ে দিয়ো কিছু কিছু চুলের চারা।
নীলজলে আর তো দেখি না জ্যোৎস্নার মাছ
সোনাদিনে পড়ে থাকে ফুলের কায়া।
নির্বাণ
পূর্ণিমার চাঁদ তোমারে দেখে
আমি তো দেখি না
পনের বছর এতেকাফে আছি
আমি আর মসজিদের পুদিনা পাতা।
পাখিরা পান করে ফুলের শুদ্ধতা
আমি তো ঈশ্বর আমার
আমারে তুমি প্রথম বলেছ প্রার্থনার কথা।
ছায়ার অক্ষর
সারারাত উঠানভরা ক্রিমিপাল
হে সূর্য, অসীম অক্ষর ঢেলে দাও বাতাসের জালে
ছায়া ও স্রোতের তাড়ায় চন্দ্রশিকারী দূরতম যায়
সানুরাগে উষ্নচাঁদ
জানালাভরা রুহের বিস্তার।
সঙ্গী আলোর প্রকাশ্য বিরাণ----ও ছায়া, ইন্দ্রধনুজাল
ও মন সোয়ারে একবার পিঞ্জিরায় আও দেখি...
ঈশ্বর তোমার জন্মাবধি
চোখের দাগ লেগে আছে
হায়! চোখের দাগ লেগে আছে
কেউ কোনোদিন পুস্প হল না
কেউ কোনোদিন পুস্প হল না!
তুমি আসিয়ো নির্জনকালে
ত্রিকাল রচনা করি নিমের অক্ষরে।
ঈশ্বর তোমার জন্মাবধি
জবাফুল কেন মানুষ হল না
জবাফুল কেন মানুষ হল না!
মঙ্গলম
জল মঙ্গলম
সখি জন্মভর জেগে রই তোমার সিথানে
চক্ষুদ্বয়ে ঘুমিয়েছো বায়ু মঙ্গলম আমার
প্রাণ মঙ্গলম আমার
প্রাণ বন্ধু মঙ্গলম।
জ্বর আর যৌবন ভাসিয়েছি
বংশনদীতীরে...
সখি হে, কোথায় দাঁড়াব বল
দাঁড়িয়েছি তোমার চরণে
দেহক্লান্ত গাছের ছায়া
সান্দ্রকথা
সারারাত সান্দ্রকথা
খিড়কিভরা চন্দ্রের পতন
বহুদিন আল্লা মানি না
সারাবেলা তোমারে মানি।
একেশ্বর ভিড়ে গুটিয়েছি ফণা
নীলজলে ধুয়ে নিয়ো হাত
শুনিয়ো পাথার, পলিভরা নদীর নালিশ।
প্রচ্ছায়া
ডালের আকরে কলিজার পাতা ধরেছিল
প্রকান্ডকালে ছায়ার গুঁড়ি কেটে যায়
পাখির পরাণ এই মৃত্যু--- কমলা কমলা
চন্দ্রশালা খালি রয় পরমাঙ্ক পাপে
আর আমি নাই
রোদভরা ছায়ার সন্ত্রাস হে তুমি, মায়া হয়ো...
মৃত্যুভরা বয়ান
দিয়ে যাই ঝিঙেগাছ, হলুদ কথা
ধুলাভূমে জন্ম তাই
ভূমিভরা মানুষের
আর কোনো মাতৃভূমি নাই।
গাছের পর্দা
আজ বুকে দুখ লাগে
মালদই আমের সুরুজ পড়ে আছে নদে
তোমারে তুলারাশি লাগে।
একা একা সব নদী মাটির নাওয়ে ঘুমিয়েছে
প্রেমিকা ফেরেশতারা উড়ে যায় আলোর বাতাসে
আমি না মনুষ!
আল্লার আগুনে ছাই হয় নূরের পাহাড়
আমার খালি খালি-খালি লাগে
আজ বুকে দুখ লাগে।
০২.
স্তনভরা নিধুয়া পাথারে আজ বুকে দুখ লাগে
আর আঙুরের কাচ ভাঙিবো না।
বেভুলে সরিয়ো না বাকলের স্নিগ্ধ জীবন
ডাবগাছে পাখির পরাণ শুয়ে আছে।
রাত জেগে জেগে রওজা শরীফে চিরদিন ঘুমায় রক্তের জবা
ফুলের কবরে আর কেউ পর্দা দিয়ো না।
প্রচ্ছায়া
ডালের আকরে কলিজার পাতা ধরেছিল
প্রকান্ডকালে ছায়ার গুড়ি কেটে যায়
পাখির পরাণ এই মৃত্যু কমলা, কমলা।
চন্দ্রশালা খালি রয় পরমাঙ্ক পাপে
আর আমি নাই
রোদভরা ছায়ার সন্ত্রাস হে তুমি মায়া হয়ো, মায়া হয়ো।
চরাচর
কতো কতো রাখাল এল জ্যোৎস্না চরাতে
আমি-তো রাত জেগে রই
তোমাদের খোয়াজ খিজির।
ফলবন ভেঙ্গে মৃত্যু হেঁটে যায় শুভ্র পাহাড়ে
এখনও তো আমি জলের রাখালি করি।
আন্ধারী রাতে ঝড়ের তান্ডব হয়েছিল
অকাতরে খাবলে গেছে বৃক্ষের গুঁড়ি।
হায়! চড়ুই পাখি
রুমার নিচে আগলে রাখ হরপ্পা নগরী।
(নীলকাব্যের বয়াত থেকে কয়েকটি)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০০৯ ভোর ৪:০২