গল্প নম্বর ১
প্রথমেই একটি দুর্দান্ত স্যাটায়ারের কথা বলা যাক। বলা যাক, আপনার কর্পোরেট জীবনের হৃদয়হীনতার কথা। শোনা যাক, শহরের নির্মমতার আদ্যোপান্ত। নাগরিক ব্যস্ততার কিংবা উপেক্ষার সাতসতের। মনে করা যাক, মায়ের কথা। মৃত্যুর বিরুদ্ধে একটু প্রতিবাদ করা যাক। শহুরে নিয়মের মুখে লাথি মেরে চলে যাওয়া যাক সবুজ গ্রামে। যেখানে এখনোও ভোর হলে পাখি ডাকে।
সব মিলিয়ে দারুণ একটি গল্প। লিখেছেন ব্লগার হাসান মাহবুব। গল্পের নাম ‘দয়া করে বৃহস্পতিবারে মরুন’।
এটা কেমন কথা? বৃহস্পতিবারে কেন মরতে হবে? গল্পের কথাতেই বলা যাক,
কারণ এর পরে দুটো ছুটির দিন আছে। ফলে আপনি অসুস্থ হলে বা মারা গেলে আপনার শোকসন্তপ্ত পরিবার/রুমমেট শোকের ধকল কাটিয়ে নেবার সময় পাবেন, অথবা হাসপাতালে সারারাত ছোটাছুটি করতে হলে তারা পরের দুইদিন বিশ্রাম নিয়ে সতেজ হয়ে কর্মস্থলে যোগদান করতে পারবেন। এভাবে আপনার মৃত্যু বা অসুস্থতা বৃহস্পতিবারে সংঘটিত হবার ফলে রবিবার থেকে সবাই শোক এবং ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে কর্মস্থলে যোগ দিয়ে সার্বিক উন্নয়নে সহযোগিতা করতে পারবেন।
তাই শহরে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে দয়া করে বৃহস্পতিবারে মরুন। দেয়ালে দেয়ালে সেটে দেওয়া হয়েছে পোস্টার। মৃত্যুর অথবা অসুস্থতার মতো একটি অনাকাঙ্ক্ষিত আকস্মিক বিষয়কেও সময়ের মধ্যে বেঁধে ফেলতে চায় নগর কর্তৃপক্ষ। কর্পোরেট নিয়মে মানুষের মৃত্যুকেও নির্দিষ্ট করে দিয়ে চায় একটি নির্দিষ্ট দিনে। অন্য কোনোদিন অসুস্থ হওয়া যাবে না। অসুস্থ হলেও তা প্রকাশ করা আইনত দণ্ডনীয়। আপনাকে পুলিস এসে ধরে নিয়ে যাবে। জেল হবে। জরিমানা হবে। সমাজে আপনার সারফেস ভ্যালু কমবে। শহুরে জীবনে অভ্যস্ত মানুষ তাই নগর কর্তৃপক্ষের এ ধরনের চিন্তাকে একটা চমৎকার সুপারিশ হিসেবেই দেখছেন। গল্পের ভাষায়,
শহরের মানুষজন এই অদ্ভুত দীর্ঘ পোস্টার দেখে চমকে গেলেও কর্মজীবী মানুষেরা ধাতস্থ হয়ে ঠান্ডা মাথায় বিবেচনা করে এতে নগর কর্তৃপক্ষের প্রজ্ঞাই দেখতে পান। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক দৈন্যের কথা চিন্তা করলে এটি চমৎকার একটা সুপারিশ। আর নগরায়নের সাথে সাথে সাম্পর্কিক বিচ্ছিন্নতা বাড়তে থাকার ফলে পরস্পরের প্রতি যে সামাজিক অনাস্থা তৈরি হয়েছে তার উপশমের জন্যে বৃহস্পতিবারকে মরণ বা অসুস্থতা দিবস হিসেবে পালন করলে সামাজিক দায়িত্ব পালনে কুণ্ঠা থাকবে না, উপরন্তু পারস্পরিক সম্পর্কটা ঝালাই করে নেবার একটা ভালো উপলক্ষ্য হতে পারে সেটা। অবশ্য বেকার এবং অকর্মণ্য মানুষেরা, মূলত বৃদ্ধেরা এই বিজ্ঞপ্তি দেখে ভীষণ অসন্তোষ প্রকাশ করা শুরু করলেন। তারা এক ঝটিকা মিছিল করে মৃতবন্ত শ্লোগান দিয়ে এক সমাবেশের আয়োজন করেন। সেখানে তাদের উদ্যোক্তা বলেন,...
কি বলেন – সেটা জানতে হলে আপনাকে ঘুরে আসতে হবে গল্পটি থেকে। মাথা থেকে সবচিন্তা ঝেড়ে ফেলে ঘুরে আসুন অদ্ভুত এই গল্পের বাড়ি থেকে। যার প্রতিটি বাক্যের পরতে পরতে গতিশীল নাগরিক জীবনের নির্মমতার চিত্র। রুঢ় জীবনবাস্তবতা। প্রতিবাদ। আক্ষেপ। আর অবশেষে সব ছিঁড়ে ছেনে সবুজের দিকে ফিরে যাওয়া।
আবারো বলি, একটি দুর্দান্ত স্যাটায়ার। অবশ্যপাঠ্য।
গল্পের লিঙ্কঃ দয়া করে বৃহস্পতিবারে মরুন
গল্প নম্বর ২
আচ্ছা ধরুন, আপনি একজন শিল্পী। একজন আঁকিয়ে। অথবা একজন কবি। আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন আপনার কবিতা বা আপনার আঁকা ছবি কিংবা ভাস্কর্যটির যদি প্রাণ থাকতো তাহলে সে আপনাকে কিভাবে দেখতো?
মনে করুন গ্রীষ্মের কোনো এক রাতে আপনার আঁকা ছবিতে টেনে দিলেন তুলির শেষ আঁচড়। আর সঙ্গে সংগেই প্রাণ পেয়ে জীবন্ত হয়ে উঠলো ছবিটি। আমরা ছবি আঁকি এবং সেটি নিয়ে কথা বলি। বর্ননা করি। প্রকাশ করি। কিন্তু উল্টোটা যদি হয়। যদি ছবিটিই শিল্পীকে প্রকাশ করতে শুরু করে, ভালোবাসতে শুরু করে তখন?
‘কোন গ্রীষ্মের এক রাতে আমার চোখে কাজলের শেষ টানটুকু এঁকে দিলে। ধীরে ধীরে চোখ মেললাম। খুব কাছাকাছি একটি শুষ্ক মুখ। অনেকদিন শেভ না করা মুখে দাড়ি-গোঁফের প্রাবল্য। ভারি চশমার আড়ালে স্বপ্নময় একজোড়া শিল্পীর চোখ। সেই রাতে তীব্র বাতাস বইছিল, লু হাওয়ার মত, খোলা জানালা দিয়ে তপ্ত বাতাস ঘরের পাতলা শাদা পর্দাগুলোকে উড়াচ্ছিল খুব। তুমি ব্যস্ত ছিলে, গভীর মনোযোগে আমার চিবুকের নিচে গলার কাছাকাছি মুখ এনে তীক্ষ্ণচোখে কিছু দেখলে, তর্জনির নখ দিয়ে মৃদু খোঁচালে সেখানে, তারপর আঙুলের মাথার আলতো স্পর্শে মসৃণ করে দিলে। তোমার নিঃশ্বাসে আমার বুকের ভেতরের কোথাও কাঁপছিল। নিথর হয়ে ছিলাম, কিন্তু সোনালি চিবুকে একছুটে কিছু গোলাপী আভা এলো। তোমার মুগ্ধচোখ দেখলাম তখন- জানালা বেয়ে পিছলে আসা সোডিয়াম লাইটের আলো জোৎস্না বলে ভ্রম হয়, নিমগ্ন চন্দ্রমায় গালে আঙুল ছুঁয়ে বললে, "তুমি সুন্দর।" কোন চিন্তাভাবনা ছাড়াই, হঠাৎ করেই সেমুহুর্তে, তোমাকে অনুমতি দিয়ে দিলাম আমার মনের উপর দখলদারিত্বের।'
তারপর?
তারপরের ঘটনা জানতে হলে আপনাকে ঘুরে আসতে হবে ব্লগার বৃতির ‘তুমি কি কেবলই ছবি’ গল্পটি থেকে।
গল্পটিতে শব্দচয়নের মুন্সিয়ানা আছে। আছে অনুভূতির সারাৎসার। আছে কঠিন কঠিন কিছু বাক্য যা দ্বিতীয়পাঠ দাবী করে। এবং আছে খুবই সহজ অথচ হৃদয়ছোয়া কিছু বর্ননা। বাক্য বুনন মনোমুগ্ধকর। যেমন,
পৌরাণিক কাহিনী, প্রাচীন বইয়ের স্তবক অথবা একুশ শতকের গতানুগতিক ক্ষয়িষ্ণু এক শহরের প্রান্তসীমায় ছোট এক ঘর- যেখান থেকেই আমাদের নতুন পথ চলা শুরু হোক না কেন- আমি নিশ্চিত, অতীতে আমাদের কখনো দেখা হয়েছিল। কোনোকালে, কোন একসময় আমরা অবশ্যই একসাথে পথ চলেছি। শাদা ফেনা হয়ে উত্তাল সমুদ্র-তরঙ্গের সাথে, বালুময় মরুপথে কিংবা তারাখচিত সৌরপথে। এক নিরবচ্ছিন্ন সুরভিত পথে দুজন একসাথে হেঁটেছি কোন একদিন।
না, থাক। আর বলবো না। আপনি বরং গল্পটি পড়ুন আর অপার আনন্দ লাভ করুন। একটি ভালো গল্প দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় পাঠে আরো চমৎকার একটি অভিনিবেশ নিয়ে পাঠকে মুগ্ধ করে – ‘তুমি কি কেবলই ছবি’ তেমনই একটি ভালো গল্প।
গল্পের লিংকঃ তুমি কি কেবলই ছবি
গল্প নম্বর ৩
ভেবে দেখুন, আব্দুর রউফের ছেলের ঘুষ নাই। কী মর্মান্তিক!
আমি জানি, আপনি অবাক হচ্ছেন। ঘুষ নেই এটা কোনো কথা হলো। আজকাল একটু আকটু উপরি না হলে কি আর চলা যায়? তাই এখন আপনি চান ঘুষ দিয়ে চাকরিতে ঢুকতে এবং চাকরিতে ঢুকে ঘুষ খেতে।
হ্যাঁ, বলছিলাম। ব্লগার আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলামের ‘ঘুষ’ গল্পটির কথা। তিনি শুরু করেছেন এভাবে,
ধরুন, চাকরি করতে করতে কোন কারণে আপনার চাকরি চলে গেল (আল্লাহ না করুন), তখন আপনি কী করবেন? আর একটা চাকরি জোগাড়ের চেষ্টা করবেন অথবা ব্যবসা বানিজ্য করার চেষ্টা করবেন। এই তো? নিশ্চয় কোন খারাপ কাজ করে রোজগারের চেষ্টা করবেন না। কেউ কেউ যে এমন খারাপ কাজ করেন না, তা’ নয়। অভাব অনটনে পড়ে ফেরেশতার মতো মানুষকেও আমি শয়তান হয়ে যেতে দেখেছি। কিন্তু আমার বন্ধু আব্দুর রউফ এই তিনটি কাজের একটিও না করে তিরিশ বছর বহাল তবিয়তে ছিল। কীভাবে, শুনবেন?
শুনতে হলে ঘুরে আসুন ‘ঘুষ’ গল্পটি থেকে।
একটি দারুণ গল্প। গল্পের আদলে বাস্তবতা। জীবনের রূঢ় অলিগলি। দূর্গন্ধময় ডোবা। গল্পটির বর্ননাভঙ্গি অসাধারণ। নাতিদীর্ঘ এই গল্পটার দারুণ একটা মোহ আছে। পাঠক আবিষ্ট হবেনই। আর সেই সাথে জানবেন কিভাবে -
১৯৮৩ থেকে ২০১৩ মাত্র ত্রিশ বছরে গণেশ উল্টে গেছে।
গল্পের লিংকঃ ঘুষ
গল্প নম্বর ৪
রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল আম গাছটা অনেক আগেই তার যৌবন হারিয়েছে । এক আকাশ বিস্তৃত ডালপালা আর ঘন কালচে সবুজ পাতার অরণ্যে মাত্র দু'চারটা আম লিকলিক করে ঝুলছে । পাড়ার দস্যু ছেলেদের ছোঁড়া মাটির ঢেলার নিখুঁত ঢিল ঝপাৎ করে শব্দ তুলে ব্যর্থ মনোরথে ভূ-পৃষ্ঠে ফিরে আসে, গাছের আম দেখার ভাগ্য তাদের কদাচিৎ হয় । বিশাল বেড়ের এই গাছ বেয়ে উঠাও কম ঝক্কি নয় । ভেজা মরা বাকলে শ্যাঁওলা জমে একেতো পিচ্ছিল, তার উপর গোছাগোছা পরগাছা আর মরা ফার্নের আড়ালে চোরাই কোটরে গিরগিটি আর সাপের বাসা । পক্ষীকুলের ঠোকর খাওয়া কোন আম যখন বাতাসে ঝরে পড়ে, ছেলেপুলেদের মাঝে শুরু হয় কাড়াকাড়ি ।
শুরুটা এমনই। শীতের সকালে কুয়াশামাখা পথ ধরে হেঁটে যাওয়ার মতো মনোরম একটি আরম্ভ। স্পষ্ট চিত্রকল্প। গল্পের নাম ‘জীবনের সপ্তসুর’। লিখেছেন ব্লগার মামুন রশিদ।
শৈশবের দুরন্তপনার বর্ননাতে আপনি যেন নিজেকেই দেখতে পাবেন এই গল্পের প্রথমভাগে। মাঝহাটির মন্নার। আর আলোই নামের একটি মেয়ে।
শাঁকের ঝুড়িটা এক পাশে রেখে মেয়েটা মন্নারের দিকে খিস্তি ছুড়ে, 'ঐ হারামজাদা বিতলা পুলা, হের ঘুড্ডি নিছস ক্যান?' গালি শুনেও মন্নার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করেনা, গলায় ঝুলানো চাকু দিয়ে একমনে পুরনো আমের আঁটি ঘষতে থাকে । আলোই সময় নষ্ট না করে দুহাতে থুথু ছিটিয়ে পাঞ্জা ঘষে লাফ দিয়ে গাছে চড়ে ।
নিখাদ শৈশব। দস্যিপনা। রাগ, ক্রোধ। নিস্পৃহতা। এক ধরণের চেনা অনুভূতি।
বর্ষায় গ্রামের শীর্ণ খাল নতুন পানিতে ভরে উঠে । ভরদুপুরে সেখানে আমরা দাপিয়ে বেড়াই । পায়ের কাছে গর্ত করে হাত দিয়ে পানি টেনে সেই গর্ত থেকে চ্যাং আর মিনি মাছ ধরি । খালের পানি শুকিয়ে এলে কাদা থেকে শিং মাছ ধরার উৎসব লেগে যায় । শিং মাছের কাঁটা ফুটলে খুব ব্যথা হয় । কিন্তু এই কাঁটায় আলোইর কিছুই হয়না, পাতিল ভর্তি শিং মাছ ধরে নাচতে নাচতে সে ঘরে ফিরে ।
ঘরে তার ল্যাংড়া বাপ জইল্যা।
কে এই জইল্যা? কি করতো সে? – এইসব প্রশ্নের উত্তর জানতে আপনাকে রোখ রাখতেই হবে জীবনের সপ্তসুর নামের অনবদ্য গল্পটিতে। আপনি চলে যাবেন অন্য এক সময়ে। অন্য এক জগতে। আবার যখন ফিরবেন, দেখবেন, কিশোরী আলোই এক সময় দস্যিপনা কমিয়ে ঘরের কাজে থিতু হয় । ঘরের প্রতিটা কাজ সে নিজেই করে, তাই বাপের উপরেও তার সমান দাপট ।
কিন্তু গল্পের নাম জীবনের সপ্তসুর কেন? কারণ
একটা ঘর থেকে ছোট বাচ্চার আর্তনাদ ভেসে আসছিল । সেখানে মেঝেতে রাখা হারমোনিয়ামের উপর মুখ থুবরে পড়ে আছে এক মহিলার লাশ । দুইতিন বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে তার মৃত মা'কে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করছে । মেয়েটাকে দেখে জইল্যার খুব মায়া হয় । বাচ্চাটাকে কোলে নেয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু সে তার মৃত মা'কে কিছুতেই ছাড়বে না ।
থাক আর না বলি, তার চেয়ে বরং পড়ে ফেলুন গল্পটি।
গল্পের লিংকঃ জীবনের সপ্তসুর
গল্প নম্বর ৫
এই তেতে রোদ্দুরের ভরদুপুরেও খোকা যে আজ বাড়ি নেই !
খোকাকে এখনও পাওয়া যাবে মাঠে ।
কেন? খোকাকে এই ভরদুপুরের রোদ্দুরে মাঠে কেন পাওয়া যাবে? সেখানে কি?
বড় বাড়ির রবিন কাকুকে একমাস ধরে বলে একটা মস্ত লাল প্রজাপতি ঘুড়ি বানিয়ে এনেছে ও । সেটাই আজ উড়ানো হবে।
কিন্তু শেষমেষ আবহাওয়া প্রতিকুল।
একটুও বাতাস নেই। ঘুমটি দিয়ে আছে কেমন। না নড়ছে পাতাটি না উড়ছে কুটোটি। বরং সূর্যটা খিল খিল করে হাসছে তো হাসছেই।
প্রজাপতি ঘুড়িটা আর উড়ানো হলো না খোকার। ভোম্বল দা জানালেন যে,
আজ বাতাসের বিয়ে তাই আকাশ এমন থমথমে। ঘুড়ি উড়াবার জো নেই। অগত্যা তাই বাড়ির পথে খোকা পা বাড়ালো।
এখন আর রোদে পুড়ে লাভ নেই।
তারচেয়ে দুপুরে খেয়েদেয়ে আসা যাবেখন।
মাঠের পাশেই মস্ত একটা বিল। আলতা দিঘি নাম। তার পাড় ঘেসে আইলটা পেরিয়ে বড় রাস্তাটায় উঠতেই দেখে ওপাড়ার নজু একা একাই রাস্তার পাশে বসে মার্বেল খেলছে।
খোকাকে দেখেই নজু বলে , কিরে খোকা খেলবি নাকি ?
এই নজুই আবার খোকার প্রজাপতি ঘুড়িটা ছিড়ে দিল। আর তারপর থেকে গল্পের ভেতর শুরু হলো এক রূপকথা। যাহোক। গল্পটি সুপাঠ্য। বেশ একটা মিষ্টি আবহ আছে বর্ননায়। আছে ছন্দের মিত্রতা। এই যেমন,
ঝকঝকে ভাই রুপোর মত জল
এই নদীর আর নাম কি দেব বল
শীতল জলে নাইতে তুমি যদি
বলতে তুমি এ যে রুপোর নদী
আবার গল্পের একেবারে শেষে এসে আছে একটা চমক। থাক, আর কিছুই বলবো না। তারচেয়ে বরং পড়ুন ব্লগার মোঃ জাবেদ ভুঁইয়ার ‘খোকার সাথী প্রজাপতি’ গল্পটি।
গল্পের লিংকঃ খোকার সাথী প্রজাপতি
গল্প নম্বর ৬
জামালপুর তখন একটা জেলা শহর হলেও, যতটা না শহর, তার থেকে বেশী গ্রাম। একসময় ভাবতাম, স্টেশনের নাম ‘জামালপুর টাউন’ কেন, পরে বুঝলাম যে শহরটা এতোটাই গ্রামের মত, যে ‘টাউন’ বলে ঘোষণা দিতে হয়েছে।
এমনিভাবেই শুরু হয়েছে, না গল্প নয়, স্মৃতিকথা। শিরোনামঃ প্রেতালয়। লিখেছেন ব্লগার সিরাজ সাঁই । ১৯৮৮ সালে যখন হদ্দ বেকার অবস্থায় ঢাকায় থাকাটা রীতিমত কঠিন হয়ে পড়ছিলো তখন তিনি কিছুদিনের জন্য জামালপুরে তার বড়ো ফুফুর বাড়িতে যান। সেখানকার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। তারপর যান কলেজ রোডে মামার বাসায়। এভাবে নানা ভূতুড়ে অভিজ্ঞতার ঘাত প্রতিঘাতে জামালপুরকে আবিষ্কার করেন প্রেতালয় হিসেবে।
স্মৃতিকথার বর্ননাভঙ্গী যে কতোটা আকর্ষণীয় হতে পারে তা এই লেখাটি না পড়লে বোঝা দুষ্কর। ভূতুড়ে অভিজ্ঞতাও যে বর্ননার ছটায় হাস্যরসে পরিণত হতে পারে ‘প্রেতালয়’ তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কিছুটা তুলে দিচ্ছি,
মামাকে বললাম, ‘মামা সারারাত কালভারটের উপরে বসে মাছ মারলে কেমন হয়?’ মামা বললেন, ‘খুব ভালো হয় রে ব্যাটা, মামা-ভাগ্নে যেখানে, আপদ নাই সেখানে, রাতে একা একা মাছ ধরতে আজকাল ভয় লাগে, তুই থাকলে ভালোই হবে’। আমি বললাম, ‘সেকি, কিসের ভয়?’ মামা বললেন, ‘তেমন কিছু না, ঐ কয়রাত ধরে দেখতেসি, আমি কালভারটের এই পাশে মাছ ধরি, আর ঐ পাশে দুই তিনটা ছায়ার মত লোক কি মাছ ধরে কে জানে ! ছায়ার মত আসে যায়, ছায়া দেখি, বরশি দেখি, কিন্তু ওদের কাছে আলোও দেখিনা, মাছ ধরার শব্দও পাইনা, মাছ ধরে কিসে রাখে তাও দেখি না’। আমি কাঁপা গলায় জিজ্ঞাস করলাম, ‘কোথায় যায়, কোত্থেকে আসে বোঝা যায় না?’
মামা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললেন, ‘সেটা বুঝি, কালভারট থেকে পানিতে নামে, তারপর কালভারটের নীচে এপাশে ওপাশে শুধু সাঁতার কাটে, সাঁতারের শব্দ পাই, জোরে জোরে হাঁপানোর শব্দ পাই’। ভয়ে ঘামতে ঘামতে আমি বললাম, ‘ এতো জায়গা বাদ দিয়ে কালভারটের নীচে সাঁতার কাটবে কেন? কালভারটের নীচে নিশ্চয় মাছ লাফায়, সেই শব্দ পান!’ মামা আরও নির্লিপ্ত ভাবে বললেন, ‘তাইতো, এটা তো আগে ভাবি নাই ! তুই মনে হয় ঠিকই বলেছিস, কালভারটের নীচে ওগুলো মাছই হবে। শব্দ শুনে বুঝি, খুব বড় মাছই হবে ওগুলো, ধর ঐ হাঙ্গর বা তিমির সাইজের।‘ বুঝলাম, মামার সাথে কথা বলা বৃথা, এখানে থাকলে কপালে আরও ভয় তো আছেই, হার্টফেলও করতে হতে পারে। জামালপুরে কি ভূত প্রেত ছাড়া আর কিছু নেই ?
না পড়ে থাকলে এখুনি পড়ুন। নাহলে ভীষণ মিস করবেন।
লিঙ্কঃ প্রেতালয়
(আমার নিজস্ব ভালোলাগার ছ’টি গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে পোস্টটি। অনেকেই অনেক চমৎকার গল্প লিখছেন। তাদেরকে অভিনন্দন। আরো ভালো লিখে চলুন নিরন্তর।)
'জুন মাসে' আপনার ভালোলাগা গল্পগুলি সম্পর্কে মন্তব্য / আলোচনা করার জন্য সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আলাপে, সংলাপে, আলোচনা, সমালোচনায় মুখরিত হয়ে উঠুক পোস্টটি।
সবাইকে শুভেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:০০