- “ তুমি এইটা কী কালারের শার্ট পড়ে আসছো? এমন জঘন্য রঙের শার্ট কেউ পড়ে? “
ছোট্ট টেবিলটার দুইপাশে চেয়ার মাত্র দুটো । একটাতে একজন এর মধ্যেই বসে আছে, কথাটা তারই বলা । আমি দ্বিতীয়টাতে বসতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু বসার মাঝ রাস্তায় শূন্যে থেমে যেতে হলো কথাটা শুনে ।
- " কেন? নীল রঙে সমস্যাটা কি? " কোমর বাঁকা আধ বসা উবু অবস্থায় একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি ।
- “ নীলেরও তো রকম আছে। এমন নীল জামা তুমি কিনলাটাই বা কোথা থেকে ? আসার সময় রাস্তায় কেউ ঢিল ছোঁড়ে নাই পাগল ভেবে? “
অপমানসূচক কথায় কান দিয়ে পাত্তা দিলেই সমস্যা । না শোনার ভান ধরে খালি চেয়ারটা টান দিয়ে পেছনের দিকে নিয়ে বসে পড়লাম । এতক্ষণে মিলির দিকে একটু তাকানোর সুযোগ পাওয়া গেলো । এতো দিন কেবল ওকে ছবিতে দেখে এসেছি, আজই প্রথম সামনাসামনি দেখার সুযোগ হলো । ফার্স্ট ইম্প্রেশন বিরাট জরুরী একটা ব্যাপার । কারো সাথে পরিচয়ের সামনের দিনগুলো কেমন কাটবে, কমান্ডিং পাওয়ারে কে থাকবে, ঝাড়ি দেওয়ার পজিশন আর হজমের গুরুদায়িত্ব কার বেশী পালন করতে হবে ইত্যাদি ব্যাপারগুলো ঠিক হওয়ার ক্ষেত্রে ফার্স্ট ইম্প্রেশনের ভূমিকা বইয়ের ভাষায় বললে " অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ " এবং টেবিলের ওপাশের উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রং, কাজল দেয়া খয়েরি চোখ, স্কার্ফ দিয়ে চুল ঢেকে বড়সড় সাইজের কালো রঙের একটা ব্যাগ নিয়ে বসে থাকা মানুষটার কপালের ভ্রুকুটি দেখে মেনে নিতেই হয় যে সেই ব্যাপারে আমার পারফম্যান্স “ অত্যন্ত শোচনীয় “ ।
ওয়েটার এসে ম্যানু দিয়ে গেলো । ঢাকার রেস্টুরেন্টগুলোর খোঁজ খবর রাখার ব্যাপারে আমি একেবারেই আনাড়ি । কোথায় খাবারের দাম কোন কারণ ছাড়াই অনেক বেশী, কোথাও কেবল প্রেমিক - প্রেমিকারাই যায়, কোথায় দলবাজি করে চিৎকার করলেও সমস্যা নেই কিংবা কোথায় বুদ্ধিজীবীদের মতো খাবার সময়টা জ্ঞানী জ্ঞানী নানা কথা বলে পার করার নিয়ম সেসবের কিছুই আমি জানি না । খাবারের দোকান বলতে আমি বুঝি নীলক্ষেতের ইয়াসীন – রয়েল এসব তেহারির দোকান, আমাদের ডাকসু, টিএসসির ক্যাফেটেরিয়া, বা হলের ভেতরের টং দোকানগুলো; যেখানে চেয়ারে পা তুলে বসে আরামসে খাওয়া যায়, দোকান ভাড়া সামনের মাস থেকে আরো বাড়ছে বলে দোকানদার মামার সাথে তাল মিলিয়ে দোকানের মালিকরা যে দিনদিন ফাজিলের শেষ সীমানা হয়ে যাচ্ছে সে ব্যাপারে পুরোপুরি একমত হওয়া যায় এবং সকালের নাস্তার ধাক্কা পার হয়ে যাওয়ার পর দুপুরের খাওয়ার সময় শুরু হওয়ার আগে সকাল দশটা এগারটার দিকে যখন ভিড় থাকে না, তখন টেবিলে হাত দিয়ে টুক টাক করে তবলা বাজানো শেষে আধা ঘণ্টা ঝিমালেও কোন সমস্যা হয় না । এই রেস্টুরেন্টটা মিলি-ই খুঁজে বের করেছে আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার জন্যে । বেশ ছিমছাম চারপাশ, আশপাশের সবাই কিছুটা নিচু স্বরে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছে, কাঁটা চামচ দিয়ে খাবারের সাথে কুস্তি করার আদিখ্যেতাটাও কম । তবে নীলক্ষেতের দোকানগুলোতে খটখট শব্দে রুগ্ন টেবিল ফ্যান ঘোরে, আর এখানে নিঃশব্দে চলছে এসি । আমি ঐ খটখট শব্দের সাথেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি বলে এই জায়গায় বসে মনে হচ্ছে, আমাকে কোন টিনের কৌটার মধ্যে ভরে উপরের ঢাকনা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে ।
- “ অর্ডার দাও । “
- “ হু , দিচ্ছি। “
বলে মিলি বেশ সময় নিয়ে ম্যানুতে চোখ বুলিয়ে তারপর অর্ডার দেয় । আমি ততোক্ষণ মাথা ঘুড়িয়ে চারপাশের সবাইকে বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকি।
- “ এমন মুখ হা করে সবার দিকে তাকিয়ে আছো কেন? “
এবার আমি যথেষ্টই বিরক্ত হলাম । আমি কি পাঁচ বছরের বাচ্চা নাকি যে উঠতে বসতে কথা শুনতে হবে? খড়খড়ে গলায় বলি,
- “ হা করে তাকিয়ে আছি মানে? এটা কোন ধরনের কথা? “
- “ তুমি হা করেই তাকিয়ে আছো । ...... আর ফেসবুকের ছবিগুলা তো সুন্দরই ছিল । এখন তো দেখি ছবির সাথে চেহারার কোন মিল-ই নাই । আরেকজনের ছবি দিয়ে রাখছো নাকি প্রোফাইলে ? “
- “ হুম ... আরেকজনের ছবি । খুশী? “
একটু রুক্ষ ভাবেই কথাটা বলে অন্যদিকে তাকিয়ে থেকে চুপ হয়ে যাই । প্রথম দেখার দিনে এমন ক্যাটক্যাট করে কেউ? আশ্চর্য! এতো দিন ধরে দুজন কথা বলি, অবশেষে অনেক ঝামেলা করে আজ দেখা করার দিন ঠিক করেছি । একজন আরেকজনের প্রতি নিজের মনের অনুভূতির ব্যাপারে মুখে সরাসরি কিছু না বললেও, দুজন একে অপরের মনের কথা ঠিকই জানি । আমি ভেবেছিলাম আজ খোলাখুলি কিছু বলবো । কিন্তু সুযোগই তো পাচ্ছি না । মনে হচ্ছে রিমান্ডে নিয়ে মাথার উপরে হাজার ওয়াটের বাল্ব জ্বালিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে । পার্থক্য কেবল এই যে, ইন্টারোগেশনে কোন পেট মোটা দারোগার বদলে আছে মায়াবতী চেহারার এমন একজন মেয়ে, যার পাশ দিয়ে হেঁটে চলে যাওয়ার পর সবার একবার হলেও পিছু ফিরে তাকাতে হয় । তবে এতে খুশি হওয়ার কিছু নেই । মহিলা দারোগার সব কথার জবাব ঠিক ঠাক মতো দিতে না পারলে একটু পরে ঠিকই বার্মিজ কাঠের রোলার এসে হাজির হবে ।
মিলিও আর কিছু না বলে চুপ করে থাকে । একটু পর আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম মিটিমিটিয়ে হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে। হলেও হতে পারে প্রেমিকার হাসি অবশ্যই ইচ্ছুক প্রেমিকের মুগ্ধ হয়ে দেখা উচিত। কিন্তু বিরক্তির জন্যে মুগ্ধতাটা ঠিক পুরোপুরি আসলো না ।
- “ খাবার নাও । আর দয়া করে ঠিকভাবে বসো । যেভাবে বসেছো মনে হচ্ছে আর একটু পর চেয়ার থেকে পিছলে টেবিলের নিচে চলে যাবে । “
ঊফফ!! কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম?! পনের-বিশ মিনিট হয়ে গেলো এসেছি; অথচ খবরদারির জন্যে ভালো মতো কথাই শুরু করা গেলো না এখনো। কথা বলার ইচ্ছাটাই চলে যাচ্ছে । কথা না বাড়িয়ে বাধ্য হয়ে মাথা নিচু করে চুপচাপ খেতে থাকি । কপাল ভালো লিকুইড কোন খাবার অর্ডার করে নি । না হলে ওসব খেতে গেলে সিউর বলে বসতো খাওয়ার সময় এমন বিশ্রী শব্দ হয় কেন? খাওয়ার বাকি সময়টা আর তেমন কোন কথা হলো না । একবার কেবল খুব নিরীহ গলায় জিজ্ঞেস করলো ভূমিকম্প হচ্ছে নাকি?
অভ্যাসবশত পা নাচাচ্ছিলাম একটু ।
আস্তে করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপচাপ মুখ গোঁজ করে খাবার খেতে থাকলাম । মানুষ খাল কেটে কুমীর আনে জানি, কিন্তু আমি তো মনে হচ্ছে কুমীর না; নিজ দায়িত্বে বিশাল সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ডাইনোসর নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি । মুখের খাবারে কোন স্বাদ লাগে না । মিলিও সামান্য একটু খাবার নিয়ে সেটা নাড়াচাড়া করেই সময় কাটিয়ে দিলো । মুখ তুলে না তাকালেও বুঝছিলাম ও একটু পরপর আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে । আচ্ছা, সকালে ঘুম থেকে উঠে কার চেহারাটা প্রথম দেখেছিলাম আজ? ......... নিজের চেহারাই ।
বিল মিলিই মেটালো । আমি সুযোগ পেলাম না, না পেয়ে কিছু বললামও না । ততোক্ষণে মন থেকে দেখা করার কামনা, বাসনা, আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা সব একেবারে বাষ্পীভূত । আল্লাহ হা-ফেজ বলে বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করার কথা ভাবছি ।
- “ এই, রিকশা ডাকো তো একটা। “
- “ রিকশা কেন আবার? “
- “ তুমি চালাবা আর আমি পেছনে বসে থাকবো । ডাকতে বলছি, ডাকো । নিউমার্কেট যাবো । “
ইতোমধ্যেই মিলির চোখে নীলচে সানগ্লাস উঠে গেছে। মাথায় সোনালী - কালো স্কার্ফ, খয়েরী রঙের সালোয়ারে মিলিকে দেখতে লাগছে কিছুটা ইরানি মেয়েদের মতো । এবং বলাই বাহুল্য; সুন্দর।
বিরক্তি চেপে হুকুম তামিল করতে হলো । মনে মনে ঠিক করলাম রিকশায় বসে কিছু শক্ত শক্ত কথা বলবো । শক্ত কথার প্রস্তুতি হিসেবে প্রথমে এই চলমান কথা চালাচালি খেলার বল নিজের কোর্টে আনতে হবে । যাকে বলে আলোচনায় মানসিক ভাবে নিজের প্রাধান্য বিস্তার করা, সোজা বাংলায় একটু অভিভাবক অভিভাবক সুলভ ভাব ধরা আর কি ।
- “ ওড়না ঠিক করে বসো । চাকায় প্যাঁচিয়ে রাস্তায় পড়বা । “
- “ আমি রাস্তায় পড়ে গেলে তুমি পাশে বসে আছো কেন? ধরতে পারবা না নাকি? “
বল ফুটো হয়ে চুপসে যাওয়ায় সেটা নিজের কোর্টে আনার চেষ্টাটা বৃথা গেলো । এই বান্দার সাথে কথায় পারা যাবে না । কিছু না বলে উল্টো দিকে মুখ ফেরালাম । দু'জনের এই প্রথম রিকশায় চড়া, এটাকে মেজাজ খারাপ রেখে নষ্ট করাটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না । কিন্তু মেজাজ তো সেই খিঁচরেই আছে, চেষ্টার পরও ভালো হচ্ছে না । কথা খুঁজছি মনে মনে... কিন্তু কি বলি একে!
সানগ্লাসটা ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখতে রাখতে মিলিই মুখ খোলে আবার ।
- “তুমি তো দেখি চাপতে চাপতে রিকশার বাইরে চলে যাচ্ছো । এ দিকে এসে ঘেঁষে বসো। আমার কুষ্ঠ নেই । একটু - আকটু গায়ে গা লাগলে কিছু হবে না।“
বলে মুখে ওড়না চেপে হাসতে লাগলো । আমি কি বলবো কথা খুঁজে না পেয়ে একটু হাসলাম কেবল । এই মেয়ে দেখি কথার রাজা । আমাকে এক হাটে কিনে দশ হাটে বিক্রি করে দেবে; টেরও পাবো না। ফোনে কথা বলার সময় তো বুঝি নি । তখন বেশীরভাগ কথা আমিই বলতাম, এ কেবল শুনতো। বাস্তবে দেখি ঘটনা উল্টো হয়ে গেলো । কি বিপদ!
রাস্তা ফাঁকা বলে রিকশা প্রায় উড়ে উড়ে চলছে । শীতের শুরু । বছরের এই সময়টাতে জাঁকিয়ে শীত নামে না সত্য, কিন্তু বাইরে বেশ ঠাণ্ডা বাতাস থাকে । ঘড়িতে বাজে দুপুর তিনটার মতো । ইদানীং ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে যায় বিকেল পাঁচটার দিকেই । মনে মনে হিসেব করে দেখলাম মিলি আমার সাথে আরও ঘন্টাখানেক থাকলে ওর বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
-" গরম কাপড় এনেছ সাথে? " নীরবতা ভাঙতে এই প্রথম আগে মুখ খুলি আমি ।
- “ হ্যা । ব্যাগের ভেতর চাদর আছে একটা । “
আবার নীরবতা । রিকশা এগোচ্ছে দ্রুত । দুজন পাশাপাশি চুপচাপ বসে থাকি, যেন একজন আরেকজনের সাথে কথা বলবো না বলে ঠিক করে ফেলেছি ।
-" তুমি কি আমার উপর খুব বেশী রাগ করেছো? " হাসতে হাসতে কথাটা বলে অবশেষে নীরবতাটা আবার সে-ই ভাঙ্গলো ।
- “ অন্তত কিছুটা তো মনে হয় করাই উচিত, নাকি? “
- “ উচিত । শোনো, নীল শার্টটাতে তোমাকে দেখতে মোটেও খারাপ লাগছে না । আমি এমনিতেই মজা করেছিলাম তুমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কি বলো দেখার জন্য । তুমি অন্য কোন রঙের শার্ট পড়ে আসলেও আমি একই কথা বলতাম । আগে থেকেই রিহার্সাল করে রাখা । “
পাশ ঘুরে ভালোমতো মিলির দিকে তাকালাম এবার । এই মেয়ে তো দেখি ভালোই দুষ্টু । আমাকে আসলেই বোকা বানিয়ে ফেলেছে পুরোপুরি ।
- “ আর পরের ঝাড়ি গুলো? “
- “ ওগুলো আমি আসলেই দিয়েছি। কিছুদিন পরে তো ঝাড়ি দেয়া শুরু করবে তুমি, শুরুর কয়েকটা দিনই আমার সুযোগ । এই সুযোগ তো কোনভাবেই নষ্ট করা যাবে না । তাই ভালোমতো কাজে লাগাচ্ছি, আরো লাগানো হবে । বুঝেছেন বোকা মানব? “
রিকশাওয়ালাসহ আশেপাশের সব মানুষকে চমকে দিয়ে জোরে হা হা হা করে হেসে উঠলাম ওর কথা শুনে । হাসি থামতে চায় না । হাসতে হাসতেই বললাম-
- “ তারমানে বোধহয় তোমাকে যতোটা ঝগড়াটে মনে হয়েছিলো ততটা ঝগড়াটে তুমি না, কি বলো?“
মিলিও একটু মাথা নিচু করে লাজুক লাজুক মুখে হাসতে থাকে ।
- “ হুম ।..... কিন্তু এখন আমি আবার তোমার সাথে ঝগড়া করবো। “
-“ কেন?? আবার কি করলাম?? “ ... হাসি থামিয়ে একটু ভয়ে ভয়েই জিজ্ঞেস করি ।
- “ রিকশা কতো জোরে চলছে দেখছো না? “
- “ দেখছি .... তো? “
- “ রিকশা জোরে চললে কি করতে হয়? “
প্রায় বলে ফেলেছিলাম রিকশাওয়ালাকে ধমক দিয়ে আস্তে চালাতে বলতে হয় । কিন্তু কেন যেন মনে হলো মিলি এটা বোঝায় নি।
- “ কি করতে হয়? “
- “ পাশের জনের হাতটা শক্ত করে ধরে রাখতে হয় যেন সে পড়ে না যায় । ....... কিছুই জানে না, বোকা মানব নামটা তো আর এমনি এমনি দেই নি তোমাকে । হাত ধরো আমার ভালো মতো । “
মুহূর্তে বদলে যায় চারপাশ । কেমন যেন অদ্ভুত হয়ে উঠে সময়টা । কানে ভেসে আসা আশেপাশের সব কোলাহল হঠাৎ থেমে যায়, মুছে যায় চারপাশের অন্য সবকিছুর অস্তিত্ব । আমার মনে হয়ে গা ঘেঁষে পাশে বসা মানুষটা ছাড়া পৃথিবীর কোথাও আর কেউ নেই, কারো থাকার প্রয়োজনও নেই । আমার পৃথিবীতে একমাত্র শব্দ তার অদ্ভুত সুন্দর কণ্ঠস্বর, বাদবাকি পৃথিবী নীরব হয়ে গেলেও তাতে কিছু আসে যায় না । কিচ্ছু না । পৃথিবীতে নিয়ে আসা ছোট্ট একটা জীবনে সুখী হওয়ার জন্য খুব বেশী কিছুর কি প্রয়োজন পড়ে আমাদের ? মনে তো হয় না ।
আমি আলতো করে মিলির হাতটা আমার হাতে তুলে নেই । বুকের হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেছে বহুগুণ । আঙ্গুলের ফাঁকে আঙ্গুল ঢুকিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরি ওর হাতের মুঠো । দুজনের হাতের সব রেখা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় । ঘড়ির কাঁটা যেন থেমে গেছে আমাদের জন্যে । আমার হাতের মুঠোয় একটু একটু কেঁপে উঠে মিলির নরম হাতটা । আশ্বাসের দৃষ্টিতে আমি ওর চোখে চোখ রাখি । চোখের নীরব ভাষায় তীব্রভাবে বুঝাতে চাই ; আমি আছি, আমি থাকবো ।
তখন মিলির চোখ চোখ রেখে হঠাৎ করেই আবিষ্কার করি; আজ ঢাকা আর আমার মন - দুইয়ের আকাশেই ঝকঝকে নীল রোদ । আহা, আমার বুকের ভেতরের অন্ধকার, ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে থাকা মনটা পেছনের কতগুলো দিনই না অপেক্ষায় ছিলো এই এক চিলতে উজ্জ্বল রোদটার জন্য ...... কতগুলো দিন !!
রিকশা দ্রুত এগোতে থাকে গন্তব্যের দিকে । পৌঁছে যাওয়ার আর বেশী দেরী নেই । সে পৌঁছক, সমস্যা নেই । আমাদের দু'জনের একসাথে পথ চলার গন্তব্য আরও বহুদূর ।
......... বহুদূর ।।