প্রতিটি দিন মানুষের জীবনে নতুন নতুন জ্ঞ্যান অর্জনের জন্য বিভিন্ন প্রসঙ্গের অবতারনা করে।কেঊ সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহন করে আলোকিত হয় আর কেঊবা তাচ্ছিল্লের অযুহাতে সুকৌশলে এড়িয়ে যায়। যারা চলার পথে প্রতিটি ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের জীবন কে সেই শিক্ষার আলোকে প্রবাহিত করেন মূলত তাঁরাই প্রকৃত জ্ঞ্যানী।আর যারা পারিপার্শ্বিক সমস্ত কিছুকে পাশ কাটিয়ে নিজেকে ঝামেলা মুক্ত বলে মনে করে-তারা যথার্থই আহম্মক,কিন্তু সেটা তারা কিছুতেই স্বীকার করতে রাজী নয়।বোকারা চিরদিনই নিজেকে সবচে বেশী বুদ্ধিমান বলে মনে করে এবং তা প্রচার ও করে।অবস্থা এমন যে কাক এর মত চোঁখ বন্ধ করে পৃথিবীর সকলকে অন্ধ বলে মনে করা।
আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত এমন কিছু অবাঞ্ছিত ঘটনা সঙ্ঘটিত হয়ে চলেছে-যা হয়ত আপাতত সরাসরি আমাদের কোনো ক্ষতির সম্মুখীন করছে না।কিন্তু কে বলতে পারে আগামীদিনে সেই ঘটনাটি আমার নিজের জীবন কিম্বা আমাদের পরিবারকে আক্রমন করবে না?আমার পাশের বাড়ির যে ছেলেটি আজ নেশাগ্রস্থ-যে তার বোনের বিয়ের জন্য বাবা মা'এর অক্লান্ত পরিশ্রমে সঞ্চিত টাকা গহনা চুরি করে সেই টাকা দিয়ে নেশা করে,যে নেশার টাকা না পেয়ে বৃদ্ধ বাবা কে নির্মম ভাবে পেটায়-যখন অপরের বাড়ীতে চুরি করে কিম্বা ছিনতাই করে গনপিটুনী খেয়ে হাসপাতালে পড়ে থাকে। আমরা সমাজের এলিট নামধারী ভদ্র লোকেরা তখন মুখ টিপে হাসাহাসি করি-করি সমালোচনা।যত দোষারোপ করা যায় তার সম্পুর্নই ঐ অসহায় নির্যাতিত পরিবারকে করে থাকি।ব্যার্থতা খুঁজে বের করে ময়না তদন্ত চলে বখে যাওয়া ছেলেটার বাবার চরিত্রকে।সামাজিক ভাবে তাকে হতে হয় চরম লাঞ্ছনা আর লজ্জার স্বীকার।আড়ালে বা প্রকাশ্যে আমরা সমাজপতিরা তাকে জ্ঞ্যান দান করি-ছেলেকে অমুক করো তমুক করো-আগে থেকে সতর্ক হলে তোমার ছেলে এমন হত না ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু ঐ ভুক্তভোগী পিতার দুঃখ যন্ত্রনা থেকে আমরা নিজেরা কি কোনো শিক্ষা গ্রহন করি? আমাদের সন্তানেরা কোথায় যায়-কোন পরিবেশে কার সংস্পর্শে চলাফেরা করে রাখি কি তার কোনো খোঁজ খবর? বরং বুক ফুলিয়ে মুখ উঁচিয়ে গালগল্পে অন্যের কান ঝালাপালা করে দেই-আমার ছেলের মত এমন ভদ্র ছেলে হয় না,সাত চড়ে কথা বলে না-কোনো মেয়ের দিকে চেয়ে দেখে না আর সে এমন ই যে একটা সিগারেট পর্যন্ত টানে না ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ-কয়েকদিন না যেতেই দেখা যায় আমাদের সেই সু-সন্তান কোনো এক মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে-ধর্ষন করে হত্যা করে ফেলে দিয়ে গেছে রাস্তায় বা রেললাইন এ।জানা যায় বছরের পর বছর নেশার টাকা যুগিয়েছে চাঁদাবাজি করে ডাকাতি করে কিম্বা ছিনতাই করে। যে ছেলের বাবা গল্প করে নিজেকে ভাগ্যবান পিতা বলে দাবী করত-তার সেই সন্তান কলেজ ফাঁকি দিয়ে প্রতিনিয়ত আসর জমাত মদ গাঁজা আর জুয়ার। পরিনতি-একদিন সে ধরা পড়ে পুলিশে। তখন ও সেই বাবার গল্প থামেনা।তবে এবারের গল্পের ধরন পাল্টায়-আমার ছেলেটা তো এমন ছিল না! অমুকের বখাটে ছেলের সঙ্গে মেলামেশা করেই সে খারাপ হয়ে গেছে।অর্থাৎ-তখনও সে নিজের ছেলের দোষ ঢাকা দিতেই ব্যাস্ত থাকে। এই পিতা যদি তার প্রতিবেশী ঐ পিতার দুর্দশাকে হাসি তামাশা করে উড়িয়ে না দিয়ে আগে থেকেই সতর্ক হতেন-নিজের সন্তানের প্রতি অন্ধ আবেগে ভেসে না যেতেন,যদি তার চলার পথ কেমন হবে তা শিক্ষা দিতেন এবং সন্তানের গতিবিধির প্রতি লক্ষ রাখতেন তাহলে হয়ত তাকে অন্যার ছেলেকে দোষারোপ করে নিজের মুখ রক্ষা করতে হত না।
এ রকম হাজার হাজার ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত।সমস্ত কিছুর জন্য যে শুধুমাত্র পিতা মাতা ই দায়ী তা কিন্তু নয়।সমস্ত বাবা-মা' ই চান তাদের সন্তান সু-সন্তান হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হোক।তবে সব চাওয়া তো পুর্ন হয় না-সঙ্গদোষ বিরুপ পরিবেশ সর্বপরি পরিবারের উদাসীনতা একটি সন্তাকে করে তোলে হতাশাগ্রস্থ। কখনও কখনও অতি স্নেহ পারিবারিক ঐতিহ্যের দম্ভও সন্তানদের সর্বনাশ করে।তারা হয়ে ওঠে উচ্ছৃঙ্খল ব্যাভিচারি হয়ে যায় বেপরোয়া।তখন আর তাদের অপকর্ম থেকে পরিবার ও রেহাই পায় না।যে কারনেই দেখা যায় ভায়ের হাত ভাই খুন-সন্তান হত্যা করেছে পিতাকে অথবা তুলে নিয়ে গেছে কোনো পরিবারের মেয়েকে বা বউকে।
তাই-আজ যে অপরাধটি সংঘটিত হচ্ছে-সেটাকে তুচ্ছজ্ঞ্যান করে নিজের গা বাঁচিয়ে চলার কোনো অবকাশ নেই।বরং এই অপরাধটিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে নিজের সন্তানদের ভবিষ্যৎ চলার পথ এর দিক নির্দেশনা দিয়ে তাদেরকে সামাজিক শালিনতার শিক্ষা দিতে হবে।মানুষের শিক্ষার শুরু হয় তার পরিবার থেকে।কোনো সন্তান যখন তার পিতাকে কোনো অপরাধের প্রতিবাদ করতে দেখে-সে সন্তান কখনোই সেই অপরাধ এ প্রবৃত্ত হতে উৎসাহিত হয় না।বরং সে নিজেও হয়ে ওঠে প্রতিবাদি। তাই আমাদের সন্তানদের সু-সন্তান হিসাবে গড়ে তুলতেই দরকার নিজেদের মানসিকতার উন্নয়ন করা।দরকার সমাজে সংঘটিত সমস্ত অপরাধের প্রতিবাদ করা এবং একটি অপরাধের পরিনতি সম্পর্কে সন্তানদেরকে শিক্ষা দেওয়া।সন্তানকে আদব শেখানোর কৌশল হিসাবে শাসন এর পরিবর্তে তাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা।অতিমানব হিসাবে নিজের সন্তানকে গড়ে তুলতে শালিনতার অযুহাতে তাকে দূরে সরিয়ে না দিয়ে আমাদের উচিৎ তাদের সঙ্গে বন্ধু ভাবাপন্ন হওয়া এবং তার অন্তরের চাওয়া পাওয়াটাকে গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করে সে মতো ব্যাবস্থা করা।
পরিশেষে বলব-আমরা যদি সচেতন হই-নিজের সন্তান ভাই-বোন সর্বপরি পরিবারের প্রতি মনোযোগী হই এবং পরিবারের সমস্ত সদস্যদের প্রতি খেয়াল রাখি-তাদের গতিবিধি আচরন সম্পর্কে ধারনা রাখি তাহলে অন্তত নিজের পরিবারকে ভয়ঙ্কর কোনো বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারি।এভাবে সমস্ত পরিবারগুলো যদি পরস্পর শ্রদ্ধা ভক্তির ওপর ভর করে পরিচালিত হয় তাহলে নিশ্চয় আমাদের সমাজ থেকে অপরাধ নির্মুল হয়ে যাবে।আমাদের সন্তানেরা আর নেশাখোর হবে না।ধর্ষনের শিকার হবে না আর কোনো নাবালিকা কিশোরী বা যুবতী গৃহবধু।কোনো বাবা-মা'কে আর সন্তানের অকালমৃত্যুর করুন দৃশ্য দেখতে হবে না। আমরা কি পারি না আমাদের সমাজকে রক্ষা করতে আমাদের প্রিয় সন্তানদের সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে জ্ঞ্যানের আলোয় আলোকিত করে গড়ে তুলতে?নিশ্চই পারি-শুধু দরকার একটু সৎ সাহস দরকার ভাল কিছু করে উদাহরণ সৃষ্টি করবার পবিত্র মানসিকতা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২৯