একটা সময় ছিলো দেবদেবীদের বন্দনায় সকাল সাঝে ভক্তি আর শ্রদ্ধায় অবনত হতো গ্রাম গঞ্জ নগর বন্দর। নারীদের হৃদয় নিংড়ানো প্রেম ভালোবাসা আর পুরুষের পৌরুষত্ব ভেঙে চুড়ে গলিত লাভার মতো দেবদেবীর পদতলে জমা হতো। বন্দনার এই প্রাচীন রুপ আজো গড়গড়িয়ে বেরিয়ে সে আমাদের অবতার নামায়। এই অবতারনামায় দেবদেবীর গুনকীর্ত্তন নামায় দেবদেবীর গুনকীর্ত্তনে নিশিদিন জাগরুক। মিডিয়া সেই অবতারের নাম। আবার এই সব অবতারগুলোর মধ্যে এদেশের প্রধানতম অবতারের নাম দৈনিক প্রথম আলো। যার আবির্ভাব দেশদশের কল্যানে। ঐশ্বরিক শক্তি ট্রান্সকম গ্রুপ। নিজের প্রতি জনসাধরনের ইমাণ আনতে প্রচারিত শ্লোক- ' যা কিছু ভালো তার সাথে প্রথম আলো।
অবতার প্রথম আলো'য় দেবদেবীদের বন্দনার শিরোনাম-ছটির দিনে(সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন : ১২ এপ্রিল ২০০৮ : সংখ্যা ৪৪১) তরুন বন্দনা।
১৯৯৮ সালে ঐশ্বরিক শক্তি বলে নাজিল প্রাপ্ত প্রথম আলো এ পর্যন্ত অনেক দেবদেবীর বন্দনা করেছেন। দেশের কোটি মানুষকে ঐ দেবদেবীর বন্দনার জন্য ভক্তকুল গড়ে তুলেছেন। তাদের কেউ কেউ স্বর্গে তাদের অবস্থান শক্ত করেছেন; পাশাপাশি বসেছেন রাজ্য শাসনে। আর বর্তমানে তাদের একঝাক শিকারী বুদ্ধিজীবি বাঙলাদেশ মাতয়ে বেড়াচ্ছে। দেশের রাজনীতি সমাজনীতি শাসন পরিচালনের নানা পথ বাতলে দিচ্ছেন। চিরকাল একই গাধা দিয়া মাল বহন করা যাবে না। তাই এখন তারা মাঠে নেমেছে শিকারী সন্ধানে।
সন্ধানে অবশ্য মিলেছে। প্রথম আলো ছুটির দিনে ম্যাগাজন (সংখ্যা : ৪৪১) এ রকম ১০ শিকারী তরুন দেবদেবীর বন্দনা আমরা পাঠ ও হৃদয়াঙ্গম করবো। পারলে মগজে ঐসব শিকারী তরুনদের তীরে বিদ্ধ হয়ে চিরদিন বন্দনা করবো।
আসুন বন্দনা শুরু করি।
ছুটর দিনের ৪৪১ সংখ্যার প্রচ্ছদ নকশায় দু’পাশে দুটি মৎস শাবক ;উপরে তরুনদের আইকন দশ দেবদেবী । সৃষ্টি রহস্যে পানিতেই নাকি জীবের উদ্ভব। প্রচ্ছদ মৎস তাই জানিয়ে দেয় এই তরুন দেবদেবী আমাদের শুরু এবং গুরু। ভিতরের পাতার শুরুতে বন্দনার শিরোমনি মুনতাসির মামুণ বৈশাখে হাত তুলে এই সব তরুন দেবদেবীদের কাছে প্রার্থনা করেছেন ;তাদের মোতো তেরবাজদের মোত উদ্ধার করতে।
সূচিপত্রে এক নজরে দেব দর্শন করে নেই।
একজন স্থপতি ( রাজমিস্ত্রি) মেরিনা তাবাসসুম , জে কে সিমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত একজন সাহিত্যিক সুমন রহমান , একজন ক্যামেরা ম্যান কামরুল হাসান খসরু , একজন ফ্যাশন ডিজাইনার খালিদ মাহমুদ খান ( ফ্যাশনে দেশ প্রেম বিক্রেতা) ,একজন প্রযুক্তি বিদ রাগীব হাসান , একজন দাবারু এনামুল হোসেন রাজীব, একজন নগর গায়ক শারমীন সাথী ইসলাম ময়না , একজন গ্লামার বিক্রেতা তিশা, একজন রঙিন হিরো শাকিব খান , একজন বাক্সবন্দী অভিনেতা মোশাররফ করিম ।
এরাই এ বছরের তরুন হিরো।
এই হিরোরা অলিখিতভাবে প্রথম আলোর শুবেচ্ছাদূত।এ¯ম্বাসিডর। এদের দিয়েই প্রথম আলো তার প্রচার প্রসার করিয়ে নেবে বছর জুড়ে; টিকে থাকরে সারাজীবন। তাদের সাাৎকার ,খবর ,ছবি, মতামত, পোশাক, সখ, ভ্রমন, বিলাসিতা, ফ্যাশন ,পারফিউম, গালগপ্প ফেনিয়ে ফেনিয়ে প্যথম আলোর প্রষ্ঠা জুড়ে থাকবে সারা বছর।
ইতিমধ্যে প্রথম আলো সাহিত্য সাময়িকিতে অমর একুশে বইমেলা ২০০৮ নির্বাচিত ১০ সৃজনশীল বই-য়ের তালিকায় সুমন রহমানের 'গরিবি অমরতা' উঠে এসেছে।
কে-ক্র্যাফট খালিদের ফ্যাশন; তিশার মডেলিং -এ ভরে ওঠে। অন্যরাও নিজ নিজ গোত্রের পাতায় বিস্তৃত স্থান করে নেয়।
যা কছু ভালো তার সাথে 'প্রথম আলো' এই ধাপ্পাবাজিতে এসিডদগ্ধ নারীদের পাশে ;ভাষা প্রতিযোগিতা, গনিত অলিম্পিয়াড এর বিনোদন মঞ্চে, শীতার্তদের পাশে, সিডর তহবিল, মাদক বিরোধী অ ন্দোলনে এই সব এ্যাম্বাসিডরদের দেখা যাবে।
এদের দিয়ে প্রথম আলো কতৃপক্ষ তাদের আধুনিক জনসংযোগের ষোলকলা পুরন করে ছাড়বে।
এই সবই প্রথম আলোর বানিজ্যিক ফিকির। জনকল্যান জনস্বার্থ দেবদেবী বন্দনা শিকারী বুদ্ধিজীবি সবই প্রথম আলোর প্রচার ও প্রসারের তীব্র তীরের ফলা।
আর সেই কারনে যাদের দিয়ে বন্দনা করে নিতে পারবে প্রথম আরো ; সেই সব তরুনদের বন্দনায় মাতোয়ারা।এদের দিয়ে এ্যাম্বাসিডরের কাজ হবে।
তাই কোনো তরুন কৃষক প্রথম আলোর তরুন বন্দনায় স্থান পায় না। সময়ের শ্রেষ্ঠ নায়ক কৃষক বন্দনা পায় না।কৃষককে দিয়া তো আর এ্যাম্বাসিডরের কাজ হয় না !
একই কারনে কোনো তরুন উন্নয়ন কর্মী ; কোনো তাঁিত; কোনো তরুন জেলে ; কোনো তরুন শ্রমিক প্রথম আলোর বন্দনা পায় না।
বিশ্বমিডিয়ার এই ভন্ডামি ; হিরোইজমের চর্চা; মুক্তবাজারি পন্য কৃষক থেকে বিমুখ করেছিল মানুষ কে। যার সম¯ত দায় গোটা বিশ্বের দরিদ্র মানুষের পেট জানান দিচ্ছে। তাই বন্দনা পেতে হলে সেই সব কৃষক তাঁতি জেলেরা পাবে।
আমাদের বোঝার দিন এসেছে আমরা কাকে বন্দনা করবো; জীবন বাচাঁনোর সেই সব তরুনদের নাকি না প্রথম আলোর এই সব এ্যাম্বাসিডর দেবদেবীর ?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ৭:০৪