অপূরনীয় ক্ষতি-ত্রিশ লক্ষ শহীদের প্রান কয়েকলক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম,অবর্ননীয় দুঃখ দুর্দশা-সন্তান হারা মা আর স্বামী হারা স্ত্রীর বুকফাটা আর্তনাদ-হারিয়ে যাওয়া ভাইয়ের জন্য বোনের আর বোনের জন্য ভায়ের হাহাকার-কোটি কোটি বাঙ্গালীর চোঁখের জলের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা। বাল্যকাল পেরিয়ে কৈশোর কে পিছনে ফেলে আজ যৌবনে উপস্থিত।ধুঁকে ধুঁকে এক-পা দু-পা করে চলতে চলতে আজ বহুদুর এগিয়ে গেছে।সময়ের সাথে সাথে শুন্য ভান্ডারে জমা হয়েছে অনেক ব্যার্থতা-অনেক সফলতা।প্রাপ্তির দিক থেকে আমরা ব্যার্থতার চেয়ে রয়েছি অনেক এগিয়ে।সাফল্য এসেছে এ দেশের সাধারন মানুষের রক্ত আর পরিশ্রমের ঘামের বিনিময়ে।ব্যার্থতা যা কিছু তার সবটাই রাজনৈতিক!
বাংলার কৃষক শ্রমিক সহ সাধারন মানুষের চাওয়া পাওয়া ও খুবই সাধারন।রাষ্ট্র তাদের কি দেবে-কি তার প্রাপ্য রাষ্ট্রিয়ভাবে তার হিসাব কখনোই করেনি এ দেশের মানূষ।বাঙ্গালী পরিশ্রমি-শ্রম দিয়ে তারা নিজেদের দু-বেলার খাবার জোগায়।আমরা এ দেশের জনগন রাষ্ট্রের কাছে শুধু চাই সুস্থ্য ভাবে বেঁচে থাকার সামান্য নিরাপত্তা।চাই সারাদিনের পরিশ্রমের পরে আধপেট খেয়ে একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে।আর এই সামান্য চাওয়াটার জন্যই বাংলার কৃষক মজুর থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ত সকল শ্রেনীর মানুষ তাদের মুল্যবান জীবন উৎসর্গ করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল।জীবনের বিনিময়ে স্বাধীন করেছিল মাতৃভুমি বাংলাকে।কিন্তু পরাধীনতার শেকল থেকে যেন কিছুতেই আমাদের মুক্তি নেই।স্বাধীন দেশে তাই এখনো আমরা দুর্বিসহ নরক যন্ত্রনা ভোগ করে চলেছি।আমরা প্রতিনিয়ত এক ভয়াবহ আতংক নিয়ে সময় অতিবাহিত করে চলেছি-যা থেকে রাষ্ট্র আমাদের রক্ষা করতে বরাবরই ব্যার্থ হয়েছে।
সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-মৌলবাদ সব সময় তাড়া করে ফেরে।একেক সময় একেক সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে আমাদের বেঁচে থাকাটাকে দুর্বিসহ করে তোলে।চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি ফতোয়াবাজী অবৈধ ভর্তিবাজী ইত্যাদির সঙ্গে অতিসম্প্রতি বাংলার নীরিহ জনগনের মধ্যে নতুন এক আতংকের আবির্ভাব হয়েছে। যার নাম ধর্ষন। একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান তার সম্ভ্রম।টাকা পয়সা ধনসম্পদ হারালে আবার নতুন করে ফিরে পাওয়া যায়-কিন্তু নারীর সম্ভ্রম হারালে তা ফিরে পাওয়ার কোনো উপায় থাকে না।একজন ধর্ষিতা নারীকে সারাজীবন তার ক্ষতির বোঝা বয়ে বেড়াতে হয়।সমাজ তাকে ঘৃনার দৃষ্টিতে দূরে সরিয়ে রাখে-যা হওয়া উচিৎ একজনের ধর্ষকের।অথচ কোনো ধর্ষক ই কখনো কারো ঘৃনার পাত্র হয়েছে বলে জানা যায় না-বরং বুক ফুলিয়ে মাথা উঁচিয়ে এমন ভাবে সমাজে চলাফেরা করে যেন বিশ্ব জয় করে ফিরেছে।বিপরীতে লাঞ্ছিতা নারীটি পরিচিত হয় নষ্ট মেয়ে হিসাবে।অতিসম্প্রতি আমাদের দেশের একটি নিরপরাধ বালিকা মেয়ে গনধর্ষনের শিকারে পরিনত হলে তার পরিবার এমনকি তার বাবা তাকে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দেয়।পুরুষতান্ত্রিকতার এ এক নির্মম উদাহরণ।
আজ সারা দেশের বিবেকবান মানুষেরা ধর্ষনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াচ্ছে,তারা যে যেখান থেকে সম্ভব প্রতিবাদ করছে-আন্দোলনের ডাক দিচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন।কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়-আমাদের সমাজপতিরা এ বিষয়ে একেবারেই নীরব।দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের কোনো নেতা নেত্রী এখনো পর্যন্ত ধর্ষনের ব্যাপারে তাদের কোনো মন্ত্বব্য করেনি।আমাদের প্রধানমন্ত্রী-বিরোধী নেত্রী-পররাষ্ট্রমন্ত্রী-সংসদ উপনেতা-সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্বপরী নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রী সকলেই নারী। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও এক বা একাধিক ধর্ষনের ঘটোনা ঘটে চলেছে কিন্তু তারা সকলেই কোনো এক রহস্যময় কারনে একেবারেই নিশ্চুপ! যে প্রধান্মন্ত্রী জাতিসঙ্ঘে শান্তির রুপরেখা উপস্থাপন করেছেন-তিনি কেনো এখনো ধর্ষনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাঁর শান্তির মানবিকতার পরিচয় দিচ্ছেন না?তিনি কেনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দিচ্ছেন সমাজের ক্যান্সার নরাধম ধর্ষকদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যাবস্থা নেয়ার? না কি ঐ সমস্ত নরকের কীটেরা প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও বেশী ক্ষমতাধর!?
আমাদের দেশে যখন যারা বিরোধীদল এ থাকে তখনি তারা কথায় কথায় হরতাল অবরোধ লংমার্চ মানব বন্ধন অনশন ইত্যাদি কর্মসুচি দিয়ে দেশের জনগনের বারটা বাজিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করে।বর্তমান বিরোধীদলও বাড়ীর জন্য গাড়ির জন্য জেল থেকে মুক্তির জন্য সর্বপরি আগামীতে ক্ষমতায় যাবার জন্য অসংখ্যবার জ্বালাও পোড়াও বাসে আগুন দাও-বোমাবাজি করে মানুষের ঘুমা হারাম করে দাও করে আন্দোলন করে চলেছে।কিন্তু একবারের জন্যও দেশের জনগনের জন্য কোনো আন্দোলন করেনি। এই মুহুর্তে তারা কি পারত না ধর্ষনের বিরুদ্ধে একটা আন্দোলনের ডাক দিতে? পারত না কি একটা হরতাল আহ্ববান করতে? অন্যায় দাবি নিয়ে রাস্তায় যাওয়ার চেয়ে ধর্ষনের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকলে এ দেশের জনগন স্বতস্ফুর্ত ভাবে তাদেরকে সমর্থন দিত।অথচ বিরোধীদল এখন ব্যাস্ত কিভাবে স্বীকৃত ধর্ষক ও খুনী যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা যায় সে ব্যাবস্থা করতে।ভাবতে কষ্ট হয়-তাহলে কি উনারা ধর্ষন কে রাষ্টিয়ভাবে বৈধতা দিতে চান?তা যদি না হয়-তবে কেনো এই নীরবতা!?
নীরব আছেন আরো অনেকেই। কারনে বা অকারনে সে সুশীল সমাজ জ্ঞ্যান দিতে দিতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন সেই সুশীলেরা আজ কোথায়? তাদের কেনো দেখা মিলছে না? মানবাধীকার চুলায় গেলো বলে যারা বিদেশী টাকায় দামি গাড়ী হাঁকিয়ে বেড়ান দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে-তারা সব হঠৎ করে গায়েব হয়ে গেছেন?ধর্ষন কি তবে তাদের দৃষ্টিতে মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? আর আমাদের জ্ঞ্যানভান্ডার সাংবাদিকেরা-যাদের সামান্য অধিকার ক্ষুন্ন হলে ক্যামেরা কলম রাস্তায় রেখে প্রতিবাদ করেন,তারা কি শুধু ধর্ষনের সংবাদ যোগাড় করে সংবাদ পত্রের কাটতি নিশ্চিত করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করে চলেছেন? বুঝিনা এতোবড় একটা সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে কেনো এ দেশের কম্যুনিষ্ট;রাও নিজেদেরকে খোলশের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছেন!যে সমস্ত আইনজীবী কথায় কথায় আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন তারা কি ভুলে গেছেন সমাজের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতার কথা? নাকি উনারা কেবল রাজনৈতিক নেতাদের লেজুড়বৃত্তিতেই ব্যাস্ত যাতে আগামীতে এম পি মন্ত্রী হতে পারেন?
জানি স্বার্থ ছাড়া আমাদের রাজনীতিক সাংবাদিক আইনজীবী সুশীলসমাজ কিম্বা মানবিধার কর্মি কেও এক পা'ও এগুবে না।কিন্তু সবার বাইরেও এ দেশের সাধারন জনগন আছে।অত্যাচারিত নিপিড়িত জনগন একদিন নিশ্চয় ঘুরে দাঁড়াবে তাদের বেঁচে থাকার অধিকার রক্ষার জন্য।নিজের সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে নিরাপদে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার পরিবেশ বিনির্মানে তারা রাস্তায় বেরিয়ে আসবে।সেদিন ঐ সমস্ত ধর্ষক ও তাদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতাদের খুঁজেও পাওয়া যাবে না।তারা পিছু হঠতে বাধ্য হবে। আর আজকের নীরব দর্শক রাজনৈতিক নেতাদের সেদিন পালাবার পথ থাকবে না।
আমরা সাধারন জনগন জান দেব মান দেব চাঁদা দেব আবার ভোট ও দেব তা তো হতে পারে না!বর্বর অমানুষ ধর্ষকদের রক্ষা করে বাঙ্গালী জাতি কে ধর্ষকের জাতিতে পরিনত করে যারা দেশটাকে প্রতিনিয়ত ধর্ষন করবার স্বপ্ন দেখছে-তাদের প্রতি জানাই হাজার হাজার ধিক্কার-আমি তাদের ঘৃনা করি ওদের মুখে থুথু দেই-থু!