বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রীদের বেতনের উপর ভ্যাট আরোপ!! সত্যিই আজব এক দেশে বসবাস করছি আমরা।যে দেশে শিক্ষার হার বাড়াতে কতইনা গাল ভরা বুলি আওড়ানো হচ্ছে দিনে রাতে।সভা সমাবেশে সরকার প্রধান থেকে শুরু করে শিক্ষামন্ত্রী মন্ত্রী এম পি সকলেই বলে চলেছেন শিক্ষা প্রসারে তাঁদের গৃহিত কর্মসুচী।প্রাথমিক পর্যায় থেকে মাধ্যমিক এমনকি মেয়েদের ক্ষেত্রে ডিগ্রী পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে।শিক্ষা উপকরণ যেমন বই খাতা কলমের উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। দরিদ্র পরিবারের শিশুদের শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসুচি গ্রহন করা হয়েছে। সবগুলো পদক্ষেপই প্রসংসার দাবিদার।কিন্তু অবাক হতে হয় যখন সেই একই সরকার উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের বেতনের উপর ভ্যাট সংযোজন করে!! পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্রের বেতন যেখানে ১০০থেকে ১৫০টাকা প্রতি মাসে-সেখানে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্রকে প্রতিমাসে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ১৫হাজার থেকে ২৫হাজার টাকা বেতন পরিশোধ করতে হয়।যা বাংলাদেশের মত একটা উন্নয়নশীল দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য।হাতে গোনা কিছু উচ্চবিত্ত এবং ধনী পরিবার ছাড়া অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রীর অবিভাবকদেরই পরিবারের ব্যয় কমিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন পরিশোধ করতে হয়।এ অবস্থায় সরকার শিক্ষা ব্যয় কমানোর পরিবর্তে ভ্যাট সংযোজন করে গরীব মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা গ্রহনে এক মহা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দিল।বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার নামে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।এমনিতেই তারা প্রতিবছর ইচ্ছামত বেতন বৃদ্ধি করে অবিভাবকদের রক্ত শুষে নিচ্ছে-তার উপর এই ভ্যাট এর খড়গ! ভ্যাট এর অযুহাতে ওই সমস্ত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন ছাত্র ছাত্রীদের বেতন বৃদ্ধি করবে প্রদেয় ভ্যাট এর চাইতে কয়েকগুন বেশী-যা অনেক অবিভাবকই দিতে ব্যার্থ হবে,ফলে গরীব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের শিক্ষাজীবন হুমকির সম্মুখীন হবে নিশ্চিত।
শিক্ষা ব্যয় কমাতে সরকারের উচিৎ ছিল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাতে বেতন ও ভর্তি ফি কম নেয় সে ব্যাবস্থা করা।তা না করে উলটো ওই সমস্ত শিক্ষা বেনিয়াদের লাভের পরিমান বৃদ্ধির ব্যাবস্থা করতেই এবং তাদের ধার্যকৃত অমানবিক উচ্চ বেতনকে বৈধতা দিতে সরকার এই ভ্যাট আরোপ করলো।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়েও সরকারী অনুদান দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যয় কমাতে অবিলম্বে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের বেতনের উপর থেকে ধার্যকৃত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানায়।ধিক্কার জানাই এই অনৈতিক এবং পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গিকে।শিক্ষা দেশের ধনী গরীব নির্বিশেষে সকলেরই অধিকার এটা কারও করুনার উপর নির্ভরশীল নয়।বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যনরত অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রীর অবিভাবকগনই গরু ছাগল বিক্রি করে,কৃষি জমি বন্ধক রেখে এমনকি বিক্রী করে তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ বহন করেন একান্ত বাধ্য হয়েই।সরকার যদি সেই খরচকে টার্গেট করে ভ্যাট আরোপ করে তবে সেটা অত্যন্ত লজ্জাজনক!! তাই-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন কমানো এবং বেতনের উপর থেকে ধার্য্যকৃত ভ্যাট প্রত্যাহারের ব্যাবস্থা করতে হবে-শিক্ষা নিয়ে বানিজ্য আর শিক্ষার উপর কর আরোপ কোনো অবস্থাতেই দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থার উন্নয়ন বয়ে আনবে না-বরং আমাদের আগামী প্রজন্ম অশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।আমরা চাই না সরকারের একটা ভূল সিদ্ধান্ত আমাদের সন্তানদেরকে অনিশ্চিত অন্ধকারে নিপতিত করুক।!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:২৬