দুপুরবেলা। ঘুম পাচ্ছে। ঘুমাব। তার আগে দু'টি কথা। প্রথম হচ্ছে, ভাতঘুম টার্মটা তো সবাই জানেন। ভাতঘুম যে শুধু বাংলাদেশে প্রচলিত তা না। ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে মানুষজন দুপুরবেলা ঘন্টা দুয়েক ঘুমিয়ে তারপর আবার অফিসে যায়। ২০০৬ এ MPH পড়বার সময় আমার Bolivian বন্ধু Ramiro LLanque যখন অবধারিতভাবেই দুপুরের পর ক্লাসে ঘুমিয়ে যেত তখন তার কাছ থেকে এই ল্যাটিন ভাতঘুমের কথা জানতে পারি। সে তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর, এবং দুপুরে ঘুমানো যে সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা বাড়ায় তা ওর কাছ থেকেই জানতে পারি।
শেখ হাসিনা সরকার যখন প্রথম সরকারি ছুটি দুইদিন ঘোষণা করলেন তখন প্রচুর প্রতিবাদ হয়েছিল যে আমাদের মতো গরীব দেশে সপ্তাহে প্রতিদিন কাজ করা উচিৎ, সাপ্তাহিক ছুটি ২দিন তো দূরের কথা। আমার আব্বা তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং উনিই প্রথম বলেছিলেন এটা খুব ভাল সিদ্ধান্ত। সরকারি অফিসে এমনিতেও কাজকর্ম তেমন হয় না। যারা করার তারা বাসায় বসেও করে। বরঞ্চ সাপ্তাহিক ছুটি ২দিন করাতে সরকারের ডিজেল খরচ অনেক কমবে।
আমার অফিসে মহিলাদের নামাজ পড়বার এবং অসুস্থদের বিশ্রাম নেবার জন্য বারান্দা বন্ধ করে একটা জায়গা করা হয়েছে। যেহেতু আমি রাতে জেগে থাকি তাই দিনে আমার সারাক্ষণই ঘুম পায়। আমাদের অফিসে নামাজ পড়া মহিলা খুবই কম এবং বেশিরভাগই অসুস্থ থাকলে বাসায় থাকে তাই সুযোগ পেলেই আমি মাঝে মাঝে সেই অন্ধকার বারান্দায় গিয়ে ঘুমিয়ে থাকি। আধাঘন্টার ঘুমের পর আমার কাজের গতি বেড়ে যায় ৩গুন!
দুপুরের ভাতঘুমের উপকারিতা নিয়ে আমার কখনই কোন সন্দেহ ছিল না। তবে আজকের পর তা আরও বদ্ধমূল হয়েছে। ল্যাটিন আমেরিকার ৫টি দেশ, যে দেশের মানুষেরা ঐতিহাসিকভাবেই ভাতঘুমে অভ্যস্ত সেই দেশগুলি অর্থাৎ ব্রাজিল, চিলি, ইকুয়েডর, পেরু এবং এল সালভাদর ইজরায়েল থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করেছে। দুপুরে ভাতঘুমে অভ্যস্ত মানুষেরা যে সঠিক সিদ্ধান্ত সাহসীভাবে নিতে পারেন তা এই ৫টি দেশ প্রমাণ করেছে।
যাই এখন ভাতঘুম দেই। আশা করি ১ কেজি মিষ্টি কিংবা ২ ডজন কলা হাতে নিয়ে আগের থেকে না জানিয়ে গ্রাম থেকে হঠাৎ করে আত্মীয় চলে আসা দিনগুলোর কথা ভুলে যান নি কেউই!
শুভ ভাতঘুম দুপুর। সন্ধ্যা ৭টায় গুলশানের অলিতে গলিতে দেখা হবে।
শামীম আহমেদ
নিকেতন, ঢাকা
১ আগস্ট, ২০১৪।
https://www.facebook.com/shamimahmedjitu