তাঁরা শেয়ারবাজার লুট করেননি, মানুষের টাকা মেরে দেননি, কাউকে গুম করেননি, কারও স্বপ্ন খুন করেননি। তাঁরা বিএনপি না, তাঁরা জামায়াতও না। তাঁদের হাতে ককটেল নেই, লগি-বৈঠা নেই, বাহুতে ঢিল মারার শক্তিও নেই। তাঁরা আগুন দিতে যাননি, গালি দিতে যাননি, এমনকি স্লোগান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের শান্তিও নষ্ট করতে যাননি। তাঁরা শুধু তাঁদের অভাব-অভিযোগের ক...থা লেখা একটি কাগজ প্রধানমন্ত্রীর অফিসে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন।
পুলিশ তাতেই দানব হয়ে ওঠে। ১৫ মে ২০১২। শাহবাগে জলকামানের তোড়ে রাস্তায় উল্টে পড়েন বৃদ্ধ, শীর্ণ কিংবা ক্লান্ত শিক্ষক। মোটা লাঠি হাতে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয় কয়েকজনকে।
পুলিশের মার খেয়ে আহত হয়েছেন কয়েকজন। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে মারা গেছেন লাঞ্ছিত একজন শিক্ষক। এই শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ৪১ বছর আগে দেশকে স্বাধীন করার জন্য তিনি যুদ্ধ করেছেন। ৪১ বছর পর তাঁরই গড়া স্বাধীন দেশের পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন তিনি। এই দুঃসহ গ্লানি বহন করা হয়তো সম্ভব ছিল না তাঁর! তিনি চলে গেছেন অন্য এক ভুবনে।
নিশ্চয়ই তাঁর এভাবে মরে যাওয়া উচিত হয়নি, ভুখানাঙা শিক্ষকদের সঙ্গে থাকাও উচিত হয়নি। তাঁর থাকা উচিত ছিল সমুদ্রজয়ের সমাবেশে কিংবা হরতালবিরোধী মিছিলে! তাই তাঁর মৃত্যুতে কোনো মন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করেননি, বুদ্ধিজীবীরা বিবৃতি দেননি, কেউ আদালতে রুল চাইতে যাননি! তিনি যখন হাসপাতালে, এমনকি আমাদের ‘প্রলেতারিয়েত’ শিক্ষামন্ত্রী তাঁকে দেখতেও যাননি। এই ‘বোকা’ শিক্ষককে নিয়ে আর কিছু লেখার মতো নেই।