মাঝরাত্রি,ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক,নিকষ কালো অন্ধকার,বন্ধ দরজা।আমি বসে আছি,চেয়ারে।। সামনে, টেবিলে আধপোড়া মোম জ্বলছে,সেইসাথে নিজেকে বিলীন করে দিচ্ছে উদ্ভাসিত আলোয়।আর মোমের ধ্বংসাবশেষ গড়িয়ে পড়ছে টেবিলে।আমি? আমি এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছি জ্বলন্ত মোমবাতির দিকে। আর আত্মমগ্ন হয়ে স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছি আমার বিচ্ছিন্ন জীবনের।।
"কেমন আছ?"
গুরুগম্ভীর গলার আওয়াজ শুনে তাকালাম চারদিকে। অন্ধকার ঘর, আর মধ্যেখানে টেবিলে মোম নিয়ে আমি বসে আছি।তাই মনে হওয়া অসম্ভব না যে কেউ অন্ধকার ঘরের কোণে লুকিয়ে আছে। আমারও তাই মনে হচ্ছে।
আমি প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করলাম, "কে ওখানে?"
উত্তর এল, "আমি কেউ নেই।আমি তোমার সত্তারই এক বিচ্ছিন্ন অংশ।"
আমি ভাবলাম একাকীত্ব আমার মানসিক অবস্থা অস্থিতিশীল করে তোলেছে। আমি ভুল শুনছি। কিন্তু একাকীত্বের তাড়নায় আমাকে কথা বলতেই হল। বললাম, "সত্যিই কি তাই?"
উত্তর এল, " হ্যাঁ,সত্যিই। প্রমাণ চাও?"
বললাম, "হ্যাঁ চাই।দিতে পারবে?
"গম্ভীর কন্ঠের দ্যোতনায় প্রকাশিত হতে লাগল এক অপ্রকাশিত সত্য ,"মনে পড়ে কি সেই ঘটনা? আরশি নামের মেয়েটির লাশকে চৌদ্দ টুকরো করে ভাসিয়ে দিয়েছিলে বুড়িগঙ্গায়? সমস্ত বুড়িগঙ্গা নদী জুড়ে ফেলে দিয়েছিলে লাশের একেকটি টুকরো।
প্রথমে ফেলেছিলে মেয়েটির ডান হাতটি।মনে পড়ছে?? বেছে বেছে ওকেই শিকার করলে। ভেবেছিলে মেয়েটি ভার্সিটিতে নতুন এসেছে। একটি মেসে থাকে। ঢাকার কাউকেই চেনে না।তার উপর অনাথ মেয়ে।আত্মীয় বলতে তো শুধু ওর এক দূরসম্পর্কের মামা। যাকেও তুমি খুন করেছিলে। তোমাদের বিয়ের দু দিন পরে।
তুমি জানতে যে মেয়েটিকে বিয়ে করা ছাড়া ভোগ করতে পারবে না। তাই মিছিমিছি বিয়ে করেছিলে।কাজীকেও টাকা খাইয়ে ব্যাবস্থা করে রেখেছিলে। তুমি সফল হয়েছিলে।মেয়েটিকে ভোগ করার পর ওর লাশের টুকরোর সঙ্গে ওকে জড়ানো সব জিনিসও তুমি বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়েছিলে।
তোমার পরিকল্পনা সফল হয়েছিল। কেউ খোঁজ নেয়নি হঠাৎ করে কেন একটি মেয়ে গায়েব হয়ে গেল।তুমি কোন প্রমাণ রাখনি। তাই তোমার পাপের একমাত্র সাক্ষী ওই নিরব বুড়িগঙ্গা।আর মৃত ওই মেয়েটি। এখন তো বিশ্বাস হচ্ছে?"
আমি ভীত হলাম। অপ্রকাশিত সত্যের তীব্রতা আমার শিরদাঁড়া বেয়ে ঝড়ের মত ছুটল।ভয়ের দমকা হাওয়া আমাকে স্পর্শ করল যেন। গায়ের রোমগুলো কাঁটা দিয়ে ওঠলো।
কাঁপা কন্ঠস্বরে জিজ্ঞেস করলাম, "কি চাও তুমি?কি জন্যে এসেছ?"
কন্ঠ পরিবর্তিত হয়ে ধাতব শীতল শোনাল, " তোমার একাকীত্বের সঙ্গী হতে এসেছি।"
মনে সাহস সঞ্চার হল।বুঝলাম, এটা আমার ক্ষতি করতে আসে নি।
পাশাপাশি আমার একাকীত্বের সঙ্গীর প্রতি কৃতজ্ঞতায় চোখে জলের অস্তিত্ব অনুভব করলাম। শেষ মেশ কেউ একজন তো এসেছে আমার একাকীত্বের সঙ্গী হতে। যদিও ওকে কৃতজ্ঞতা জানানোর কোন ভিত্তি নেই।ও আমার সত্তারই একটি ছিন্ন অংশ মাত্র। আরো ভালো করে বলতে গেলে, আমার মস্তিষ্কের কল্পনাপ্রসূত সত্তা।
কিন্তু তবুও এতদিনে একাকীত্বের সঙ্গী এসেছে।আমার দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটেছে।হোক না সে আমার কল্পনা।তাতে কি আসে যায়? জানি এখন কথোপকথন ধীরে ধীরে এগোবে। ধীরে ধীরে ওকে আমি শুধু রাতে না দিনেও শুনতে পারব।ও হয়ে ওঠবে আমার অত্যন্ত বিশস্ত একাকীত্বের সঙ্গী।।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৫:৩০