বিষণ্ণ চিরকুট-১
প্রকাশে অক্ষম শব্দগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিছানায়। বইয়ের তাকে ধুলোজমা নিঃসঙ্গতা নিজেকে আটকে রেখেছে বিদীর্ণ বিষাদে। বাইরে বৃষ্টির তীব্র কোলাহল। তবুও অপ্রশস্ত এ ঘরে থেমে থাকে মধ্যাহ্নের থমথমে নির্জনতা।
টেবিলের ওপরে মলিন পুরোনো কাগজের চিরচেনা ঘ্রাণ। অবহেলায় ফেলে রাখা কয়েকটা কলম। কালো কালির প্রতিটি বিন্দুতে জমে আছে একেকটি দহনের হিমশীতল গল্প। ঠিক তার পাশেই আমার মুঠোফোনটা একরাশ স্তব্ধতা বুকে নিয়ে উপুড় হয়ে আছে সাধ করে ডেকে আনা শূন্যতায়।
কালটা যদিও আষাঢ়, তবু মনের মধ্যে চৈত্রের দহন টের পাই। আমার এমন এলোমেলো দিনে, সত্যি বলছি, নিজেকে আর একা লাগে না। কেননা বইয়ের তাকে ধুলোজমা নিঃসঙ্গতা নিজেকে আটকে রেখেছে বিদীর্ণ বিষাদে; যদিও বাইরে বৃষ্টির তীব্র কোলাহল। আর অপ্রশস্ত এ ঘরে কিছুক্ষণের মধ্যেই নেমে আসবে রাত্রির নির্মমতা। তবু বিশ্বাস করো, আমার আর নিজেকে একা লাগে না। একদম না।
শুধু রাত্রি গভীর হলে চিরসুখী কবিদের বিরহের কবিতায় চোখে জল আসে। তখন আমার প্রকাশ-অক্ষম শব্দগুলো কেঁদে ওঠে বিছানায়।
না, আমার নিজের জন্যে নয়। অনেক ভাঙনের গল্পে ভারী হয়ে গেছে দুর্বল এ স্মৃতিভাণ্ডার। মানুষকে তাই ভীষণ অচেনা মনে হয়। ভীষণ অচেনা!
মুখোশের আড়ালে আসলে সবাই একা - ভাবতেই শিউরে ওঠে আমার দেয়ালে টানানো নির্ভুল ক্যালেন্ডার।
বাইরে বৃষ্টির তুমুল অট্টহাসি; ভেতরে সবাই নিজের মতো একা।
বিষণ্ণ চিরকুট-২
কিছু লিখলেই দুঃখের কবিতা হয়ে যায়
কিছু গাইলেই বেদনার গান।
আমার পুঁজি ফুরিয়ে এসেছে। জীবনের পুঁজি। বেঁচে থাকার পুঁজি। সংসার ও সমাজে কিছু আর করার নেই আমার।
- তুমি কি সত্যিই কিছু করতে চেয়েছিলে? তোমাকে তো বরাবরই নীরব দর্শক হিসেবেই জানি।
দর্শকের যন্ত্রণা কি কম? আর দশজনের সঙ্গে মিশে গেলে তো বেঁচে গেলে। কিন্তু যে প্রথাগত প্রত্যুৎপন্নমতিতাই অক্ষম। যার অন্তকরণ সমীকরণের সত্যতা মেনে চলে না; তাকে তুমি কি বলবে?
- কিছু বলবো না। তুমি আর এলেবেলে বোকো না তো। বিরক্ত লাগে।
আমি অনেক আগেই জেনেছি তুমি অন্ধ। কোনোদিনও ওসব বুঝবে না। জানো, কেবলই একটা কাক উড়ে গেল জানালার পাশ দিয়ে। কতো কথা তোমাকে বলার ছিলো। আমার ঘরে ইদানিং ছোট ছোট বিচিত্র সব পোকা-মাকড়েরা বসতবাড়ি বানিয়েছে। আমি বাঁধা দেই না। তবু কেউ তো আসলো কাছে। মানুষ না হোক, অন্যকিছু। জানো, এক চিলতে রোদ এলেও আমি পর্দায় তাকে আর আড়াল করি না। রোদের জন্য খুব মায়া হয় আমার। থাক, আর কিছু বলবো না তোমাকে। তোমার নিশ্চয়ই আমার এসব এলেবেলে কথা শুনতে বিরক্ত লাগছে। আজকাল আর কিছু লিখতেও ইচ্ছে করে না।
লিখলেও কেন যে সব বর্ণ, শব্দ, বাক্য বেদনায় ভরে যায়; জল পড়ে ; কেন যে আমার গল্প কবিতায় ভর করে অবাধ্য আষাঢ় - কে জানে।
কিছু লিখলেই দুঃখের কবিতা হয়ে যায়
কিছু গাইলেই বেদনার গান।