নিকটি তৈরী করে ফেলে রেখেছিলাম। বাংলা ব্লগজগতে প্রচুর লেখালেখি করেছি বিভিন্ন নিকে, এই নিকটিও ছিল। এখন ব্লগ অত্যন্ত টাইম কিলিং বিষয় বলে বোধ হয়।
আমার একাউন্টের নাম হলো 'দস্তার'। এটি একটি ফারসী শব্দ, যার অর্থ উষ্ণীষ বা পাগড়ী। শিখরা পাঞ্জাবী ভাষায় তাদের পাগড়ীকে 'দস্তার'ই বলে থাকে। তবে এটি মুসলমানদেরও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। শিখরা আবার দাড়িও রাখে, যেটা মুসলমানদের জন্য রাখাটা ফরয ওয়াজিব। কিন্তু শিখরাই হলো ভারতবর্ষে মুসলমানদের সবচেয়ে হিংস্র শত্রু। শিখধর্মের উৎপত্তি ও বিকাশ পুরোটাই ইসলামবিরোধিতাকে কেন্দ্র করে। সেটি খুব লম্বা ইতিহাস সেখানে আমি যাচ্ছি না।
মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মের মধ্যে কিছু কিছু বিষয়ে মিল দেখা গেলেও সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে বিচার করলে বেশকিছু পার্থক্য চোখে পড়বে। যেমন মুসলিমদের সুন্নতী পোষাক হল লম্বা কোর্তা, যাতে কোনাটা হালের দোকানের পাঞ্জাবীর মতো ফাঁড়া বা কাটা থাকবে না। নিছফুস সাক্ব আজানুলম্বিত বা হাঁটুর নিচ পর্যন্ত যা বিস্তৃত হবে। খৃস্টান সাধকদের ক্ষেত্রেও তাই, কিন্তু তাদের পোষাকে একটি কলার থাকে, শেরওয়ানী কলারের অনুরূপ। আবার শিখরা পাগড়ী পরলেও তারা মুসলমানদের পাগড়ীর সাথে পার্থক্য বজায় রাখে, অর্থাৎ তাদের পাগড়ীর পিছনে শামলা তথা পিছনের ঝোলানো অংশটি থাকেনা। যেটা মুসলিমদের পাগড়ীতে থাকতে হবে।
হাদীছ শরীফ উনার সহীহ্ কিতাব “হাশিয়ায়ে তিরমিযী শরীফ” উনাতে উদ্ধৃত রয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,“নিঃসন্দেহে পাগড়ী পরা (দায়িমী তথা ব্যবহারিক বা সর্বক্ষণের) সুন্নত।” নামাযের মধ্যে পাগড়ী পরার ফযীলত সম্পর্কে কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে যে, “নিশ্চয়ই পাগড়ী পরে দু’রাকাত নামায আদায় করা, পাগড়ী ছাড়া ৭০ রাকায়াত নামায আদায় করার চেয়ে অধিক ফযীলতপূর্ণ।”
মুসলিম সর্বক্ষণ পাগড়ী পরবে। কিন্তু এই সুন্নতটি হারিয়ে গিয়েছে সাধারণ মুসলিমদের মাঝ হতে। কাকরাইলে লাল রূমাল বাঁধা কিছু লোকদের দেখা যায়, যারা কোনভাবে একটি কাপড় মাথায় প্যাঁচ দিয়ে রেখেছে। কিন্তু পাগড়ী আর রূমালের মাপ ও মাসয়ালা আলাদা। দ্বীন ইসলামে পাগড়ীর কাপড় হতে হয় তিন হাত, সাত হাত অথবা বার হাত। সাত হাত পাগড়ীই প্রচলিত। পাগড়ীর মাঝখানে থাকতে হয় একটি ইংরেজি V আকৃতির খাঁজ, যেন সিজদার সময় কপাল মাটিতে লাগে(উপরের ছবির সবুজ পাগড়ীটি খেয়াল করুন)। পাগড়ীর প্যাঁচের উপর দিয়ে সিজদা দেয়াটা হবে অনুচিত। অনেকে ওসামা বিন লাদেনের মত পাগড়ী বাঁধে, মাঝখানে কোন খাঁজ না রেখে
এভাবে বাঁধাটা শুদ্ধ হবে না।
আমি আমার নানীর কাছে শুনেছিলাম, তার একটি মসলিনের শাড়ী ছিল। যে মসলিন আংটির মধ্যে ২০০ বার পেঁচানো যেত তার সূক্ষ্মতার জন্য। সেটি তিনি তার কোন ভাইকে দিয়ে দিয়েছিলেন পাগড়ী বানাতে, কারণ অতিরিক্ত পাতলা হওয়ার জন্য সাধারণ পরিবারে সেগুলো পরার উপযুক্ত ছিল না। মুসলিম তাঁতীদের মসলিনের কদর ছিল রাজপরিবারগুলোতে। পাগড়ী পরার আসল নিয়মও আজ মুসলিমদের মাঝ থেকে হারিয়ে গিয়েছে, সেই বিলুপ্ত মসলিনের ন্যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:২১